আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চেহারা

এখানে শুধু বাকরুদ্ধ দেয়াল,দেয়ালে তোমার আমার করুণ কৃতদাস,ছায়া,ছায়াশরীর-অশরীর চেহারা নিয়ে ওয়ালিদ কঠিন সমস্যার মধ্যে আছে । ওয়ালিদের ধারণা পৃথিবীর সাতশো কোটি মানুষের মধ্যে অন্তত দু কোটি মানুষ আছে যারা তার মতো দেখতে এবং এর মধ্যে এক কোটি মানুষ বাংলাদেশে থাকে । এমন চিন্তা হওয়া ব্যাপারটা অস্বাভাবিকে পর্যায়ে পড়ে কিন্তু ওয়ালিদের জন্য ব্যাপারটা স্বাভাবিক । ওয়ালিদ যেখানেই যায় সেখানেই দু একজন বলে সে নাকি তার অমুকের তমুকের মতো দেখতে । অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার ধরণ নির্ভর করে তার মেজাজের উপর ।

যখন মেজাজ খারাপ থাকেঃ :এই যে ছেলে একটু শোনো তো এইদিকে । খুব চেনা চেনা লাগছে । নাম কি তোমার ? :আমার নাম ওয়াও । : ওয়াও ? :জ্বী । ওয়াও :মানুষের নাম ওয়াও হয় কিভাবে ? আগে পিছে তো কিছু থাকা লাগে ।

তোমার আসল নাম কি ? ঠিক করে বলতো । :আমার আসল নাম ওয়ালিদ হাসান। ওয়ালিদ হাসান নামটা আমার ফ্রেন্ডদের কাছে ট্রেনের মতো লাগে । আমার ফ্রেন্ডরা ট্রেনমার্কা নাম পছন্দ করে না । তারা বাসমার্কা নাম পছন্দ করে ।

তাই তারা আমার ট্রেনমার্কা নাম থেকে পাঁচটা বগি নামিয়ে দিলো । হয়ে গেলো 'ওয়া' । কিন্তু ওয়া শুনতে কেমন কেমন লাগে তাই তারা আরেকটা ও লাগিয়ে দিলো । হয়ে গেলো ওয়াও। ওয়ালিদ হাসান থেকে ওয়াও ।

সুন্দর না আঙ্কেল ? একবার বলেন তো ওয়াও । লোকটা ওয়াও বলে না । বড় ধরনের একটা ধাক্কা খায় । বিড়বিড় করে কি যেন বলে । আঙ্কেল বুঝতে পারে এইটা কঠিন চিড়িয়া ।

এর সাথে বেশি কথা বলা হারামের পর্যায়ে পড়বে । : ও আচ্ছা । তুমি করো কি ? :আপনার সাথে কথা বলতেসি । :আমি বলতে চাচ্ছি তুমি আসলে করো কি? পড়াশুনা নাকি অন্য কিছু ? :আপাতত বাপের হোটেলে থাকি । খাওয়া দাওয়া ঘুম সব ফ্রি ।

হোটেলের বর্তমান অবস্থা খুব একটা ভালো না । হোটেলের মালিক আর্থিক সমস্যায় আছে এবং আমার উপর খুব রেগে আছে । যে কোনো সময় হোটেলের ফ্রী সার্ভিস বন্ধ হয়ে যেতে পারে । তখন পঙ্খীরাজ ছাড়া উপায় নাই । :পঙ্খীরাজ মানে ? :ভাবতেসি একটা রিক্সা টিক্সা কিনে ।

নাম রাখব পঙ্খীরাজ । পঙ্খীরাজ ছাড়া উপায় নাই মানে রিক্সা ছাড়া উপায় নাই । আই এম গোননা বি এ পঙ্খীরাজ পুলার । হা হা হা....সরি রিক্সাপুলার । এই পর্যায়ে লোকটার চোয়াল শক্ত হয়ে যায় ।

তিনি বুঝতে পারেন এই ছেলেটা মারাত্নক বেয়াদব । সোজা কথায় ত্যাদড় । এইরকম ছেলের সাথে কথা চালানো বুদ্ধিমানের কাজ না । লোকটা যথেষ্ট বুদ্ধিমানের পরিচয় দেয় । তাকে ছেড়ে দেয় ।

ওয়ালিদের খারাপ মেজাজ হঠাত্ করে ভালো হয়ে যায় । : ও আচ্ছা । তা বাবা ঠিক আছে । একটু চেনা চেনা লাগছিলো তাই একটু কথা বললাম । যাইহোক ভালো থেকো ।

