আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্যাটায়ার : চাইনিজ ভক্ষন কিংবা হইতে হইতেও হইলো না ট্রেন মিস

কিছু না। ১ বিরাট আশ্চর্যের ব্যাপার । ছয় ঘন্টা এক জায়গায় বসে আছি, তারপর দেখি চিটাগাং থেকে ঢাকা চলে এলাম । সত্যিই সেলুকাস । বিরাট ভাবনার ব্যাপার ।

বাসে চড়ার সবচেয়ে বিরক্তিকর ব্যাপার হল চুপচাপ বসে থাকা । চাইলে আপনি পাশে বসা যাত্রীর সাথে খোশগল্প করতে পারেন । কিন্তু সেটা ভ্রমনের আদবকেতা পরিপন্থি । সমস্যা আরো প্রবল হতে পারে যদি প্রকৃতি আপনাকে গভীর মমতায় ডাকে । আমার ছোট মামার আবার এই ছোট ডাকের ভয়ানক সমস্যা ।

কোথাও বেরোবার আগে অন্তত পাঁচ ছয়বার টয়লেটে যেতেই হবে । এমনো দেখা গেছে, কোথাও যাচ্ছি, মাঝপথে মামা বলে উঠবেন ‘ তুই যা । আমি পরে আসছি ’ । গাড়ি থেকে নেমে সোজা পাবলিক টয়লেট খুজবেন । এমন ভয়ানক সমস্যা নিয়েও মামা অজানা এক কারনে গাড়িতেই চড়তে বেশি পছন্দ করেন ।

মামার অনিচ্ছা সত্ত্বেও ট্রেনের টিকেট কাটতে কমলাপুর স্টেশান গেলাম । আমি যাচ্ছি, ভাবলাম মামা একটু চিন্তাযুক্ত হবেন । বের হবার আগে মামাকে চিন্তামুক্ত দেখে আমিই খানিকটা চিন্তাযুক্ত হলাম । অবশ্য চিন্তাযুক্ত হবার আরো কিছু কারন আছে । ট্রেনের টিকেট এখন অনেকটা বাঘের দুধের মত , টাকায় মেলে ।

স্টেশানে গিয়ে দেখি এলাহি কারবার । দেখে বেশ ভালো লাগলো, বাঙ্গালী লাইন ধরে টিকেট কাটছে । আমিও মাঝারি সাইজের লম্বা একটা লাইনে দাড়ালাম । ঘন্টা দেড়েক পর খেয়াল করলাম, যেখানে দাড়িয়ে ছিলাম সেখানেই দাড়িয়ে আছি । টিকেট কাউন্টার দিল্লি থেকেও দুরে ।

মাঝে মাঝে লাইনের সামনে থেকে হৈ হৈ ছাড়া কিছুই শোনা যায়না । হৈ চৈ আর কিছুই না। লাইনে দাড়িয়ে থাকা লোকেদের সাথে বেলাইনের লোকেদের তর্ক । এমন আলুসিদ্ধ গরমে অতি উচ্চমর্গীয় রসিকতাও পানসে মনে হয় । পেছন থেকে যারা সামনে গিয়ে গুতোগুতি করছে, এগুলা থাপড়াইয়া গালের দাত ফেলে দিতে ইচ্ছে করেছে ।

মন্ত্রী মিনিস্টার হইলে এককথা, আমি নিতান্তই আমকাঠাল জনতা । লাইনচ্যুত ট্রেন ঠিক করতে নামা জাঁদরেল রেলমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেব্ও চেষ্টা নিয়েছিলেন । বলরাম নামের এক কর্মকর্তার গালে চড় মেরেছেন ঠিকই কিন্তু গালের দাঁত ফেলতে ব্যর্থ । তাই আমার চেষ্টা নেয়াটাও অযোক্তিক । মিনিস্টার সাহেবের আইনস্টাইন থিওরীও বেশ হিট ।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতে আমিও এমন কিছু আইনস্টানের থপ্পরে পড়েছিলাম । উনারা এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন ‘ কিসে পড়িস’ । আমি গোবেচারা টাইপ চেহারা নিয়ে বললাম ‘ ম্যাথ ’ । উনাদের একজন বললেন ‘ এক এর নামতা বল’ - এক এক্কে এক, এক দুইগুনে দুই ……….’ - বাহ, বেশতো পারিস । এবার প্যাক এর নামতা বল ।

