আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হেমন্তের উত্তরবঙ্গ

Never lose hope...., Never Stop Expedition.... চতুর্থ পর্বঃ কবি ও শিক্ষক .....দ্বিতীয়াংশ আনালিয়ার মজার স্মৃতি নিয়ে আবার ট্র্যাকে ফিরলাম। সাথে সাথে একটা কিলোমিটার পোস্ট আমাকে জানিয়ে দিলো বগুড়া থেকে আমি আরও ৮৭ কিলোমিটার দূরে আছি। আমি তখন যমুনা সেতু আর কতদূরে তা জানার জন্য আঁকুপাঁকু করছি। সেই পৌনে এগারোটার দিকে জানতে পেরেছিলাম যে সেতু আর মাত্র ১৩ কিলোমিটার দূরে। কিছুক্ষণ পর একটা ট্রেনকে সেতুর দিকে যেতে দেখলাম।

যা বাবা, তুই আগে যা। আমি তোর পিছে পিছে আসছি। দুপুর ১২:০৯ মিনিটে জানলাম সেতু আর ৮ কিলোমিটার সামনে। একটু পরে টহলরত চারজন পুলিসের সাথে দেখা হলো। ওনাদের আমি দূর থেকেই দেখেছিলাম।

নিজে থেকেই কথা বললাম। পাশ কাটানোর কোনো উপায় ছিল না। আমি না থামলে ওনারাই আমাকে পিছনে ডেকে থামাতেন। পুলিস ভাইদের একজনের বাড়ি আবার আমার জেলা কুমিল্লায়। দেশি মানুষ হওয়াতে ওনার উচ্ছ্বাসটা একটু বেশিই ছিল।

ওনাদের কাছ থেকে যা জানতে পারলাম তা হলো আমার হাঁটার উদ্দেশ্যের মহিমান্বিত গুরুত্ব (!) অনুধাবনপূর্বক সেতু কতৃপক্ষ খুশিমনেই সেতু পার হবার অনুমতি দেবেন। দুপুর ১২:৫৩ মিনিটে রাস্তার পাশের ঘাসের উপর বসে আট মিনিটের মতো জিরিয়ে নিলাম। একটা ট্রেন দেখলাম। সম্ভবত রাজশাহী থেকে আসছিলো- সিল্কসিটি এক্সপ্রেস। এমন সময় রাশেদুলের ফোন পেলাম।

ও আমার ছোট ভাই। চট্টগ্রামে পড়াশোনা করে। জানতে পারলাম ঈদের ছুটিতে ঢাকায় এসেছে। আমার কথা শুনে ও খুশি হলো। ওর আর আমার খুব ইচ্ছা ছিল দুজনে মিলে একটা ট্যুরে যাবো।

কিন্তু সময় সুযোগ আর হয়ে উঠেনি। আবার একাকী পথচলা শুরু হলো। একটা টোললিস্ট চোখে পড়লো। এরকম লিস্ট আমি এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের আগে সেতু এলাকায় ঢোকার মুখে একটা পেয়েছিলাম। এখন আমি লাম্পপোস্ট বসানো রাস্তা দিয়ে হাঁটছি।

বেলা দেড়টা নাগাদ সেতুর পূর্ব পার্শ্বের থানায় পৌঁছলাম। থানায় এসে সেই চারজন পুলিসের সাথে দেখা হলো। একটু আগেই তাদের গাড়িতে করে সামনে যেতে দেখেছিলাম। তবে এখানে আমার এমন একজনের সাথে পরিচয় হলো যিনি কিনা সমগ্র বাংলাদেশের পুলিস বিভাগের মধ্যে অনন্য। ওনার নাম কবি গোলাম মহিউদ্দিন! গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার থেকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রথম (এবং সম্ভবত একমাত্র) কবি পুলিস তিনি।

দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ওনার কবিতা লিখার অভ্যাস। এই সুদীর্ঘ সময়ে উনি ত্রিশটার মত কাব্যগ্রন্থ লিখেছেন। কবিতার সংখ্যা তিনি নির্দিষ্ট করতে পারেননি। অথচ বড়ই আফসোসের বিষয় যে কেবল পুলিসে চাকরি করার কারণে তার দুটির বেশি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। “সভ্যতার রঙ” ও “শহর ফেরা মানুষ” সেই দুটি কাব্যগ্রন্থ।

