আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তরুণ বয়সেই হতে হবে সবচেয়ে বেশি Productive

একটি নিবন্ধ অনুসরনে লেখা, কিছু কিছু জায়গাতে আমি বাংলা অনুবাদও করেছি সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র, যিনি আসমান ও জমিন এবং তদ সংলগ্ন যা কিছু আছে তার সৃষ্টিকর্তা। মহান আল্লাহ্‌ পাক মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে আমাদের বিশ্বমানবের জন্য অপার রহমত হিসেবে পাঠিয়েছেন, রাসূল ( সাঃ) এর প্রতি দরুদ ও সালাম। আমরা আমাদের আশে পাশে কত মুসলিম মুরুব্বীদের দেখি, চুল দাঁড়ি সাদা হয়ে গিয়েছে। এখন তাঁরা আল্লাহ্‌র পথে এসেছেন, নামাজ পড়েন, রোযা রাখেন ইত্যাদি। আলহামদুলিল্লাহ্‌।

এক সময় তারা তরুণ ছিলেন। আর তরুণ বয়সে যেটা হয়, মানুষের মাথাতেই থাকে না যে একসময় সেও বুড়ো হবে, গায়ের জোর কমে যাবে। মনে থাকলেও অনুধাবন করা কঠিন হয়ে যায়। অথচ এই বুড়ো বয়সে আজ নামাজ পড়া অনেকের জন্য কিছুটা কষ্টকরও হয়ে যায় ( কারও হাঁটুতে ব্যথা বা অন্য বয়সের কারণে সমস্যা), রোজা রাখাও অনেকে সময় সমস্যা ( হয়ত এত শারীরিক সমস্যা) । আমরা যেমন টাকা জমাই বুড়ো বয়সে আরাম করার জন্য ( যেমন –ডিপিএস) এবং সেজন্য আমরা তরুণ বয়সে কি পরিশ্রমটাই না করি।

তাহলে আসল ডিপিএস যেটা অর্থাৎ যে আমল নিয়ে আমরা প্রবেশ করব অনন্ত জীবনে, তার জন্য আমরা তরুণ জীবনে কতটা সিরিয়াস থাকি? বুড়ো বয়সে তাই হাজার ইচ্ছা থাকলেও অনেকের পক্ষেই নফল ইবাদত করাটা অসম্ভব হয়ে পড়ে, রোযা রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে। অনেকে ভাবে আচ্ছা বয়স অন্তত ৪০ পেরুক, তারপর......ভাই আমরা কেউ জানিনা কে কতদিন বাঁচব? আল্লাহ্‌ পাক বলেছেন- “...আর হে মুমিন গণ! তোমরা সকলে মিলে আল্লাহ্‌র দিকে ফেরো যেন তোমাদের সফলতা অর্জন হয়” (আন-নূর:৩১) সুতরাং দেরী না করাই ভাল। যুবক বয়স ( যখন মানুষের শক্তি থাকে) এবং এখনই উচিত আল্লাহ্‌র পথে চলা শুরু করা। আল্লাহ্‌ নিশ্চয়ই ক্ষমাশীল, কিন্তু তাঁর শাস্তিও ভয়াবহ। তিনি বলেন- “ নিশ্চয়ই তোমার প্রভুর পাকড়ানো বড়ই কঠোর।

“ ( আল-বুরুজঃ ১২) “ আর এইভাবেই হচ্ছে তোমার প্রভুর পাকড়ানো যখন তিনি পাকড়াও করেন জনপদগুলোকে যখন তারা অন্যায় আচরণ করে। নিঃসন্দেহে তাঁর পাকড়ানো মর্মন্তুদ,কঠিন। “ ( হুদঃ ১০২) মানুষ আল্লাহ্‌র শাস্তি থেকে গাফিল থাকে মূলত তিনটি কারণে- ১. দুনিয়ার আরাম আয়েশে মত্ত থাকার কারণে ২. ক্ষমা প্রার্থনার কথা ভাবে, কিন্তু ভাবে যে পরে চাইলেও হবে (অর্থাৎ দেরী করে) ৩. ভাবে যে আল্লাহ্‌ তো ক্ষমা করবেনই, ভুলে যায় যে, আল্লাহ্‌র শাস্তি যদি আসে, তা অনেক ভয়াবহ আসলেই তারুণ্য এমন একটি সময়, যখন হাতে সময়ো থাকে, দেহে শক্তিও থাকে আরে থাকে সাহস, তাই এটাই সময় আল্লাহ্‌র পথে চলা থাকা শুরু করা এবং অন্যান্য ভাল কাজ করা। একটি হাদিস হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সাঃ) একদা এক ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেন, “পাঁচটি জিনিসকে উত্তমরুপে ব্যবহার করে সেগুলোর সুবিধা অন্য পাঁচটি জিনিস আসার আগেই নিতে হবে, তা হল তারুণ্যের ব্যবহার বার্ধক্য আসার আগেই; সুস্বাস্থ্যের ব্যবহার অসুস্থ হবার আগেই; ধন-সম্পত্তির ব্যবহার দীনতা আসার আগেই; অবসর সময়ের ব্যবহার ব্যস্ততা(কর্মব্যস্ততা) আসার আগেই; এবং জীবনের ব্যবহার মৃত্যু আসার আগেই”। (আল-হাকিম এবং আল-বায়হাকী) এরকম ধারণা করা ভুল যে, তাহলে কি ইসলাম আনন্দ-ফূর্তি আমাদের জন্য নিষিদ্ধ করেছে।

