আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজিব দুনিয়া

মানুষের জীবন খুবই বিবর্ণ থাকে মাঝে মাঝে। আসলে একে বিবর্ণ বলাটা বোধ হয় ঠিক না। এটাও একটা রং। হয়তো নিকষ কালো কিংবা ধূসর ! আরিফ আর প্রিয়া দুজন দুজনকে খুব ভালবাসে। তাদের সম্পর্ক অনেক দিনের।

সেই কলেজ লাইফ থেকে তারা একে অপরকে ভালবাসে। হঠাৎ করেই প্রিয়া কেমন যেন বদলে যেতে শুরু করে। আরিফ প্রিয়াকে অনেক ভালবাসে। সে প্রিয়াকে কিছুই বলে না, কিন্তু মনে মনে ভাবতে থাকে যে তার কতো দিনের চেনা প্রিয়া কেমন যেন ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। সে আগের মত করে আর আরিফের খোঁজ খবর নেয় না।

আগের মত আহ্লাদ করে বলে না ভালোবাসি। আরিফের মনে হয় কেমন যেন দূরে সরে যাচ্ছে প্রিয়া। আরিফের মনে অজানা এক ভয় জেগে ওঠে। তার প্রিয় মানুষটিকে হারানোর ভয়। এভাবে বেশ কিছুদিন চলে যায়।

ক্যাম্পাসে কদিন ধরে প্রিয়া ঠিক মত আসে না। আরিফ ফোন দিলে তার সাথে ঠিক ভাবে কথা বলে না। আর মাঝে মাঝে তো প্রিয়ার ফোনই সুইসড অফ থাকে আর না হলে ওয়েটিং এ থাকে। আরিফ কিছুতেই কোন হিসেব মেলাতে পারে না। আরিফ একদিন তার এক বড় ভাইয়ের সাথে কে. এফ. সি. তে খেতে যায়।

দুজন মিলে কথা বলছে আর খাবারের জন্য অপেক্ষা করছে। হঠাৎ আরিফের চোখটা কর্নারের টেবিলের দিকে চলে যায়। কর্নারের দিকে চোখ যেতেই তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। সে দেখতে পায় প্রিয়া অপরিচিত এক ছেলের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে, মাথায় হাত বুলিয়ে দুষ্টুমি করছে। আরিফ প্রথমে তার চোখকে বিশ্বাস করতে পারে নি।

কিন্তু তারা যখন খাবার শেষ করে বেরিয়ে যায় তখনও সে দেখতে পায় যে প্রিয়া আর সেই ছেলেটি ওখানে বসে গল্প করছে। আরিফ একবার ভাবে যে প্রিয়াকে গিয়ে জিজ্ঞেস করবে যে ছেলেটি কে, কিন্তু আরিফের সাথে তার ভাই থাকাতে সে আর জিজ্ঞেস করতে যায় না। কিছুদিন পর প্রিয়াকে ক্যাম্পাসে পেয়ে আরিফ জিজ্ঞেস করে যে রেস্টুরেন্টে তার সাথে যে ছেলেটি ছিল সে কে? প্রিয়া কোন উত্তর দেয় না। চুপ করে থাকে। কিছুক্ষন পর আরিফ চিৎকার করে আবার একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে।

এবার প্রিয়া খুব ঠাণ্ডা বলে যে ছেলেটি অন্য এক ভার্সিটিতে পড়ে। তাদের এলাকাতেই থাকে। তাকে প্রিয়া ভালোবাসে। তাকেই সে বিয়ে করবে। এই কথা শুনে আরিফের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।

আরিফ শুধু জিজ্ঞেস করে “তবে আমাদের এতো দিনের ভালোবাসা? সব কি মিথ্যে ছিলো?” প্রিয়া বলে “এতদিন যেটা ছিল সেটার এখন আর কোন অস্তিত্ব নেই। আর তোমার আর তোমার ফ্যামিলির যে স্ট্যাটাস তা আমার ফ্যামিলি কোন দিন ই মেনে নিবে না। তুমি তো এতোদিনে একটা বাইকও কিনতে পারো নি। আর বাবু? বাবু সব সময় এলিয়নে করে চলাফেরা করে। বুঝলে তোমার আর বাবু’র মধ্যে পার্থক্যটা?” এটা বলেই প্রিয়া চলে যায়।

আরিফ অনেকক্ষণ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে। নিজের প্রতি, নিজের অবস্থানের প্রতি তার অনেক রাগ হয়। নিজেকে খুব ছোটো মনে হয় তার। মনে হয় মাটির নিচে ঢুকে যেতে। তার চোখ ফুলে ওঠে।