কবিতা ছাড়াও তিনি উপন্যাস (প্রায় ১২টি), প্রবন্ধ (১৫-১৬টি) ও গান (বিক্ষিপ্তভাবে ১০০ এর মতো) রচনা করেছেন। এটিএন বাংলায় ওনাকে নিয়ে একটা ডকুমেন্টারি হয়েছিলো। প্রায় দশ মিনিটের ঐ ডকুমেন্টারিটি ওনার মুঠোফোনে আমাকে দেখালেন। শেষে পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে বললেন, আমার একটা কবিতা আপনাকে পড়ে শোনাই। অত্যন্ত চমৎকার একটা কবিতা।

যমুনাকে নিয়ে লিখা। কবিতাটি শুনে আমি বুঝতে পারলাম উনি “পথে যেতে যেতে দেখলাম গাছে একটি ব্যাঙ ঝুলিতেছে” জাতীয় কবিতা লিখেন না। ওনার সাথে আমার প্রায়ই ফোনে কথা হয়। শেষ কথা হয় ২০১১ সালের ৩০ ডিসেম্বর। উনি তখন ওনার গ্রামের বাড়ি ছিলেন।

নাটোরের লালপুর উপজেলার ময়না গ্রামে। আমাকে জানালেন পুলিসের চাকরি আর করবেন না। এটা তার আর ভালো লাগে না। ইতোমধ্যেই তিনি অবসরের জন্য দরখাস্ত করেছেন এবং তা গৃহীতও হয়েছে। ২০১২ সালের প্রথম দিন থেকে তার পেনশন জীবন শুরু হবে।

চাকরির ১৩ বছর বাকি থাকতেই স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়া এই মহিউদ্দিন ভাই সত্যিকারের একজন সাহিত্য অন্তঃপ্রান মানুষ। নিবেদিতপ্রাণ কবি। মহিউদ্দিন ভাইয়ের সাথে আমি প্রায় ৩০ মিনিটের মত ছিলাম। বিদায়বেলায় উনি আমাকে এখানকার খাঁটি গোরুর দুধ খাওয়াতে চাইলেন। কিন্তু অনুরোধটি আমার প্রটোকলবহির্ভূত ছিল বিধায় রাখতে পারলাম না।

দুপুর ০২:২৫ মিনিটে আবার যখন রাস্তায় নামলাম সেতুর টোলপ্লাজা থেকে আমি আর মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে। সারা শরীর জুড়ে একটা শিহরণ বয়ে যাচ্ছিলো। ঠিক চৌদ্দ মিনিট পরে একটা গোলচত্বরে এসে পৌঁছলাম। এখানে রাস্তাটা ভাগ হয়ে জালের মতো তিনদিকে এঁকেবেঁকে চলে গেছে। বাঁদিকে অর্থাৎ দক্ষিণে অবস্থিত সেনাবাহিনীর কিছু স্থাপনা ও তাদের বাসভবন।

উত্তর দিকের রাস্তা চলে গেছে ভূঞাপুরের দিকে। চত্বরের ওখানে এক লোক ঝালমুড়ি বিক্রি করছিলো। লোভ সামলাতে পারলাম না। দশ টাকার অর্ডার দিলাম। বানানো শেষে পরিমাণ দেখে আমার আক্কেলগুড়ুম।

এই ঝালমুড়ি তো আশেপাশের সবাইকে দেওয়ার পরেও থেকে যাবে। পলিথিনে ভরে ভাতের মতো খেতে খেতে আবার রওয়ানা হলাম। ঝালমুড়িওয়ালাকেও এমনি জিজ্ঞাসা করেছিলাম যমুনা সেতু পায়ে হেঁটে পাড়ি দেওয়া যাবে কিনা। উনি এক কথায় বলে দিলেন- অসম্ভব। তার বক্তব্যের সারসংক্ষেপ মোটামুটি এই ছিল- আমি নাকি সেতুর ধারেকাছেও যেতে পারবো না।

