আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

থ্রিলারঃ মৃত্যু

কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! ১ আপনি কি জানেন প্রতি মুহূর্তেই পৃথিবীর কোন না কোন প্রান্তে কেউ না কেউ মারা যেতে পারে? এই যে আপনি একমনে মনিটরের দিকে তাকিয়ে আছেন, ভাবছেন দেখি শালা আবার কি লিখেছে, একের পর এক লাইনে বিজ্ঞের মত চোখ বুলিয়ে যাচ্ছেন; আপনি কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন ঠিক এই সময়টাতেই পৃথিবীর অন্য কোন এক প্রান্তে কোন একটি মুমূর্ষু মানুষ বিছানায় শুয়ে একান্ত অনিচ্ছায় শেষ নিঃশ্বাস ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে না? আপনি কি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবেন যে ঠিক এই মুহূর্তে, একুশে ডিসেম্বর ২০০৬ সালের সন্ধ্যায় এত মিনিট এত সেকেন্ডে, পৃথিবীর কোথাও কেউ মারা যাচ্ছে না? পারবেন না। পৃথিবীর এত এত মানুষ, কোথাও তো কেউ মারা যেতেই পারে। কারও স্বজন হারানোর তীব্র বেদনায় নীল হতেই পারে ধূসর আকাশ। কারও আর্তনাদ আকাশ বাতাস ছাপিয়ে প্রকম্পিত করতেই পারে বিশ্ব চরাচর। শুধু সমস্যা একটাই, যেখানেই যাই হোক, আপনি জানছেন না।

জানলেও গা করছেন না। কোথায় কে মরল না বাঁচল তাতে আপনার কি? আপনি চলছেন আপনার মত। তবুও মাঝে মাঝে প্রিয়জনের মৃত্যুতে কাঁদতে কাঁদতে আমরা নিজের মৃত্যু নিয়ে জল্পনা কল্পনা করি। আসন্ন মৃত্যুর ভয়ে তটস্থ থাকি কয়েকদিন। নিজের না বলা কথা আর না করা কাজের হিসাব মিলাতে চাই।

কিন্তু দুঃখের ব্যাপার, সবসময়ই একটু দেরি হয়ে যায়। মৃত্যুটা যেন একটু তাড়াতাড়িই এসে পড়ে। তো আসুন, প্রিয় পাঠক, আমরা পৃথিবীর কোন এক অজানা প্রান্তে একজন অচেনা মানুষের মৃত্যুর মুখোমুখি হই। আনন্দ আর সমৃদ্ধির চেনা জগৎ ছেড়ে একটু ঢুঁ মেরে আসি মৃত্যুর ধূসর জগত হতে। ২ দুপাশে ঘন জঙ্গল।

আর তারই মাঝে এঁকেবেঁকে চলে গেছে চওড়া একটি রাস্তা। তখন গভীর রাত। আশেপাশে কোন বাড়িঘর নেই, মানুষের কোনো চিহ্ন নেই। রাস্তার পাশে কোন বাতি নেই। পুরো ঘুটঘুটে অন্ধকার।

আকাশে শুধু একটা ফ্যাকাশে অপূর্ণাঙ্গ চাঁদ, যার আলো দেবার দুর্বল প্রচেষ্টাও ব্যর্থ করে দেবার ষড়যন্ত্রে নেমেছে খণ্ড খণ্ড মেঘ। মাঝে মাঝে মালভর্তি কার্গো যাচ্ছে হাইওয়ে ধরে। তার হেডলাইটে আলোকিত হয়ে উঠছে রাস্তা। দু একটা বেজি হয়তো রাস্তার কাঁপনে ভয় পেয়ে দৌড় মারছে জঙ্গলের দিকে। দেখে কি বোঝার উপায় আছে, একটু পরে কি ঘটতে যাচ্ছে এখানে? একটু পরে একটা কিছুকে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখা গেল ।

