আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পেঁচা কথন – ১ -

কিছু মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে। কিছু মানুষ স্বপ্নটা সত্যি করার জন্য ঘুম থেকে জেগে উঠে। জীবন আপনার কাছে সেভাবেই ধরা দিবে আপনি যেরকম থাকবেন। বৃহস্পতিবার রাত। বৃহস্পতিবার রাত ছাড়া পেঁচা কথন কখনো লিখা হবেনা।

আমি সাধারনত ঢাক-ঢোল পিটায় যেটা শুরু করি সেটা আর চালায় যেতে পারিনা। পেঁচাকথন আমার এক বন্ধুকে দেওয়া কথন দিয়ে শুরু করলাম। যেহেতু কাউকে কোনরকম কথন দিলে সেটা ঠিকমত পালন না করাই আমার কাজ তাই এটাও দেরীতে শুরু হল। এটা অনেকটা এরকম ব্যাপার যে কেউ একজন আপনাকে গোপন কথা বলার পর সবার শেষে বলবে এটা কিন্তু কাউকে বলিস না। শেষের লাইনটার ঝামেলা হলো এমনিতে যদি কেউ আপনাকে গোপন কথা বলে আপনি সেটা গোপনই রাখতে চাবেন।

সমস্যা হবে যখন সেটার পিছনে কেউ বলবে - কাউকে বলিস না কিন্তু!! পেঁচাকথনের প্রথম পর্ব লিখব প্রবাদ নিয়ে। প্রবাদ-প্রবচন নিয়ে আমার বেশ আগ্রহ আছে। আগ্রহের কারন ঠিক জানিনা তবে স্কুলে পড়ার সময় বাংলা ২য় পত্র বইয়ের এই অংশটা খুলে বসে থাকতাম। কতনা মজার মজার প্রবাদ! যেই প্রবাদটা আমার ক্ষেত্রে বেশি খাটত সেটা হল অকাল কুষ্মান্ড। এক কথায় যাকে বলা হয় অপদার্থ।

বহুকাল ধরে আমি চিন্তা করতাম এই কুষ্মান্ড জিনিসটা কি!! এর মানে নাকি কুমড়া বা কাঁকুড়। বাবার ভাইকে কাকু ডাকি। সেই কাকু'র সাথে ড় লাগাইলে যে কাকুড় হয় তার মানে নাকি কর্কোটিকা। মানে শসা জাতীয় লতাফল। অকাল কুষ্মান্ড মানে তাহলে দাড়াল অসময়ে উৎপন্ন কুমড়া।

কুমড়া অবশ্য সময়ে হোক সময়ে হোক কোনরকমে দিলে না খেয়ে উঠিনা। কি সব ভিটামিন জানি থাকে। অতি লোভে তাঁতি নষ্টের গল্পটা কেউ জানেন? এটা আমার খুব জানার ইচ্ছা ছিল। লোভ সব ধরনের পেশার লোকজনেরই থাকার কথা তাঁতি বেচারা আসল কোথেকে? এরকম একটা প্রবাদের পেছনে মজার গল্পের অবতারণা দরকার ছিল। মূল গল্পটা মোটেও মজার না, হতাশ হতে হয়।

এক রাজার নাকি একটা গাই ছিল। সেই গাই বড়ই দুরন্তপনা করত। সেই দুরন্তপনে দেখে রাজা বলল, কাল সকালে উঠে রাস্তার পাশ দিয়ে প্রথম যে যাবে তাকেই এই ইভাটা (ইভা রহমান!) স্যরি গাভিটা দিয়ে দিব। রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়া তাঁতি এই কাহিনি শুনল। সে সারা রাত গাভিটা ধরার জন্য দামী সুতা দিয়ে দড়ি বানাল।

নিজের মা জানি সেই গাভির দুধ বিক্রী করতে না পারে তাই মায়ের চোখ অন্ধ করে দিল (এরকম নিরীহ গল্পে এই জিনিস ঢুকল কেমতে কে জানে!)। সকালে মানে খুব ভোরে রাজার কাছে গেলে রাজা তার এই সকালে আগমনের হেতু জিজ্ঞেস করল। তাতি ইভাটা মানে গাভীটা প্রার্থনা করল। রাজা বলল, হারামী , এই বলে দাড়োয়ান ডেকে তাঁতিকে তাড়াল। অতি লোভের জন্য দামী সুতা আর মায়ের চোখ (!!) গেল।

