আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যেমন চায় তেমন নয়

বৃষ্টি হলে শরীরটা যাতে না ভিজে সেই অভিপ্রায়ে মাথার ওপরে ছাতা তুলে পথিক পথে হেটে চলে। আকাশে ঘনকালো মেঘ আর বিদ্যুৎ চমকানো দেখে আশংকায় দ্রুত পদক্ষেপ ফেলে। কিন্তু ঝড়ো হাওয়া প্রবাহিত হতে থাকলে বিপদযুক্ত হয়ে তা থেকে নিজেকে রক্ষায় নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পথিক। কারো বাড়িতে-স্কুলে-মসজিদে-দোকানে তথা ঘরে আশ্রয় নিয়ে স্বস্তি লাভ করে। কিন্তু যখন ঘরের চালই উড়ে যায় তখন নিজের জীবন বাঁচাতে গৃহকতা বা গৃহকতীর কাছে আবেদন-নিবেদন-আকুতি-মিনতি আর থাকেনা।

হদয় মনের সবশক্তি নিয়োগ করে যাকে দেখা যায়না, যার কথা শুনা যায়না, এই জগতের স্বাভাবিক যুক্তিবুদ্ধির বাইরে এমন এক অস্তিত্বের কাছে নিজেকে প্রাণ উজার করে দেয়,বিশ্বাস করে অলৌকিক এক শক্তি যাকে ধরা যায়না-ছোঁয়া যায়না-অনুভব করা যায়। দেখবেন হিন্দুও মসজিদে ঢুকে গেছে,মুসলমানও গীজায় আশ্রয় নিয়েছে,খিষ্টানও মন্দিরে ঢুকে গেছে। অথাৎ একটা সীমা পযন্ত মানুষের ধমভেদের অনুভূতি, ভিন্নতার উপলব্ধি কাজ করছে মাত্রা অতিক্রম করে গেলে আর স্থান-কাল-পাত্র ভেদোভেদ থাকছেনা। সবাই স্রষ্টাকে ডাকছে,জীবন ভিক্ষা চাচ্ছে মহাপরাক্রমশালী এক শক্তির কাছে-সেটা কেউ আল্লাহ,কেউ ভগবান,কেউ গড যে নামেই ডাকুক না কেন? এইযে মাথা নত করা,সমপন করা,সম্পণ সপে দেয়াটা অস্বাভাবিক অবস্থায় ঘটছে-এতে নাস্তিকও আস্তিকের মতই আচরণ করছে। অথাৎ একটা সময় বা পরিস্থিতি পযন্ত মানুষ তার নিজস্ব অভিরুচি-দৃষ্টিভঙ্গি-চিন্তাধারা-বিশ্বাসকে তার আচার-আচরণে-চচায় অনুশীলন করছে কিন্তু ধাপটি অতিক্রম করে ফেললে ভেদাভেদ ভুলে একাকার হয়ে যাচ্ছে।

এই ঐক্য-ঐক্যবদ্ধ হওয়া বা থাকা-একতা-সমতা-সাদৃশ্য হওয়াটা অপ্রাকৃতিক বা অসম্ভব নয়। সবাই যে মানুষ, মানব জাতি এই পরিচয়টাই মূল-কেন্দ্র-কেন্দ্রবিন্দু। যে ক্ষেত্রে স্বাভাবিক যুক্তি-বুদ্ধি-বিজ্ঞান থেমে যায় সেখানে আমরা বলি অতিপ্রাকৃত-অলৌকিক-ঐশ্বরিক-প্রাকৃতিক নিয়ম। মানুষের শক্তির সীমাবদ্ধতা আছে,সামথ্যের সীমাবদ্ধতা আছে, জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আছে,ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা আছে-একটি পযায়ে যেয়ে মানুষকে তার অজ্ঞতা-অসহায়ত্ব-দুবলতা-অক্ষমতা স্বীকার করতে হয়। নতুবা পৃথিবীর মায়ার জালে কেউ অথসম্পদের বিনিময়ে-কেউ শক্তি-ক্ষমতা-প্রভাব-প্রতিপত্তির বিনিময়ে চিরদিন থাকতে চাইত।