হঠাৎ একটা ট্রাক আসতে লাগল দূর থেকে। সচল হয়ে উঠল জিনিসটি। কিছু একটা বাড়িয়ে দিল সামনের দিকে। ট্রাকের আলোয় বোঝা গেল, বাড়িয়ে দেয়া বস্তুটি একটি হাত। সুতরাং, এতক্ষণ যাকে জিনিস জিনিস করছিলাম, সেটা মানুষই বটে।

কিন্তু এই জঙ্গলে মানুষ আসবে কোত্থেকে? আর সে রাস্তার পাশে বসে হাতই বা বাড়িয়ে দেবে কেন? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে মানুষটির অতীত সম্বন্ধে কিছু জানা প্রয়োজন। জানা প্রয়োজন কি সেই ঘটনাপরম্পরা যা তাকে ও এই নির্জন রাস্তাকে একই চিত্রপটে স্থান দিয়েছে। তবে চলুন, প্রিয় পাঠক, ঘুরেই আসা যাক মানুষটির অতীত থেকে। ৩ লোকটির নাম রাফায়েল দেল তোরো। সংক্ষেপে রাফায়েল।

সে পেশায় একজন খুনি। পেশাদার খুনি। প্রফেশনাল কিলার। এ পর্যন্ত একটা অ্যাসাইনমেন্টেও ব্যর্থ না হবার বিরল রেকর্ড তার। ইস্পাতের মত নার্ভ আর পাথরের মত হৃদয় তাকে আন্ডারগ্রাউন্ডের সবচেয়ে নামকরা খুনিতে রূপান্তরিত করেছে।

অনেকদিন ধরেই পুলিশ খুঁজে বেড়াচ্ছিল তাকে। কিন্তু পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে একের পর এক খুন করে ঠিকই বাইন মাছের মত পিছলে বেরিয়ে যাচ্ছিল সে। সর্বশেষ খুনের জন্য রাফায়েল এই জঙ্গলের মধ্যে একটা বাগানবাড়িকে বেছে নিয়েছিল। এখানে খুন করলে ধরা পড়ার সম্ভাবনা ছিল শতকরা শূন্যের কাছাকাছি। খুনটা করেও ফেলেছিল রাফায়েল।

ছয় ছয়টা বুলেট ঢোকার কথা ছিল হতভাগ্য ভিকটিমের বুকে। কিন্তু ভাগ্যটা এমনই, তিনটা গুলি করার পরই কোথা থেকে এক পুলিশ ইন্সপেক্টর চলে আসে। ব্যাটা কোথাও ঘাপটি মেরে ছিল কিনা কে জানে? এসেই রাফায়েলের পা লক্ষ্য করে গুলি চালায় সে। বেচারা ইন্সপেক্টর! আসবি যখন, এক ব্যাটালিয়ন সৈন্য নিয়ে আসতি! বা গুলি শেষ হবার পর ঢুকতি! বা রাফায়েলের বুকেই না হয় গুলি চালাতি! প্রমোশনের লোভে রাফায়েলকে পঙ্গু ধরে নিয়ে যাবার ইচ্ছাই তোর কাল হল। রাফায়েলের পিস্তলের চতুর্থ ও পঞ্চম গুলি তোর বুকে ঢুকে গেল।

বেচারা! একটার জায়গায় দুটো লাশ ফেলার পর পালিয়ে আসাই রাফায়েলের একমাত্র লক্ষ্য ছিল। কিন্তু মরার গুলি থামার আগে এমন একটা নার্ভ ইনজুরি করে দিয়ে গেছে, যার ফলে ডান পা-কে আর অনুভবই করতে পারছে না রাফায়েল। নাড়ানো তো দূরের কথা। আস্তে আস্তে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করতে লাগল সে। এখন একটাই লক্ষ্য, বাঁচতে হবে।

প্রথমে জামা খুলে পা বাঁধল সে। তাতে রক্ত পড়া কমে যাবে। তারপর কোনমতে বামপায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়িটা একটু চক্কর দিল সে। কোন খাবার নেই। কোন ফার্স্ট এইড নেই।

