আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় স্মরণে আমার ভালো লাগার মন ভোলালো ছদ্মবেশী মায়া

তুমি জেনেছিলে মানুষে মানুষে হাত ছুঁয়ে বলে বন্ধু তুমি জেনেছিলে মানুষে মানুষে মুখোমুখি এসে দাঁড়ায় হাসি বিনিময় করে চলে যায় উত্তরে দক্ষিণে তুমি যেই এসে দাঁড়ালে- কেউ চিনলো না কেউ দেখলে না সবাই সবার অচেনা! জন্ম হয় না, মৃত্যু হয় না আমার ভালোবাসার কোনো জন্ম হয় না মৃত্যু হয় না- কেননা আমি অন্যরকম ভালোবাসার হীরের গয়না শরীরে নিয়ে জন্মেছিলাম। আমার কেউ নাম রখেনি, তিনটে চারটে ছদ্মনামে আমার ভ্রমণ মর্ত্যধীমে, আগুন দেখে আলো ভেবেছি, আলোয় আমার হাত পুড়ে যায় অন্ধকারে মানুষ দেখা সহজ ভেবে ঘূর্ণিমায়ায় অন্ধকারে মিশে থেকেছি কেউ আমাকে শিরোপা দেয়, কেউ দু’চোখে হাজার ছি ছি তবুও আমার জন্ম কবচ, ভালোবাসাকে ভালোবেসেছি আমার কোনো ভয় হয় না আমার ভালোবাসার কোনো জন্ম হয় না, মৃত্যু হয় না। । একটি স্তব্ধতা চেয়েছিল একটি স্তব্ধতা চেয়েছিল আর এর এক নৈঃশব্দকে ছুঁতে তারা বিপরীত দিকে চলে গেল, এ জীবনে দেখাই হলো না। জীবন রইলো পড়ে বৃষ্টিতে রোদ্দুরে ভেজা ভূমি তার কিছু দূরে নদী- জল নিতে এসে কোনো সলাজ কুমারী দেখে এক গলা-মোচড়ানো মারা হাঁস।

চোখের বিস্ময় থেকে আঙুলের প্রতিটি ডগায় তার দুঃখ সে সসয় অকস্মাৎ ডঙ্কা বাজিয়ে জাগে জ্যোৎস্নার উৎসব কেন, তার কোনো মানে নেই যেমন বৃষ্টির দিনে অরণ্য শখরে ওঠে সুপুরুষ আকাশের সপ্তরং ভুরু আর তার খুব কাছে মধুলোভী আচমকা নিশ্বাসে পায় বাঘের দুর্গন্ধ! একটি স্তব্ধতা চেয়েছিল আর এক নৈঃশব্দ্যকে ছুঁতে তারা বিপরীত দিকে চলে গেল, এ জীবনে দেখাই হলো না! নিজের আড়ালে সুন্দর লুকিয়ে থাকে মানুষের নিজেরই আড়ালে মানুষ দেখে না সে খোঁজে ভ্রমর বিংবা দিগন্তের মেঘের সংসার আবার বিরক্ত হয় কতকাল দেখে না আকাশ কতকাল নদী বা ঝরনায় আর দেখে না নিজের মুখ আবর্জনা, আসবাবে বন্দী হয়ে যায় সুন্দর লুকিয়ে থাকে মানুষের নিজেরই আড়ালে রমনীর কাছে গিয়ে বারবার হয়েছে কাঙাল যেমন বাতাসে থাকে সুগন্ধের ঋণ বহু বছরের স্মৃতি আবার কখন মুছে যায় অসম্ভব অভিমান খুন করে পরমা নারীকে অথবা সে অস্ত্র তোলে নিজেরই বুকের দিকে ঠিক যেন জন্মান্ধ তখন সুন্দর লুকিয়ে থাকে মানুষের নিজেরই আড়ালে। । যে আমায় যে আমায় চেনে আমি তাকেই চিনেছি যে আমায় ভুলে যায়, আমি তার ভুল গোপন সিন্দুকে খুব যত্নে তুলে