আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন তানভীর মাহমুদের ভাবনা ...

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি টিভিতে হাজার কোটি টাকার মালিক তানভীর মাহমুদকে হ্যান্ডকাফ পড়া অবস্থায় দেখে মনটা খারাপ লাগলো। উনার বিমর্ষ এবং বিচলিত চাহনী মনের মাঝে একটা কঠিন আবেশ তৈরী করলো। মুখ দিয়ে একটা শব্দ বেড়িয়ে এলো - আহা! সেই সাথে মনে মাঝে ভাবনা এলো - বিপুল বিত্ত বৈভব এর মালিক - যার অর্থের প্রভাবে নিশ্চয় বাংলাদেশের কর্তা ব্যক্তিও তাকে দেখে চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে যেতো। বিলাসে মত্ত হয়ে যখন জীবনটাকে ভোগে ভাসিয়ে দিয়েছিলো এই লোক - সে তখনও কি একবার ভেবেছিলো - দেশের সকল টিভি ক্যামেরার সামনে তাকে হাতকড়া পড়ে হেঁটে যেতে হবে! বস্তুত এই পরিনতির কথা কেউই ভাবে না। কারন অপরাধের রাস্তাটা একটা সরু গলির মতো - এবার ভিতরে ঢুকে পড়লে পিছেন যাওয়া খুবই কঠিন হয়ে যায়।

সাধারনত দ্রুত বেগে এরা ধ্বংসের দিকে চলে যায়। অনেকে হয়তো দৃশ্যত সকল আইনের উর্ধে থেকে যায় - কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এদের পরিনতি ধ্বংসই। যাই হোক, তানভীর মাহমুদের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছিলাম - আসলে কল্পনা করার চেষ্টা করছিলাম লোকটি সেই সময়ে কি ভাবছিলো। এই ধরনের বিপুল ক্ষমতা আর অর্থের মালিকরা কখনই মনে করে না যে তারা ভুল বা অন্যায় করেছে। আসলে এই অনুভুতির কবর রচিত হয় অতি প্রাথমিক পর্যায়ে - কথায় আছে কচু কাঁটতে কাঁটতে ডাকাত।

এরা যখন ছোট ছোট অপরাধ করে তখন হয়তো কিছু সময় ন্যয়-অন্যায় বোধ কাজ করে - পরে তা অপরাধের ভারে দলিত মলিত হয়ে যায়। যখন এই ধরনের বড় অপরাধী ধরা পড়ে - তখন তারা প্রথম যা ভাবে তা হলো - আমি কেন? (হোয়াই মি!) এরা তাদের চারপাশে শত শত অপরাধীতে দেখতে পায় - যারা আইন এবং শাসনকে নিজেদের পকেটে পুরে নিয়ে দিব্যি চলাফেরা করছে মুক্ত মানুষ হিসাবে। হাতকড়া পড়া অবস্থায় হয়তো সে ভেবেছে - বসুন্ধরা গ্রুপের শাহ আলম - যে প্রতারনা আর খুনের দায়ে বিচারাধীন আসামী হয়েও দিব্যি হওয়া হেয়ে বেড়াচ্ছে- সালমান রহমান শেয়ার বাজার আর শাইনপুকুরসহ ঋণ খেলাপীর জগতে অবিশ্বরনীয় হয়েও সমস্যায় নেই - আবদুল আউয়াল মিন্টু যুগ যুগ আগে শত শত কোটি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে ফেরত না দিয়ে একবার আওয়ামী আরেকবার বিএনপি জংগলের ভিতর নিজেকে নিরাপদ করে রাখছে - মওদুদ আহমেদ অবলীলায় তার নামের মামলাগুলো থামিয়ে দিচ্ছে - রাজনৈতিক উচ্চপর্যায়ের নেতারা মামলায় হাজিরা না দিয়েই চামচা দিয়ে আইনকে নিজেদের মতো চালাচ্ছে - লক্ষ কোটি টাকার ঋণ খেলাপীরা কোন এক অদৃশ্য কারসাজিতে আইনের বাইরে বসে আছে। জানি না - হয়তো সে ভেবেছে - এরপর যদি ছাড়া পায় - হয়তো সে একটা সংবাদপত্রের মালিক হবে - যেখানে দেশের তথাকথিত প্রগতিশীলরা নানান কুটতর্কে তার অপরাধকে আড়াল করবে - অথবা একটা টিভির মালিকানা নেবে - যেখানে সাংবাদিক আর টকশোর লোকজন আইন গাইন ইত্যাদি বলে তার প্রতারনার বিষয়টাকে আড়ালে পাঠাবে - অথবা কোন আর্মি জেনারেলকে তার প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের পদে বসিয়ে রাষ্ট্রকে বিব্রত করে নিজেকে রক্ষা করবে - অথবা সরাসরি কোন রাজনৈতিক দলে গিয়ে এমপি হবে - তখন তাকে কিছু বলার আগের কর্মীরা সারা বাংলায় আগুন ধরানোর প্রক্রিয়া হিসাবে বাসে আগুন দেবে। অথবা কমপক্ষে কোন একজন আইনজীবি - যার জুনিয়ররা হাইকোর্টের জজ হয়েছে - তার সাথে বৈবাহিক বা আর্থিক সম্পর্ক তৈরী করবে - যাতে যে কোন মামলায় স্থায়ী আগাম জামিন নিয়ে অর্থের স্রোতে মামলাকে হিমাগারে পাঠাবে।

হয়তো তানভীর মাহমুদ এই ভাবে ভাবছে না - কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতা হলো অপরাধী যত বড় অপরাধ করবে - তার জন্যে তত বেশী ব্যবস্থা আছে - কিন্তু তার জন্যে আগে ভাবে কিছু খরচ করে রাখতে হবে - যত বেশী বিনিয়োগ তত বেশী মুনাফা - সেইটা টিভি, সংবাদপত্র বা রাজনৈতিক দল যেখানেই হোক না কেন। একজন বাংলাদেশী তানভীর মাহমুদ কিভাবে এতো বড় একটা ভুল করলো - হয়তো ভোগ বিলাস আর নিজেকে নিয়ে অতিরিক্ত ব্যস্ত ছিলো - নয়তো ভুল জায়গায় বিনিয়োগ করেছিলো - হয়তো ব্যাংকের কর্তাদের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল ছিলো। তবে একটা কথা সত্য সবাইতো আর তানভীর মাহমুদের মতো কম শিক্ষিত না অথবা বোকা না - তাই আমরা দেখছি কিভাবে অপরাধের মনষ্টাররা বাংলাদেশে বুক ফুলিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.