কিছুই নেই। বাথরুম আছে, পানি নেই। খালি শোয়ার মত একটা খাট আছে, কিন্তু শোবে কে? বাইরে যাবার শক্তি সীমিত, কিন্তু জীবন তো বাঁচাতে হবে। সেই তাগিদেই অবশেষে পিস্তলটা নিয়ে হেঁচড়ে হেঁচড়ে বেরিয়ে এল রাফায়েল। কিন্ত এখন কি করবে সে? এখানে পড়ে থাকলে মৃত্যু নিশ্চিত।

উপায় একটাই, রাস্তায় গিয়ে কোন একটা গাড়িতে উঠে পড়া। তারপর শহরে যদি একবার পৌঁছানো যায়, আর ভাবতে হবে না। এ যাত্রা জীবনটা বাঁচবে। কিন্তু রাস্তা পর্যন্ত তো যাওয়া লাগবে, নাকি? রাফায়েল হেঁচড়ে হেঁচড়ে এগুতে লাগল। তার পরনে একটা শুধু গেঞ্জি, ডান পায়ে অসহ্য যন্ত্রণা, তবে যন্ত্রণা যে ঠিক কোনখানে এটা সে বুঝতে পারছে না।

পিস্তলটা তার কোমরে গোঁজা, বেঁচে না থাকলে ওটা কোন কাজে লাগবে কে জানে? জঙ্গলে অসংখ্য কাঁটাগাছ। ঝোপঝাড়। রাফায়েলের দুহাতই সমানে ছিলতে লাগল। আর প্রায় মুহূর্তেই আঘাত লাগতে লাগল গুলি লাগার জায়গাটায়। একের পর এক আর্তনাদ বেরুতে লাগল রাফায়েলের মুখ দিয়ে।

তার শক্তি শেষ হয়ে আসছিল। তবু, বাঁচতে হবে... আসলে বাঁচার ইচ্ছাটাই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। রাফায়েল তো ছেড়েও দিতে পারত। ঐ বাড়িতেই পড়ে থাকতে পারত মৃতবৎ। কিন্তু অসহ্য যন্ত্রণাও পানি হয়ে যায় বেঁচে থাকার আনন্দে, আশায়।

আর সে কারণেই মৃতপ্রায় রাফায়েলকে আমরা দেখি চল্লিশ মিনিটের পথ পাঁচ ঘণ্টার ম্যারাথনে রূপান্তরিত করে রাস্তার ধারে পৌঁছুতে। সারা মুখ ঘামে ও ক্লেদে মাখামাখি, কিন্তু তার মাঝেও বেরিয়ে আসে দিগবিজয়ীর হাসি। ৪ হাত বাড়িয়ে দেয় রাফায়েল। এই ট্রাক, থামো থামো। কিন্তু এই কথাটুকু ড্রাইভারের কান পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য যতটা শক্তি নিয়ে ভোকাল কর্ড দিয়ে বায়ু নির্গত করা প্রয়োজন, ততটা শক্তি রাফায়েলের অবশিষ্ট ছিল না।

তার চিৎকারে গলা দিয়ে একটা বেড়াল ডেকে ওঠে যেন। অথবা একটা বাচ্চা মেয়ে। ট্রাক চলে যায়। আবার অন্ধকার হয়ে যায় সবকিছু। খালি চাঁদটা সুযোগমত ভেংচি কাটে।

রাফায়েল অপেক্ষা করে। কিসের অপেক্ষা? জীবনের? নাকি মৃত্যুর? এ প্রশ্নের উত্তর হয়তো তার নিজেরই জানা নেই। আরও বিশ মিনিট চলে যায়। রাফায়েলের মনে হয় যেন সে বিশ শতাব্দি ধরে অপেক্ষা করছে। চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করে সে।

পায়ের অসহ্য যন্ত্রণাটা বেড়ে যায়। শরীরে আর এক ফোঁটা শক্তিও অবশিষ্ট আছে কি না সন্দেহ হয় তার। এমন সময়, হঠাৎই যেন রাস্তার কাঁপন টের পায় সে। খুব আস্তে, খুব আস্তে। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে কাঁপুনির তেজ।

