আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাচ্চাদের খেলা এবং একটা ব্যাপার

আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনই,তুমি কি অপরুপ রুপে বাহির হলে জননী চা-টা মুখে পড়তেই মুড অফ হয়ে গেল সুমনের। একে তো ঠান্ডা হয়ে গেছে তার উপরে চিনিও দেওয়া হয়নি। পত্রিকা পাঠের সময় গাঢ় লিকারের গরম চা খাওয়া তার অভ্যাস। কাজের মেয়েটা গরম চা-ই দিয়েছিল,পাঠের নিমগ্নতায় কখন ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে সুমনের খেয়ালে ছিলনা। নাহ,পত্রিকায় জমে যাওয়ার অভ্যাসটা ছাড়তে হবে।

সবসময় উপসম্পাদকীয় পড়তে গিয়েই জমে যায় সে। ইদানিং কিছু লোক,খুব একটা প্রভাবশালী না,খুব একটা বুদ্ধিজীবীও না-হবে ভার্সিটির লেকচারার না হয় বিদগ্ধ পাঠক;খুব সাহস নিয়ে লিখছে। সহজ বাক্যে অন্যায়ের প্রতিবাদে কলম ধরেছে। সুমন ভাবে,লোকগুলোর কি জীবন-সংসার-ভবিষ্যত নেই?এই আজকের কাগজেই দেখ না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে দুই রাজনৈতিক দলের বিবাদ ও বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে লিখে একদম ফাটিয়ে দিয়েছে।

আসলেই তো। দেশের কি হবে না হবে তা নিয়ে ভাবাভাবি নেই,মাথাব্যথা নেই। সবাই আছে নিজের যুক্তিতে। যুক্তির যৈক্তিকতা কে খুঁজতে যাচ্ছে?মনটা বিষিয়ে গেল। কাজের মেয়েটাও যে বাড়ির ভিতরে গেল,এদিকে আর আসার নাম নেই।

উঠানে ইজি চেয়ার পেতে বসেছে সুমন। বাড়ির অধিকাংশ আসবাবপত্র উঠানে জড়ো করে তাতে নতুন পালিশ দেওয়া হচ্ছে। পুরনো আসবাবগুলো দেখতে নতুন লাগবে। ফার্নিচার মিস্ত্রি একমনে পালিশ করে যাচ্ছে। লোকটার আক্কেল জ্ঞান নেই নাকি!গেরস্থ বাড়ির মধ্যে একদম উদোম হয়ে কাজ করছে।

বাড়ির বৌ-ঝি দের গ্রাহ্য করে না নাকি! -অই মিয়া,গেরস্থ বাড়ির মধ্যে উদোম হইয়া আছো ক্যান?জামা গায়ে দাও। -ভাইজান,মাফ কইরেন। সকাল থেইক্যা রোদের মধ্যে কাজ করতাছি তো। গরম লাগতাছে। শরীর জুড়াইলে আবার জামা গায়ে দিমু।

আসলেই তো,গরম পড়ছে ভালই। মনটা বিষিয়ে থাআকায় ব্যাপারটা খেয়াল করেনি সুমন। আগপিছু না ভেবে লোকটার সাথে রাগ দেখানো উচিত হয়নি। মুড অফ থাকায় আমগাছের ডালে ক্রমাগত ডেকে যাওয়া কাকটার ডাকের মতই সব কিছু অসহ্য লাগছিল তার। উঠে কাকটাকে তাড়িয়ে দিল সুমন।

মনটাকে ভাল করতে হবে। না হলে যে কারো সাথে বাজে আচরণ করে ফেলতে পারে যে কোনো মুহুর্তে। ইজি চেয়ারটাতে বসে গা এলিয়ে দিতে দিতে সুমন আশপাশটাকে খুঁটিয়ে দেখা শুরু করলো। আমগাছে কাক বাসা বেঁধেছে। আশ্চর্য তো।

