আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হুমায়ুন আহমেদের রেখে যাওয়া সম্পদ

বাংলাদেশের অধিকাংশ পত্রিকা তসলিমা নাসরিনের নামের আগে ‘বিতর্কিত লেখিকা’ কথাটা ব্যবহার করে। বেশ কিছুদিন যাবৎ আমার মনে হচ্ছিল এই কথাটা তার নামের আগে এখন আর যাচ্ছে না। অন্য কিছু একটা লিখা বা বলা দরকার। কিন্তু যুৎসই কোনো শব্দ পাচ্ছিলাম না। সাপ্তাহিক-এর হুমায়ূন সংখ্যা নিয়ে সম্পাদক গোলাম মোর্তোজার সঙ্গে কথা বলার সময় তসলিমা নাসরিন প্রসঙ্গ চলে এলো।

হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে ঢাকার একটি পত্রিকায় তসলিমার কুৎসিত ও খেদো লিখা প্রকাশের কথা বলতেই তিনি বললেন, বিকারগ্রস্ত কাউকে নিয়ে কথা না বলাই ভালো। এ বিষয়ে আর কথা বাড়ালাম না। তসলিমার নামের আগে ‘বিতর্কিত লেখিকা’র পরিবর্তে ‘বিকারগ্রস্ত’ কথাটাই উপযুক্ত মনে হলো। বিকারগ্রস্ত না হলে সে হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু নিয়ে লিখতে পারে, ‘আমরা মানুষটিকে হারিয়েছি, এই যা ক্ষতি, তার চলে যাওয়ায় সত্যি বলতে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির জগতের কোনো ক্ষতি হয়নি’। তসলিমা লিখেছেন, বাংলাদেশের জনগণ যদি বিপুল পরিমাণে অশিক্ষিত আর অর্ধশিক্ষিত না হতো, হুমায়ূন আহমেদের পক্ষে এত জনপ্রিয়তা অর্জন করা সম্ভব হতো না।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদাররা বছরের পর বছর চেষ্টা করেও পশ্চিমবঙ্গে হুমায়ূন আহমেদকে জনপ্রিয় করে তুলতে পারেননি। কারণ ওই রাজ্যে শিক্ষিতের মান বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। লিখেছেন, অর্ধশিক্ষিত পাঠকদের জন্য পৃথিবীর সব দেশেই কিছু লেখক আছেন, তাঁরা জনপ্রিয় বই লেখেন। তাঁদের প্রায় সবারই মান হুমায়ূন আহমেদের চেয়ে অনেক উপরে। তসলিমা লিখেছেন, যারা হুমায়ূন আহমেদকে ‘বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক’ বলছে তারা বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যকে অপমান করছে।

যারা তাকে ‘ম্যাজিক রিয়ালিজম’ বলছে তারা জানেনা ম্যাজিক রিয়ালিজম কাকে বলে। হুমায়ূন আহমেদের বাংলা ভাষার দখল নিয়েও তসলিমা প্রশ্ন তুলেছেন। ২. হুমায়ূন আহমেদের লাশ নিয়ে কিছুটা সিদ্ধান্তহীনতা ছিল, কোথায় কবর দেয়া হবে? তাঁর প্রথম পক্ষের সন্তানরা চেয়েছিলেন ঢাকার কোনো কবরস্থানে তাদের প্রিয় বাবার কবর হোক। স্ত্রী শাওন চেয়েছিলেন নূহাশপল্লীতে। এমনটা হওয়া খুব বেশি কি অসাভাবিক ছিল? হতেই তো পারে।

পৃথিবীর কোনো বিখ্যাত মানুষকে নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা তৈরি হয়নি? প্রায় সবাইকে নিয়েই হয়েছে। একদিকে মানুষটির যশ, খ্যাতি, জনপ্রিয়তা। অন্যদিকে আপন মানুষের আবেগ। সব মিলিয়ে কিছুটা সিদ্ধান্তহীনতা হতেই পারে। হুমায়ূন আহমেদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরো একটু অন্যরকম।

বৈবাহিক জীবনে তিনি রেখে গেছেন দুটি পক্ষ, প্রথম পক্ষ এবং দ্বিতীয় পক্ষ। আমাদের সমাজ সংস্কৃতির নিয়মে দুই পক্ষের মধ্যে কিছুটা রেষারেষি হয়েই থাকে। এতে অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। প্রিয় বাবার মৃত্যুতে বড় চার সন্তানের আবেগ অনুভূতি যেমন খুবই স্বাভাবিক এবং গ্রহণযোগ্য, তেমনি স্বামীকে ঘিরে স্ত্রী শাওনের আবেগ ইচ্ছাও অগ্রাহ্য নয়। বরং আইনি বিবেচনায় স্ত্রীর ইচ্ছাকেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়।