গাড়ি আসছে! রাফায়েলের হৃদয়ে রক্ত ছলকে ওঠে। আশার শেষ সুতোটি আঁকড়ে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করে সে। শরীরের সর্বশক্তি সঞ্চয় করে এগুনোর চেষ্টা করে রাফায়েল। হেঁচড়ে হেঁচড়ে। পাকা রাস্তায় এতক্ষণের ছেলা হাত আরও ছিলে যায়, পায়ের ব্যথাটা হঠাৎ প্রবল কামড় দেয়।

দাঁতে দাঁতে চেপে সবই সহ্য করে রাফায়েল, বাঁচতে হবে তাকে। রাস্তার ঠিক মাঝখানে পৌঁছে যায় সে। হাঁপাতে থাকে কুকুরের মত। তৃষ্ণার্ত চাতকের মত চেয়ে থাকে গাড়িটা দেখার আশায়। হঠাৎই দৃশ্যমান হয় লরিটা।

আনন্দে চোখে প্রায় জল এসে যায় রাফায়েলের। এবার পালাবি কোথায়? একটা জলজ্যান্ত মানুষ রাস্তা আটকে থাকলে গাড়ি থামতে বাধ্য। এরই মধ্যে গাড়িটা বেশ কাছে চলে এসেছে। রাস্তার কাঁপুনিটাও ধরেছে সেইরকম। তারপরই রাফায়েল একটা কিছু লক্ষ্য করে, যা দেখে ভয়ে তার হৃদপিণ্ড প্রায় গলার কাছে উঠে আসে! জিনিসটা মারাত্মক, এবং আসলেই প্রচণ্ড ভয়ের।

৫ লরিটা চলছে দুলে দুলে। ভীষণ দুলে দুলে। অস্বাভাবিক দুলে দুলে। ড্রাইভারের সিটের দিকে তাকাল রাফায়েল। ওখানে কেউ নেই! না না, আছে, কিন্তু তার মাথা ঢলে পড়েছে স্টিয়ারিঙের উপর।

অর্থাৎ, লোকটা ঘুমাচ্ছে নয়তো ঢুলছে! যে লরিটার মাঝে সে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিল, সেই লরিটাই তার মৃত্যুর দূত হয়ে আসছে! হঠাৎ চঞ্চল হয়ে উঠল তার সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। শরীরে যেন অ্যাড্রেনালিনের স্রোত বয়ে গেল। ‘সরতে হবে, রাস্তার মাঝ থেকে সরতে হবে!’-নিজেকে বারবার এই তাগিদ দিচ্ছিল সে। কিন্তু বাম পায়ের উপর দাঁড়াতে গিয়েই তেরছা ভাবে আবার রাস্তায় পড়ে গেল সে। মাথা ঠুকে গেল শক্ত পিচের সাথে।

জগতটা তার হঠাৎই ছেয়ে গেল অন্ধকারে। কিন্তু এভাবে পড়ে থাকলে নির্ঘাত মৃত্যু! হয়তো এজন্যেই একটু পরেই চোখ খুলে গেল তার... চোখ খুলে রাফায়েল দেখল, লরিটা খুব বেশি হলে চার সেকেন্ডের দূরত্বে আছে। মাত্র চার সেকেন্ড! মৃত্যু শিয়রে জেনেও, রাস্তা থেকে হেঁচড়ে সরে আসার আপাতত ব্যর্থ ও হাস্যকর চেষ্টা করতে করতে, ইস্পাতকঠিন স্নায়ুর মানুষ রাফায়েল তার জীবনের শেষ কিছু হিসাব সেরে নিল। The last five seconds of Rafael Seconds: 5.00 – 4.00 এগিয়ে আসছে ঘাতক লরিটা। শেষমেশ এর হাতেই আমার মৃত্যু লেখা ছিল।

