আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব ও যুব সমাজ

কোন এক কাকডাকা ভোরে অন্ধকারের বুক ছিঁড়ে ফোটে উঠা আলোর হাত ধরে আমি হেঁটে গিয়েছিলাম প্রসন্ন পৃথিবীর পথ ধরে,একটি সূর্য আমায় ডেকেছিল বলে। একটি কথা ইদানীং আমরা প্রায় শুনতে পাই, বাংলাদেশের কিছু হচ্ছেনা বা হবেনা কখনো ইত্যাদি। কথাটি আমরা যতটা জোর দিয়ে বলি বা শুনি, ততটা জোর দিয়ে কাজ করিনা এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য। ইংরেজিতে একটি কথা আছে, ‘Don’t blame your country, you fool! Just do your part responsibly, because you are your country’. অমিত সম্ভবনার দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। দেশপ্রেমের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আমরা সবাই যদি যার যার অবস্থান থেকে চেষ্টা করি তাহলে অবশ্যই দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব।

বলা হয়ে থাকে, আমরা যা তাই আমাদের সংস্কৃতি। তাই বলা যায়, বাংলাদেশের বর্তমান আর্থ সামাজিক অবস্থাই এদেশের সংস্কৃতি। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতি আর সামাজিক অবক্ষয়ের সূচক হিসেবে গড়ে উঠা বাংলাদেশের বর্তমান সংস্কৃতি সচেতন যেকোনো নাগরিকের জন্যই পীড়াদায়ক। সংস্কৃতি হঠাৎ আবির্ভূত হওয়া কোন ধূমকেতু নয়, বরং অনেক পালাবদলের মধ্য দিয়ে একটি দেশের সংস্কৃতির বিনির্মাণ ঘটে। তাই বাংলাদেশের এই জরাগ্রস্ত সংস্কৃতির রাতারাতি কোন পরিবর্তন সম্ভব নয়, খালি হাতেও পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়, দরকার একটি মোক্ষম হাতিয়ার।

আমরা নতুন প্রজন্ম এই পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিতে গ্রহণ করতে চাই তথ্যপ্রযুক্তিকে। একজন প্রকৌশলী হিসেবে আমি তথ্যপ্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলছিনা, বরং এটা যুগের চাহিদা। কৃষি যুগ, সামন্তযুগ, শিল্পযুগ পেরিয়ে আমরা এখন অবস্থান করছি তথ্যপ্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের যুগে। আর এই যুগে সে জাতি তত উন্নত যার তথ্যপ্রযুক্তি বেশি উন্নত। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

তাই রাজপথ কাঁপানো মিছিল মিটিং নয়, বুলেট বোমা নয়, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি নয়; তথ্যপ্রযুক্তিই হতে পারে এদেশের উন্নয়নের পথে উত্তরয়নের প্রধান হাতিয়ার। প্রযুক্তির সাথে মানুষের পরিচয় সভ্যতার সেই সূচনালগ্ন থেকে। আদিম মানুষ যখন আগুনের ব্যাবহার শিখলো, তখন তারা নিজেদের অজান্তেই প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হলো তাপশক্তি ব্যাবহার করার মাধ্যমে। বিদ্যুতের আবিষ্কার প্রযুক্তি ব্যাবহারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় মাইলস্টোন। মূলত এর ফলেই মানুষ শিল্প যুগে প্রবেশ করে এবং যাতায়াত, চাষাবাদ, দৈনন্দিন জীবন ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির বহুমুখী ব্যাবহার শুরু হয়।

যে সময়ের কথা বলছি তখন মানুষ প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হলেও তথ্য বা যোগাযোগ ব্যাবস্থায় যে প্রযুক্তি ব্যাবহৃত হতে পারে তা ধারণার বাইরে ছিল। এমনকি শিল্প বিপ্লবের সময়টাতেও তথ্য যোগাযোগের একমাত্র বাহন ছিল চিঠিপত্র। তথ্য প্রযুক্তির ক্রমবিবর্তনের পথে সবচেয়ে বড় মাইলফলক হচ্ছে রেডিও ও টেলিফোন আবিষ্কার। টেলিভিশন ও মোবাইল ফোন সেটিকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। তবে মানুষ তথ্য প্রযুক্তির প্রকৃত শক্তির সাথে পরিচিত হয় ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর।

বর্তমানে তারহীন দ্রুতগতির ইন্টারনেট এবং থ্রিজি ও কোনো ক্ষেত্রে ফোরজি মোবাইল ফোন সমগ্র পৃথিবীকে নিয়ে এসেছে মানুষের হাতের মুঠোয়। এবং বলা বাহুল্য সেটি কোন পারমাণবিক শক্তির বদৌলতে হয়নি, হয়েছে তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে। তথ্য প্রযুক্তির অপার সম্ভবনাকে কাজে লাগিয়ে উন্নত দেশগুলো আরো উন্নত হচ্ছে। তারা মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে ডেক্সটপ, ল্যাপটপ কম্পিউটার, আইপ্যাড, আইফোন ইত্যাদি সবই তৈরি করছে। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোর হয়তো সেসব তৈরি করার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই, কিন্তু তথ্য প্রযুক্তির অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে আমরা উন্নত দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে পারি।