:আপনিও ভালো থাকবেন আঙ্কেল । আর একটু দোয়া করবেন আমাকে যাতে পঙ্খীরাজ পুলার না হতে হয় । যখন মেজাজ ভালো থাকে (কোনো অতিরিক্ত সুন্দরী আন্টি) :এইযে ছেলে নাম কি তোমার বলতো । তোমাকে খুবই চেনা চেনা লাগছে । আশ্চর্য তো !! :আমার নাম মোঃ ওয়ালিদ হাসান ।

ডাকনাম ওয়ালিদ। আপনি আমাকে ওয়ালিদ বলে ডাকতে পারেন । আন্টি রীতিমতো মুগ্ধ হয়ে যান ওয়ালিদের ভদ্রতা দেখে । কি ভদ্র একটা ছেলে । কথাও বলতেছে মাথা নিচু করে ! বাহ ।

আজকালকের ছেলেরা এমনও হয়! :শোনো ওয়ালিদ । তুমি দেখতে ঠিক আমার বড়ো বোনের বান্ধীর ছোটো খালার বড় ছেলের ছোট মেয়ের বান্ধবীর বয়ফ্রেন্ডের মতো । :মেয়েটার নাম কি বলুন তো? :আইরিন :আইরিন ! বলেন কি ?? আইরিন তো আমার জি এফ । আপনার নাম কি বলুনতো আন্টি ?(যদিও আইরিন নামে কাউকে ওয়ালিদ একেবারেই চেনে না ) :তাই নাকি ? আমার নাম রেশমা :রেশমা আন্টি !!!আপনার নাম কতো শুনেছি আইরিনের কাছে !! আপনি যে অসম্ভব সুন্দরী একজন মহিলা এটাও আমি তার কাছেই শুনেছি । আপনার এতো প্রশংসা শুনেছি বলার মতো না ।

আমি ভাবতাম ও বাড়িয়ে বলে কিন্তু আপনাকে দেখার.পর মনে হচ্ছে ও একটু কমই বলে ফেলেছে। আপনি আসলেই অনেক সুন্দর। আন্টি আপনাকে আজ আমাদের বাসায় যেতেই হবে । এইতো কাছেই আমার বাসা। আন্টি চলেন প্লিজ প্লিজ রুপের প্রশংসা করার সাথে সাথে আন্টি একেবারে গলে একাকার হয়ে যান ।

:হাউ সুইট ! কিন্তু আমি তো আজ যেতে পারব না । আমার একটু কাজ আছে । ইন ফ্যাক্ট আমি কাজেই বেরিয়েছিলাম আর তোমার সাথে দেখা । :বলেন কি ?যেতে পারবেন না? (ওয়ালিদ এমন ভাব করে যেন সে খুব আপসেট) :না । আমাকে যেতেই হবে বাবা :কি আর করা ।

তবে আন্টি আপনি অবশ্যই একদিন আমাদের বাসায় আসবেন । ঐ যে নীল বাড়িটা দেখতেছেন ঐটা আমাদের বাড়ি । আপনিআর আইরিন চলে আসবেন সময় করে । রেশমা আন্টি ওয়ালিদের ভদ্রতা দেখে আরেকবার মুগ্ধ হয়ে যান । এবং কথা দেন তিনি অবশ্যই আসবেন ।

ঐ নীল বাড়িটাতে । কিন্তু নীল বাড়িটা ওয়ালিদের না । কার বাড়ি ওয়ালিদ তাও জানে না । একদিন যদি রেশমা আন্টি চলে আসে তাইলে বিশাল ধরা খাবে এইটা ভেবেই ওয়ালিদ আনন্দ পাচ্ছে । কিন্তু আইরিন নামের মেয়েটার জন্য মনটা একটু উদাস হয়ে যায় ।

ওয়ালিদ একটা বিয়ে বাড়িতে এসেছে । একজন লোক তাকে ডাকতেছে । ওয়ালিদের মেজাজ এখন ভালো না খারাপ এইটা সে বুঝতে পারছে না । সে এখন লোকটার সাথে কিভাবে কথা বলবে? মেজাজ ভালো থাকা অবস্থায় যেভাবে নাকি মেজাজ খারাপ থাকা অবস্থায় যেভাবে আচরণ করে সেভাবে? ওয়ালিদ কিছুই বুঝতেছে না ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।