বড় বিজ্ঞানী,স্থপতি,সৃজনশীল-সৃষ্টিশীল-মেধাবী মানুষ,জগৎ বরেণ্য ব্যক্তিত্বগুলো সময়ের শ্রেষ্ট ও শীষ পযায়ের মানুষদের ঘরেই জন্ম নিত। আর দূঘটনা,রোগব্যাধি,দূযোগ-জাগতিক উপায় উপকরণ আর সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে ঠেকাতে চাইত। নিজের পেছনের কিছু এমনকি নিজের মাথার পশ্চাদ অংশও মানুষ দেখতে পারে না;ভবিষ্যতের কথা তো দূরে থাক। কি হাস্যকর!এই জগতটাকে সেই নিয়ন্ত্রণ করতে চায় যে নিজের দেহটাকেও নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখেনা। একেবারে অসহায় না হলে কি আর সে চোখে চশমা পড়ত,সাদা চুলে কালো রং লাগাত,বানানো দাঁত লাগাত,প্লাস্টিক সাজারি করত,ডায়ালেসিস করত-সেতো ইচ্ছেমত চলতে-ফিরতে-থাকতে পারলে অসুস্থ কখনও হতনা,বৃদ্ধ কখনও হতনা।

সীমাবদ্ধতার কারণে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার কৌশল হিসাবে নানাবিধ প্রচেষ্টা চালিয়েছে মানুষ। তার প্রচেষ্টা ও প্রয়াস যে তাকে আরো বেশি বিপদাপন্ন-সংকটাপন্ন-সমস্যাগ্রস্ত করেনি এমন নয়। যে পরিমাণ পারমাণবিক বোমা মজুদ করেছে তা দিয়ে গোটা পৃথিবীই কয়েকবার ধ্বংস করে দেয়ার জন্যে যথেষ্ট। ভেজাল খাদ্যদ্রব্যের কারণে জীবনীশক্তি ধ্বংস হচ্ছে,রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে,বিষাক্ত বাতাস-পানি-মাটির কারণে কমশক্তি হ্রাস পাচ্ছে। নদী থেকে বালি ও পাথর উত্তোলন,পাহাড় কাটা,বন উজার, নদী ভরাট,বিষাক্ত সার ও কীটনাশক জমির উৎপাদন ক্ষমতাকে হ্রাস করেছে-ফলে পরিবেশ দূষিত হয়েছে,ভূমিকম্প বাড়ছে,বিভিন্ন প্রাণী বিলুপ্ত হচ্ছে, বন্যা-জ্বলোচ্ছাস-টনেডো-প্রাকৃতিক বিপযয় বাড়ছে,বাড়ছে গ্রীণ হাউস এফেক্টের সম্ভাবনা, ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে পরিবেশ-প্রকৃতি-মানুষের আবাস।

নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বাড়ছে, বিপন্ন হচ্ছে জীব বৈচিত্র। যুদ্ধে বোমা বিস্ফোরনে নগর-বন্দর-জনপদ-মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়না ক্ষতিগ্রস্ত হয় সভ্যতা- প্রকৃতি-জীববৈচিত্র। হিরেসিমা-নাগাসাকি থেকে শুরু করে ফিলিস্তিন-আফগানিস্তান-ইরাক তথা কোন মানব বসতিই যুদ্ধকে কামনা করেনা,মেনে নিতে পারেনা। এমন বসুন্ধরা আমরা চাইনা যেখানে মানুষ-পশু-পাখি তথা কারো জীবনই নিরাপদ নয়। মানুষের স্বভাব প্রকৃতিই এমন যে, সে সব সময় একটি নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে।

