আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভদ্র সমাজে যার নাম

কি জঘন্য ... বেশ্যা... আরও অনেক ঘৃণা নিয়ে আমরা এই বাক্যটি উচ্চারণ করি। যারা তাদের দেহ টাকার জন্য বিক্রি করে অথবা উৎসর্গ করে তাদের কে এই সমাজ বেশ্যা বলে গালি দেয়। তাদের স্থান অনেক নিচে। BMW বা দামি কোন গাড়ি করে চড়ে যাওয়া লোকদের তো এদের নাম শুনলে দিনটাই খারাপ যায়। আধুনিক সমাজে “bitch” গালি অনেক বেশি জনপ্রিয়।

অন্যকে খুব অবলীলায় আমরা অনেক কিছুই বলে ফেলি কিন্তু যখন নিজেকে উদ্দেশ্য করে কারো কাছে কিছু শুনি সেটা খুব বেশি পরিমানে আমাদের অন্তরে লাগে। ঢাকা সহ বাংলাদেশের প্রতিটা জেলায় রয়েছে হাজারো যৌনপল্লী বা স্থান যেখানে যৌন কাজ হয়, যেই মেয়েরা এইসব কাজ করে তাদের আমরা বলি “বেশ্যা” প্রচলিত ভাষায় যাকে “খানকি” বলা হয়। এরা সমাজের অন্য সব শ্রেণীর লোকদের থেকে আলাদা। সমাজের প্রতিটা মানুষ এদের অনেক ঘৃণা করে। তার কিছু কারন আছে : * এরা যা করছে তা ধর্ম বিরোধী।

* তারা নোংরা কাজ করে বেরায়। * এরা সমাজ কে ঘৃণিত করছে তাদের এই বাজে কাজ দিয়ে। * এদের কোন মান সম্মান নেই। বাংলাদেশে প্রায় ২০০,০০০ যৌনকর্মী আছে (তথ্যঃ BBC NEWS, AUGUST -2010), এবং সারা বাংলাদেশে এখন ১৪ টি বৈধ যৌনপল্লী আছে। আমরা খুব সহজেই বলে ফেলি এদের কুক্রিত্তির কথা একবার ও জানতে চাই না কেন এই কাজ তারা করে? যেই দেশের অর্ধেকের ও বেশি লোক দরিদ্র সীমার নিচে বাস করে , যেই দেশে একবেলা আহারের ব্যাবস্থা হয় হাজারো মানুষের, সেই দেশে জীবিকা কিভাবে অর্জন করছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন করা নেহাত রসিকতা ছাড়া আর কিছু না।

এত কিছুর পর ও মেনে নিলাম এরা খারাপ কাজ করে, কিন্তু আপনি কে সেটা আঙ্গুল তুলে বলার। আপনার কি সেই অধিকার আছে? “দুটি মানুষ পাশাপাশি শুয়ে আছে, একজন উলঙ্গ হয়ে আরেকজন দামি জামা কাপর পড়ে। এক পর্যায়ে দুজন ই বিছানায় পস্রাব করে দিলেন” , এখন আমরা কাকে বেশি খারাপ বলে আখ্যায়িত করবো? যে উলঙ্গ হয়েছিল তাকে ? অথবা যে অনেক দামি জামা কাপর পরে ছিল তাকে ? এই যৌনকর্মীদের আমরা ধিক্কার দেই, অথচ আমাদের বোন , স্ত্রীরা যে এই কাজে লিপ্ত নয় সেটার কথা আমরা কতটা নিশ্চিত? আমার বলার উদ্দেশ্য এই নয় যে তারা যৌন মিলন করতে ওঁই সমস্ত জায়গায় যাচ্ছেন। কিন্তু তারা অবৈধ যৌন মিলন করছেন। যেই অবৈধ যৌন মিলনের জন্য আমরা কিছু মানুষদের অনেক বাজে অকথ্য ভাষায় গালা গালি করছি, ঠিক সেই কাজটি যদি আমরা করি তাহলে সেটার বেপারে কোন প্রশ্নই উঠে না।

কারন আমরা সমাজের কিছু ভদ্র লোকেরা এর একটি সুন্দর নাম দিয়েছি যা হচ্ছে “ভালবাসা বা mutual sex”। যৌন মিলনে যখন একটি মেয়ে টাকার বিনিময়ে পল্লীতে বা হোটেলে লিপ্ত হচ্ছে তখন সে হয়ে যাচ্ছে বেশ্যা আর ভদ্র সমাজে একটি মেয়ে অবৈধভাবে নিজের বা অন্নের বাড়িতে, রেস্ট হাউজে, পার্টি সেন্টারে, নির্জন পার্কে বা অন্ন কোন স্থানে যখন যৌন মিলন করছে সেটি হয়ে যাচ্ছে ভালবাসা বা mutual sex । প্রশ্ন হল এদেরকে কেন বেশ্যা বলে গালি দেয়া হবে না। যে এটা শুনবে সে অবশ্যই বলবে – হ্যাঁ এই সব ছেলে মেয়েরাও খারাপ, কিন্তু পরিতাপের বিষয় ওঁই ভদ্র মহিলা নিজেই তার ভালবাসার মানুষের সাথে এই অবৈধ যৌন কর্মে হয়তো লিপ্ত হয়েছেন। তাহলে নিজে কি পারবেন নিজেকে এইভাবে ঘৃণিত মনে বেশ্যা বলে গালি দিতে।