আমিতো অষ্টম আসমান থেকে পড়ার অবস্থা । প্যাক এর নামতা ! আমার চেহারা দেখে একজন স্বউদ্যোগী হয়ে নামতা শেখাতে শুরু করলেন । - প্যাক এক্কে প্যাক, প্যাক দুইগুনে প্যাক প্যাক, প্যাক তিনগুনে প্যাক প্যাক প্যাক……………. । এরপর আধা ঘন্টা আমি হাঁসের মত প্যাক প্যাক করতে থাকলাম । এসব ভাবতে ভাবতে লাইনের প্রায় সামনে চলে এলাম ।

কার যে মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছিলাম, কি সৌভাগ্য। টিকেট পেয়ে গেলাম । টিকেট পেয়েই কল করলাম খালাকে । আমার খালা আবার মাজেদা খালা টাইপ। টিকেট প্রাপ্তির খবরে খালা আনন্দিত না ব্যথিত বোঝা গেল না ।

তবে তিনি যে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, সেটা বোঝা যাচ্ছে । উনার এই মুহুর্তের ব্যস্ততা, রাতে কি রান্না হবে আর কাল দুপুরে কি রাধবেন । উনার রান্নার হাত অতিশয় খারাপ । তারপরও অতি আগ্রহ নিয়ে নতুন নতুন পদের রান্না করেন । আমি বেকার মানুষ ।

হাতের সামনে যা পাই তা খেয়েই বলি, আলহামদুলিল্লাহ, অমৃত স্বাদ পেলাম । খালার রান্নার হাত যাই হোক, উনি অতি উচ্চ পর্যায়ের বুদ্ধিমতি । খালু সাহেব থেকে শুরু করে বাসার কাজের মেয়ের বাবার মোবাইল নাম্বার, সব উনার মুখস্থ । ওয়েস্টেজ অব টেলেন্ট,খালা তার উৎকৃষ্ট প্রমান । খালা চা করেন অসাধারন ।

যারা চা ভালো করেন, তাদের হাতের রান্না ভালো হয়না । স্টেশান ছেড়ে বাসায় পৌছাতেই খালা অতি আনন্দের সাথে জানালেন ‘কাল চাইনিজ খাবো । তুই দুপুরে এট্রিয়াম রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার নিয়ে আসবি। পারবি না । ’ আমি বললাম ‘ খালা, এসব খাবার রেস্টুরেন্টে বসে খেতেই ভালো লাগে ।

’ -তোর খালু সাহেব অনেকদিন ধরেই চাইনিজ খাবে খাবে করছে । কিন্তু ইকোনোমেট্রিক্স নিয়ে একটা জটিল গবেষনা করছেন বলে সময় পাচ্ছেন না । তাই বাসায় নিয়ে আসতে বললাম । -খালু সাহেব গবেষনা করছেন যেহেতু, বিষয়টাতো জটিল হতেই হবে । -যা বেশি কথা বলিস না ।

তোর খালু তোকে ডাকছে । খালু সাহেব আপাদমস্তক পন্ডিত মানুষ । আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে উনার একটা পিএইচডি ডিগ্রী আছে । একটা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন। ইদানিং খালু সাহেবের নতুন পরিচয়, বিশিষ্ঠ আলোচক ।

টপিক যাই হোক,বঙ্গবন্ধুর পিত্তথলির অপারেশন:হিরোশিমা নাগাসাকিতে বোমাবর্ষন কিংবা জিয়াউর রহমানের খালকাটা কর্মসুচি : এন্টার্টিকায় কুমির চাষের সম্ভাবনা । আলোচকদের আলোচনার জন্য টপিক লাগেনা, শ্রোতা পাইলেই চলে । এমনকি উনারা শ্রোতার শ্রবন ক্ষমতারও বাছবিচার করেন না । শ্রোতা হিসেবে আমি অতি উৎকৃষ্ট প্রজাতির । দশে দশ পাওয়ার মত ।

প্রচন্ড ঝিমুনী সত্ত্বেও হাশিমুখে বলতে পারি ‘ হুঁ ’ । সাধারনত পন্ডিত ব্যক্তিদের মাথায় আবুল হাযাত মার্কা টাক থাকে । আর না হয় মাথা ভর্তি সাদা চুল । পান্ডিত্য আর চুল বোধহয় একসাথে যায়না । পন্ডিত হতে হলে অবশ্যই অর্ধেক মাথায় চুল থাকতে হবে কিংবা মাথাভর্তি সাদা চুল হতে হবে ।

