আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুক্তরাজ্যে এখন চোরের মত পালিয়ে আছেন হারিছ চৌধুরী ! কিন্তু কেন ??

আমি একা নই......আরও অনেকে আমার সাথে । জবাবটা আশা করছি বিএনপি সমর্থিত ব্লগারেরা দিবেন। হারিছ চৌধুরী। বহুল আলোচিত একটি নাম। তিনি আর কেউ নন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব।

বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তিনি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ পদটিতে ছিলেন। ওই সময় বিএনপি সরকারের প্রত্যেকের কাছে তিনি ছিলেন বিরাট ক্ষমতার এক মহীরুহ। দোর্দণ্ড প্রতাপে তিনি শুধু নিজেই ক্ষমতার ব্যবহার করতেন না, সে সময় তার নামেই অনেক কিছু হয়ে যেত। দলের মধ্যে তার পক্ষে ও বিপক্ষে নানা মত থাকলেও বাস্তবতা ছিল, তিনি দলীয় প্রধানের রাজনৈতিক সচিব। তাই তার ক্ষমতার পরিধি কেউ পরিমাপ করতে চাইতেন না।

ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এ বিশাল মানুষটি হঠাৎ ওয়ান-ইলেভেনের প্রথম প্রহরে হাওয়া হয়ে গেলেন। ঢাকার গুলশানের আলিশান বাড়ি, দামি গাড়ি, শখের হরিণ, বিষয়-সম্পত্তি সবকিছু ফেলে পালিয়েছেন তিনি। এখন পর্যন্ত নিরুদ্দেশ। ঘরে-বাইরে কেউ জানে না তার খবর। প্রায় ছয় বছর তিনি দেশ ছাড়া।

দেশে নেই স্ত্রী-সন্তানরাও। বিদেশে তার অবস্থান নিয়ে গুজবের ডালপালারও শেষ নেই। কেউ বলেন লন্ডনে, কেউ বলতে চান অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইরানে। নিজ জেলা সিলেটের কানাইঘাটের অনেকের বলেন, তিনি নানার বাড়ি ভারতের করিমগঞ্জেই আছেন। তাকে দেখে এখন আর কেউ চিনতেই পারবেন না।

মুখভর্তি লম্বা দাড়ি, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু প্রশ্ন হল- রাজনৈতিক অঙ্গনের এ বিশাল মানুষটি আসলে কোথায় আছেন? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এ অনুসন্ধান। টানা ২২ দিনের অনুসন্ধানে দেশ-বিদেশের নানা সূত্রে তথ্য-তালাশ করে একটা বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, তিনি লন্ডনের ছোট্ট শহর হলওয়েতে আছেন। সঙ্গে আছেন স্ত্রী ও দু’সন্তান। কিন্তু সে জীবন বড় কষ্টের ও আত্তগোপনের।

এ খবর তার পরিবারের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সদস্য জানেন। নিয়মিত যোগাযোগও আছে তাদের। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তারা যেন মৃত্যুপণ করেছেন- সে খবর কাউকেই বলা যাবে না। কী আজব দুনিয়া, কী আজব ক্ষমতা। অথচ বিএনপি সমর্থিত নেতা-কর্মী ব্লয়ে তাদের ব্লগারেরা নির্দ্ধিদায় বলে যাচ্ছে এই গুলো বর্তমান সরকারের বিরুধি দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।

যে হারিছ চৌধুরী ঢাকার নটর ডেম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র শুরুতে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। সিলেটের জকিগঞ্জে একটি বেসরকারি কলেজে শিক্ষকতাও করেছেন কিছুদিন। যুবলীগ প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাই শেখ কামালের হাত ধরেই যুবলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। পরে ৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে যোগ দেন জাগদলে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি হারিছ চৌধুরীকে।