হা ঈশ্বর! একসময় এটার বড় বড় চাকাগুলো আমার পেটের উপর উঠে যাবে, নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে আসবে গলগল করে, হাড়গুলো ভেঙ্গে যাবে মটমট করে, খুলিটা ফাটবে প্রচণ্ড ‘ঠাস!!’ শব্দে, মগজ ছিটকে বেরিয়ে ছেয়ে দেবে রাস্তা...ওহ, কি যন্ত্রণাদায়ক! কি ভয়ঙ্কর!! কি করব আমি এখন? দুর্ভাগ্য আমার পিছু ছাড়লি না, শেষ পর্যন্ত এভাবে প্রতিশোধ নিলি? সারাজীবন অন্যের বাঁচামরা নিয়ন্ত্রণ করে শেষমেশ এইভাবে মরতে হবে আমাকে? এইভাবে, পশুর মত? এত ভয়ঙ্করভাবে? ভাবো রাফায়েল, ভাবো। বাঁচতে হবে তোমায়। Seconds: 4.00 – 3.50 কোমরে একটা পিস্তল গোঁজা আছে। সেটা বের করে নিলাম। একটাই গুলি বাকি আছে এতে।

দেব নাকি সোজা ড্রাইভারকে গুলি করে? নাহ, তাহলে ব্রেকটা কষবে কে? মরতে হবেই। Seconds: 3.50 – 3.00 আকাশে একটা ফাঁকা গুলি করব? তাহলে যদি ব্যাটা জেগে উঠে কড়া ব্রেক করে? না, এটাও হবে না বোধহয়। ও ব্যাটা শুনতেই পাবে কি না সন্দেহ আছে, যে ঘুম ঘুমাচ্ছে! আর শুনে যদি ধড়ফড় করে জেগে ওঠে, তাহলেও ব্যালান্স ঠিক করতে তার কিছু সময় লাগবে। সে জেগে উঠে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঐ চাকাগুলো আমায় ডলে দিয়ে যাবে। মরতে তাহলে হচ্ছেই।

Seconds: 3.00 – 2.50 একেবারে সোজা সামনের চাকায় গুলি করব নাকি? তাতে যদি গাড়িটা ব্যালেন্স হারিয়ে এদিক ওদিক চলে যায়? ধুর। ব্যালেন্স হারালেই তো সমস্যা। এখন যে ডিসটেন্স তাতে গাড়িটা আর এদিক ওদিক যাবে না, সোজা গায়ের উপর এসেই পড়বে। তাহলে মরছই, না, রাফায়েল? Seconds: 2.50 – 2.00 গুলি তো একটাই আছে। অপচয় করার কি দরকার? সোজা যদি কানের উপর গুলি করি, তাহলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়।

পশুর মত তো আর মরতে হচ্ছে না! হয়তো চাকাটা পেটের উপর দিয়েই যাবে, হয়তো নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে আসবে ঠিকই, হয়তো মগজটা গলগল করেই বেরিয়ে আসবে ঠাস করে ফেটে যাওয়া খুলির অভ্যন্তর থেকে...কিন্তু সেই অসহ্য যন্ত্রণা তো আমাকে টের পেতে হবে না! আমি তো তখন চিরশান্তির দেশে! Seconds: 2.00 – 1.00 পিস্তলটা কানের কাছে ঠেকালাম। বেশ ঠাণ্ডা। মৃত্যুর মত? লরিটা এত কাছে! এত চিল্লালাম, ড্রাইভার শালা মাতাল হয়ে ঘুমাচ্ছে। ইস, বেঁচে থাকলে বুঝিয়ে দিতাম ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে গাড়ি চালাতে কেমন মজা! শালা এতক্ষণ ধরে হেঁচড়ানোর চেষ্টা করছি, হাতগুলো যেন আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিয়েছে কেউ। পায়ের উপর বসিয়ে দিয়েছে গোটা হিমালয় পর্বত।

নড়তে পারলাম সামান্যই। নাহ, এ লাইনে হবে না। চেষ্টা ছেড়েই দিলাম। কেন যেন খুব হাসি পাচ্ছে। কেন যেন মনে হচ্ছে আমি অদৃষ্টকে জয় করতে পারব।

