আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনলাইনের গল্প -১

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই ''প্রিয়'' তুমি কার? (ছবি সৌজন্য: ইলু্ইনা) ভূমিকা: অনলাইনের ভার্চুয়াল মিডিয়া অনেক সময় দূরের মানুষকে অনেক কাছে টানে, আবার কখনো ঠেলে দেয় অনেক দূরে। ফেসবুক ছাড়াও হাজারো সোশ্যাল মিডিয়া আছে, যেখানে মানুষ একজন আরেকজনের সঙ্গে পরিচিত হয়। আজ এক এমন এক ভার্চুয়াল মিডিয়ার কথা বলবো। ভার্চুয়াল মিডিয়ার এই অংশটি হলো, অনলাইনে ভয়েস চ্যাট রুম। ভয়েস চ্যাট রুম প্রথম খুব সম্ভবত ইয়াহুর আবিস্কার।

ইয়াহুর ভয়েস চ্যাট রুমে গেলে দেখা যায়, ভিন্ন দেশের ভিন্ন ভাষার হাজারো ভয়েস রুম। সেখানে দল বেধে লোকজন পিসিতে বসে মাক্রোফোনে কথা বলে। ইয়াহুর আইডিয়া লুফে নিয়ে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশের মানুষ শুধু নিজের ভাষায় কথা বলার জন্য নিজস্ব মালিকানায় ভয়েস চ্যাট রুম তৈরী করে নিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ তার ব্যাতিক্রম নয়। গুগুলে সার্চ দিলে এরকম শত শত বাংলা ভয়েস চ্যাট রুমের তালিকা পাওয়া যাবে।

আজ এরকম একটি ভয়েস চ্যাট রুমের গল্প বলতে যাচ্ছি। তবে, গল্পের পাত্র পাত্রীর নাম পরিচয় আর ভয়েস চ্যাট রুমের নামটি গোপন রাখছি। ভয়েস চ্যাট রুম ''সুখে দুঃখের গল্প'': সবার প্রশ্ন থাকতে পারে কারা ব্যবহার করে এই ধরনের ভয়েস চ্যাট রুম? সাধারণত বিদেশে থাকা প্রবাসী বাঙ্গালীরা মূলত ব্যাবহার করে এই ধরনের ভয়েস চ্যাট রুম। যখন আত্মীয় স্বজন সবার থেকে দূরে বসে থাকে। দেশের সঙ্গে সময়ের দূরত্বে সঙ্গে বন্ধনের দূরত্ব তৈরি হয় আর একা থাকতে হয় তখনই মানুষ খুঁজে বের করে বন্ধুত্বের নতুন দ্বার।

ভয়েস চ্যাট রুম গুলোর সদস্যদের কর্মকান্ড: ভার্চুয়াল এই পৃথিবীতে যোগ দেয় হাজার হাজার মানুষ, হাজার মানুষের হাজার রঙ। সবাই আশে যার যার মতো করে সময় কাটাতে। কোন কোন ভয়েস চ্যাট রুমে কেউ শুধু গান গায়। এরা একের পর এক গান, কবিতা গেয়ে যেতে থাকে। ওখানে প্রতিযোগীতা চলে কে কার চেয়ে বেশি বড় শিল্পী।

সেখানে সবাই নিজের মতো সাবিনা ইয়াসমীন, রুনা লায়লা বা জয়ন্ত চট্যোপাধ্যায়। এই গান, কবিতায়. গীটার বা বাঁশির সূরে চলতে থাকে গল্প। কখনো কখনো তারা আনন্দমেলা করে অনলাইনে। সেখানে ভয়েস চ্যাট রুমটি বা রুমগুলোর যে মালিক তারা সামিনা চৌধুরী, ফাহমিদা নবী এমনকি ক্লোজ আপ সুপারষ্টারের গায়ক গায়িকাদের কন্টাক্ট করে সেখানে গানের আসর বসায়। সেদিন সেই রুমে লগইন করা সত্যি কষ্ট সাধন হয়ে যায়।