ইসলাম আমাদের অনেক কিছুই করতে অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু সাথে সাথে দিয়ে দিয়েছে সীমারেখা। যেমন- ১. বিয়ে- ইসলাম বিয়ের মাধ্যমে নারী-পুরুষের মধ্যে প্রেম-ভালবাসাকে উতসাহিত করেছে। আল্লাহ্‌ পাক বলেন- “আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে হচ্ছে যে তিনি তোমাদের মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের যুগলদেরকে, যেন তাদের মধ্যে তোমরা স্বস্তি পেতে পার, আর তিনি তোমাদের মধ্যে প্রেম ও করূণার সৃষ্টি করেছেন, নিঃসন্দেহে এতে তো নিদর্শনাবলী রয়েছে সেইসব লোকদের জন্য যারা চিন্তা করে ” ( আর-রুমঃ ২১) তাই বিয়ে ( যখন দরকার এবং সঠিক সময় এ) যুবকদের অবশ্যই চরিত্র ঠিক রাখতে সহায়ক। মহানবী (সাঃ)যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন যুবকদের মধ্যে কেউ যদি তার চরিত্র ঠিক থাকবেনা ভাবে, তাহলে তার বিয়ে করা ফেলা উচিত। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে বুঝা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হবার থেকে বিয়েটা আসলেই উত্তম সমাধান।

২. খাওয়া-দাওয়া- মহান আল্লাহ্‌ পাক আমাদেরকে হালাল সবকিছুই খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন, কিন্তু একই সাথে অপচয় করতেও নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, “ হে আদম সন্তানেরা! তোমরা বেশভুষা গ্রহণ কর প্রত্যেক সিজদার স্থলে; আর খাও ও পান কর, কিন্তু অপচয় করনা। নিশ্চয়ই তিনি অমিতব্যয়ীদের ভালবাসেন না। ” ( আল-আরাফঃ ৩১) ৩. কৌতুক ও হাসাহাসি- এটারও অনুমতি দেয়া হয়েছে ইসলামে। তবে তা অবশ্যই কোন অশ্লীল বিষয় নিয়ে না বা মিথ্যা কিছু নিয়ে না।

যারা অন্যকে হাসানোর জন্য মিথ্যা বলে, তাদের রাসূল (সাঃ) অভিশাপ দিয়েছেন। ৪. ভ্রমণ- এতেও বাধা নেই, কিন্তু অবশ্যই ভ্রমণে গিয়ে কোন পাপ কাজ করা যাবেনা। ৫. খেলাধুলা ও ব্যায়াম-ইসলামেও এটাও নিরুতসাহিত করা হয়নি। বরং ছোট বেলা থেকেই শিশুদেরকে শেখাতে হবে সাঁতার কাটা সহ এরকম বেশ কিছু কাজ যেন তারা বড় হয়ে নিজেকে আত্মরক্ষা করতে পারে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে। সেজন্য শারীরিক সক্ষমতা খুবই জরুরী।

মহানবী (সাঃ) বলেছেন, “মানুষের হাতে দুইটি জিনিস প্রচুর পরিমাণে থাকে যা মানুষ উপলব্ধি করতে পারেনা ( এগুলোর সদ্‌ব্যবহার করে না); তা হল- তারুণ্য আর অবসর সময় (free time)। ” ( আল-বুখারী) আমরা একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারব, আমাদের সবার ক্ষেত্রেই এই কথা সত্যি। অনেকে বলতে পারেন, অমুক তো অনেক ধনী, তো সমস্যা কি – উনি তো তরুণ বয়সে যা খুশি তাই করছেন। আসলে সফলতা তো শুধু টাকা-পয়সা দিয়ে মাপা যায়না। এখানে সব ধরণের সফলতা, যেমন- চারিত্রিক, নৈতিক সফলতার কথাও বলা হচ্ছে।

সর্বোপরি পারলৌকিক সফলতাই তো আসল সফলতা। তাই তরূন বয়স থেকেই শুরু করতে হবে আল্লাহ্‌র ইবাদত, আর আমল করতে হবে সেই অনুযায়ী যা আল্লাহ্‌ পাক পছন্দ করেন । পরিত্যাগ করতে হবে সব খারাপ কাজ যা নিজের এবং মানুষের ক্ষতি করে। আর এতেই উন্নতি অনিবার্য। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।