আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাজেটে অস্বচ্ছ জ্বালানীখাত

খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো... বাজেটে অস্বচ্ছ জ্বালানীখাত হাসান কামরুল মহাজোট সরকার মেয়াদের শেষ প্রান্তে পৌছেছে। ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটই এ সরকারের মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই নির্বাচনমুখি বাজেট হবে এটা ধরে নেয়াই স্বাভাবিক। অন্যান্য সরকারের ন্যায় এ সরকারও তাদের শেষ বাজেটে যোগাযোগ ব্যবস্হাকেই প্রাধান্য দিয়ে ৭৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি এডিপি ( বাৎসরিক উন্নয়ন পরিকল্পনা) চুড়ান্ত করেছে। এবারকার প্রস্তাবিত বাজেটে যোগাযোগ খাতের পর শিক্ষা ও স্বাস্হ্যখাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।

অন্যান্য বাজেটে জ্বালানী খাতের উল্লেখযোগ্য অগ্রাধিকার থাকলেও শেষ সময়ে এসে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতকে স্মিথিত করে রাখার কৌশল নেয়া হয়েছে; যা মোটেই যুগোপযুগি নয় । কারন এ খাতে আগামি অর্থ বছরে নতুন প্রকল্পের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। এমনকি গত অর্থ বছরের অনেক প্রকল্পও এখন পর্যন্ত শুরু করতে পারেনি । নতুন অর্থ বছরেও বিদ্যুৎ খাতে প্রত্যাশা অনুযায়ী বরাদ্দ মিলছেনা। উন্নয়ন ও অনুয়ন্ন খাতে পাশাপাশি বরাদ্দ রাখা ব্যাপারে অর্থ বিভাগ অনঢ়।

গত অর্থ বছরে বিদ্যুৎ খাতে ৭ হাজার ৮৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে উন্নয়ন খাতে ৭ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা আর অন্নুয়ন খাতে রাখা হয়েছিল ৬ কোটি টাকা। আর আগামি অর্থ বছরে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ দেয়া হতে পারে ৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর এর পাশাপাশি ৬ হাজার কোটি টাকা রাখা হচ্ছে ভর্তুকি হিসেবে। বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রত্যাশা করা হয়েছিল কিন্তু অর্থ মন্ত্রনালয় কাঙ্খিত অর্থ বরাদ্দ দিতে নারাজ।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানীখাতে সবচেয়ে বড় বাধা ভর্তুকি। আর ভর্তুকির মুলে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মান। যদিও সরকার মনে করছে দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ছাড়া তাদের হাতে বিকল্প ছিলনা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মান পাশাপাশি যদি বড় ধরনের কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মান করা যেত তাহলে এসব রেন্টাল কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আস্তে আস্তে সরে আসা যেতো।

কিন্তু সরকার তা করেনি। কেন করেনি? এ প্রশ্নের উত্তর হয়তো ভবিষ্যতে জানা যাবে। জ্বালানী খাতে এবার প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এ থোক বরাদ্দকে বিশ্লেষকরা ভাবছেন অন্যভাবে। তাদের মতে রেন্টাল কুইক রেন্টালের দায় মেটাতেই এ থোক বরাদ্দের ব্যবস্হা রাখা হয়েছে।

অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টিকারী এসব রেন্টাল কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য আরো অর্থের প্রয়োজন হবে। সরকার জ্বালানী খাতে গত অর্থবছরের তুলনায় অধিক বরাদ্দের প্রস্তাব রাখলেও অর্থ বিভাগ এ খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ দিতে নারাজ। এর মুল কারন হচ্ছে জ্বালানীখাতে এ বাজেটে নতুন প্রকল্পের অস্তিত্ব কম। আগামি অর্থ বছরে জ্বালানী খাতে প্রকল্পের সংখ্যা ৩০টি। তবে এ সবক’টি প্রকল্পই চলমান প্রকল্প হিসেবে পরিগণিত।

বিদ্যুৎ খাতে আগামি অর্থ বছরে প্রকল্পের সংখ্যা ৫৪টি। মাত্র ৬টি নতুন প্রকল্প আর বাদবাকি সবক’টি প্রকল্পই চলমান প্রকল্প। অর্থ বিভাগ জানিয়েছে আগামি অর্থবছরের জন্য ২ হাজার ২২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হতে পারে। আর গেল বছরের বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার ৬শত ৪৮ কোটি টাকা। থোক বরাদ্দ ৬ হাজার কোটি টাকা ধরে জ্বালানী খাতে বরাদ্দ দাড়াচ্ছে ৯ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি।

কিন্তু জ্বালানী বিশেষঙ্ঘরা বলছেন থোক বরাদ্দের কারনে এ খাতে কোথায় টাকা ব্যয় হবে তা জানা বেশ দুস্কর হবে। তাই থোক বরাদ্দ মিসইউজ বা অপব্যবহারের সম্ভাবনাই বেশি। আর এ থেকে সুবিদা পাবে দেশি বিদেশি রেন্টাল কুইকরেন্টাল ব্যবসায়ীরা ও এ থেকে সুবিধাভোগিরা। তারওপর রয়েছে জ্বালানী নিরাপত্তা আইন। জ্বালানী নিরাপত্তা আইন এক ধরনের কালো আইন।

এ আইনের ধারায় জ্বালানীর জন্য ব্যবহৃত কোন প্রকল্প ও টাকা ব্যয় সম্পর্কিত এক ধরনের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। আর আগামি অর্থ বছরে যে থোক বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে তার ব্যবহার সম্পর্কে প্রশ্নই করা যাবেনা কারন আইনগত বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে। পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতউল্লাহর ভাষ্যমতে, রেন্টাল কুইক রেন্টালে অর্থ জোগাতেই থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু এটা জনগনের সামনে পরিস্কার করা হচ্ছেনা। তিনি বলেন, এসব পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে সরকার চড়া দামে বিদ্যুৎ ক্রয় করে থাকে।

এর দায় মেটাতে প্রত্যক্ষ উপায় হচ্ছে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো। কিন্তু এটা নির্বাচনী বছর হওয়ার সরকার এ পথে যাবেনা এটাই স্বাভাবিক। দ্বিতীয় উপায় হচ্ছে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় থোক বরাদ্দ রাখা। যেখান থেকে এ ব্যয় মেটানো যাবে। স্বভাবতই সরকার এখন দ্বিতীয় পথে হাটছে।

(সুত্র: যুগান্তর, ২৭ মে ৩০১৩)। সরকার এ আমলে ৩ হাজারের মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ জাতিয় গ্রিডে যোগ করেছে কিন্তু এতে মাশুলও দিতে হচ্ছে চড়া দামে। এ আমলে বিদ্যুতের মুল্যবৃদ্ধি হয়েছে মোট ৭ বার। যা ইতিহাসে রেকর্ড । কেননা একক কোন সরকারের আমলেই এতবার বিদ্যুতের দাম বাড়েনি।

রেন্টাল কুইক রেন্টাল পাওয়ার হাউজের জন্য সরকারকে অতিরিক্ত গচ্ছা দিতে হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। আর এ টাকা সম্পুর্নভাবে সাধারন জনগনের কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে তুলে নেয়া হচ্ছে। আর বিদ্যুতের ভর্তুকি কমানোর জন্যই বার বার বিদ্যুতের মুল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এবারের বাজেটেও তাই ভর্তুকির জায়গা দখল করে নিয়েছে থোক বরাদ্দ। যা পুণরায় বিদ্যুৎখাতকে অস্হিতিশীল করতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারনা।

হাসান কামরুল: জ্বালানী ও পরিবেশ বিষয়ক লেখক। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.