আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমরা আমজনতা; আমরা চাই; আমরা পারব

উৎসর্গ: ডাক্তার আইজু আমরা আমজনতা। আমজনতা কারা? নিম্নবিত্ত না মধ্যবিত্ত? উচ্চবিত্তও আছে নাকি? দেশের নীতিনির্ধারণে যাদের ভূমিকা কেবল মার্কার উপর সীল মারা পর্যন্ত, যারা কেবল তাকিয়ে তাকিয়ে দুই দলের নিতম্বকে ক্ষমতার মিউজিক্যাল চেয়ারে পালাক্রমে বসতে দেখি তারাই আমজনতা। আমাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য- আমাদের বিভক্তি। এই বিভক্তির সাথে আমরা শৈশব কাটাই, জীবনভর একে লালন করি আর শেষে পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তুলে দেই। আমাদের শিক্ষাই শুরু হয় বিভক্তি দিয়ে- কেউ যাই বাংলা মিডিয়ামে, কেউ ইংলিশ মিডিয়ামে, কেউ মাদ্রাসায়; আমাদের কাদার মত মনকে একেক প্রতিষ্ঠান একেক ছাঁচে ঢেলে বিভক্তিকে মজবুত করে।

বিভক্তির লীলাক্ষেত্র আমাদের রাজনৈতিক চেতনা- যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গঠিত হয় আমাদের পরিবারের পছন্দমতে কিংবা কোন পছন্দের ও শ্রদ্ধার মানুষের অনুসরণে। এই শিক্ষা আর চেতনা নিয়েই নেমে পড়ি জীবনের চিরন্তন ইঁদুর দৌড়ে। এখান থেকে জীবনের ফার্স্ট হ্যান্ড অভিজ্ঞতা নেই আর মিউজিক্যাল চেয়ারওয়ালাদের নিতম্বের পরিধি আর প্রভাব দেখে হতাশ হই। তারপর হতাশার উৎসকে চিনতে চেষ্টা করি সেই বিভক্তিওয়ালা শিক্ষা আর চেতনাকেই সম্বল করে, মিডিয়ার চশমা চোখে এঁটে। অবশ্য এই হতাশার জন্য চমৎকার ইমোশনাল আউটলেট আমাদের হাতে আছে- ব্লগ, ফেইসবুক।

হাতড়াতে হাতড়াতে এখানে এসে পড়ি। এখানে আমরা বেশিরভাগই আসি হতাশাতাড়িত হয়ে সহমর্মিতার আশায়, কাঁধের উপর সমব্যথির উষ্ণ হাতের আশায়। বলি অনলাইন জগৎ আমাদের মুক্তি দিবে। কিন্তু মুক্তি আর মেলে না। কেন? কারণ আমরাই।

কারন এখানেও আমরা নিয়ে এসেছি কাঁধে চেপে থাকা বিভক্তির সিন্দাবাদের ভূতকে, কম সে কম ভূতের বাতাসকে। শুনতে খারাপ লাগলেও বাস্তবতা হল, আমরা অনেকেই এখানে নতুন কিছু জানতে কমই আসি, আমাদের সুরের সাথে মেলানো সুরই শুনতে আসি। আর এ সুর যারা যত প্রতিভা, মেধা দিয়ে বাজাতে পারি, যত ব্যঙ্গ-বিদ্রূপে অলঙ্কৃত করতে পারি- এ অনলাইন জগতে তাদেরই জয়জয়কার। তাদের পেছনেই আমরা জড় হই, তাদের কথায় আমাদের মনের ভাবনার প্রতিধ্বনি শুনে স্বস্তি পাই। এভাবেই মানুষ জড় হতে হতে ছাড়িয়ে যায় ১ হাজার, ২ হাজার, ১০, ২০- শেষ নেই।

বাস্তব জীবনে যে যাই থাকি না কেন, এখানে এসে বনে যাই মানুষের মনোরাজ্যের মুকুটহীন বাদশাহ। আর যখন সুর মেলে না? তখন বেশ অস্বস্তিতে পড়ে যাই আমরা। হতাশা বোধ আরও তীব্র হয়, মেনে নিতে পারি না। সবশেষে, তাকে ট্যাগ দিয়ে অচ্ছুৎ করে দেই। এই বাদশাহী আর ট্যাগাট্যাগির ফলস্বরূপ যেটা হয়- ঐক্য আর মুক্তির কথা বলে আমরা এখানে আসলেও একেকজন তার ফলোয়ার গোষ্ঠী নিয়ে একেকটা দ্বীপের মত বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই।