দুপুর ০২:৫৩ মিনিটে সেতুর পূর্বপ্রান্তের শেষ কিলোমিটার পোস্টটি পার হলাম। সেখানকার তথ্যমতে রাজশাহী যেতে হলে আমাকে আরও ২৩৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে। আর ঢাকা সেই সুদূর ১২০ কিলোমিটার পিছনে। একটু পরে সেই কাঙ্ক্ষিত যমুনা সেতু আমার চোখের সামনে উদ্ভাসিত হলো। বেলা তিনটা নাগাদ ওয়েট স্টেশন (Weigh station)–এ হাজির হলাম।

যানবাহনের বিশেষ করে মালবাহী ট্রাকের অতিরিক্ত ওজন নির্ণয় করাই এই স্টেশনের কাজ। যাই হোক ওদের কাছে আমার আর্জি পেশ করলাম। এর ভার এত বেশি ছিল যে ওনারা তা মাপতে পারলেন না। তাই আমাকে ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম (TCR) দেখিয়ে দিলেন। TCR-এ গিয়ে সরাসরি বললাম, আমি ঢাকা থেকে পায়ে হেঁটে বাংলাদেশের সর্বউত্তরে যাচ্ছি।

তাই এই সেতু দিয়ে আমাকে হেঁটে যাবার অনুমতি দিন। ওখানকার ইন-চার্জ ছিলেন জনৈক আনিস সাহেব। উনি প্রথমে আমার কথা হজম করলেন; তারপর সেই ঝালমুড়িওয়ালার মতো বলে উঠলেন- অসম্ভব। আমি তাকে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ট্যুরিস্ট সোসাইটি (DUTS)–র প্রেসিডেন্টের দেওয়া প্রত্যয়নপত্রটি দেখালাম। ঢাকা থেকেই আমি এই প্রত্যয়নপত্রটি নিয়ে গিয়েছিলাম।

DUTS -এর আমি একজন নিবেদিতপ্রাণ অনিয়মিত সদস্য। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ম্যাক ভাই নিজ হাতে আমাকে প্রত্যয়নপত্রটি লিখে দিলেন। সাথে বললেন ফিরে এসে যেন DUTS –এ নিয়মিত হই। এইসব কথা থাক। মূল প্রসঙ্গে ফিরি।

কোথায় যেন ছিলাম? ওহ, আনিস সাহেব। তো তিনি আমার কথায় কিছুতেই রাজি হলেন না। ওনার সাথে অফিসে আরও কিছু মধ্যপদস্থ কর্মচারী ছিলেন। প্রত্যয়নপত্র ব্যর্থ হলে আমি ফোনপর্ব শুরু করি। প্রথমেই ফোন দেই ম্যাক ভাইকে।

উনি আনিস সাহেবের সাথে কথা বললেন। কিন্তু তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল, অবিচল। এরপর একে একে অনেককেই ফোন দেই। এমনকি ঢাকার এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট (অথবা ডানহাত) –এর পরিচয়েও কাজ হয়নি। ওনারা স্যার স্যার করলেন ঠিকই কিন্তু সিদ্ধান্ত পাল্টালেন না।

এরকম পরিস্থিতির জন্য আমি তৈরি ছিলাম না। তাই প্রথমে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলাম। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলাম। TCR থেকে আমি চলে গেলাম ওখানকার সেনাবাহিনীর চেকপোস্টে। ওনাদের কাছে সব বিস্তারিতভাবে খুলে বললাম।

সব শুনে তারা তড়িৎ গতিতে কয়েক জায়গায় ফোন দিলেন। কিন্তু বিধিবাম। কিছুতেই কিছু হলো না। আমার ধারণা ছিল সেতুর সার্বিক তত্ত্বাবধান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হাতে। একসময় ছিল।