একে একে সিলেট জেলা বিএনপির প্রথম কমিটির সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সভাপতিসহ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তবে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হওয়ার পর তিনি অনেকটা আলাদিনের চেরাগের মতো ক্ষমতা হাতে পেয়ে যান। যার সুবাদে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে নানা উপায়ে শত শত কোটি টাকার মালিক হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। তবে বিএনপির গত কাউন্সিলে তাকে কোন পদেই রাখা হয়নি। ১৯৭৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম কানাইঘাট-জকিগঞ্জ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হন।

ওই নির্বাচনে তার ব্যয় করার মতো টাকা ছিল না। এ প্রসঙ্গে কানাইঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, মনোনয়ন লাভের পর ঢাকা থেকে বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা এনে মাঠে নেমেছিলেন। এরপর ’৯১ সালেও বিএনপি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে দুই নির্বাচনেই তিনি পরাজিত হন। অথচ সেই হারিছ চৌধুরীর পালিয়ে থাকার স্থান সম্পর্কে গোপনীয়তা রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তার পরিবারের সব সদস্য।

কেউ যাতে তার আত্তগোপনে থাকার ঠিকানা ফাঁস না করতে পারে সে জন্য পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এক ধরনের ইস্পাতকঠিন ঐক্য বজায় রাখার চেষ্টা চলে সর্বক্ষণ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে, সবাই যেন তথ্য গোপন রাখার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। অতি আপনজন হলেও এক ভাই আর এক ভাইয়ের কিংবা বোনের টেলিফোন নম্বর পর্যন্ত দিতে চান না। খুঁজতে খুঁজতে বাসায় গিয়ে হাজির হলেও ভেতর থেকে বলে দেয়া হয়, তিনি বাসায় নেই। সাংবাদিক ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের এড়িয়ে চলতে নানা সতর্কতার যেন শেষ নেই।

যে ভুয়া সিমে একবার কথা বলেন, পরের বার তা ব্যবহার করেন না। যুগান্তর পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম হারিছ চৌধুরীর পালিয়ে যাওয়ার এক লম্বা স্টোরি, ২০০৭ সাল। বেসামাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি। একদিকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার, অন্যদিকে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। সংঘাতময় রাজনীতি।

রাজপথে অবিরাম রক্তপাত। পিটিয়ে প্রতিপক্ষকে মেরে ফেলার মতো নির্মম প্রতিযোগিতা। এমনি এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ওই বছরের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। ঢাকা শহরে সান্ধ্যআইন জারি করা হয়।

রাত থেকেই শুরু হয় ধরপাকড়। এ অভিযানে রাজনীতিবিদ, সাবেক আমলা, দুর্নীতিবাজ দুর্বৃত্ত, এমনকি বড় বড় ব্যবসায়ী পর্যন্ত গ্রেফতার হন। এ অভিযান চলে টানা প্রায় তিন মাস। সেনাসমর্থিত সরকারের নানামুখী ঝটিকা অভিযান শুরু হলে হারিছ চৌধুরী দেশের মধ্যে আÍগোপনে চলে যান। কিন্তু যখন দুদকের তালিকায় তার নাম এসে যায়, তখন তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

দিনটি ছিল ২১ জানুয়ারি। প্রথমে সিদ্ধান্ত নেন পালিয়ে ভারতের করিমগঞ্জে নানার বাড়ি যাবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাতের আঁধারে জš§ভূমি কানাইঘাট ছাড়বেন। এর আগে ওইদিন কিছুটা ব্যস্ত সময় পার করেন। ছুটে যান গ্রামের বাড়ি কানাইঘাট উপজেলার দর্পনগরে তার মরহুম পিতা শফিকুল হক চৌধুরীর কবর জিয়ারত করতে।