আমাদের দেশের তরুণেরা ইতোমধ্যে Outsourcing এর ক্ষেত্রে উন্নত দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছে। তথ্য প্রযুক্তি একটি চলমান প্রক্রিয়া যা প্রতিনিয়ত পরিবর্তন, পরিবর্ধনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে। প্রযুক্তি দিন দিন আর উৎকর্ষতার দিকে আগাবে এতে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু প্রযুক্তির এই অগ্রগামিতাকে আমরা যদি দেশের তথা নিজেদের উন্নয়নের কাজে লাগাতে না পারি তাহলে তা আমাদেরই ব্যর্থতা। তাই প্রযুক্তির ব্যবহার যেন আরো মানব কল্যাণমুখী হয় সেদিকে গুরুত্ব প্রদান করা অনস্বীকার্য। মানব কল্যাণে প্রযুক্তির ব্যবহার কেমন হতে পারে? কারা হতে পারে তার প্রধান পৃষ্ঠপোষক? একটি দেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে অবশ্যই সেদেশের সরকার।

আশার কথা এই যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্লোগান নিয়ে সরকার সফলভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে তথ্য প্রযুক্তিকে আরো জনমুখী করার কাজে। বিশেষকরে কৃষি, শিক্ষা ও আইসিটি ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির বহুমুখী ব্যবহার সাধারণ জনগণের জন্য ফলপ্রসূ বলে প্রমাণিত হয়েছে। সরকারী অফিসগুলোতে দাপ্তরিক কাজে ইমেইল ও ওয়েবসাইট একটি প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ হয়ে দাড়িয়েছে যা আগে কখনো ছিলনা, যদিও বেসরকারী অফিসগুলোতে আগে থেকেই এসবের চর্চা ছিল। জনগণের তথ্য জানার অধিকার নিশ্চিত করতে প্রণয়ন করা হয়েছে Right to information act নামের একটি আইন যার ফলে দেশের প্রত্যেকটি সরকারী কিংবা বেসরকারী অফিস জনগণকে প্রাতিষ্ঠানিক গোপনীয় ব্যতিত সব তথ্য দিতে বাধ্য। তবে সরকারের এখনো অনেক কিছু করার আছে তথ্য প্রযুক্তিকে আরো কল্যাণমুখী করার জন্য।

বিশেষ করে জনপরিবহন যেমন বাস, ট্রেন, লঞ্চ ইত্যাদির টিকেট ব্যবস্থা, বিভিন্ন সরকারী পরিষেবা যেমন বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল পরিশোধ প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজড করতে সরকারের কাজ করা উচিত। পদক্ষেপ নেয়া উচিত তারহীন দ্রুতগতির ইন্টারনেট Wimaxকে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় দ্রুত পৌঁছে দেয়ার জন্য। এছাড়া প্রত্যেক সরকারী অফিসের সদর দপ্তর তারহীন ইন্টারনেট Wifi এর আওতায় আনা যেতে পারে। সরকারী পদক্ষেপ সমূহের পর গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জনগণের ব্যক্তিগত সচেতনতা। এই সচেতনতা সরকারী অফিসে যারা ইমেইলের মাধ্যমে জনসেবা প্রদান করে তাদের মধ্যে সবার আগে দরকার।

একটি ইমেইল পাঠাতে সাত সেকেন্ড লাগলে যদি তার উত্তর পেতে সাত দিন লাগে তাহলে তা জনগণের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইন্টারনেট এর উন্মেষ এবং সহজলভ্যটার সাথে আমাদের জীবন যাপনের ধরন এবং মানে এক বিশাল পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তনের একটি হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে আমাদের সদর্প পদচারণা। এগুলো আমাদেরকে অনেক সহজে একে অপরের কাছে এনেছে, দিয়েছে নতুন বন্ধু বেছে নেয়ার সুযোগ, শৈশবের হারিয়ে যাওয়া কোন বন্ধুকে খুঁজে পাবার সুযোগ। তবে এসব ওয়েবসাইট এর অনেক উপযোগিতার পাশাপাশি কিছু বিড়ম্বনাও আছে।