কিন্তু পহেলা নভেম্বর, ২০১০ থেকে এর নির্বাহী ক্ষমতা এক বিদেশি কোম্পানির কাছে ন্যস্ত করা হয়। কিন্তু পদব্রজে সেতু ভ্রমণের অনুমতিদানের মতো অদ্ভুত ক্ষমতার হস্তান্তর হয়তো তখনো হয়নি। জায়গায় জায়গায় তখনো BBSO–র সাইনবোর্ড দেখছিলাম। BBSO মানে Bangabandhu Bridge Special Operation- তত্ত্বাবধানে Bangladesh Army। ফলে সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কেবল নির্বাহী ক্ষমতা না থাকায় সেনাবাহিনী আমাকে কোনো সাহায্য করতে পারলো না।

অন্যদিকে নতুন এবং বিদেশি কোম্পানি হওয়াতে তারা (TCR) নিরাপত্তার খাতিরে পায়ে হেঁটে সেতু পার হতে দিচ্ছিলো না। সেনাবাহিনীর ওরা এখানকার মেইন অফিসে চেষ্টা করে দেখতে বললো। আমি কথামতো ওখানে গেলাম। কিন্তু শুক্র ও শনিবারে অফিস বন্ধ থাকে। সেনাসদস্যদের উপর কিছুটা রাগ হলো।

বেটারা তো এখানেই থাকে। এই বিষয়টা কি জানতো না ওরা! আমি খুব হতাশ হয়ে পড়লাম; কিন্তু আশা ছাড়লাম না। বিষণ্ণ মনে আবার TCR অফিসে গেলাম। আবার অনুরোধ করলাম। কিন্তু ওনাদের সাফ কথা- পায়ে হেঁটে সেতু পার হওয়া যাবে না।

এক পর্যায়ে ওনারা বললেন আমাকে অফিসের একটা গাড়িতে করে সেতু পার করে দেওয়া যেতো যদি আমি ঢাকাস্থ মহাখালীর সেতু ভবনের নির্বাহী পরিচালকের কাছ থেকে একটা প্রত্যয়নপত্র আনতে পারতাম। এটাই নাকি অন্য অভিযাত্রিকদের জন্য করা হয়। কিছুদিন আগেও চারজন বিদেশি সাইক্লিস্টকে এভাবেই গাড়িতে করে সেতু পার করে দেওয়া হয়েছিলো। সেখানে পায়ে হেঁটে...... উহু, কিছুতেই না। চোখজুড়ে রাজ্যময় হতাশা।

পৃথিবীর যেকোনো মানুষের একটা ক্ষমতা কমবেশি আছে। আর তা হলো- অন্যের চোখের ভাষা বোঝার ক্ষমতা। ওখানকার খাকি পোশাকের গার্ডরা আমার কষ্টটা উপলব্ধি করতে পারছিলেন। ওদের একজন আমাকে বললেন, আপনি খামোখা TCR –এ যেতে গেলেন কেন। লুকিয়ে লুকিয়ে সেতু পার হলেই তো পারতেন।

যাই হোক আমি বুঝে গেলাম আজ আর আমার যমুনার ওপারে যাওয়া হচ্ছে না। ঠিক করলাম এখানকার কোনো মসজিদে রাতটা কাটিয়ে দেবো। এ ব্যাপারে একজন গার্ড আমাকে সাহায্য করলেন। উনি আমাকে যমুনা তীরবর্তী পটলকান্দির এক বাজারে নিয়ে গেলেন। পটলকান্দির এ বাজারের নাম যমুনা বাজার।

পথে ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম আসলেই লুকিয়ে লুকিয়ে সেতু পার হওয়া যেতো কিনা। উনি বললেন যেতো না। আর যদি আমি কোনোভাবে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে উঠেও যেতাম, সেতুর পর্যবেক্ষণ ক্যামেরায় ঠিকই ধরা পড়তাম। ব্যস, খেল খতম। আজ রাতটা তখন মহিউদ্দিন ভাইয়ের ওখানে গরাদের ভিতর কাটাতে হতো।

সারারাত কবিতা শুনে পরদিন ঢাকায় চালান। বিকাল ০৪:৪২ মিনিটে মৈত্রী এক্সপ্রেসকে দেখতে পেলাম। ঢাকা-কলকাতার মধ্যে যাতায়াতকারী এই ট্রেনটি তখন সেতু পার হয়ে ঢাকা যাচ্ছিলো। পরদিন আবার কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে। সাথে আসা সেই গার্ড ভাই স্থানীয় এক মসজিদে আমার রাতে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন।

