আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জিহাদ বনাম যুদ্ধ

মনের আনন্দে অথবা মনন যন্ত্রনায় মনন কথা লিখি নিশিদিন.......... ‘জেহাদ’ বা ‘জিহাদ’ মূলত আরবী শব্দ। জিহাদ ( جهاد‎), যার অর্থ সংগ্রাম; কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য লাভের জন্য সমগ্র শক্তি নিয়োগ করাকে বোঝানো হয়। বর্তমান বিশ্বে জিহাদ বলতে মানুষ তরবারীর যুদ্ধকে বা অস্ত্র-শস্ত্রের যুদ্ধকে বুঝে থাকে, যা মোটেও ঠিক নয়। এই ধারণাটি সৃষ্টি হয়েছেও কিছু স্বার্থন্বেষী, ভ্রান্ত মানসিকতা সম্পন্ন লোকের জন্য। যারা নিজেদের স্বার্থের জন্য অস্ত্র-শস্ত্রের জেহাদটিকে মূল জেহাদ বানিয়ে ফেলেছে।

অথচ মূল জেহাদ এটা নয়। ইসলাম ধর্মে মহানবী (সঃ) -এর সঙ্গে কাফেরদের যতগুলো যুদ্ধ হয়েছিল, সেই যুদ্ধগুলো নিছক নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য ছিলো। কাফেরেরা বা অবিশ্বাসীরা যখনই মহানবী (সঃ) ও সাহাবাদের উপর আক্রমণ করেছে তখনই প্রতিহত করতে মহানবী (সঃ) বাধ্য হয়েছেন। ইতিহাসের পাতায় এ সব যুদ্ধকে আমরা কেবল আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ হিসাবেই দেখতে পাই। তাবুকের যুদ্ধে জয়লাভ করার পর মহানবী (সঃ) বলেন, “রাজানা মিনাল জিহাদে সাগিরা ইলাল জিহাদে কাবিরা” অর্থাৎ “আমরা ছোট জেহাদ (জিহাদে সাগিরা) হতে বড় জেহাদের (জিহাদে কাবিরা) দিকে ফিরে এসেছি।

”-(তিরমিজি শরীফ)। প্রশ্ন উঠেছিল, বড় জেহাদ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? মহানবী (সঃ) বলেছিলেন, আপন নফ্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাটাই হলো জেহাদে আকবর বা জিহাদে কাবিরা তথা বড় জেহাদ তথা আসল জেহাদ। আর ‘জেহাদে আসগর বা জিহাদে সাগিরা হল ছোট জেহাদ। কাফেরদের বিরুদ্ধে অস্ত্রযুদ্ধে জয়লাভ করাই যদি একমাত্র জেহাদ বলে আমরা ধরে নেই, তাহলে মহানবী (সঃ)’র এরকম উপদেশ দেবার অর্থ কী হতে পারে? আর তিনি জেহাদকে ভাগই বা করে দেখালেন কেন? কেন তিনি অস্ত্র-সস্ত্রের যুদ্ধকে জেহাদে সাগীর বা ছোট জেহাদ বললেন? তাহলে জেহাদে আকবর বলতে তিনি কী বুঝাতে চেয়েছেন? নিজের রিপুদোষগুলোর বিরুদ্ধে তথা ইন্দ্রিয়গুলোর বিরুদ্ধে তথা এক কথায় নফসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাকেই জেহাদে আকবর বলেছেন। মহানবী (সঃ) বলেন, “আল্ মুজাহিদু মান্ জাহাদা নাফসাহু ফি তা আতিল্লা” অর্থাৎ “একমাত্র মোজাহেদ সবসময় নফসের বিরুদ্ধে আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য জেহাদে মশগুল থাকে।

” জেহাদ দুই প্রকার : প্রথমটি বাহিরের শত্রু হতে আপন ভূখণ্ডকে উদ্ধার করার জেহাদ বা আত্মরক্ষার জেহাদ আর দ্বিতীয়টি হলো আপন নফ্সের সঙ্গে যে খান্নাসরূপী শয়তানটি বহাল তবিয়তে অবস্থান করছে, উহার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করা। কারণ, শয়তানকে আল্লাহ দুইটি স্থান ছাড়া আর কোথাও অবস্থান করার অনুমতি দান করেন নি, অর্থাৎ সৃষ্টিজগতের কোথাও শয়তানের থাকবার অনুমতি নাই একমাত্র জিন এবং মানুষের অন্তর ছাড়া। তাই জিন এবং মানুষের অন্তরটি যখন খান্নাসরূপী শয়তান হতে মু্ক্ত হয়ে যায় তখন সমস্ত দেহখানি পাকপবিত্র হয়ে যায়। মানুষ যখন নির্জনে মহানবী (সঃ)’র হেরাগুহার মতো স্থানে একাকী ধ্যানসাধনায় মগ্ন হয়ে নফ্সের সঙ্গে মিশে থাকা খান্নাসরূপী শয়তানটিকে তাড়িয়ে দেবার জেহাদে রত থাকে তখনই সেই নফ্সটিকে বলা হয় নফ্সে লাউয়ামা তথা সংগ্রামরত নফ্স তথা যুদ্ধরত নফ্স তথা জেহাদে রত থাকা নফ্স। এই জেহাদ বাহিরের অস্ত্র হাতে নিয়ে জেহাদ করা নয়, বরং ধ্যানসাধনায় ডুবে থেকে আপন নফ্স হতে খান্নাসকে তাড়িয়ে দেবার অথবা খান্নাসকে মুসলমান বানিয়ে ফেলার জেহাদ।

পবিত্র কোরআনে- আল্লাহর পথে জেহাদের কথা তথা খান্নাসের বিরুদ্ধে জেহাদের কথা বলা হয়েছে আবার আত্মরক্ষার জন্য কাফেরদের বিরুদ্ধে জেহাদের কথাও বলা হয়েছে। ওহে যারা ঈমান এনেছ! আল্লাহ্কে ভয়-শ্রদ্ধা করো, আর তাঁর দিকে অছিলা অন্বেষণ করো, আর তাঁর পথে জিহাদ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। - 5:35 উপরোক্ত আয়াতটিতে আল্লাহর পথে জেহাদ করার কথা বলা হয়েছে। এই জেহাদ তরবারি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করার জেহাদ নয়, এই জেহাদ মানুষ হত্যা করার বন্দুক কাঁধে নিয়ে ঘোরাঘুরির জেহাদ নয়, এই জেহাদ আপন নফ্সের সঙ্গে যে খান্নাসরূপী শয়তানটিকে পরীক্ষার উদ্দেশে দেওয়া হয়েছে তাকে তাড়িয়ে দেবার জেহাদ, তাকে মুসলমান বানাবার জেহাদ। এখানে আল্লাহর পথে বলতে কী বোঝানো হয়েছে? বোঝানো হয়েছে যে আল্লাহকে পাবার পথে যে সমস্ত বাধা বিপত্তিগুলো সামনে এসে দাঁড়ায় সেগুলোকে পরাভূত করে সত্যের মধ্যে ডুবে যাবার জেহাদ।

ইহা কোনো বৈষয়িক বিষয়ের ভাগ বাঁটোয়ারার জেহাদ নয়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.