ঐক্য থাকে সুদূরপরাহত। আমরা কেবল বাস্তব জীবনের দ্বন্দ-সংঘাতের একটা ডিজিটাল ভার্সন তৈরি করেছি মাত্র। আমরা এই ঘৃণার ডাস্টবিনে সহমর্মিতা খুঁজে বেরানো অসহায় কুকুর হতে চাই না। -আমরা চাই ঐক্য, মুক্তি। -আমরা চাই মাথা ভরা কৌতূহল নিয়ে সত্য জানতে, তা আমাদের যতই পীড়া দিক না কেন।

-আমরা চাই পাশের মানুষটার হাত ধরতে (বিপরীত লিঙ্গের ক্ষেত্রে জরুরি নহে), তার সাথে যতই মতবিরোধ থাকুক না কেন। -আমরা চাই তার কথাগুলো ধৈর্য্য ধরে শুনতে, ভুল বললে বা মতবিরোধ হলে ঘৃণা নয়, পরম মমতার সাথে নিজের মতটা জানিয়ে তাকে নিজের মত গঠন করতে সাহায্য করতে। -আমরা চাই অনলাইন জগতে অ্যাননিমিটি থাকলে সত্য অকপটে প্রকাশ করে তার সদ্ব্যবহার করতে। -আমরা চাই দেশের জরুরি মুহূর্তে তাৎক্ষণিক সারা দিতে, এ কাজে পরস্পরকে উৎসাহ দিতে। -আমরা চাই সারক্যাজম বুঝতে ও ভাল মনে তা গ্রহণ করতে।

-আমরা চাই ইনফরমড হতে, অপিনিওনাইজড হতে না। -তাই আমরা ধৈর্য্যশীল শ্রোতা হব। সবার থেকে তথ্য নিব, তারপর ভেবে চিন্তে নিজের অভিমত গঠন করব। -তাই আমরা কোন লেখা পড়লে লেখক কেমন লোক তা না ভেবে লেখাটি কতখানি সত্য, এটা আমার কোন কাজে লাগতে পারে কিনা তা নিয়ে ভাবব। -তাই আমরা কারও ভুল ধরা মাত্রই “ইউরেকা!” বলে সবার সামনে কোন মন্তব্য করে হেয় অপদস্থ করা থেকে বিরত থাকব।

এ ক্ষেত্রে ইনবক্স বা ই-মেইলে জানাব। আমাদের এ কাজের পেছনে সমস্যা সমাধানের সদিচ্ছাই কেবল কাজ করবে, তার সামনে বড় হবার কোন ইচ্ছা থাকবে না। -তাই আমরা কারও সম্পর্কে কোন কথা প্রকাশ করার আগে সাবধানতার সাথে ভেরিফাই করব। ভেরিফিকেশনের সর্বশেষ আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে তার সাথেই কথা বলে নিশ্চিত হব, তারও তো কমপক্ষে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দরকার। -কোন দলের প্রতি অনুরাগ তাকতেই পারে, আমরা তার বহিপ্রকাশ ঘটাব সবার আগে নিজেই তার ভুল- ত্রুটির সমালোচনা করে।

-তাই আমরা পারিবারিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় আদব-লেহাজের প্রতিফলন বাস্তব জীবনের পাশাপাশি ভার্চুয়াল জীবনেও ঘটাব। -তাই আমরা মনে রাখব পরকাল যেমন ইহকালের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, ইহকালও তেমনি ভার্চুয়ালকালের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভার্চুয়ালকালে বিনোদন নিব তা ঠিক আছে, কিন্তু ইহকালের জন্য কোন পাথেয় যদি নিতে না পারি তবে সবই বৃথা। -তাই আমরা কারও অ্যাননিমিটিকে তার একান্ত ব্যক্তিগত পছন্দ ও বিষয় বলে জানব ও এ ব্যাপারে তার ইচ্ছাকে মেনে নিব। আমরা শিশুর কৌতূহল নিয়ে লগইন করব।

লগআউট করব যৌবনের উদ্যম আর প্রবীণের প্রাজ্ঞ নিয়ে। আমরা চাই, আর ইন শা আল্লাহ আমরা পারব। কারণ আমাদের চাওয়াটা সৎ। Regardless of your attitude, we will miss you Doc', big time... ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।