আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপার্থিব

"বাতাস আসেনি আজ, রোদ গেছে বিদেশ ভ্রমণে। আপাতত প্রকৃতির অনুকারী ওরা দুই মানুষ-মানুষী বুদ্ধের মূর্তির মতো শান্ত দুই চোখে। " শরতের স্নিগ্ধ বিকেল । আফতাব নগরের কাশ ফুলের পথ ধরে দু'জন দক্ষিণ দিকে হেঁটে যাচ্ছিল । তাদের যাওয়ার কথা ছিল একটা ছবির এক্সজিবিশনে ।

তাদের মনে হচ্ছে এক্সজিবিশনে না গিয়ে তারা ভালোই করেছে । এত কাশ তারা আগে কখনও দেখিনি । যেদিকে চোখ যায় শুধু সাদা শুভ্র কাশ ফুল । পাশে ছোট একটা নদীর মতন আছে । বাতাস এলেই কাশ ফুল গুলো কি সুন্দর দুলে ওঠে ! হিমি বলল, তোমাকে নিয়ে আর পারি না ।

কোনো ব্যাপারেই তোমার কোনও আগ্রহ নেই কেন বল তো ! নাটক, ফিল্ম, পেইন্টিং, গান, আড্ডা কোনও না কোনও বিষয়ে তো মানুষের এক ফোঁটা ইন্টারেস্ট থাকবে ! তোমার কিছুতেই নেই । এক সময় তো তুমি খুব ছবি তুলতে, বই টই পড়তে- ইদানিং কি হয়েছে তোমার বলতো ? গুল্লু একটু হেসে বলল- এখনও তো বই পড়ি, ছবি তুলি । হিমি বলল- তুমি তো দিন দুনিয়ার কোনো খবরই রাখো না । বড্ড ঘর কুনো স্বভাব তোমার । গুল্লু বলল- হুম, ঘরই আমার ভালো লাগে ।

বেশী মানুষ দেখলেই আমার ভয় করে- খুব অস্বস্তি হয় । হিমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল- কি যে করি তোমাকে নিয়ে ! এই স্বভাবের জন্যই কখনও তোমার কিছু হবে না । যদি একটা ঝাকুনি মেরে সব জড়তা কাটিয়ে উঠতে পারতে, তাহলে কিন্তু তুমি জীবনে অনেক কিছু করতে পারতে । গুল্লু বলল- সবাই সব কিছু পারে না হিমি । হিমি গুল্লুর দিকে তাকিয়ে বলল- ওসব এক্সজিনিশনের ছবির চেয়ে কাশ ফুলের মধ্যে হাঁটতে কি বেশী ভালো লাগছে না ? গুল্লু বলল- হুম ।

হিমি আদুরে গলায় বলল- তুমি এত হাঁটতে ভালোবাসো কেন ? প্রতিদিন বিকেলে এলোমেলো হাঁটো, কেন ? গুল্লু বলল- হাঁটতে হাঁটতে চারদিকটা খুব ভালো করে দেখা যায় । হিমি বলল- ঢাকা শররের রাস্তা ঘাটে হাঁটতে আমার খুব বিরক্ত লাগে । হুল্লু বলল- আমি তোমাকে ঠিক বুঝাতে পারব না । জানোতো, আমি গুছিয়ে কথা বলতে পারি না । অনেক কিছু বুঝতে পারি কিন্তু বোঝাতে পারি না ।

হিমি চিন্তিত গলায় বলল- আচ্ছা, তোমার আমার সম্পর্কটা নিয়ে কিছু ভেবেছো ? গুল্লু বলল- কী ভাববো ? হিমি বলল- আমাদের সম্পর্কের নাম কি ? প্রেম ভালোবাসা না বন্ধুত্ব ? গুল্লু এক আকাশ অস্বস্তি নিয়ে বলল- এটা আমিও ঠিক বুঝতে পারি না । আসলে আমার ভেতরে আবেগ অনেক কম । প্রেম তো বায়োলজিক্যাল ব্যাপার । হিমি- তুমি ভয় পেওনা । তোমার আর আমার মধ্যে অবশ্যই কিছু একটা আছে ।

