আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিধাতার কী অপরূপ অনবদ্য সৃষ্টি...............

বিধাতার কী অপরূপ সৃষ্টি, অপার মহিমার প্রকাশ । যতই দেখি ততই মুগ্ধ হই । কী সুন্দর, কী অপরূপ, কী কোমল, কী মায়া, কী স্নেহ, কী মমতা ! কুসুম যেমন কোমল, তার চেয়ে অধিক তার কোমলতা, তার শোভা। যতই দেখি তৃষ্ণা মেটে না । তার স্পর্শ, তার চাহনি, তার হাঁটি, হাঁটি; পা, পা চলন, তার বলন, তার হাসি-উচ্ছ্বাস, উচ্ছলতা, তার আধো আধো বোল, হৃদয়গ্রাহী, মনোমুগ্ধকর ।

বিধাতার কী নিষ্কলুষ সৃষ্টি ! আমি মুগ্ধ, আমি বিমোহিত, সমাহিত । যখন নরম কোমল এক হাতে গলা জড়িয়ে, অপর হাত বুকের উপর রেখে, পরম নির্ভরতায় বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে, তখন দেহের ভিতর এক অপূর্ব শিহরণ খেলে যায়, এক স্বর্গীয় শোভা প্রস্ফুটিত হয় । মনে হয় পেলাম, জগতের সমস্ত মূল্যবান রত্ন বুজি আজ আমার বক্ষে শায়িত । এর মূল্য হয় না, এ সম্পদ অমূল্য । এর নিকট ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত সম্পদ তুচ্ছ, মূল্যহীন ।

মহাকাশের সমগ্র তারকারাজি আমার বক্ষে আজ শায়িত । তার শোভার নিকট জগতের সমস্ত শোভা আজ অনাড়ম্বর। আমি যেন অবশ হয়ে যাচ্ছি, পায়ের পাতার দিকটায় শীতলতা অনুভব করছি, শরীর মনে হয় জমে যাচ্ছে । কিন্তু অন্তরাত্মা এক পরম প্রাপ্তিতে যেন পরিপূর্ণ । তার নরম, কোমল তুলতুলে গালে যখন চুমু খাই, তখন মনে হয় পান করলাম, এক অমৃত সুধা ।

সকল অপূর্ণতা আজ পূর্ণতা পেয়েছে, দিশাহীন জীবন পেয়েছে পথের দিশা । সকল আকাঙ্খার হয়েছে অবসান, নিশাবসান । বিধাতা সৃষ্ট সবচেয়ে সুন্দর, কোমল ও নির্মলতম নিদর্শন “ শিশু ” শিশুর সামাজিকীকরণের সবচেয়ে বড় মাধ্যম তার পরিবার । ভবিষ্যৎ জীবনে সে কী রকম মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে তা নির্ভর করে, শিশুর সামাজিকীকরণ তথা পারিবারিক শিষ্টাচারের উপর । শিশুর জীবনে মায়ের ভূমিকা ব্যাপক ।

মা ও শিশুর বন্ধন আত্মিক বন্ধন । যুগ হতে যুগান্তরের কাল হতে কালান্তরের এ বন্ধন । শিশু জন্মের পর কাউকে চিনতে পারুক আর নাই বা পারুক, সে ঠিকই তার মা’কে চিনতে পারে । চিনতে পারবেই বা না কেন ? মায়ের আরেকটি সত্তাই যে তার সন্তান (শিশু) । দেহের ভিতর আরেকটি দেহ , মনের ভিতর আরেকটি মন ।

“ মা ” যে সন্তানের সবচেয়ে আপনজন । রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি লাইন এখানে উদ্ধৃত না করলেই নয়, ''“““খোকা মা’কে শুধায় ডেকে, “এলেম আমি কোথা থেকে কোনখানে তুই কুঁড়িয়ে পেলি আমারে?” মা শুনে কয় হেসে কেঁদে খোকারে তার বুকে বেঁধে- “ইচ্ছে হয়ে ছিলি মনের মাঝারে । ”””’” সত্যি তাই মায়ের ইচ্ছা, আকাঙ্খার বাস্তব প্রতিফলন রূপে আবির্ভূত হয় তার সন্তান । মানব জীবনের সবচেয়ে অমূল্য রত্ন আজ মায়ের কোলে । স্বর্গীয় দূত আজ মায়ের কোলে শায়িত ।