পয়তাল্লিশ কি সাতচল্লিশ বছর বয়সী খালু সাহেবের দুটোই আছে । জুলফির দিকে যে সামান্য চুল আছে তার পুরোটাই কাঁচাপাঁকা । খালু সাহেব আবার বেশ মাই ডিয়ার টাইপ লোক । যদিও উনার সামনে গেলে নিজেকে ‘অতি তুই’ ‘ অতি তুই’ টাইপ লাগে । বিষয়টা ব্যাখ্যা করা যাক ।

সন্মানিত কারো ক্ষেত্রে বাংলা ভাষায় আমরা ‘ আপনি’ শব্দটা ব্যবহার করি । জাপানীরা এক্ষেত্রে আরো একধাপ এগিয়ে । তারা অতি সন্মানের সাথে ’অতি আপনি’ শব্দ ব্যবহার করে । আমি শিওর, বাংলা ভাষায় যদি ‘অতি আপনি’ ব্যবহার করা হত তবে আরো একটি শব্দ পেতাম ‘অতি তুই’ ( অতি অবশ্যই তুচ্ছার্থে)। খালু সাহেবের রুমের সামনে গিয়ে দেখি উনি উপুড় হয়ে কি যেন খুজছেন ।

-খালু সাহেব আসবো । -দরজাতো খোলাই আছে । জিজ্ঞেস করছো কেন । -একটু ভদ্রতা করলাম আরকি । খালু সাহেব কি খুজছেন ।

-তেলাপোকা মারছি । ততক্ষনে বুঝতে পারলাম, খালু সাহেব বেশ হাই ডোজের গবেষনা করছেন । -ও, তেলাপোকার অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিষয়ক গবেষনা । বেশ ইন্টারেস্টিং । -আরে রাখো গবেষনা টবেষনা ।

যত্তসব রাবিশ । -তাহলে হঠাৎ এই জিগাংষা জেগে উঠলো । -শোন । আমি তেলাপোকা খুব ভয় পেতাম । তেলাপোকা উড়ছে দেখলে প্রায় অজ্ঞান হয়ে যেতাম ।

তেলাপোকার ভয়েই তো সায়েন্স পড়লাম না । হয়েছে কি, আমি তখন ক্লাস নাইনে । বায়োলজি প্রাকটিক্যাল ক্লাসে গিয়ে দেখি স্যার তেলাপোকা কাটছেন । ছি ছি ছি । সেই সায়েন্স ছাড়লাম ।

কিছুদিন আগে দেখি সাইবা ( খালার ছোট মেয়ে)ধরে ধরে তেলাপোকা মারছে । আমি দেখে ভয়ে অস্থির। কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না । এরপর রাতে ঘুমাতে গেলাম । ঠিক মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল ।

দেখি কি, আমার বালিশের পাশে একটা তেলাপোকা । বিরক্ত হয়েই দিলাম এক বাড়ি । ওমনি সে মরে গেল । আরে আমি একি করলাম। নিজের সাহসে নিজেই মুগ্ধ ।

-হুঁ । তেলাপোকা মারা বেশ সাহসের কাজ । -ঠাট্টা করবেনা । শোন, জগতের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিও তেলাপোকা ভয় পেতেন । যদিও তেলাপোকা অত্যন্ত নিরীহ প্রানী ।

এদের পাখা আছে । এরা উড়তেও পারে । এরাও পাখি । -অবশ্যই । তেলাপোকা একটি সুন্দর পাখি ।

-এদের দেহ দেখবে একটু তেলতেলে । তাই এদের তেলাপোকা বলা হয় । পৃথিবীতে প্রায় ৩৫০০ প্রজাতির তেলাপোকা আছে । সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপারটা কি জানো,তেলাপোকা নিশাচর প্রানী । -হুঁ ।

বিরাট আশ্চর্যের ব্যাপার । কিন্তু এমন একটা প্রানীকে মানুষ কেন তেল্লাচোরা বলে ডাকে সেটা বুঝলাম না । -রসিকতা হচ্ছে, রসিকতা । যাও আমার সামনে থেকে । গেট লস্ট ।

২ এট্রিয়াম রেস্টুরেন্টটা দেকতে অনেকটা চাইনিজ টেম্পলের মত । স্থাপত্যশৈলীতে যেহেতু চাইনিজ চাইনিজ ভাব, খাবারেও তেমনী চাইনিজ চাইনিজ ভাব থাকার কথা সাপ ব্যাঙ থাকলেও থাকতে পারে । রেস্টুরেন্টের সামনে উঠানের মত একটা জায়গা আছে । জায়গাটাকে বেশ ভালোভাবেই লেকের মত করা হয়েছে । পানিতে বেশ বাহারি রংয়ের মাছ দেখা যাচ্ছে ।

