আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্যারিয়ারের গড়ার ক্ষেত্রে সিজিপিএ বিশাল বড় ফ্যাক্টর!

ক্যারিয়ারের গড়ার ক্ষেত্রে সিজিপিএ বিশাল বড় ফ্যাক্টর! ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যেয়ে টিচারদের মুখ দিয়ে এই কথা শুনতে শুনতে মাথা গরম হয়ে যেত। মামা, সিজিপিএ বাড়ানোর সহজ কোন উপায় আছে? প্রশ্নবানে জর্জরিত করতাম, বন্ধুদের। মিনিমাম ৩ নিশ্চিত করতে না পারলে, লাইফ উইল বে হেল! স্যারদের এই ধরনের হুংকার শুনে বুকের ধুক ধুকানি বেড়ে যেত। সাথে সাথে পড়াশোনা স্টার্ট করার বিশাল প্ল্যান! ঐ প্ল্যান পর্যন্তই সার, বাস্তবে পড়াশোনা করতাম সুপার পি এল (প্রিপারেটরি লিভ) এর দ্বিতীয় দিন থেকে। ফলাফল যা হবার তাই হত।

কাংক্ষিত ৩ অধরাই থেকে যেত, কালেভদ্রে কোন সেমিস্টারে যদি তিন ক্রস করতাম তবে পরের সেমিস্টারেরই আগের অবস্থানে ফিরে যাওয়া এক ধরনের অভ্যেসে পরিণত হয়েছিল। বড় ভাইদের শরণাপন্ন হলে ভাইয়েরা বলতোঃ এইটা নিয়ে মোটেই চিন্তা করিস না! স্যার গুলোর দিকে একবার তাকিয়ে দেখ, বয়স কোথায় যেয়ে থামছে একবার ভেবে দেখেছিস? ওনারা নিজে কখনো এতো নাম্বার পাই নাই, সুতরাং ওনারা নাম্বার দিতে কার্পণ্য করে। মনে করে, নিজের পকেট কেটে নাম্বার দিতে হচ্ছে। নাকে সরষের তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাক, আর কোন মতে পাস করে বের হ। এই কাগুজে রেজাল্টের কোন ভেলু আছে নাকি! সিনিয়র ভাইদের কাছ থেকে এই ধরনের উৎসাহ পেয়ে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরি ফিরি, আহা রূপসা ঘাঁট!!! কিন্তু আসল বিপত্তি ঘটতো রেজাল্ট দেয়ার দিন।

রেজাল্ট বোর্ডে চোখ রেখে মন খারাপ করে হলে ফিরে ধুমিয়ে মান্নাদের গান শুনি অথবা “হারজিৎ চির দিন থাকবে তবুও এগিয়ে যেতে হবে, বাধা বিঘ্ন না পেরিয়ে বড় হয়েছে কে কবে” টাইপড গান শুনে শুনে এনার্জি নিয়ে প্রতিজ্ঞা করি, সামনের সপ্তাহ থেকে এমন পড়া পড়বো, একদম ফাটিয়ে দিব! আমার আর ফাটানো হয় না। মাঝে মাঝে আশার বেলুন এমনি এমনি ফেটে যায়! একদিন ডাইনিং আমার পাশে বসে আস্তে আস্তে খাবার খাচ্ছে এক ক্লাসমেট। মুখে স্মিত হাসি। কে বলবে, এই ছেলেটা গতকাল যে রেজাল্ট দিয়েছে তাতে সব চেয়ে কম জিপিএ (সম্ভবত ২.৩৫) পেয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করিঃ কিরে মন খারাপ? ওর তৎক্ষণাৎ উত্তরঃ মন খারাপ করুম কিল্লাই! ইতান হুন রিজাল্ট হইলো নি! আই ইতান কিয়ার করি ন! বেটা বাঘের বাচ্ছা! পাস করার পর বেশ বড় সড় একটা ধাক্কা খেলাম, অনেক কোম্পানি জবের অ্যাপ্লাই করার প্রি কন্ডিশন হিসেবে সিজিপিএ ৩ এর উপরে চাচ্ছে।

ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অ্যাপ্লাই পর্যন্ত করতে পারছি না! ধুর! কিন্তু মজার ব্যাপার হল, আমাদের মধ্যে যাদের রেজাল্ট মোটামুটি মানের ছিল একে একে তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী হতে শুরু হল। আমিও ছয় মাসে দুইটা চাকুরী চেঞ্জ করে ফেললাম অথচ ঐ সময়ে যাদের সিজিপিএ অনেক হাই তাদের অনেকে জবই পায় নাই। কিছুদিনের মধ্যেই লক্ষ্য করলাম, চাকুরীর ক্ষেত্রে আসলে সিজিপিএ কোন ব্যাপার না। আমার কলিগ ৩.৫ পাওয়া পাবলিক, অথচ আমি ৩ এর কোঠায় পার হতে পারি নাই। আমার মত যাদের সিজিপিএ তিন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে নাই, তাদের উপরে একটা মোটামুটি মানের রিসার্চ করলাম।

সকলেই ভালো অবস্থানে। অনেক বেশী ভালো অবস্থানে! যেই বন্ধুটি সেদিন ২.৩৫ পেয়ে ডাইনিঙে বসে আস্তে আস্তে খাবার খাচ্ছিল, সে এখন কয়েকশো মেগাওায়াট পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রোজেক্ট ম্যানেজার। যেই বন্ধুটি প্রতি সেমিস্টারে ২/৩ টায় ফেল মারতো, সে এখন এশিয়ার সব চেয়ে বড় ফুড কোম্পানির ম্যানেজার। এমন উদাহরণ দিলে শতটা দেয়া যাবে। তবে অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, সিজিপিএ কম নিয়ে দেশে ভালো চাকুরী পাওয়া গেলেও উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে স্কলারশিপ নিয়ে যেতে গেলে বড় ধরনের একটা হোঁচট খেতে হবে! একই ধারণা আমারও ছিল।

কিন্তু সিজিপিএ তিন এর কম নিয়ে একে একে স্বপ্নের দেশ এমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবে ভর্তি হচ্ছে তা দেখে আমার সেই ধারণা একদম মিথ্যে হয়ে গিয়েছে। সর্ব শেষ এই মাসের শুরুতে ভিসা পেয়েছে, সিভিল ২কে৭ এর শুভ। ওর সিজিপিএ ২.৮৩। আসলেই সিজিপিএ কোন ব্যাপার না। ফর্ম টেম্পোরারি কিন্তু ক্লাস পার্মানেন্ট! আমার এই লেখা ২কে৮ ব্যাচ কে উদ্দেশ্য করেঃ You should remember, size doesn’t matter for chopping wood. Go ahead……….. (বিদ্রঃ যারা সিজিপিএ তিন এর বেশী কিম্বা আরও আরও বেশী পেয়েছ, তারা অবশ্যই সব কিছুতে একধাপ এগিয়ে আছ) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.