নিজেও মাইর খেল। মাইরের উপর ভাইটামিন আছেরে তাঁতি। অতি লোভে তাঁতী নষ্ট। অতি লোভে তাঁতি নষ্টের থেকে 'অন্ধের হাতি দেখা' এই প্রবাদটার পেছনের গল্পটা অনেক অজার। বাস্তব জীবনে প্রতি পদে পদে আপনি এর উদাহরণ পাবেন।

বাস্তব উদাহরন দিতে গেলে বলা যায়, এই শীতকালেই কয়েকদিন পর ব্যাডমিন্টন কোর্ট যখন কাটবেন তখন অনেককেই পাশে পাবেননা। কিন্তু মাতব্বর সব জায়গায় থাকে। কোর্ট কেটে ফেলার পর এসে বলবে লাইনটা বাঁকা হেন তেন। ইংরেজীতে একটা কথা আছে ইজিয়ার টু সে, ডিফিকাল্ট টু ডু। অন্ধের হাতি দেখা ব্যাপারটা হচ্ছে, কয়েকজন অন্ধের ভারী শখ হয়েছে হাতি কি জিনিস বুঝার।

পিলখানা মানে ঢাকা শহরের বিডিআরের পিছনের যে জায়গাটা সেটা এক সময় ইংরেজদের হাতিশালা ছিল। হাতিশালা মানেই পিলখানা। অন্ধরা পিলখানায় গিয়েছে হাতি দেখতে। কেউ হাতির পা ধরল সে বলল, আইশালা, হাতি পুরা পিলার বা স্তম্ভের মত। যে হাতির কান ধরল সে বলল, বালের কথা কস আমার! হাতি হইল কুলার মত।

যে লেজ পাইল সে বলল, ওরে বোকা*দারা, হাতি আর গরুর মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। হাতির পুরা বর্ণনা আসলে তাদের কাছে স্পষ্ট নয়। কোন বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা না নিয়ে পন্ডিতমন্যের মত মতামত দেওয়াকে অন্ধের হাতি দেখার সাথে তুলনা করা হয়। ভাল কথা আজ থেকে ১০০ বছর আগে ঢাকা শহরের পিলখানায় যে হাতিগুলা ছিল সেগুলাকে খাওইআয়্তে নেওয়া হইত কলাবাগান। চড়ানোর জন্য এলিফ্যান্ট রোড দিয়ে হাতিরপুল পার হয়ে নিয়ে আসা হত এদিকে।

তবে আরেকটু ওদিকে যে ভুতের গলি সেটা আসলে অন্য ব্যাপার। ঐ জায়গাটা জঙ্গল ছিল, পরে মিস্টার বুথ নামক একজন সেখানে থাকত। মিস্টার বুথ, বুথ , বুথের গলি বলতে বলতে তা ভুতের গলি হয়ে যায়। অনেকটা গ্র্যান্ড এরিয়া যেভাবে গ্যান্ডারিয়া হয়। তবে গ্যান্ডারিয়াতে আখের খেতও ছিল।

অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী দিয়ে লেখা শেষ হবে। অল্প বিদ্যা কখনোই সঠিক বিদ্যার সমতূল্য না তাই অল্পবিদ্যার প্রয়োগ সবসময়েই ভয়ংকর। এক বুইড়ার এক ছাতি ছিল আর এক নাতি ছিল। ছাতি মাথায় দিয়া নাতির জন্য ওষুধ নিয়ে আসল। সবাই বলল, ডাক্তারের কাছে জিজ্ঞেস করে আসেন ওষুধ কিভাবে খেতে হয়? বুইরা বলে , ডাক্তার কি আমার থেইকা বেশি জানে? ওষুধের ডিব্বায় লেখা , খাওয়ার আগে ভাল মত ঝাকাইয়া নিবেন।

কি ঝাকাইয়া নিবেন তা বলা নাই তয় বুইড়ার থেকে বেশি আর কেউ বুঝেনা। বুইড়া তার নাতিরেই ঝাকানো শুরু করল। নাতি মৃতপ্রায় অবস্থায় যাওয়ার সময় সত্যিকারের ডাক্তারের আগমনে নাতির জীবন বাঁচলেও পাবলিক বুইড়ার ছাতি দিয়া বুইড়ারে হেব্বি ডলা দেয়। পরে ডাক্তার বুইড়াকেও ওষুধ দেয় যেখানেও লেখা ছিল খাওয়ার আগে ঝাকাইয়া নিবেন। এখানেও প্রকাশিত - http://pechablog.com/archives/1395 ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।