আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেগম জিয়ার ভারত সফর কেবল তখনই সফল বা কার্যকর হবে যখন তিনি জামায়াতে ইসলামী এবং আমিনীর সঙ্গ পুরোপুরি ছাড়তে পারবেন

সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!! বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভারত সফরের সাফল্য বা ব্যর্থতা এখন দেশের রাজনীতির প্রধান আলোচ্য বিষয়। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব সফরটিকে চূড়ান্তরূপে সফল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। গতকাল বিএনপি নেতা ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদ এমনটাও বলেছেন যে, বেগম জিয়ার এ সফরের কারণে সরকারের একতরফা নির্বাচন করার প্রক্রিয়া ভেস্তে গেছে। অপরদিকে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী প্রথমদিকে সফরটিকে গুরুত্বহীন বললেও সফরের এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এটিকে গুরুত্বে নিয়েছেন। তিনি এমনটাও বলেছেন যে, সফরকালে বেগম জিয়া ভারতকে যে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে।

ভারতকে খুশি করার প্রক্রিয়ায় আমাদের রাজনীতিবিদরা এটাও ভুলে গেছেন আন্তর্জাতিক শিষ্টাচার আনুযায়ী ভারত আমাদের কোন্ কোন্ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে আর কোন্ কোন্ বিষয়ে পারে না। ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদ বা বিএনপি নেতৃবৃন্দ যতই আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন না কেন এ সফরের কারণে বাংলাদেশ বিষয়ে ভারতের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটেছে রাজনীতির একজন শিক্ষানবিশ ব্যক্তিও এটা অনুধাবন করতে পারেন যে বিষয়টা এতো সহজ নয়। আওয়ামী লীগের গত চার বছরের শাসনামলে এমন কোন ঘটনা ঘটে যায়নি যে ভারত বা ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস আওয়ামী লীগের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। বরঞ্চ আওয়ামী লীগের প্রতি ভারতের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত এ কারণে যে, গত চার বছরে আওয়ামী লীগ এ দেশের ভূমিকে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যবহার করতে দেয়নি। বেশ কয়েকজন শীর্ষ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা এ সময়ে ধরা পড়েছেন।

উপরন্তু ধর্মীয় উগ্রবাদকেও আওয়ামী লীগ যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে। ভারত কেবল তখনই বিএনপির প্রতি বিশ্বস্ত হতে পারে যখন সে এ নিশ্চয়তা পাবে যে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কোন প্রকার প্রশ্রয় দেয়া হবে না। বেগম জিয়া বা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বও এটা ভাল বুঝেন। সে কারণেই বেগম জিয়া ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে বৈঠকে এমনটা নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে তিনি ক্ষমতায় গেলে এদেশের ভূমিকে ভারতের স্বার্থবিরোধী কোন কাজে ব্যবহৃত হতে দিবেন না। কিন্তু এ বিষয়টিতে ভারতকে পূর্ণরূপে আশ্বস্ত করা তার জন্য সহজ কোন কাজ নয়।

কারণ মুখের প্রতিশ্রুতি নয়, কাজের মাধ্যমেই বেগম জিয়াকে তার ইচ্ছার যথার্থতা দেখাতে হবে। সত্যিকার অর্থেই বেগম জিয়ার জন্য কাজটি কঠিন। কারণ বেগম জিয়ার চারদলীয় জোটের অন্যতম অংশীদার হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ঐক্যজোট নামের দুটো উগ্রপন্থী ইসলামী মৌলবাদী দল। ধর্মীয় উগ্রবাদের সৃজনগৃহ হচ্ছে এই জামায়াতে ইসলামী। দেশের ধৃত শীর্ষ ধর্মীয় চরমপন্থীদের প্রায় সকলেই কোন না কোন সময়ে জামায়াত বা তার ছাত্র সংগঠন শিবিরের সাথে যুক্ত থেকেছেন।

অপরদিকে প্রধানত কওমী মাদ্রাসায় শিক্ষিত মোল্লাদের নেতৃত্বাধীন মুফতী ফজলুল হক আমিনীর ইসলামী ঐক্যজোটও ধর্মীয় উগ্রতা বা ভারত বিরোধীতা লালনে খুব একটা পিছিয়ে নেই। প্রায় একই ধরণের মতাদর্শের কারণে দেশের এসব উগ্রপন্থী ইসলামী দলগুলোর সাথে ভারতের ইসলামী মৌলবাদী চক্র এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের একটা সুসম্পর্ক রয়েছে। কাজেই এমন সব দলের সাথে সংশ্লিষ্টতা রেখে আপনি প্রতিশ্রুতি দিবেন যে বাংলাদেশের মাটিতে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কোন আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া হবেনা আর ভারত তাতে আশ্বস্ত থাকবে তেমনটা চিন্তা করা বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়। শুধু ভারতের স্বার্থে নয়, আমাদের নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই বিএনপির এসব মৌলবাদী রাজনৈতিক দলগুলোকে পরিত্যাগ করতে হবে। একটা সময়ে ভারত ও আফগানিস্তানে গোলযোগ সৃষ্টি এবং নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর জন্য পাকিস্তান তালেবান, লস্কর-ই-তৈয়েবা, জয়েশ-ই-মুহম্মদের মতো উগ্রপন্থী সংগঠনগুলোর সৃষ্টি এবং লালন করেছিল।

আজ সেই সংগঠনগুলোই পাকিস্তানকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশেও যদি চারদলীয় জোট ২০০৮ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসত তাহলে জামায়াতে ইসলামী জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ এর মতো সংগঠনগুলোর ছদ্মাবরণে এ দেশকে পাকিস্তানের পর্যায়ে নিয়ে যেত। কাজেই এখানে ভারতের স্বার্থের পাশাপাশি আমাদের নিজেদের স্বার্থেও বিএনপির জামায়াত সঙ্গত্যাগ অতি আকাংখিত। এখন এখানে যেটা বিবেচনায় আসতে পারে তাহলো ভোটের রাজনীতি। ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে কখনই মনে হয় না ভোটের রাজনীতিতে জামায়াত বা জোট খুব একটা ফ্যাক্টর।

১৯৯১ সালে জামায়াতকে ছাড়াই বিএনপি জিতেছে। আওয়ামী লীগ ৮ দলীয় জোটের ব্যানারে নির্বাচন করে হেরেছে। তেমনি ২০০৮ সাথে জামায়াতের সাথে জোট থাকা সত্ত্বেও বিএনপি হেরেছে। ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ এর নির্বাচনী ফলাফলগুলোতে কেবল প্রভাব বিস্তার ইমিডিয়েট আগের ক্ষমতাসীন দলগুলোর অপশাসন, কোন প্রকার জোট নয়। বিএনপি বা আওয়ামী লীগ এককভাবে নির্বাচন করলেও একই ফলাফল হত।

জোট রাজনীতির সুবিধাভোগী মূলত ছোট দলগুলোই। জোট রাজনীতির এই কালচার চালু না হলে জাতীয় পার্টি, জামায়াতের মতো রাজনৈতিক দলগুলো বিলুপ্তির কাছাকাছি পৌঁছে যেতো। অবশ্য আমি যেভাবে ভাবছি বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বও তেমনটা ভাবছেন এমনটা আশা করার কোন উপলক্ষ্য নেই। তবে ভোটের রাজনীতির হিসাব-নিকাশের কারণে জামায়াত বা আমিনীকে ত্যাগ করা যদি বিএনপির পক্ষে সম্ভব না হয় তাহলে ভারতের সাথে বিএনপির সম্পর্কের পরিবর্তন অলীক কল্পনা মাত্র। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।