এখন অনেক স্ত্রী তার পুরানো প্রেমিকের সাথে বিয়ের পর ও যৌন মিলন করেন, বিয়ে করেছেন বলে এটা বৈধ নয় কারন এটা আপনার স্বামীর সাথে হচ্ছে না। ইসলামিক দৃষ্টিকোন থেকে বললে বলতে হয় “নিজ স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কারো সাথে যৌন মিলন করা বড় গুনাহ, এটাকে ইসলাম জেনাহ বলে”; এই জেনাহ আপনি ভালবেসে করেন আর টাকার বিনিময়ে করেন এক ই পাপ। তাহলে কেন একজনকে এত অবহেলা এবং আরেকজনের পাপ কে আধুনিক নাম দিয়ে ঢাকার চেষ্টা। যেই মেয়ে পরিবারের বাবা – মা, ভাই বোনের জন্নে দু বেলা খাবার সংরহের জন্য নিজেকে বিক্রি করে, হাজারো গ্লানি সহ্য করে মাস শেষে যেই মেয়ে তার ছোট ভাই বোনের স্কুলের খরচ যোগায়, নিজের ইজ্জত বাচিয়ে হাজার চেষ্টা করেও যে একটি কাজ যাদের কাছ থেকে আদায় করে নিতে পারেনি সেই লোকগুলোর মুখে এই মেয়েদের বেশ্যা বলে গালি মানায় না। বরংচ, যারা বেতন বাড়ানোর জন্য বসের সাথে ৫ তারা হোটেলে রাতের খাবার খান, নিজের ক্যারিয়ার নামক শব্দ ব্যাবহার করে যারা স্বনামধন্য লোকদের বিছানার রঙ্গলীলার সাথী হন, যারা ভালবাসার নামে অবাধে যৌন মিলন করে যাচ্ছেন এবং নিত্য পরিবর্তন করছেন তাদের যৌন সঙ্গীর (boy friend) সংখ্যা, মডেলিং এর নামে দেশে বিদেশে যাদের অপকর্ম এক সময়ে প্রমান হিসেবে ভিডিও চিত্রে প্রকাশ পায় তাদের এই বেশ্যা নামক গালি খুব ভাল ভাবেই মানায় যদি এদের কাজ ওঁই অসহায় মেয়েদের সাথে তুলনা করা হয়।

কারন এরা সখে বেশ্যা আর ওঁই মেয়েরা নিজের জীবন বাচাতে বেশ্যা। ঘৃণা করতে হয় তাদের করেন যারা দু বেলা খাবারের প্রলভন দেখিয়ে বিক্রি করে দেয় এই মেয়েদের; আটকে রেখে বাধ্য করে যৌন মিলনের, যারা একটি কাজ দেয়ার জন্য বিনিময়ে নারীর জীবনের সবচেয়ে বড় আমানত ওঁই ইজ্জত দাবি করে বসে, যারা বিয়ে করে নিয়ে এসে নিজের স্ত্রীকে যৌনপল্লীতে বিক্রি করা টাকা দিয়ে নেশা করে। অথবা সখের বশে নিজের ইচ্ছায় কোন সীমাবদ্ধতা ছাড়া অবলীলায় যারা লিপ্ত হচ্ছে এই যৌন ক্রিয়ায় তাদের, কিন্তু অসহায় ওঁই মেয়েদের নয়। আমি কাউকে সমর্থন করছি না, কিন্তু এটা বলছি আরেক জনের উপর আঙ্গুল তোলার আগে একটু ভেবে নিন পাশের কেউ যেন আবার আপনার উপর ও আঙ্গুল না তুলে বসে। এই সমাজের সশস্ত্র বাহিনী, রাজনৈতিক নেতাবৃন্দ, মিডিয়ার লোকজন থেকে শুরু করে শিক্ষক সমাজ পর্যন্ত এই অবৈধ যৌন মিলন যেখানে ফেশান হয়ে দাঁড়িয়েছে, নাক ছিটকিয়ে বেশ্যা বলে গালি দেয়ার অধিকার আপনার কতটা আছে তা উচ্চারনের আগে একবার ভেবে নিন।

আমি হয়তো ভাল লোক না, কিন্তু মানুষকে ছোট করে যাচাই না করে কিছু বলা আমি পছন্দ করি না। তাই এসব পছন্দ করি না। ইদানিং একটি চায়ের দোকানে চা খেতে বসে কিছু ভার্সিটি পড়ুয়া আধুনিক মেয়েদের কথোপকথন খুব পীড়া দিল , তাই নিজেকে একটু হালকা করার প্রয়াস মাত্র।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।