রাখি পুকুরের মরা ঝাঁঝি হাতে নিয়ে বলি, মনে আছে, জলের সংসার মনে আছে? যে আমায় চেনে আমি তাকেই চিনেছি! যে আমায় বলেছিল, একলা থেকো না আমি তার একাকিত্ব অরণ্যে খুঁজেছি যে আমায় বলেছিল, অত্যাগসহন আমি তার ত্রাগ নিয়ে বানিয়েছি শ্লোক যে আমার বলেছিল, পশুকে মেরো না আমার পশুত্ব তাকে দিয়েছে পাহারা! দিন গেছে, দিন যায় যমজ চিন্তায় যে আমায় চেনে আমি তাকেই চিনেছি!তুমি জেনেছিলে তুমি জেনেছিলে মানুষে মানুষে হাত ছুঁয়ে বলে বন্ধু তুমি জেনেছিলে মানুষে মানুষে মুখোমুখি এসে দাঁড়ায় হাসি বিনিময় করে চলে যায় উত্তরে দক্ষিণে তুমি যেই এসে দাঁড়ালে- কেউ চিনলো না কেউ দেখলে না সবাই সবার অচেনা! নিজের কানে কানে এক এক সময় মনে হয়, বেঁচে থেকে আর লাভ নেই এক এক সময় মনে হয় পৃথিবীটাকে দেখে যাবো শেষ পর্যন্ত! এক এক সময় মানুষের ওপর রেগে উঠি অথচ ভালোবাসা তো কারুকে দিতে হবে জন্তু-জানোয়ার গাছপালাদের আমি ওসব দিতে পারি না এক এক সময় ইচ্ছে হয় সব কিছু ভেঙেচুরে লন্ডভন্ড করে ফেলি আবার কোনো কোনো বিরল মুঞূর্তে ইচ্ছে হয় কিছু এককটা তৈরি করে গেলে মন্দ হয় না। হঠাৎ কখনো দেখতে পাই সহস্র চোখ মেলে তাকিয়ে আছে সুন্দর কেউ যেন ডেকে বলছে, এসো এসো, কতক্ষণ ধরে বসে আমি তোমার জন্য মনে পড়ে বন্ধুদের মুখ, যারা শত্রুদের, যারাও হয়তো কখনো আবার বন্ধু হবে নদীর বিনারে গিয়ে মনে পড়ে নদীর চেয়েও উত্তাল সুগভীর নারীকে সন্ধের আকাশ কী অকপট, বাতাসে কোনো মিথ্যে নেই, তখন খুব আস্তে, ফিসফিস করে, প্রায় নিজেরই কানে-কানে বলি, একটা মানুষ জন্ম পাওয়া গেল, নেহাৎ অ-জটিল কাটলো না! নীরার জন্য কবিতার ভুমিকা এই কবিতার জন্য আর কেউ নেই, শুধু তুমি, নীরা এ কবিতার মধ্যরাত্রে তোমার নিভৃত মুখ লক্ষ্য করে ঘুমের ভিতরে তুমি আচমকা জেগে উঠে টিপয়ের থেকে জল খেতে গিয়ে জিভ কামড়ে এক মুহুর্ত ভাববে কে তোমায় মনে করছে এত রাত্রে --- তখন আমার এই কবিতার প্রতিটি লাইন শব্দ অক্ষর কমা ড্যাশ রেফ ও রয়ের ফুটকি সমেত ছুটে যাচ্ছে তোমার দিকে, তোমার আধো ঘুমন্ত নরম মুখের চারপাশে এলোমেলো চুলে ও বিছানায় আমার নিঃশ্বাসের মতো নিঃশব্দ এই শব্দগুলো এই কবিতার প্রত্যেকটি অক্ষর গুণিনের বাণের মতো শুধু তোমার জন্য, এরা শুধু তোমাকে বিদ্ধ করতে জানে তুমি ভয় পেয়ো না, তুমি ঘুমোও, আমি বহু দূরে আছি আমার ভযংকর হাত তোমাকে ছোঁবে না, এই মধ্যরাত্রে আমার অসম্ভব জেগে ওঠা, উষ্ণতা, তীব্র