আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

‘একটি অপরিচ্ছন্ন ছাদ। তার নিচে এবড়োখেবড়ো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কিছু পত্রিকার পাতা। জনা পঞ্চাশেক তরুণ-তরুণী বসে আছেন সেগুলোর ওপর। একজন দাঁড়িয়ে অনর্গল কী যেন বলছেন’—অপরিচিত এই দৃশ্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে অতিপরিচিত। এভাবে প্রায়ই ক্লাস করতে হয় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।

এমন দৃশ্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে শুধুই হতাশা জাগাবে। যাঁরা নতুন ভর্তি হবেন, তাঁরা হীনম্মন্যতায় ভুগবেন। কিন্তু এই দৃশ্য পুরো ভাগে সত্য নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজারো মেধাবী শিক্ষার্থী আছেন, আছে দেশসেরা সব বিভাগ। জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা এখন পুরো দেশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।

যেমন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের কথাই ধরি। এক দল অদম্য মেধাবীর উচ্ছল পদচারণে মুখর এ বিভাগ। উদ্যোগ ও উদ্যমের শক্তিতে জগন্নাথবিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্ছল তরুণেরা এগিয়ে যাচ্ছেন। আমরা পাহাড় ডিঙাব, সাগর পেরোব, এটা নিশ্চিত। আমরা লক্ষ্য জয়ে স্থির ও সংকল্পবদ্ধ।

তবে আমরা দৌড়াতে গিয়ে পথটা মসৃণ পেলে এত দিনে হয়তো চলে যেতাম আরও বহুদূর। আমরা মনে করি, চাটগাঁর জোবরা গ্রামের ছেলে মুহাম্মদ ইউনূস যদি দেশের জন্য নোবেল নিয়ে আসতে পারেন, তবে আমরাও পারব। ইউনূস তো আমাদেরই ছেলে, তাঁর শাণিত রক্তই প্রবহমান আমাদের শরীরে, তাই না? ২০ অক্টোবর ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। পথচলার আট বছর পার হলো। এ কটা বছরে যেন গতিহীন ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের ধারা।

গত বছরগুলোয় অবকাঠামো উন্নয়ন হয়নি তেমন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহ্যিক অবস্থা যা ছিল, এখনো তা-ই আছে। একমাত্র আটতলা ভবনটি ১৬ তলা হওয়ার কথা থাকলেও গত তিন বছরে টেন্ডার-প্রক্রিয়াই সম্পন্ন করতে পারেনি প্রশাসন! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের প্রতিবেশী। ঘর থেকে বের হলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কটি নতুন হল নির্মিত হয়েছে, হয়েছে অবকাঠামো ব্যাপক উন্নয়ন।

আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাই তাদের কৃতিত্বের জন্য। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কীভাবে শুভেচ্ছা জানাব আমরা। ইউজিসি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে উন্নয়ন খাতে ব্যয় করার জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। আশ্চর্যজনক হচ্ছে, সেই টাকা খরচ করার কোনো খাত খুঁজে পায়নি প্রশাসন! অথচ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম নেই, হল নেই, বিশুদ্ধ পানি নেই, ক্যানটিন নেই, টয়লেট নেই, বসে আড্ডা দেওয়ার স্থান নেই, ক্রীড়াসামগ্রী নেই, লাইব্রেরি বলতে কিছু নেই, সেমিনার নেই, শিক্ষক নেই। আসলে বলতে লজ্জা নেই, আমাদের তো একটা ক্যাম্পাসই নেই।

আমাদের মনে হয়, এই নেই, সেই নেই—এত নেই, কেন নেই শুনতে শুনতে বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন ভিসি স্যার। তাই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন করার মতো কোনো খাত খুঁজে পান না। তবে নিজে কিন্তু ঠিকই কোটি টাকার গাড়িতে চড়েন, অত্যাধুনিক বাড়িতে থাকেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো উন্নয়ন না হলেও, স্যার ও তাঁর শিষ্যদের ঠিকই উন্নতি হয়েছে। শরীরে-সম্পদে ফুলে-ফেঁপে হূষ্টপুষ্ট হয়েছেন এসব মহামানব।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসটা বরাবরই অগ্নিদগ্ধ। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থীদের করতে হয়েছে দীর্ঘ আন্দোলন। হাজারো শিক্ষার্থীর আত্মত্যাগের ঘাম আর কান্না মিশে আছে পুরান ঢাকার মাটিতে। প্রায় দুই দশকের দীর্ঘ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আঠারো শতকের সেই জগাবাবুর পাঠশালা হয় আজকের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছি, কিন্তু এটি পরিচালনা করার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ পাইনি।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস-শওকত আলীদের উত্তরসূরি পাইনি। আমরা জানতে পেরেছি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের এলাকায় অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জমি লিজের মেয়াদ আগামী মাসে শেষ হচ্ছে। কারাগার এখান থেকে অন্য কোথাও স্থানান্তর করা হবে। এটা সরকারি জায়গা। এটি খালি পড়ে থাকলে কয়েক দিনেই অর্ধেক দখল হয়ে যাবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারিত ক্যাম্পাস এখন সময়ের দাবি। ছোট্ট এতুটুক একটা ক্যাম্পাসে ২১ হাজার শিক্ষার্থীর দম ফেলার জায়গাটুকুও যেন নেই। আমরা চাই, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জায়গাটুকু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে বরাদ্দ দেওয়া হোক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন জজকোর্টকে অন্য কোথাও সরিয়ে অবিলম্বে ক্যাম্পাস সম্প্রসারণ করা হোক, পাশের জেলা পরিষদের জায়গাটুকু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করা হোক। আমাদের আশা, প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে বিশেষ পদক্ষেপ নেবেন। নইলে আবার সম্প্রসারিত ক্যাম্পাসের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামবেন।

আবার উত্তাল হবে পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি রাস্তা। তাই রাস্তায় নামার আগে আমরা বিশ্বাস করতে চাই, প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী আমাদের দিকে নজর দিয়েছেন। তাঁরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছেন। আসলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন জরুরি। কর্তাব্যক্তিদের এ সুমতিটা আছে নিশ্চয়ই।

তামান্না তামিম, বাজিত পান্থ, সাদেকা মল্লিকা, এম এ ইসলাম আরেফিন ও পাপিয়া সুলতানা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.