একটা সাধারণ পরিবারে এমনটি ঘটলে কি করা হয়? নিকট আত্মীয় বা এলাকার মুরুব্বিরা দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে শান্তিপূর্ণ, যুক্তিসঙ্গত এবং বেশি গ্রহণযোগ্য একটি সিদ্ধান্ত নিতে পরিবারটিকে সহায়তা দেয়। হুমায়ূন আহমেদের ক্ষেত্রেও আমদের রাষ্ট্রের ভূমিকা, পত্রপত্রিকার ভূমিকা, বিশিষ্টজনদের ভূমিকা এমনই কাম্য ছিল। কিন্তু আমরা খুব অবাক হয়ে দেখেছি, এখনো দেখছি হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুকে ঘিরে পত্রপত্রিকায় স্পষ্ট দুটি ভাগ। টেলিভিশন মিডিয়ায় দুটি ভাগ। বিশিষ্টজনদের মধ্যে দুটি ভাগ।

প্রথাগতভাবে রাজনীতিতেও তাই। একটি ভাগ বড় চার সন্তানের পক্ষে। অন্যটি স্ত্রী শাওনের দিকে। এ বিষয়ে ফেসবুকে একটি মন্তব্য দেখেছিলাম। মন্তব্যটা এমন, ‘প্রথম পক্ষে যারা আছেন তাদের কথা কাজ দেখে মনে হয়, যদি মরণোত্তর বিয়ের কোনো সুযোগ থাকত তবে তারা হুমায়ূন আহমেদকে সাবেক স্ত্রী গুলতেকিনের সঙ্গে আবার বিয়ে দিতেন’।

মন্তব্যটি কাউকে কষ্ট দেয়ার জন্য নয়। আমাদের জাতীয় মুরুব্বিদের জাতীয় চরিত্র প্রকাশের চেষ্টা মাত্র। হুমায়ূন আহমেদের দুই পক্ষকে দুই ভাগ রেখে যারা সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছে তাদের কাতারে প্রকাশ্যেই আছে দুটি মিডিয়া। একটি পত্রিকা হুমায়ূন আহমেদের ভাই জাফর ইকবালকে কেন্দ্র করে পাল তুলেছে প্রথম পক্ষে। অপরদিকে একটি টেলিভিশন শাওনকে ঘিরে কথা বলছে দ্বিতীয় পক্ষে।

তাদের এই অন্যায় ভূমিকা খুবই আপত্তির এবং আশঙ্কার। হুমায়ূন আহমেদের রেখে যাওয়া সম্পদ নিয়ে আগামীতে দুই পক্ষ যদি মুখোমুখি হয় এবং কোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তার জন্য দায় থাকবে এই দুটি মিডিয়ার। দায় থাকবে সেই সব জাতীয় মুরুব্বিদের, যারা এখনও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে কথা বলছেন, ইন্ধন যোগাচ্ছেন। ৩. ইংল্যান্ডের খুব ছোট এবং অখ্যাত এক শহরের নাম স্ট্রাটফোর্ড। অথচ এই ছোট অখ্যাত শহরটি এখন আর অখ্যাত নেই।

তার পরিচিতি বিশ্বজুড়ে। সেখানে আছে শেক্সপিয়রের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি। এই বাড়ির সত্যতা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। কিন্তু তাকে কি আসে যায়? ইংলিশরা শেক্সপিয়রকে কেন্দ্র করে স্ট্রাটফোর্ডকে এমনভাবে সাজিয়েছে যে সেটা এখন শেক্সপিয়র তীর্থে পরিণত হয়েছে। মিউজিয়াম, লাইব্রেরি থেকে শুরু করে বিনোদনের প্রায় সব কিছুই আছে সেখানে।

প্রতি বছর লাখ লাখ পর্যটক সেখানে যায় শেক্সপিয়র মেলায় মন ভেজাতে। ইতালির ভেরনা শহরে আছে রোমিও জুলিয়েটের বাড়ি। সেখানেও সৃষ্টি করা হয়েছে এলাহি কা-। ভেরনা এখন বিশ্ব প্রেমিকদের তীর্থ। হাজার হাজার প্রেমিক-প্রেমিকা প্রতিদিন যায় ভেরনায়।

বছর শেষে যার সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ২০ মিলিয়ন। প্রেমিক-প্রেমিকা বা নবদম্পতিরা তাদের সম্পর্কের বন্ধন অটুট রাখার স্বপ্ন নিয়ে সেখানে ঝুলিয়ে দেয় লাখ লাখ তালা। ছবি তোলে কথিক রোমিও জুলিয়েটদের বাড়ির বারান্দায়। যেখানে বসে গল্পের রোমিও জুলিয়েটরা প্রকৃতি দেখত। বাড়ির পাশে শান্তিনিকেতনের কথা তো আমরা সবাই জানি।

বাংলাদেশের শান্তিনিকেতন হতে পারে গাজীপুরের নূহাশপল্লী। হতে পারে স্ট্রাটফোর্ড অ্যাভন। অথবা ইতালির ভেরনা। হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্ন এবং পরিকল্পনা সামনে রেখে নূহাশপল্লীতে গড়ে তোলা যেতে পারে একটি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বমানের থিয়েটার, মিউজিয়াম, লাইব্রেরি এবং হুমায়ূন গবেষণা কেন্দ্র।

হুমায়ূন আহমেদের ইচ্ছার বাস্তবায়ন করা যায় একটি ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণ করে। এর জন্য দরকার দীর্ঘ এবং সঠিক পরিকল্পনা। দরকার হুমায়ূন আহমেদের প্রতি সত্যিকারের ভালোবাসা। Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.