বেশ চিত্তাকর্ষক । উঠানের চারপাশে বাঁশ গাছ । এর বাইরে নানারকম সুন্দর ফুলগাছ দেখা যাচ্ছে । এসব ডিঙ্গিয়ে যতই সামনের দিকে যাচ্ছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি । কিছুদুর যেতেই সদর দরজা চোখে পড়ল ।

দরজার পাশেও সেই বাঁশ গাছ । একি, বাঁশ গাছগুলো নকল, প্লাস্টিকের । তবে কি, মাছগুলোও নকল হতে পারে। দরজার সামনে যেতেই একটা স্যুট টাই পরা লোক দরজা খুলে বলল ‘ ওয়েলকাম স্যার’ । প্রায় প্রতিটি রেস্টুরেন্টের দরজায় এমন স্যুট টাই পরা লোক দেখা যায় ।

উনাদের কাজ এই তিনটাই । এক, দরজা খোলা দুই, ওয়েলকাম স্যার বলা তিন, যাওয়ার সময় বলা থ্যাংকু স্যার । এই লোক আমাকে স্যার কেন বলেছেন, ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না । আমি যে শার্ট পরেছি, সেটা ইস্ত্রি করা হয়নি । তার ওপর তিন চারদিন টানা পরার পর ঘামের বিদখুটে গন্ধ জমে গেছে ।

পায়ে স্যান্ডেলের অবস্থাতো আরো খারাপ । এই ছিড়বে, এই ছিড়বে, ছিড়ছেনা টাইপ । তারচে বরং খালাকে বেশ ম্যাডাম ম্যাডাম মনে হচ্ছে । চোখে রোদচশমা আর পায়ে এভারেস্টসম স্যান্ডেল খালাকে বেশ সুন্দর মানিয়েছে । আমরা একটা টেবিলে গিয়ে বসলাম।

প্রায় সাথে সাথে অর্ডার নেয়ার জন্য লোক হাজির । তিনিও স্যুট টাই পরেছেন । এই লোকের হাইটও ভালো, দেখতেও মাশাআল্লাহ । উনার তো সিনেমার নায়ক হওয়া উচিত । কি সব আজেবাজে জিনিষ সিনেমায় পড়ে আছে ।

মেন্যু লিস্ট হাতে নিয়ে খালা বললো, কি অর্ডার করবো । -ফ্রায়েড রাইচ ,ফ্রন নাও, বিফ কিছু থাকলে নিতে পারো । -তোর খালুর চিকেন বেশ পছন্দ । স্যুপ কোনটা নিব । বলে খালা লোকটাকে জিজ্ঞেস করলেন ‘আপনাদের স্পেশার কোন স্যুপ আছে।

আর শোনেন, নুডুলস ভালো হবে কোনটা । এগুলো তাড়াতাড়ি দিতে হবে ’। লোকটা ওকে ম্যাম বলে চলে যাওয়ার সাথে সাথে আবার ফিরেও এলো বিল নিয়ে । সুর্যের চেয়ে বালি গরম থিওরীতে ভ্যাট এর পরিমান দেখে আমি পুরা টাসকি । ভ্যাট ৬৮৮ টাকা মাত্র ।

খালা কি হাসিমুখে বিল দিচ্ছে যেন টাকা কোন ব্যাপারই না । আমার মাথায় এখনো ৬৮৮ টাকা ঘুরছে । কিছুদিন আগে আমাদের অর্থমন্ত্রী সাহেব বলেছেন, সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা তেমন বড় কিছু না । ’ সেখানে আমি মাত্র ৬৮৮টাকা নিয়ে ভাবছি । এবার রেস্টুরেন্টের ভেতরের অবস্থা দেখা যাক ।

প্রায় এককোনে একজোড়া তরুন তরুনী । তাদের দেখেই প্রেমিক প্রেমিকা বলে মনে হচ্ছে । প্রেমিক প্রেমিকা জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন রইলো,এত জায়গা থাকতে তারা রেস্টুরেন্টের কোনার জায়গাটা এত বেশী পছন্দ করে কেন ?ইয়া মোটা দুইটা লোক দেখা যাচ্ছে । তারা হা হা হো হো করছে আর খাচ্ছে । বেশ সস্তায় ব্যুফে খাচ্ছে বলেই তাদের এত খুশি ।