সবচেয়ে বড় সত্যি হলো- তোমার সঙ্গ আমার ভালো লাগে । সম্পর্ক টা যে কোন দিকে গড়ানে তা আমি জানি না । গুল্লুর হাতে হাত রেখে হিমি বলল- তোমার কথা ভাবলেই আমার চোখ ভিজে উঠে । গুল্লু একটু দুষ্ট হাসি দিয়ে বলল- তাহলে ডাক্তার দেখাও, তোমার চোখে সমস্যা আছে । হিমি বলল- আমি আর হাঁটতে পারব না ।

আমাত হাঁটু ব্যাথা করছে । এখন ফুচকা খাবো । গুল্লু খুব মন দিয়ে হিমির ফুচকা খাওয়া দেখল । গুল্লুর মনে হলো- পৃথিবীর কোনো মেয়ে হিমির মতন এত সুন্দর করে ফুচকা খেতে পারবে না । হিমি এক চামুচ তেঁতুলের পানি মুখে দিয়ে বলল- মুখ টা মলিন করে দাঁড়িয়ে আছো কেন ? ফুচকা না খাও- ঝাল মুড়ি খাও ।

গুল্লু বলল- এসব আমার ভালো লাগে না । আমি একটা অপদার্থ । হিমি বলল- সামনে একজন মলিন মুখে দাঁড়িয়ে থাকলে খেয়ে আরাম পাওয়া যায় না । হিমি ফুচকা শেষ করে আবার হাঁটতে শুরু করলো । আজ শুক্রবার ।

এই আফতাব নগরে যেন মানূষের ঢল নেমেছে । বেশী মানূষ গুল্লু একদন সহ্য করতে পারে না । গুল্লু বলল- চলো, তোমাকে বাসায় নামিয়ে দেই । হিমি বলল- আচ্ছা । গুল্লু কখনও স্বাধীন ভাবে কখনই নিজের মত প্রকাশ করতে পারে না ।

রিকশায় বসেই হিমি বলল- কিছুক্ষণ হাসি মুখে আমার সাথে গল্প করো । গুল্লু গল্প করতে জানে না । তবে গুল্লু শ্রোতা হিসেবে খুব ভালো । হিমি বলল- তুমি এত কম খাও কেন ? আমি কিন্তু খেতে ভালোবাসি । গুল্লু বলল- খাওয়াটা আমার কাছে আনন্দময় ব্যাপার না ।

খেতে হয় তাই খাই । খাওয়ার ব্যাপারটা না থাকলে ভালো হতো । হিমি বলল- আমার খুব ইচ্ছা করে তোমাকে অনেক কিছু রান্না করে পাশে বসিয়ে খাওয়াই । গুল্লু তার সাদা দাঁত বের করে একটু হেসে বলল- আমাকে নিয়ে এত ভেবো না- দুঃখ পাবে । হিমি বলল- মানুষ যাকে ভালোবাসে- তাকেই ভাবে- তাকেই রান্না করে খাওয়াতে চায় ।

হঠাৎ ধমকা বাতাসের সাথে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো । হঠাৎ চলতি রিকশায় হিমি গুল্লুকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরল । ঠোঁট রাখল ঠোঁটে । গুল্লু কেঁপে উঠল । অদ্ভুত একটা মুহূর্ত ।

গুল্লু রিকশা থেকে পড়েই যাচ্ছিল- হিমি তাকে সামলে নিল । ব্যাপারটা কি ঘটল গুল্লু ঠিক বুঝতেই পারল না । কি করল এটা হিমি ? কেন করল ? হিমি গুল্লুর দিকে তাকিয়ে স্যরি বলল । গুল্লু চুপ করে থাকল । হিমি বলল- তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে- এরকম করা আমার উচিত হয়নি ।

গুল্লু বলল- রাস্তায় রিকশার মধ্যে এমন কেন করতে ? হিমি বলল- তোমাকে শক দেওয়ার জন্য । মনে হয়েছিল ধাক্কাটা তোমার উপকারে আসবে । এইখানে এসে প্রেম শেষ হল। শরীর মরেছে। তোমার হাত ধরে আমি দাঁড়িয়েছি বৃষ্টির ভিতরে গাছ থেকে জল পড়ছে, বৃষ্টিছাট ছুটে আসছে গা-য়, “ভিজে যাবে’ -তুমি বলছ, “সরে এসো ছাতার তলায়’ আমাদের একটাই ছাতা।

তাতে দুজনেরই চলে যায়। আরও কালো করে এল, গাছে ডানা ঝাপটায়। দুজনে দাঁড়িয়ে আছি। দুজনে দাঁড়িয়ে থাকব। যতদিন পাশে থাকা যায়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।