সন্তানের প্রতি মায়ের এ ভালোবাসা অতুলনীয়, অপরিমেয় । শুধু শিশুবস্থায় নয়, সমগ্র মানব জীবনে মায়ের ভূমিকা ব্যাপক । অনেক মাকেই দেখেছি, ছোট একটি শিশু কতই বা বয়স, ৩-৪ বছর । মায়ের সাথে সাথে পথ চলছে । হয়ত মায়ের কাছ থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে একা একাই চলছে ।

চারপাশের বিচিত্র পরিবেশ তাকে আকর্ষিত করে , সে দ্বিগুণ উৎসাহে পথ চলে । চলতে চলতে সে হঠাৎ করে পড়ে গেল । ইশ! তার নরম কোমল ছোট্ট শরীরে কী ব্যাথাই না পেয়েছে । অঝোরে সে কাঁদছে । দূর থেকে মা দেখতে পেয়ে কাছে এসে মার শুরু করল ।

থ্ ( হতবাক ), একি!? কই বাচ্চাটি পড়ে গেছে তাকে তুলে , ইশ্ ! শিশুটির পা একটু ছরেও গিয়েছে, পায়ের হাঁটুর চামড়ার উপর একটু রক্তের আভা দেখা দিয়েছে । গায়ের ধুলোবালি ঝেড়ে দিবে, পরম মমতায় বুকে তুলে নিবে । তা না বরং , “ তোকে আগেই বলেছিলাম ওইদিকে যাস্ না, এখন পাইলি তো মজা, বেয়াদপ কোথাকার, খা এইবার মাইর খা ” বলে মার শুরু করেছে । ........................ ............ একটি ছোট্ট মেয়ে ৭-৮ বছর বয়স । কী সুন্দর মুখাবয়ব ।

দেখলেই মন ভালো হয়ে যায় ( মনোমুগ্ধকর ) । মা, ছোট বোন ও খালামনির সাথে ঘুরতে বের হয়েছে । কী একটা জিনিস নিয়ে যেন মেয়েটা তার ছোট বোনের সাথে খুনসুটি করছে । পিঠাপিঠি ভাইবোন ছোটবেলায় যা করে আর কী । সত্যিই ছোট বেলার এসকল খুনসুটির কথা ভাবতেই শিশুকালের সেই মধুময় স্মৃতি হৃদয়ে দোল খেলে যায় ।

ওমা, ঝরের মত উরে এসে এক মহিলা মেয়েটিকে ধরে প্রথমে এক ঝাঁকুনি দিল , তারপর তার নরম গালে কষে এক চড় বসাল । মহিলাটি বাচ্চা মেয়েটির মা । মেয়েটি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে । ওমা, একি!?, একি!? কই না বুঝিয়ে বলবে, “ মা-মণি আমার এমন করে না, ও তোমার ছোট বোন না ? তুমি তো বড়, ও না তোমার ছোট দিদিমণি, দিয়ে দাও ওকে ওইটা । ” তা না, বরং বলছে কিনা, “তোকে আগেই বলছিলাম, দিয়ে দে ওইটা, এখন কেমন লাগে ? চল্ আজকে বাসায় চল ।

” এই যে মা, হ্যাঁ আপনাকে, আপনাদেরকেই বলছি , “ শিশুর নরম তনু দেহ আঘাত করবার জন্য নয়, কুসুম কোমল গাল কঠিন কড়কড়ে হাতের পাঁচ আঙুলের দাগ বসিয়ে দেয়ার জন্য নয় । ঐ নরম কোমল গালে শুধু চুমুই দেয়া যায় । ” অনেক মা ’ই আবার শিশুকে Baby Day Care এ দিয়ে আসে । অথচ শৈশবে, শিশু বয়সে মাকে শিশুর অধিক প্রয়োজন। অনেকেই আবার শিশুকে Babysitter এর কাছে দিয়ে দেয় ।

এ কী ধরনের নিষ্ঠুরতা ? মায়ের ওমে শিশু সবচেয়ে বেশি ভালো থাকে । মুরগী তার ছানাগুলকে সবসময় তার কাছে রাখে, ছানাগুলকে সবসময় ডানার ভিতরে রাখে । মায়ের শরীরের ওমে ছানাগুলো ভালো থাকে । কী সুন্দর তুলতুলে ছানা । মা-মুরগী তার ছানাগুলোকে সবসময় আগলে আগলে রাখে।