আমি খুবই দুঃখিত যে তার নাম আমার মনে নেই। ক্রনিকলেও লিখতে পারিনি। তবে উনি যদি এখনও সেখানে চাকরি করেন তাহলে নাম না জানা থাকলেও যে কেউ ওনাকে খুঁজে বের করতে পারবেন কেবল একটা বৈশিষ্ট্যের কারণে। আর তা হলো ওনার অসাধারণ সুন্দর চেহারা। ছেলেরা এমন চোখ ধাঁধানো সুন্দর হয় আমার জানা ছিল না।

যাই হোক উনি আমাকে একা রেখে বাসায় চলে গেলেন। আর আমি ঘুরে ঘুরে বাজারটা দেখতে লাগলাম। জমজমাট বাজার। সন্ধ্যার সময় ঘন গোরুর দুধ দিয়ে বানানো এক কাপ চা খেলাম। গোধূলির রক্তিম পশ্চিমাকাশ যেন বৃষ্টির ফোঁটার মতো বিষণ্ণটা ছড়িয়ে দিচ্ছিলো।

দুইদিন আগেও এই গোধূলিলগ্নে আমি কি না করেছিলাম! আর আজ। সময় সত্যিই এক পরিবর্তনশীল মাত্রা (Dimension)। পটলকান্দির যমুনা বাজারে রাত নেমে এলো। ব্যাটারির চার্জার কিনতে এক দোকানে ঢুকলাম। দাম শুনে মনে হলো জিনিসটা সোনা-রূপা কিছু দিয়ে বানানো।

তবে দোকানদার মানুষটা খুব ভালো ছিলেন। উনি একটা চার্জার দিয়ে আমার মোবাইল চার্জ করে দিলেন। মোটামুটি কাজ চালানোর মতো চার্জ হলো। ধীরে ধীরে আলাপ জমে উঠলো। ওনার নাম নজরুল।

দোকানদারী ওনার মূল পেশা না। উনি মূলত একজন শিক্ষক। মগড়া বহুমুখী কারিগরী দাখিল মাদ্রাসার তরুণ শিক্ষক। প্রতিষ্ঠানটি কালিহাতী উপজেলার মগড়া ইউনিয়নে অবস্থিত। মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত না হওয়াতে উনি দুঃখ প্রকাশ করলেন।

আমি বললাম ঢাকা গিয়ে এ ব্যাপারে সাহায্য করবো। কিন্তু আজ অবধি কিছুই করতে পারিনি। যেখানে নিজের জন্যই মন্ত্রি-মিনিস্টারদের রেফারেন্স পাই না, সেখানে অন্যেরটা কিভাবে পাবো। নজরুল ভাই আজকের রাতটা ওনার বাড়িতে কাটাতে বললেন। রাত নয়টা কি সাড়ে নয়টা; দোকান বন্ধ করে আমাকে নিয়ে উনি চললেন গৃহপানে।

মাঠের আইল ধরে এঁকেবেঁকে এক সময় ওনার বাড়ি পৌঁছলাম। সেদিন মুরগী রান্না হয়েছিলো। আমাকে তাই দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুমাতে গেলাম। কিন্তু সহজে ঘুম আসলো না।

দূরে শুনতে পাচ্ছিলাম গাড়ির ছুটে চলার শব্দ। কেউ হয়তো এপারে আসছে কেউবা ওপারে। আমি কি পারবো? দেখা যাক কি হয় কাল সকালে। বি: দ্র: এখানে বর্ণিত প্রতিটি ঘটনা সম্পূর্ণ সত্য। (চলবে......... হেমন্তের উত্তরবঙ্গ প্রথম পর্বঃ অভিযাত্রিক হেমন্তের উত্তরবঙ্গ দ্বিতীয় পর্বঃ বিষণ্ণ গোধূলি হেমন্তের উত্তরবঙ্গ তৃতীয় পর্বঃ কৌশলতত্ত্ব হেমন্তের উত্তরবঙ্গ চতুর্থ পর্বঃ কবি ও শিক্ষক .....প্রথমাংশ Never lose hope...., Never stop expedition.... ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।