তাদের প্লেট এবং তারপাশের টেবিলভর্তি খাবার । পৃথিবীর সব লোক এই রেটের খাদক হলে ব্যুফে সিস্টেমটাই উঠে যেত । এক ইংরেজ দম্পতিকে দেখা যাচ্ছে মাঝখানটায়, তাদের সাথে একটা বাচ্চা। বাচ্চাটা কান্না করছে । আমি আগ্রহ নিয়ে বাচ্চাটার কান্না শুনছি।

বাংলাদেশের বাচ্চারা সাধারনত ভ্যাঁ ভ্যাঁ ভ্যাঁ, আম্মারে, আল্লারে টাইপ শব্দ করে কান্না করে । এই ছেলেকে দেখি ওঁএ ওঁএ টাইপ শব্দ করে কাঁদছে । যা হোক, খাবার নিয়ে বাসায় পৌছাতে প্রায় পৌনে তিনটা । এদিকে আমাদের ট্রেন সাড়ে তিনটায় । খালু সাহেব আমাদের অবস্থা বুঝতে পেরে রসিকতা করেই বললেন ‘মজা করেই খাও।

কি আর হবে । বেশী কিছু হলে ট্রেনটাই মিস হবে’ । খালু সাহেবের এক্সট্রিম থিওরী মেনে আমি বেশ আয়েশ করেই স্যুপ নিলাম । একটা জিনিষ দেখা যায়, প্রায় প্রতিটা রেস্টুরেন্টে তাদের স্পেশাল স্যুপ থাকে । এটাও স্পেশাল স্যুপ ।

এতে তেলাপোকাও থাকতে পারে । বেশ আয়েশী ভঙ্গিতে স্যুপ মুখে তুললাম । আহ, অমৃত স্বাদ । তবে মাঝে মাঝে মুখে বাশঁ জাতিয কিছু একটা পড়ছে । সেটা চিবিয়ে খেতে দারুন মজা ।

বেশ তৃপ্তি নিয়ে খেলাম । এদিকে মামা দেখি ট্রেন মিস করার ভয়ে অস্থির । খালা এয়ারপোর্ট স্টেশান পর্যন্ত গাড়ি পাঠালেন । রাস্তায় একবার জ্যামে পড়ি, মামার অস্তিরতা এক ডিগ্রি বাড়ে । মামার অস্তিরতা দেখে ড্রাইভারকে বললাম ‘গান ছাড়েন তো’ ।

মড়ার উপর খরার ঘা । গান বাজতে শুরু হল ‘ যেতে যেতে পথে হল দেরি , তাইতো পারিনি, যেতে পারিনি’ । নাহ, মামাকে সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট দিতে হবে । মামার মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে হবে । ‘ আচ্ছা মামা, বলতো, গানটার হিন্দি ভার্সন কি?’ সংগীত বোদ্ধা হিসেবে মামা অতি দুর্বল ।

ভুল প্রশ্ন করেছি । বেশ বিরক্ত হয়ে মামা বললো ‘চুপ থাক । টাইম আছে মাত্র পাঁচ মিনিট । আজ নির্ঘাত ট্রেন মিস ’ । একটু চুপ করে আবার মামাকে বললাম ‘ মামা, খালার বাসায় কি কি ফেলে আসছো ।

বেশতো তড়িঘড়ি করে গোছগাছ করেছো । ’ ট্রিটমেন্ট কাজ করছে । মামা মনোযোগ এখন কি কি ফেলে এসেছে তার দিকে । ইতোমধ্যে আমরা চলে এলাম রেল স্টেশানে । দেখি ট্রেন মাত্রই এলো ।

গাড়ি থেকে নামতে নামতে মামাকে বললাম ‘মামা, দেখতো কয়টা বাজে’ । - হায় । আমার ঘড়ি । ফেলে এসেছি । কই ছিলো ।

-খালার ড্রেসিং টেবিলের উপর । উৎসর্গ : আমার খালু সাহেব ডঃ জিল্লুর রহমান। উনার হাত বেশ লম্বা কিন্তু বেশ কায়দা করেই গুটিয়ে রাখেন যাতে কেউ দেখতে না পায় । আমার ছোট মামা অলমোস্ট ডঃ আহসানুল করীম । উনার হাত এখনো গজায়নি ।

মাথার উপর মামা খালুদের হাত এসে পড়লে বেকার জীবনের গভীরতা বোঝা কষ্ট হয়ে যেত । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.