কাক, চিল, বিড়াল বা অন্যকোন প্রাণী যাতে ছানাগুলোর কাছে ঘেঁষতে না পারে সেদিকে সে সদা সতর্ক থাকে । Babysitter কী পারবে মায়ের সে অকৃতিম ভালবাসাটুকু দিতে ? নবজাতকের নরম, কোমল, স্নিগ্ধ দেহের স্পর্শ সুখটুকু অনুভব করা থেকে বঞ্চিত হয় এ ধরনের মায়েরা । মা ও সন্তানের যে আত্মিক সম্পর্ক তা কী তারা অনুভব করতে পারে ? তারা কী করে লাভ করবে শিশুর মুখের প্রথম বোল ( কথা ) শোনার আনন্দ, শিশুর বসা থেকে প্রথম উঠে দাঁড়ানো, তার গুঁটি গুঁটি পায় পড়তে পড়তে মায়ের কাছে এগিয়ে যাওয়া । তোমরা বঞ্চিত এই সুখ থেকে । সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, কিছু তথাকথিত আধুনিক, ফ্যাশন সচেতন মায়েরা তাদের ফিগার ঠিক রাখার জন্য শিশুকে মাতৃস্তন পর্যন্ত পান করায় না ।

ফিডার নামক এক ভয়ংকর বস্তু শিশুর মুখে পুড়ে দেয় । কী নির্মমতা !!!!!!! এ সকল মহিলাদেরকেই বলছি, “ শিশু ”, আপনাদের জৈবিক চাহিদার ফল নয়, বিধাতার সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর নিষ্পাপ সৃষ্টি । এ সকল মায়দেরকেই বলছি, শিশুদেরকে আপনাদের জৈবিক কামনা-বাসনার প্রতিরূপ করবেন না । আপনি মহাজ্ঞানী, মহাখ্যাতিমান, মহিয়ষী যাই হন না কেন, আপনার বড় পরিচয় আপনি একজন “ মা ” । নারী জনম পূর্ণতা লাভ করে মাতৃজন্মে ।

নারী জন্মের স্বার্থকতা মাতৃত্তে । একটা গল্প উল্লেখ না করলেই নয়, আমরা বন্ধুরা মিলে আমাদের জীবনের লক্ষ্য কী ছিল, আমরা কী হতে চেয়েছিলাম এগুলো নিয়ে গল্প করছিলাম । আমার এক বান্ধবী, দেশের নামকরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, কয়দিন পর ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বের হবে, বলে উঠল, “ আমি একজন আদর্শ মা হতে চাই । ” “আমার কৈশোরে মাকে অনেক প্রয়োজন ছিল কিন্তু মাকে তেমনি করে পাইনি । ” সে কেন একথা বলেছিল আমি জানি না ।

হয়ত তার মা বেঁচে ছিলেন না । যদি অজান্তেই তার অন্তরে ব্যাথা দেই, তাই আর জিজ্ঞেস করতে সাহস করিনি । তার প্রতি শ্রদ্ধায় আমার মাথা নত হয়ে গিয়েছিল । সে একজন আদর্শ মা হতে চায় । আমি একজন ডাক্তার, আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার, আমি একজন পাইলট, আমি একজন অ্যাথলেট, আমি একজন মডেল কিংবা ফ্যাশন শিল্পী কিন্তু আমার সবচেয়ে বড় পরিচয় আমি একজন “ মা ” ।

সকল পরিচয়ের ভীরে আমার সত্ত্বার আসল পরিচয়টুকু যেন হারিয়ে না যায় । সকল স্তর বা ক্ষেত্রের (হোক সে উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত, কর্মজীবী কিংবা গৃহিণী কিংবা মহিয়ষী) প্রতিটি নারীই যেন একজন আদর্শ “ মা ”য়ে পরিণত হয় । শেষ করার আগে শুধু এইটুকু বলার, “ শিশুর জন্য ভালোবাসা কর কী তোমরা অনুভব চাই বাঁধা-বন্ধন মুক্ত আনন্দময় শৈশব । ” ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।