আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহাকাব্যের খাতা সে উন্মুক্ত বক্ষে লেখাছিল স্বাধীন বাংলাদেশের অবিনাশী শ্লোগানঃ শহীদ নুর হোসেন দিবস সফল হোক।

aurnabarc.wordpress.com শহীদের রক্তলাভায় ভর করে এগিয়ে চলে ইতিহাসের নির্মম খেরোখাতা। অনেকে তাচ্ছিল্য ভরে বলে থাকেন রাজায় রাজায় যুদ্ধ করে উলু খাগড়ার প্রাণ যায়। কিন্তু এই সকল আত্মত্যাগ আর বলিদানের রক্তিম স্রোতধারায় ভেসে ভেসেই আজ এতো লাল হয়েছে স্বাধীনতা আর মুক্তির প্রতীক লাল সূর্যটা। এমনি ঘটেছিল ১৯৮৭ এর সেই দশই নভেম্বর। স্বৈরাচারী বিশ্ববেহায়া হিংস্র শ্বাপদের দংশন থেকে জাতিকে মুক্ত করার দৃঢ় প্রত্যয়ে তখন সবে চোয়াল শক্ত হয়েছে দেশবাসীর।

অনেক সকাল থেকেই সবাই এসে জড়ো হতে শুরু করে গুলিস্তান পুরানাপল্টন এলাকায়। প্রতিবাদী আবাল বৃদ্ধ বনিতার পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। এরশার্ক ঢাকার রাজপথে মেঘের ঘনঘটা না থাকলেও আকাশের রোদ্দুরে ডানা মেলেনি গণতন্ত্রের শঙ্খচিল। সেদিন দেশের মানুষ দেখেছিল স্বৈরাচারী শকুনের কালো থাবা। সে হিংস্র শকুন পৈশাচিক নির্মমতায় ঢাকার রাজপথ আর সূর্যের মধ্যে কঠিন দেয়াল তৈরী করে দেশেল গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করতে চেয়েছিল।

কিন্তু মুক্তিকামী মানুষ পঁচাগলা পশুর পরিবর্তে নিজের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে শকুনের শবক্ষুধা মিটিয়েছিল। শহীদ নুর হোসেন সেদিন জাতির প্রয়োজনে হয়েছিলেন বিশ্ব ইতিহাসের কিংবদন্তী এক জীবন্ত পোস্টার। একাত্তরের স্বাধীনতার সূর্যকে বার বার বগলের নিচে আটকে ফেলতে চেষ্টা করেছে কুটিল সুগ্রীব। আদ্রেই দরোভস্কির তোর ও কি সূর্য আছের কেচ্ছার সাথে মিল রেখে সূর্যের দিকে লোলুপ দৃষ্টি দিয়েছে কুমির আর ঘড়েলের দল। কিন্তু ইতিহাসকে স্বাক্ষী করা এ বীর জাতি কখনই সত্য আর বাস্তবতার সাথে আপোষ করেনি।

মেনে নেয়নি ইতিহাসের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা গজদন্তের স্তম্ভকেও। তাইতো এই দশ নভেম্বর একজন সূর্যের অবতার হিসেবে সেদিন ঢাকার রাজপথে নেমেছিলেন নুর হোসেনের মতো দেশপ্রেমিক। সেদিন সমস্ত জনতাকে ছাপিয়ে জলন্ত সূর্যের মতো একটি মুখই বার বার উদয় হয়েছিল তা শহীদ নূর হোসেনের। মুক্তিকামী নূর হোসেনের পরনে ছিল জিন্সের ট্রাউজার আর গণতন্ত্রের পথে যাত্রার স্বপ্ন দেখা নুর হোসেন প্রভাতফেরির মতো খালি পায়ের মাড়াতে চেয়েছিলেন স্বৈরতান্ত্রিকতার রাজপথ। ক্লান্ত অবসন্ন ঘর্মাক্ত কলেবরে অবহেলায় শার্টটিকে জড়িয়ে রেখেছিলেন কোমরে।

কিন্তু নগ্ন শরীরের বুকে পিঠে সাদা রঙে লেখা ছিল সেই বিদ্ধংসী স্লোগান স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক। গণতন্ত্রের নেশায় পাগলপরা নুল হোসেন ছুটেছেন জনসমুদ্রের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। সবার চোখ বার বার আটকে যায় তার প্রতি। পৃথিবীর ইতিহাসের রেকর্ড এ রকম জীবন্ত পোষ্টার যে কেউই কোনদিন দেখেনি। সবাই তাই নতুনের আহ্বানে হিংস্রতার শাপমুক্তি ঘটার আশায় অনেকটা উদ্দীপ্ত হয়েছিল।