ফেসবুকে বিশেষকরে মেয়েদের ফেইক আইডি তৈরি করে, মোবাইল নাম্বার দিয়ে এবং ব্যক্তিগত ছবি আপলোড করে এক শ্রেণীর মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষ মেয়েদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরণের এডাল্ট ওয়েবসাইট বিশেষকরে কিশোর কিশোরীদের বিপথে পরিচালিত করছে। এসব প্রতিরোধ করতে সামাজিক সচেতনতা এবং মানুষের পারিবারিক শিক্ষা অত্যন্ত জরুরী। পৃথিবীর সবকিছুর মত ইন্টারনেটেরও কিছু নেগেটিভ বিষয় রয়েছে, তবে তা তথ্য প্রযুক্তির দোষ নয়, দোষ আমাদের সমাজের কিছু মানুষের। ইন্টারনেটকে পজিটিভলি ব্যবহার করলে এথেকে যে সেবা লাভ করা সম্ভব তা বলে শেষ করা সম্ভব নয়।

তথ্য প্রযুক্তির বহুমুখী ব্যাবহার ও ব্যাবস্থাপনা দ্বারা যে কেউ প্রভাবিত হতে পারে তবে যুব সমাজের মধ্যে এর প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া সবচেয়ে বেশি। আজকাল চারদিকে শোনা যায় বেশি করে ইন্টারনেট ব্যাবহার করার উপদেশ। আমি মনে করি ইন্টারনেট ব্যাবহার করার চেয়েও বেশি গুরুত্তপূর্ণ হচ্ছে এটা থেকে কিভাবে লাভবান হওয়া যায়, নিজের মূল্যবোধ ও স্বপ্নকে আরো উঁচুতে নেওয়া যায়। এর আল্টিমেট ইফ্যাক্ট কি তা সম্পর্কে সদা সচেতন থাকতে হবে। ভার্সিটি পড়ুয়া যে ছেলেটি সারা রাত জেগে চ্যাট করলো সে অবশ্যই ইন্টারনেট ইউজ করলো বেশি করে কিন্তু সে যখন পরদিন সকালে তার ক্লাস মিস করলো তখন তার ইউটিলিটি হয়ে গেলো শূন্য।

কাজেই আউটকাম সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে শুধু বেশি করে ইন্টারনেট ইউজ করলে তা নিজের, দেশ ও জাতির জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবেনা। ইন্টারনেট হচ্ছে বিশ্বের চলন্ত তথ্য ভাণ্ডার। তবে ইনফরমেশন এর জন্য শুধু মাত্র ইন্টারনেট এর উপর নির্ভর করা ঠিক নয়। এতে বই পড়ার অভ্যাস হারিয়ে যায়। ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যাবহার করার পূর্বে তা মোটামটি যাচাই করা উচিত এবং এর সাথে নিজের বিদ্যা বুদ্ধির সমন্নয়ের মাধ্যমে নিজস্ব স্বকীয়তাকে আরো সমৃদ্ধ করা উচিত।

আজকাল সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন ওয়েবসাইট বিশেষ করে ফেসবুকে তৈরি হচ্ছে অনেক সংগঠন এবং এর অনেকগুলো সামাজিক পরিবর্তন ও বিপ্লবের জন্য কাজ করছে। তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয় মনে রাখা দরকার, সেটি হচ্ছে যদি সংগঠনের ভিত্তি হয় শুধুমাত্র ফেসবুক তাহলে তা শেষ পর্যন্ত অভীষ্ট লক্ষে পৌঁছতে পারেনা। কোনো সংগঠন চালানোর জন্য ফেসবুক একটি অন্যতম মাধ্যম হতে পারে, তবে কখনোই তা একমাত্র মাধ্যমে পরিণত হওয়া ঠিক নয়। ফেসবুক এর প্রতি অকারণ এবং অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা অনেক সময় আমাদের ভলান্টিয়ারইজম এর ব্যাপারে নিরুৎসাহী করে তোলে। বর্তমান বাস্তবতায় আমাদের জীবন যে এক একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ, এ কথায় কারও সম্ভবত দ্বিমত থাকার কথা নয়।

বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে। মানুষ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে পরিবার থেকে। বিচ্ছিন্ন হচ্ছে সমাজ থেকে, এমনকি নিজের সত্তা বিচ্ছিন্নতা থেকে জন্ম নিচ্ছে হতাশা। বাড়ছে জীবনবিমুখতা। আর জীবনবিরোধিতা সহজেই নানা ধরনের ব্যক্তিক ও সামাজিক অপরাধের জন্ম দিচ্ছে।

এ ছাড়া বিচ্ছিন্নতা আমাদের আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপরও করে তুলছে। তৈরি করছে দূরত্ব। আর দূরত্ব তৈরি করছে অনান্তরিকতা। আন্তরিকতাহীন মানুষ বিদ্বেষকে প্রশ্রয় দেয় অতি সহজে। এতে করে বাড়ে হিংস্রতা।