আবার কেউ কেউ আসে শুধু মেয়ে ভয়েস চ্যাট ইউজারের খোঁজে। একদল আসে ভয়েস চ্যাট রুম হ্যাক করতে। তখন চলে অশ্রাব্য গালি। কেউ বা আসে গল্প করতে। আর একদল আসে যাতাবাজি করতে।

এই দল বলতে চায়, ভয়েস চ্যাট রুম শুধু গান ফানের জন্য নয়। এরা দেখাতে চায় এরা অনলাইনের সবচেয়ে সেরা দল। এরা তর্ক করার জন্য রীতিমত পড়ালেখা করে। আর দল বেঁধে যে কোন রুমে ঢুকে গন্ডগোল লাগিয়ে দেয়। যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যান না করে ততক্ষণ চলতে থাকে এদের তর্ক।

''প্রিয়'' তুমি কার : একটি আইডির নাম( আমি আসল আইডিটির নাম বলছি না। ) ভদ্রলোক থাকতেন চীনের কোন একটি অন্চ্ঞলে। এক চীনা ধনী পরিবার সন্তানহীন তাকে দত্তক নিয়েছিলেন। তার নাম ছিলো বাবুল আহমেদ। বেশ সুন্দর কবিতা পড়তেন আর দারুন গান গাইতেন তিনি।

বিভিন্ন ভয়েস চ্যাট রুমের সবার সঙ্গে খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিলো তার। অন্যান্য ছেলেদের বা পুরুষ ভয়েস চ্যাট ইউজারদের মতো তিনি কখনোই মেয়েদের বিরক্ত করতেন না। বলতেন না, ''আপনার ইয়াহু আইডিটা দেবেন প্লীজ, অথবা আমরা কি স্কাইপিতে এড হতে পারি। '' নিতান্তই নিজের মতো কবিতা গান গাওয়া নিজের মতো থাকা একজন মানুষ। একবার তার মাথায় টিউমার হলো, সবার কাছ থেকে দোয়া নিয়ে তিনি গেলেন মাথার অপারেশন করতে।

তিন মাস কোন খবর ছিলনা তার। কোন ভয়েস চ্যাট রুমে আসতেন না তিনি। তিন মাস পর যখন তিনি অনলাইনে আসলেন সবাইকে অনেক ধন্যবাদ জানালেন। কিছুদিন যাবার পর, ''প্রিয়'' তুমি কার'' আইডিটি যেই ভয়েস চ্যাট রুমেই লগইন করুক তার সঙ্গে আরেকটি আইডি লগ ইন করে ''প্রিয়'' আমি তোমার। '' অনলাইনের সবাই বাবলুকে মানে ''প্রিয়'' তুমি কার আইডিটিকে ক্ষেপাতে শুরু করলো।

সবার আগ্রহ নতুন আইডিটি কে? এক সময় জানা গেল, এটি একটি মেয়ের আইডি। মেয়েটি বাবলু অর্থ্যাৎ ''প্রিয়'' তুমি কার'' রের গান ও কবিতার একজন ভক্ত। শুধু এখানেই শেষ নয়, সে বাবলু আহমেদকে খুব ভালবাসে। একদিন ভয়েস চ্যাট রুমের সবাই মিলে মেয়েটির সঙ্গে বাবলু আহমেদের কথা বলিয়ে দিলো। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব থেকে প্রণয়।

''প্রিয়'' আমি তোমার আইডির মেয়েটি লগ ইন করতো হল্যান্ড থেকে। এক সময় বাবলু আহমেদ মেয়েটিকে, চীনে দাওয়াত করলো তার পরিবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে। মেয়েটি চীন থেকে ঘুরে আসলো, অবশ্যই টিকেট পাঠিয়েছিল বাবলুর পরিবার। তাদের বাগদানের পর্বও শেষ হলো। বাগদানে মেয়েটি পেলো, একটি হীরার সেটা।

এবার মেয়েটি বাবলুকে হল্যান্ড দাওয়াত করলো। বাবলু আহমেদ হল্যান্ড গিয়ে দেখলো, মেয়েটি সেখানে তার ভাইকে নিয়ে থাকে। তার ভাই অটিস্টিক অর্থ্যাৎ তার কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। সেখানে গিয়ে দেখলো মেয়েটি খুব দরিদ্র জীবনযাপন করছে। তাই তিনি মেয়েটিকে তার বাসার জন্য অনেক ফার্নিচার কিনে দিলেন।

