আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের বর্তমান ইসলামী রাজনীতি ।।

Student : B.Sc in EEE রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে একবার এক সাহাবী জিজ্ঞাস করেছিল কেউ যদি আমার বাড়িঘর বা বসত বাড়ি দখল করতে আসে আর আমি যদি তাকে বাধা দিতে গিয়ে নিহত হই তাইলে কি আমি শহীদের মর্যাদা পাবো ? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিয়েছিলেন হ্যা নিশ্চয়ই তুমি শহীদের মর্যাদা পাবে। [ তথ্যসূত্রঃ মেশকাত শরীফ] এই হাদিস অনুসারে ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধার সময় যেই সকল মুসলমান দেশ মাতৃকা বাঁচাতে যেয়ে যুদ্ধ করতে যেয়ে নিহত হয়েছিলেন উনারা সবাই শহীদ। কারন ইসলামি শরীয়তে বসতবাড়ি/ভিটামাটি ও মাতৃভুমি একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধের সময় এইদেশে রাজাকার ছিল এটাতে কোন সন্দেহ নাই। হ্যাঁ ইসলামের নাম বেচেই তখন অনেক ধর্ষন অনেক মুক্তিযোদ্ধা হত্যা করা হয়েছিল এই ব্যাপারটা অস্বীকার করা যাবে না।

কিন্তু মুক্তিযোদ্ধের সময় এই অপকর্ম গুলির সাথে বাংলাদেশের মূলধারার ইসলাম মানে ক্বওমী মাদ্রাসা কেন্দ্রিক হুজুরদের কোন সম্পর্ক ছিল না। সেই সময় বাংলাদেশের ওলামাদের প্রধান ছিলেন হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহমাতুল্লাহ আলাইহির সর্বশেষ জীবিত খলিফা খেলাফত মজলিসের হাফেজ্জি হুজুর রহমাতুল্লাহ আলাইহি। মুক্তিযোদ্ধার সময় আলেমরা হাফেজ্জি হুজুরকে জিজ্ঞাস করেছিল এই যে ভাতৃঘাতি যুদ্ধ শুরু হয়েছে এই যুদ্ধটা সম্পর্কে আপনার অভিমত কি ? তখন হাফেজ্জি হুজুর বলেছিলেন- “ এটা হচ্ছে জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের যুদ্ধ। পাকিস্তানিরা হচ্ছে জালেম আর আমরা বাঙ্গালীরা হচ্ছি মজলুম। “ হাফেজ্জি হুজুরের এই কথা শুনে অনেক আলেম মুক্তিযোদ্ধে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েছিল।

সাংবাদিক শাকের হোসাইন শিবলির একটি বই আছে “আলেম মুক্তিযোদ্ধাদের খোজে“ এই বইটিতে আপনারা অনেক বড় বড় আলেম যারা দেশের বিভিন্ন ক্বওমী মাদ্রাসা থেকে পাস করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধের সময় তাঁদের বীরত্বের কাহিনী পাবেন। আমাদের ব্রাক্ষণবাড়িয়া সদরের যে সবচেয়ে বড় ক্বওমী মাদ্রাসা জামিয়া ইউনিসিয়া সেই মাদ্রাসার প্রধান মুহতামিম ফখরে বাঙ্গাল আল্লামা তাজুল ইসলাম উনিও কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছিলেন। আমাদের ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলায় অনেক বড় বড় আলেম উনার ফতোয়া শুনে মুক্তিযোদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। দেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধু কে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠিও দিয়েছিলেন। [ তথ্যসুত্রঃ ফখরে বাঙাল আল্লামা তাজুল ইসলাম রহমাতুল্লাহ আলাইহি ও উনার সাথীবর্গ, লেখকঃ হাফিয মুহাম্মদ নুরুজ্জামান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ] যেমন ধরেন পাবনার রাজাকার বাহিনীর প্রধান ছিলেন জামায়াতের তথাকথিত মাওলানা সোবহান আবার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধান ছিলেন দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদিস পাস করা মাওলানা কাসিমুদ্দিন যিনি রাজাকার বাহিনীর হাতে নির্মম ভাবে শহীদ হয়েছিলেন।

ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা কেন্দ্রিক যে আলেমদের সংগঠন আছে “জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ” উনারাও কিন্তু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে অনেক ফতোয়া দিয়েছিলেন। “জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ” ১৯৭১ সালে স্পষ্টভাবে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যে নির্মম ভাবে পূর্ব পাকিস্তানি জনগণদেরকে হত্যা করছে এই ব্যাপারে অনেকগুলি বিবৃতি দিয়েছিল। এই ফতোয়া গুলি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত শায়খুল ইসলাম হযরত হোসাইন আহমদ মাদানী রহমাতুল্লাহ আলাইহির যে জীবনী বের হয়েছে সেই বইটির শেষে পরিশিষ্ট আঁকারে দেয়া হয়েছে। বিশিষ্ট গবেষক আলেম ডঃ মুশতাক আহমেদ “শায়খুল ইসলাম হযরত হোসাইন আহমদ মাদানী রহমাতুল্লাহ আলাইহিঃ জীবন ও কর্ম” শিরোনামে তথ্য ও তত্ত্ববহুল অভিসন্দর্ভ প্রনয়ন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগে থেকে এই অভিসন্দর্ভ উপলক্ষ্যে মুশতাক আহমেদ কে পি--এইচ.ডি. ডিগ্রী প্রদান করা হয়েছে।

আর ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ মুশতাক আহমেদের এই অভিসন্দর্ভ টিই শায়খুল ইসলাম হযরত হোসাইন আহমদ মাদানী রহমাতুল্লাহ আলাইহির জীবনী বই আকারে বের করেছে। জামায়াতে ইসলামীর বড় বড় নেতারা মুক্তিযোদ্ধার বিরোধীতা করে যুদ্ধের পুরোটা সময় জুড়েই পাক সেনাদের পাশে ছিল এটা অস্বীকার করার কিছু নাই। কিন্তু আমার কথা হল সেই সময়ের কতিপয় বিপদ্গামী জামাত নেতার পাপের দায়ভার বর্তমানে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা কর্মীরা কেন নিতে যাবে ? খাতা কলমে শিবির ও জামায়াতে ইসলামী তো ২ টা ভিন্ন সংগঠন। আজকে শিবিরের ছেলেপুলেরা জামায়াতে ইসলামীর কতিপয় যুদ্ধপরাধীর জন্য রাজপথে মাঠে নেমে পুলিশের মাইর খাচ্ছে জেলে যাচ্ছে শিবিরের কার্যকরি পরিষদের উচিত এখনি একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া যে তারা জামায়াতে ইসলামীর কোন মিছিল মিটিংএ অংশগ্রহন করবে না। বাংলাদেশে তো আরো অনেক ইসলামী রাজনৈতিক দল আছে তাদের অনেক ইসলামী ছাত্র সংগঠন আছে যেমন চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ঐ দলের ছাত্র সংগঠন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, হিযবুত তাহরীরের ছাত্রমুক্তি, খিলাফত মজলিসের ছাত্র মজলিস, মুফতী আমীনের ছাত্র মোর্চা কই তাদের কে তো কেউ রাজাকার বলছে না।

ছাত্র শিবির আজ থেকে জামায়াতে ইসলামীর লেজুর বৃত্তি ত্যাগ করুক তাইলে শিবির সম্পর্কে Djuice পোলাপাইনের যে ঘৃণা আছে তা আর থাকবে না। আমার Facebook এর Friend List এ শিবিরের অনেক বড় বড় নেতা আছেন। ছাত্রশিবিরের কার্যকরি পরিষদের কয়েকজন সদস্যও আছে যারা নিয়মিত আমার Facebook Status ও NOTE গুলি পড়েন। আমার অনুরোধ থাকবে উনাদের প্রতি যে আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা শিবিরের নেতা কর্মীদের কতিপয় যুদ্ধপরাধীর মুক্তির দাবিতে রাজপথের মিছিলে অংশ নিতে বলবেন না। ইসলাম কারো বাপের সম্পত্তি না যে কেউ ইসলাম কে নিয়া যেরকম ইচ্ছা সেরকম ব্যবহার করবে আর যুদ্ধপরাধীর বিচারটা হয়ে যাওয়াই জামায়াতে ইসলামের জন্য ভাল।

কারন এরদ্বারা জামায়াতে ইসলামীও দীর্ঘদিন ধরে একটা কলংকের হাত থেকে মুক্তি পাবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।