সন্ধ্যার মধ্যে নিজেকে গুছিয়ে নেন। মোবাইল ফোন সেটটি বন্ধ করে দেবেন বলে ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন থেকে শেষবারের মতো ঢাকার বাসায় থাকা স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। পালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে পারের কাণ্ডারি ছিলেন তার এক সময়ের ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্থানীয় দিঘিরপাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল মুমিন চৌধুরী। নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার পুরো প্রক্রিয়া বিপদমুক্ত করতে তিনি মুমিন চৌধুরীর নম্বরবিহীন একটি প্রাইভেট কার (বর্তমানে অন্যের মালিকানাধীন) কল করে দর্পনগরের বাড়িতে নিয়ে আসেন। এরপর সেই প্রাইভেট কার নিজেই ড্রাইভ করে রাতেই নিকটবর্তী জকিগঞ্জ সীমান্তে (ভারতের ওপারে করিমগঞ্জ সীমান্ত) যাওয়ার প্রস্তুতি নেন।

বিশ্বস্ত সোর্স হিসেবে তাকে নিরাপদে ভারত সীমান্তে পৌঁছে দিতে জকিগঞ্জের উত্তরকুল পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরাও অপেক্ষা করছিলেন। অপরদিকে হারিছ চৌধুরীর আসার অপেক্ষায় প্রহর গুনছিলেন ভারতের করিমগঞ্জ সীমান্তে তারই মামত ভাই আফতাব উদ্দিন। করিমগঞ্জের প্রভাবশালী মুসলিম পরিবার হওয়ায় ভারত সীমান্তে কর্তব্যরত বিএসএফ সদস্যরাও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। এ যেন মেঘ না চাইতেই জল। রাত ১২টা।

সীমান্তের কাছাকাছি কালীগঞ্জ বাজারে গিয়ে গাড়ি নিয়ে ঘর্মাক্ত দেহে হাজির হারিছ চৌধুরী। কিন্তু বিধি বাম। হঠাৎ শুরু হয়ে যায় প্রচণ্ড বেগে ঝড় আর বৃষ্টি। কোন উপায়ান্তর না পেয়ে কালীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন মানিকজোর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম ককাই মিয়ার বাড়িতে রাতযাপন করেন। এরপর ওই দিন ফজরের নামাজের পর স্থানীয় শেওলা ব্রিজ পার হয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলার শারহ পাড় গ্রামে ছোট ভাই সেলিম চৌধুরীর মামা শ্বশুর মতিন মিয়ার বাড়িতে অবস্থান নেন।

গলায় গামছা আর মাথায় ক্যাপ পরে চালকের ছদ্মবেশ ধারণ করেন। এরপর শারহপাড় গ্রাম থেকে নিকটাÍীয়ের একটি পিকআপ নিজেই ড্রাইভ করে সিলেট শহরের শিবগঞ্জে যান এবং মতিন মিয়ার শহরের বাসায় ৪ দিন অবস্থান করেন। এরপর সুযোগ বুঝে গ্রেফতার এড়াতে সেই একই পিকআপ চালিয়ে ঢাকায় আসেন এবং শাহজানপুরে বড় বোন এখলাছুন নাহারের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এখানে চার দিন অবস্থান করে কৌশলে গুলশানের বাসা থেকে পাসপোর্টসহ জরুরি কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করেন। এরপর ২৯ জানুয়ারি রাতে ফের একই পন্থায় পিকআপ চালিয়ে ঢাকা থেকে জকিগঞ্জ সীমান্তে গিয়ে পৌঁছেন।

পুলিশ, বিডিআর ও বিএসএফ’র সহায়তায় তিনি সীমান্তের ওপারে করিমগঞ্জে নানার বাড়ি গিয়ে হাজির হন। হারিছ চৌধুরীর পালিয়ে যাওয়ার পুরো ঘটনাটি অনেকটা বাংলা ছায়াছবির কাহিনীর মতো। ইচ্ছা হলে একটি বাংলা ছিনেমা তৈরি করা যেতে পারে। আমার প্রশ্ন হারিছ চৌধুরী পালিয়ে রয়েছেন কোন দুক্ষে ? দেশে ফিরে আসছে না কেন ? নাকি বিএনপি নেতারা তাকে পেলে জীবন্ত কবর দিবে ? @সুলতান মির্জা !!!  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.