কেন যেন মনে হচ্ছে আমি মৃত্যুকেও ফাঁকি দিতে পারব। শেষ মুহূর্তে আমার ভিকটিমরা সব প্রাণভিক্ষা করত। তাদের সবকিছু দিয়ে দিতে চাইত। বিনিময়ে চাইত বেঁচে থাকতে। শুধুই বেঁচে থাকতে।

যেভাবেই হোক, বেঁচে থাকতে। আমি হাসতাম। কি অর্থহীন এই প্রার্থনা! কিন্তু আমি কার কাছে প্রানভিক্ষা চাইব? ঈশ্বরের কাছে? আমার মত পাপীর ডাক তিনি শুনবেন? কোন প্রার্থনাই আমার জানা নেই। ওর চেয়ে বরং বলি, twinkle twink… Seconds: 1.00 – 0.00 ঠিক সেই মুহূর্তে রাফায়েলের ডান কানের উপরে আঘাত করল একটি 6 mm বুলেট। প্রথমে স্কাল্পের পাঁচটা লেয়ার সহজেই ভেদ করে গেল এটি।

তারপরই সশব্দে ভেদ করল স্কোয়ামাস টেম্পোরাল নামের হাড়টি। তারপর ভেদ করল মস্তিষ্কের তিনটা আবরণী, এক, দুই, তিন। তারপর ডান সেরেব্রাল হেমিস্ফেয়ার, ফ্যালক্স সেরেব্রি, বাম সেরেব্রাল হেমিস্ফেয়ার। তারপর অপরদিকের ম্যাস্টয়েড বোনে গেঁথে গেল এটি, ম্যাস্টয়েড শুদ্ধ মাথার একটা অংশ নিয়ে সবেগে বেরিয়ে গেল সামান্য সেই বুলেট। পড়ে গেল রাফায়েল।

বোধবুদ্ধি সব অবলুপ্ত। শুধু হৃদয়টা এখনও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে, ঢিপঢিপ...ঢিপঢিপ... ওর নিথর দেহের উপর দিয়ে চলে গেল লরিটা। প্রথমে সামনের দুই চাকা। কিন্তু কি আশ্চর্য! চাকাদুটো তো তাকে ছুঁয়েও দেখল না! তারপর সারা বডি। লরির পেছনের দু চাকা ঘুরানোর জন্য একটা বড় কিছু মাঝখানে লটকে থাকে, সেটাও রাফায়েলকে একটুর জন্য মিস করে গেল! একদম শেষ মুহূর্তে তাকে অতিক্রম করল পিছনের দুটি চাকা।

আশ্চর্য, চাকারা কি তার সাথে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে নাকি? নাকি অভিমান? মুখ বেঁকিয়ে চলে গেল, একটুও স্পর্শ করল না? তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়াল, প্রিয় পাঠক? রাফায়েল কি পারল মৃত্যুকে ফাঁকি দিতে? অথবা অদৃষ্টকে এড়াতে? আপনারা হয়তো বলবেন, ব্যাটা রাফায়েল বোকার হদ্দ। ও কেন বুঝতে পারল না লরিটা এত উঁচু? আর বেশি বুঝে ওকে আত্মহত্যাই বা করতে বলেছে কে? বেশিটা না বুঝলেই তো শালা বেঁচে যেত! আবার কেউ কেউ বলবেন, ও তো শেষ পর্যন্ত নিজের হাতেই ভাগ্যটা লিখল। বরণ করে নিল স্বেচ্ছামৃত্যু, মৃত্যু তার উপর জোর করে চাপিয়ে দেয়া তো আর হোল না। এটাও তো মৃত্যুকে ফাঁকি দেয়া, বা অদৃষ্টের উপর টেক্কা দেয়া, নাকি? আপনার প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট থাকুন। আমি ঠিকই বলব, সবকিছুকে ফাঁকি দেয়া যায়, দেয়া যায় না শুধু মৃত্যুকে।

… লরিটা চলে যাবার কয়েক মাইক্রোসেকেন্ড পর, আমি, হ্যাঁ আমি, মৃত্যু, রাফায়েলকে গ্রাস করলাম। ******************সমাপ্ত********************* ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.