এতদিন দেখে এসেছে নারকেল গাছে বাসা বাঁধতে। কাকদেরও তাহলে বাসস্থানের জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। ফার্নিচার মিস্ত্রি লোকগুলোও তো কম পরিশ্রম করছে না। সুনিপুন হাতে ফার্নিচারগুলোর মলিন হয়ে যাওয়া নকশাকে জীবন্ত করে তুলছে ওরা। ওদের হাতে যেন জিয়ন কাঠি।

আমাদের সমাজব্যবস্থায়ও দরকার এমনই জিয়ন কাঠিওয়ালা কিছু মানুষ। চারপাশের বিষয় আশয়গুলোর ঋনাত্মক দিক সরে গিয়ে ধনাত্মক দিকগুলো ভেসে উঠছে সুমনের মনে। ভাল একটা অনুভূতি। উঠানে বাচ্চারা খেলা বন্ধ করে দিয়ে হট্টগোলে মত্ত হয়েছে। এতক্ষন তিনজন মিলে খেলছিল।

একটা প্লাস্টিকের মোড়া মাঝখানে রেখে দুইজন তার চতুর্দিকে ঘুরছিল আর অন্যজন তাদের দিকে পিছন ফিরে ছড়া কাটছিল- “চিকন চালের ভাত রেঁধেছি আধ পোয়া চাল মোটে কার আহারে জুটে দেখি কার আহারে জুটে। । বড়শি দিয়ে মাছ ধরেছি একটা পুঁটি মোটে কার আহারে জুটে দেখি কার আহারে জুটে। । পেঁয়াজ পুড়ে ডাল রেঁধেছি খাবে লুটে পুটে কার আহারে জুটে দেখি কার আহারে জুটে।

। “ ছড়া শেষ হতেই যে আগে মোড়ায় বসে যেতে পারবে সেই জয়ী। খেলাটা ওরা খেলছিল স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য। এখন বয়সে অনেক ছোট্টদের দল এসে বায়না ধরেছে ওরাও খেলবে। এত করে বলছে এটা ওদের স্পোর্টস এর খেলা,কিছুতেই ওদের মানানো যাচ্ছে না।

বড় ভাইয়ের মেয়ে রিমি অগত্যা তাই ঘরের দিকে যাচ্ছিল আরো বসবার আসনের ব্যবস্থা করতে। মাঝপথে সুমন বাধা দিলো। -এই,ঘর থেকে কিছু আনা যাবে না। -কাকু,আমাদের খেলায় লাগবে তো। রিমি পা নাচিয়ে বলে।

-বলছি না আনা যাবে না। সুমন গলা চড়ায়। ছোট কাকুকে রিমি চেনে। সবসময়ই আদর করে তাকে। কদাচিৎ যখন রাগে পিটিয়ে আস্ত করে ছাড়ে।

রিমি তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে সুমনের সামনে। সুমন জানে বাচ্চাদের খেলায় এটা তার অন্যায় হস্তক্ষেপ হচ্ছে। তবে তার মনে এটা করায় একটা ব্যাপার আছে। মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকা রিমিকে বলল, -তোরা দুইটা দল কর সমানে সমান। তারপর খেল।

খেলায় ভিন্নমাত্রা পেয়ে রিমি একটু আশ্চর্য তবে বাস্তব জ্ঞান হারায়নি। -একটা মোড়ায় দলের সবাই কিভাবে বসবো? -এইযে বড় সোফাটা আছে,ওটাতে বসবি। হাতের পেপারটা ভাঁজ করতে করতে বলে সুমন। কাকুর প্রস্তাবটাকে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে যাচাই করে নিল রিমি। এরপর একছুটে চলে গেল বাচ্চাদের ভিড়ে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই দল হয়ে গেল। একজন থাকলো ছড়া কাটতে,শুরু হইয়ে গেল খেলা। “চিকন চালের ভাত রেঁধেছি আধ পোয়া চাল মোটে কার আহারে জুটে দেখি কার আহারে জুটে। । বড়শি দিয়ে মাছ ধরেছি একটা পুঁটি মোটে.. পেঁয়াজ পুড়ে ডাল রেঁধেছি খাবে লুটে পুটে.. “ ছড়া শেষ হতেই একটা দল বসে পড়ল সোফায়।