বাড়ে হানাহানি। হানাহানি নতুন করে বিচ্ছিন্নতার জন্ম দেয়। মানুষ ডুবে যায় নৈঃসঙ্গের অন্ধকার ভুবনে। নিঃসঙ্গ মানুষ ক্ষয়ে যায় অনবরত। ক্ষয়িষ্ণু জীবন তাকে খণ্ডিত চেতনায় ডুবিয়ে দেয়।

সে তখন আর মহত্ত্বকে বড় কিছু ভাবতে পারে না। ক্ষুদ্রত্বের সীমাকেই জীবন ও গন্তব্য বলে ভেবে নেয়। আর এ ক্ষুদ্রত্বের সীমা বাড়িয়ে দেয় সীমাহীন দ্বিধাবিভক্তি; পথ ও মতের পার্থক্যকে করে প্রসারিত। তাই একক বিশ্বে মানুষ আজ শতধাবিভক্ত। যদিও পৃথিবী আজ অনেক বেশি একক ও অবিচ্ছিন্ন, কিন্তু মানুষ বিচ্ছিন্ন ও বিভক্ত হয়েছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

আমাদের জীবনে আছে হরেক রকম ব্যস্ততা। কি সকাল কি সন্ধ্যা, সময়ের সঙ্গে তাল রেখে আমাদের ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে হয়। জীবন ও জীবিকার তাগিদে পিষ্ট হতে হতে আমরা ভুলতে বসি বন্ধুর মুখ। আতিথেয়তার কোমল সম্ভাষণে মনকে সিক্ত করার মতো ফুরসত আজ আমাদের কতটুকু আছে? এ বাস্তবতায় আমি আমার নিজের কাছে করা নিজের প্রশ্নের সহজ সমাধান খুঁজি। বলতে দ্বিধা নেই, সামাজিক যোগাযোগের নেটওয়ার্ক ফেসবুক আমাদের বিচ্ছিন্ন জীবনপ্রবাহকে কিছুটা হলেও অবিচ্ছিন্নতার সূত্রে গাঁথতে সমর্থ হয়েছে।

আধুনিক জীবনে দ্রুত ও সহজলভ্য যোগাযোগের ক্ষেত্রে ফেসবুক অনন্যসাধারণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে। বহু দূরের কোনো বন্ধু কিংবা আত্মীয়ের সঙ্গে মুহূর্তে আমরা যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছি। আমরা সম্পর্কসূত্রে গ্রথিত হচ্ছি। আনন্দ, দুঃখ, বেদনা একে অন্যের সঙ্গে ভাগ করার সুযোগ পাচ্ছি; জীবনে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিংবা দীর্ঘদিনের যোগাযোগহীনতায় যে বন্ধুটিকে আমরা প্রায় ভুলে যেতে বসেছি, তাকেও ফেসবুকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হতে পারছি।

নিরাশার দোলাচলে দুলতে থাকা এ জীবনে এটা খুব একটা কম পাওয়া বলে আমার মনে হয় না। তথ্য প্রযুক্তি এমন এক শক্তি যা বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এক কাতারে দাঁড় করাতে পারে। Outsourcing, Software Development, Blogging ইত্যাদি ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলো ইতোমধ্যে উন্নত দেশগুলোকে টেক্কা দিয়েছে। Facebook এবং Blog এর লেখনীর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে যে গণজোয়ার এসেছে তা সূচনা করেছে আরব বসন্তের যা বিভিন্ন দেশে স্বৈরতন্ত্র উৎখাত করেছে। বলা বাহুল্য এই বিপ্লব কোন অস্রের মাধ্যমে হয়নি, হয়েছে শুধুমাত্র তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে।

আমাদের দেশে আমরা যদি যুব সমাজ এবং তথ্য প্রযুক্তির বিপুল সম্ভবনাকে কাজে লাগিয়ে দুর্নীতি, সামাজিক অবক্ষয় ইত্যাদির বিরুদ্ধে এবং জাতীয় গুরুত্তপূর্ণ ইস্যুতে ঐকমত গড়ে তুলতে পারি তাহলে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবে তার কাঙ্খিত উন্নয়নের দিকে। তথ্য প্রযুক্তি ও যুব সমাজ একে অন্যের পরিপূরক। জাতীয় গুরুত্তপূর্ণ ইস্যূতে এই দুই শক্তি হাত ধরে হাঁটলেই আমাদের দেশে জাতীয় সংহতি, শান্তি ও পরিবর্তন আনা সম্ভব। বলা হয়, প্রতিটি মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। তাই আজ দেশের এক অস্থির রাজনৈতিক ও সামাজিক দোলাচলে আমরা স্বপ্ন দেখতে চাই হানাহানিমুক্ত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের।

আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, যুব সমাজ ও তথ্য প্রযুক্তিকে সেই সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে এক সূত্রে গাঁথতে পারলে অচিরেই কালো উঠোনে উঠবে রুপালী চাঁদ, কেটে যাবে অমানিশা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.