গলার কাছে কস্তগুলো দলা পাকিয়ে জমা হয়। না পারে বলতে, না পারে সইতে। হঠাৎ চোখের কোন দিয়ে নিজের অজান্তেই কয়েক ফোঁটা জল বেরিয়ে আসে। এভাবে অনেক দিন কেটে যায়। আরিফ অনেক কান্নাকাটি করে।

যার সাক্ষী শুধু চার দেয়াল। কেউ দেখে না তার দুঃখ, কেউ বোঝে না তার দুঃখ। হঠাৎ একদিন আরিফ শুনতে পায় যে প্রিয়া আর বাবু বিয়ে করে ফেলেছে। আরিফের যে কেমন অনুভূতি হয় তা একমাত্র সেই ভালো বলতে পারবে। এতো কষ্ট দেওয়ার পরও সে প্রিয়াকে ভালবাসতে থাকে।

আরিফ জানে প্রিয়ার উপর এখন তার কোন অধিকার নেই। তবুও সে যেন প্রিয়াকেই বড় বেশী ভালোবাসে। এভাবে সময় কেটে যায়। কিছুদিন পর আরিফ জানতে পারে যে প্রিয়া আর বাবুর সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। সে জানতে চায় যে তার প্রিয় মানুষটি কেন কষ্টে আছে।

আরিফ যেটা জানতে পারে সেটা শুনে আরিফের রক্ত আর ঠাণ্ডা থাকতে পারে না। প্রিয়া আরিফকে ধোকা দেওয়াতেও আরিফ এতোটা কষ্ট পায় নি। সে জানতে পারে একদিন বাবু তার মোবাইল বাসায় ফেলে রেখে অফিসে চলে যায়। প্রিয়া বাবুর মোবাইলে বাবু’র সাথে অন্য একটি মেয়ের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ভিডিও ক্লিপস দেখতে পায়। আর এই নিয়েই বাবু’র সাথে প্রিয়া’র ঝগড়া।

প্রিয়া তখন প্রেগন্যান্ট। বাবু তার সাথে অনেক বাজে ব্যবহার করে। তাকে মারধরও করে। এক পর্যায়ে প্রিয়া অনেক আঘাতপ্রাপ্ত হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডাক্তার জানান যে প্রিয়া’র গর্ভের বাচ্চাটি নষ্ট হয়ে গেছে।

আর সে ভবিষ্যতেও আর কোন বাচ্চা কনসিভ করতে পারবে না। এটা শুনে প্রিয়া’র মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে, ঠিক যেমনটা পড়েছিল আরিফের মাথায়। প্রিয়া’র সাথে বাবু’র এরপর ডিভোর্স হয়ে যায়। এভাবে কিছুদিন চলে যায়। আরিফ আকাশ পাতাল ভাবতে থাকে।

সে ভাবে তার ভালবাসার মানুষটির এই অসহায় মুহূর্তে তার পাশে থাকা উচিৎ। কিন্তু তার ভালোবাসার মানুষটিই তো তাকে দূরে ঠেলে দিয়েছিলো। তো সে কোন মুখে আবার তার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে? অনেক ভাবাভাবির পর আরিফ সিদ্ধান্ত নেয় যে সে তার ভালোবাসার মানুষটির পাশে থাকবে সব সময়। আর কখনো তাকে হারাতে দিবে না। এই ভেবে সে প্রিয়াদের বাসার দিকে অগ্রসর হয়।

প্রিয়াদের বাসা’র সামনে অনেক লোকের ভিড় দেখে আরিফ একটু কৌতূহলী হয়ে ওঠে। সে ভিড় ঠেলে সামনের দিকে অগ্রসর হতেই দেখে প্রিয়া’র মা কাঁদছে। প্রিয়া’র বাবা আরিফকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠে। আরিফ কিছু বুঝতেই পাশে চোখ ফিরিয়ে দেখে প্রিয়া’র নিথর দেহ মাটিতে লুটিয়ে আছে। আত্মহত্যা করেছে প্রিয়া।

আরিফ শুধু ভাবতে থাকে কি আজিব এই দুনিয়া। একজন ছেলে এমন একজন মেয়েকে ভালোবাসতো হয়তোবা এখনও বাসে যেই মেয়ে কিনা আবার এমন একজন ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল যার কারনে তাকে বেছে নিতে হয়েছে মৃত্যুর পথ। সত্যিই আজিব এই দুনিয়া। উৎসর্গঃ প্রিয় ব্লগার অপু তানভীর ভাইয়া আর শায়মা আপুকে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।