বাচ্চাদের সে কি হাসাহাসি আর লুটোপুটি। অনেকক্ষণ ঘুরে চক্কর দিয়ে অন্যদের ফেলে বসতে পারায় ওরা যেন আনন্দের ঝর্ণা খুঁজে পেল। তবে বেশীক্ষণ নয়। আবার ছড়া কাটা শুরু হল,আবার বাচ্চাদের মধ্যে শুরু হল সোফার আশে পাশে থাকার প্রচেষ্টা। যাতে করে যেইমাত্র ছড়া শেষ হবে ওমনি যেন বসে যেতে পারে।

যথারীতি ছড়া শেষ হলো। এবার বসল গতবারের দাঁড়িয়ে থাকা দল। এরা আরো উল্লাসিত। এদের আনন্দের মাত্রা আরো বেশি। কেউ কেউ তো টিপ্পনি কাটছে, “গতবার আমাদের যে দাঁড়া করিয়ে ছিলে।

এবার তোমরা দাঁড়ায় থাকো। দেখ কেমন মজা। হারু পাট্টি”। দাঁড়িয়ে থাকা দলের অপমানিত মুখগুলো দ্বিগুন উৎসাহে চক্কর দেওয়া শুরু করলো ছড়া শুরু হওয়ার সাথে সাথে। এবার ছড়া শেষ হলে দেখা গেল প্রথমবারের বিজয়ী দলই এবার জিতেছে।

আনন্দ,উচ্ছাস আর হলো না। শুধুই চলল টিপ্পনি,ভেংচি। বিপত্তিটা বাধলো পুনরায় ছড়া শুরু হতে। সদ্য বিজয়ী দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য সুমনের একমাত্র সন্তান কিছুতেই তার আসন ছেড়ে দিয়ে পুনরায় আসন ধরার আশায় চক্কর কাটতে রাজি না। তার এক কথা এক রা-“আমি এখানেই বসে থাকবো,আমি হারু পাট্টি হবো না”।

বুঝানোর সকল চেষ্টা ব্যর্থ হলে তাকে সেখানে বসিয়ে রেখেই শুরু হল খেলা। আরো বেশ কয়েকবার চলল জয়-পরাজয়ের পালাবদল। তারপর শুরু হল নতুন ঝামেলা। যে বেচারী এতক্ষন নিঃস্বার্থ হয়ে ছড়া কাটছিল,সে ঠিক করলো এবার সেও খেলবে। তাহলে ছড়া বলবে কে?কাউকে পাওয়া গেল না ওমন নিঃস্বার্থ।

কিন্তু ছড়া না বললে খেলা হবে কেমনে?ছড়া তো বলতেই হবে কোন একজনকে। আগে যে এই মহৎ দায়িত্ব পালন করেছিল সেই একটা সমাধান দিল। সে নিজে ছড়াও বলবে আবার একটা দলের হয়েও খেলবে। এবার লাগল ভাল করে। কেউ নিঃস্বার্থ হবে না আবার একটা দলের সদস্য এমন কাউকে ছড়া বলতেও দিবে না।

বাড়াবাড়ি চলতে লাগলো। খেলা হয়ে পড়ল অনিশ্চিত। বাচ্চারা এসব করে মজা পাচ্ছিল কিনা এ ব্যাপারে সন্দেহ আছে;তবে সুমন এসব দেখে দেখে যথেষ্ট উত্তেজিত ও আনন্দিত হচ্ছিল। একটা সমাধান আসি আসি করছে তো !!  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.