যদি কেউ বুঝে তার বসবাসের ঘরটি ঝুকিপূণ হঠাৎ ভেঙ্গে পড়তে পারে,তার সম্পদগুলো চোর-ডাকাত-সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ব ও উৎপাদ বৃদ্ধির কারণে হুমকির মুখে,নিজে কিংবা পরিবারের কোন সদস্যের ইজ্জত-আব্রু-মান-সম্মানের উপর আঘাত আসতে পারে-তবে তার পক্ষে সুস্থ-স্বাভাবিক-সুন্দর জীবন যাপন কিছুতেই সম্ভব নয়। কোন মানুষ যদি তার মনের সুখ কিংবা দু:খের কথাগুলো কারো সাথে শেয়ার করতে না পারে, নিজের একান্ত আবেগ অনুভূতি বলার জন্যে বিশ্বস্ত কাউকে খুঁজে না পায়,নিজের বিশ্বাস-আদশ-স্বপ্নের চিন্তা-চেতনা-বিবেচনা-বিশ্লেষণ বলার মত আস্থাশীল কাউকে আবিষ্কার করতে না পারে তবে তারপক্ষে প্রাণচাঞ্চল্য নিয়ে সময় অতিবাহিত করা সম্ভব নয়। জীবনের প্রতিটি ধাপে প্রতিটি স্তরে সহযোগী-সহযুদ্ধা-বন্ধু-বিশ্বস্ত সহযাত্রী-আন্তরিক আপনজন দরকার। সময় পাল্টায়,দেহ ও মন পাল্টায়,জীবন ও জগতের রুপ পাল্টায়-তবে অনেক কিছুই অবিকল-একই রুপ-রস-গন্ধ নিয়ে টিকে থাকে। সব চাহিদা-প্রত্যাশা-আশা-চাওয়া বদলে যায়না ধরনটা পাল্টে তবু অস্তিত্ব ঠিকই থাকে।

মানুষের মাঝে একটি অবাস্তব প্রবণতা দেখা যায় নিজে যেমন অন্যকেও তেমন দেখা। যদিও স্রষ্টা বৈচিত্রকেই গুরুত্ব দিযেছে। পৃথিবীর সাতশকোটি মানুষের মধ্যে হুবুহু একই রকম চেহারার আরেকজনকে পাওয়া যায়না এমনকি জমযদের মধ্যেও ভিন্নতা থাকে। তাহলে ভিন্নতাকে বিবেচনা না করলে সরলীকরণ করলে তাতে হীতে বিপরীত হতে পারে। বাইরের পাথক্য শুধু নয় ভিন্নতা আছে দৃষ্টিভঙ্গিতে,রুচিবোধে,চিন্তাচেতনায়।

কেউ যদি ভাবে তার পছন্দের অন্য কেউ তার মত করে- হাসবে,হাটবে,পোষাক পরবে,খাইবে-আর এই চাওয়াটাকে যদি সে চাপিয়ে দিতে অথবা তাকে অনুকরন অনুসরণ করতে বাধ্য করতে চায় তবে তাতে ব্যক্তিস্বান্ত্রতাকেই অস্বীকার করা হবে,স্বকীয়তাকে অবমূল্যায়ন করা হবে। প্রত্যেকের পছন্দ অপছন্দ,ভাললাগা-মন্দলাগা,অভ্যাস চচাকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিৎ যতক্ষণ না ব্যক্তিক অভিরুচি-অভিপ্রায়টা সামষ্টিক ক্ষতির কারণ না হয়ে দাড়ায়। অথাৎ স্বাধীনতার একটা সীমা পরিসীমা থাকবে তবে অযাচিত হস্তক্ষেপ বা ক্ষমতার অনধিকার চচাও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। না হলে স্বকীয়তাবোধ সম্পন্ন,স্বাধীনচেতা,স্বচ্ছ রুচি ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্ববান মানুষ গড়ে ওঠবে না। ভেতরের শক্তি ছাড়া বাইরের শক্তি দ্বারা পরিচালিত হলে স্বচালিত না হওয়ায় আত্মনিভরশীল মনোভাব, আত্মমযাদাবোধ সম্পন্ন মানুষ গড়ে ওঠেনা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।