বেশ কিছু টাকাও দিয়ে আসলেন। বললেন, ভাইকে নিয়ে তুমি আমার কাছে চলে আসো, ওর সব দ্বায়িত্ব আমার। তারপর সাত দিন পর হল্যান্ড থেকে চলে আসলেন আর বিয়ের আয়োজন শুরু করলেন। হল্যান্ড থেকে চীনে ফেরত আসার সাত দিন পর হঠাৎ মেয়েটি আর অন লাইনে আসে না, ইয়াহুতেও আসে না, স্কাইপিতেও না। তার বাসার ফোন সে ধরে না; এমনকি মোবাইলও না।

কি হলো? বাবলু আহমেদ বড় দুঃশ্চিন্তায় পড়লেন। এক মাস পর মেয়েটি ফোন ধরলো। জানা গেল, তার অটিষ্টিক ভাই নাকি তার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলো, এই জন্য সে হাসপাতালে ছিলো। তার হাতে কোন টাকা পয়সা নেই। ভাইকে পাঠানো হয়েছে, প্রতিবন্ধী সেন্টারে।

সে খুব অসহায় অবস্থায় আছে। আর হাসপাতালে তার ফোন ধরা নিষেধ ছিলো। সে জন্যই ফোন করতে বা ধরতে পারেনি। বাবলু আহমেদ তাড়াহুরো করে মেয়েটিকে ২ হাজার ইউরো পাঠালো। বললেন, পরের মাসে এসে মেয়েটিকে চীনে নিয়ে যাবেন আর ভাইয়ের জন্য মাসে চীন থেকেই খরচ পাঠাবেন।

বাবলু আর তার পরিবার ভীষণ খুশী। তাদের সন্তানের বিয়ে হতে চলেছে। মেয়েটি গরীব হলেও বড় ভালো। আবার এক সপ্তাহ পর থেকে মেয়েটি কোন ফোন ধরে না। বাবলু আহমেদ প্রতিবেশীর ফোন নাম্বার নিয়ে এসেছিলো।

তাকে ফোন দিয়ে জানতে পারে, ''প্রিয়'' আমি তোমার'' আইডি নামের মেয়েটি আর সেখানে থাকে না। মেয়েটি তার হাজবেন্ডকে নিয়ে চলে গেছে। কোথায় গেছে তারা জানে না। বাবলু আহমেদ প্রতিবেশীর কথা বিশ্বাস করলেন না। দুইদিন পরের ফ্লাইটে হল্যান্ড গেলেন।

গিয়ে পুলিশের কাছে প্রতিবেশীর নামে অভিযোগ করলেন। পুলিশ, খবর নিয়ে জানলেন, সেই ''প্রিয়'' আমি তোমার' নামের আইডিটির সেই ভাই আসলেই মেয়েটির স্বামী। তার আসল নাম তাসলিমা সরকার। স্বামীটি অটিস্কিক নয়। তারা হল্যান্ড ত্যাগ করেছে।

তারা সড়ক পথে অন্য কোন দেশে চলে গিয়েছে। তাদেরকে আর খুঁজে পাওয়া গেলো না। পরিশেষে, এই যাত্রায় বাবলু আহমেদ ১৫ লক্ষ বাংলাদেশী টাকার একটি বিশাল ধাক্কা খেলেন আর শিক্ষাগ্রহণ করলেন, অনলাইনে প্রেমের পরিণতি সাধারণত এমনই হয়। অনলাইনে শুধু যে বাবলু আহমেদ প্রতারণার স্বীকার হয়েছে তা নয় হয়েছে অনেক নারীও। তাদের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের কথা বার্তা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করেছে অনেক পুরুষ।

আজ বাবলু আহমেদের (আসল নাম নয়) গল্পটি জানালাম। এরপর লিখবো একটি মেয়ের ঘটনা, অন্য কোন দিন। ফারজানা কবীর খান (স্নিগ্ধা)  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.