আকাঙ্খা ও চাপা আর্তরব তোমাকে ভয় দেখাবে না --- আমার সম্পূর্ণ আবেগ শুধু মোমবাতির আলোর মতো ভদ্র হিম, . শব্দ ও অক্ষরের কবিতায় তোমার শিয়রের কাছে যাবে --- এরা তোমাকে চুম্বন করলে তুমি টের পাবে না, এরা তোমার সঙ্গে সারা রাত শুয়ে থাকবে এক বিছানায় --- তুমি জেগে উঠবে না, সকালবেলা তোমার পায়ের কাছে মরা প্রজাপতির মতো লুটোবে | এদের আত্মা মিশে থাকবে তোমার শরীরের প্রতিটি রন্ধ্রে, চিরজীবনের মতো বহুদিন পর তোমার সঙ্গে দেখা হলে ঝর্নার জলের মতো হেসে উঠবে, কিছুই না জেনে | নীরা, আমি তোমার অমন সুন্দর মুখে বাঁকা টিপের দিকে চেয়ে থাকবো | আমি অন্য কথা বালার সময় তোমার প্রস্ফুটিত মুখখানি আদর করবো মনে-মনে ঘর ভর্তি লোকের মধ্যেও আমি তোমার দিকে . নিজস্ব চোখে তাকাবো | তুমি জানতে পারবে না --- তোমার সম্পূর্ণ শরীরে মিশে আছে | আমার একটি অতি ব্যক্তিগত কবিতার প্রতিটি শব্দের আত্মা | ভালোবাসার পাশেই ভালোবাসার পাশেই একটা অসুখ শুয়ে আছে ওকে আমি কেমন করে যেতে বলি ও কি কোনো ভদ্রতা মানবে না? মাঝে মাঝেই চোখ কেড়ে নেয়, শিউরে ওঠে গা ভালোবাসার পাশেই একটা অসুখ শুয়ে আছে। দু’হাত দিয়ে আড়াল করা আলোর শিখাটুকু যখন তখন কাঁপার মতন তুমি আমার গোপন তার ভেতরেও ঈর্ষা আছে, রেফের মতন তীক্ষ্ম ফলা ছেলেবেলার মতন জেদী এদিক ওদিক তাকাই তবু মন তো মানে না ভালোবাসার পাশেই একটা অসুখ শুয়ে আছে।

তোময় আমি আদর করি, পায়ের কাছে লুটোই সিংহাসনে বসিয়ে দিয়ে আগুন নিয়ে খেলি তবু নিজের বুক পুড়ে যায়, বুক পুড়ে যায় বুক পুড়ে যায় কেউ তা বোঝে না ভালোবাসার পাশেই একটা অসুখ শুয়ে আছে। কবিতার সার কথা সত্য, অথচ কবিরা সব মিথ্যুকের একশেষ নয়? নীরার গলায় আমি কতবার দুলিয়েছি উপমার মণিহার ভোরবেলা নীরার দু’হাতে আমি তুলে দিই শিশির মাখানো সাদা ফুল ফলগুলি যাদু-সরঞ্জাম যেন হঠাৎ অদৃশ্য হতে জানে কতকাল ফুল ছুঁইনি, আঙুল পোড়ায় সিগারেট! বিশুদ্ধ পোষাক-পরা আমি এক ফুলবাবু সন্ধেবেলা ফুরফুর বাতাসে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মেতে থাকি তর্কে ও উল্লাসে। সেই আমি মধ্যরাতে কবিতার খাতা খুলে নির্জন নদীর ধরে একাকী পথিক হাত দুটি যুক্তি-ছেঁড়া রূপের কাঙাল। ( সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় স্মরণে আমার ভালো লাগার মন ভোলালো ছদ্মবেশী মায়া ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।