সেদিনের জনসমুদ্রে বায়তুল মোকাররম, জিপিও জিরো পয়েন্ট আর পুরানাপল্টন এলাকায় এক অন্যরকম দ্যুতি ছড়িয়েছিল এই নুর হোসেন। গণতন্ত্র লাঞ্ছনাকারী মুক্তিকামী মানুষের বিবেক হত্যাকারী স্বাধীনতা ধর্ষণকারী পিচাশের ডাণ্ডাবরদার আর অস্ত্রধারী সাঙাতদের দৃষ্টি পড়ে তার উপর। তারা সহ্য করতে পারেনি এই প্রতিবাদী দীপ্ত শ্লোগান। প্রায় প্রতিটি মিছিলের অগ্রভাগে হাত উচিঁয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষের মনের কথাগুলোই জানান দিয়েছিল সে। তার বুকে লেখা - স্বৈারাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক আরেকবার মনে করিয়েছিল গণতন্ত্র দিল্লিকা লাড্ডু নয়।

আব্রাহাম লিংকনের দেয়া ভাষন আর রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের বয়ানে আটকে থাকা বইয়ের বয়ান নয়। নুর হোসেন স্মরণে নির্মিত জিরো পয়েন্ট চত্তর এর জন্য চরম মূল্য দিতে হয়েছে থাকে। কিছুক্ষণ পরই শুরু হওয়অ গুলির বৃষ্টি ঝাঝরা করে দিয়েছিল নুর হোসেনের নশ্বর দেহ। বায়তুল মোকাররমের প্রধান ফটকের কাছে লুটিয়ে পড়েছিল সময়ের সাহসী সন্তান নূর হোসেন। ক্লাস নাইনে পড়া সুমন নামের এক কিশোর গুলিবিদ্ধ নূর হোসেনকে রিকশায় তুলে নিয়েছিল হাসপাতালে নেয়ার জন্য।

রিকসা’টা গোলাপ শাহ মাজারের কাছে আসতেই পুলিশের কয়েকটা গাড়ি এসে ঘিরে ফেলে তাদের। কিশোর সুমনের কলার ধরে পুলিশরা তাকে টেনে রিকশা থেকে নামিয়ে নূর হোসেনকে টেনে হিচড়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এরপর আর তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। গভীর রাতে আরো দুজন শহীদের সাথে জুরাইন কবরস্থানে মাটিচাপা দেয়া হয় নূর হোসেনকে। সেদিন ভূলুন্ঠিত নুর হোসেনের দেহ হারিয়ে গেলেও সে হারিয়ে যেতে দেয়নি দেশের মানুষের স্বাধীনচেতা মনোভাব আর মুক্তবুদ্ধির চেতনাকে।

সত্যি বলতে কি জীবন্ত নূর হোসেনের সেই জীবন্ত পোস্টার থেকেও তাঁর লাশকে বেশি ভয় পেয়েছিল স্বৈরাচারী শকুন। স্বৈরতান্ত্রিক শকুন তখন নুর হোসেনের লাশেই খুজে পেয়েছিল একাত্তরে শহীদদের লাশের সোঁদা গন্ধ। তাইতো তারা গুম করতে চেয়েছিল তারা নূর হোসেনকে। সুযোগ বুঝে রাতের আঁধারে মাটিচাপা দিয়েছিল নূর হোসেনকে। কিন্তু ছাই চাপা আগুন চাপা থাকেনি।

তারা জানতো এ লাশ মাটির তলায় থাকার নয়। এরকম বিপ্লবীরা কোনোদিন মরে না, এরা জেগে উঠবেই। তবুও একথা ভাবতে কষ্ট হয় যখন দেখি জাতির স্বাধীনতার পতাকা খামচে ধরতে বসে পুরোনো শকুন। হটাৎ করেই দমকা বাতাসের মতো মনে হয় আমরা কি শহীদ নূর হোসেনকে ভুলতে বসেছি ? আমাদের গণতন্ত্র কি হারিয়ে যেতে বসেছে। এসব প্রশ্নের উত্তর খুজে ফিরছি নিরন্তর।

তাই ১০ নভেম্বরের এই দিনে আজ গভীর শ্রদ্ধাভেরে স্মরণ করছি নুর হোসেনকে। সেই সাথে সবার প্রতি আহ্বান রাখছি ঐ মহান দেশপ্রেমিকের স্বপ্ন স্বার্থক করতে একযোগে কাজ করতে। সত্যই কবি শামসুর রহমান বলেছিলেন বুক তার বাংলাদেশের হৃদয় । সবার কন্ঠে আরেকবার ধ্বনিত হোক সেই শ্লোগান, বজ্রনিনাদের ফেটে পড়ুক স্বৈরতান্ত্রিকতার মসনদ.. গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক, মানবতা মুক্তি পাক, মুক্তচেতনা মুক্তি পাক।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.