মানবিক, যৌক্তিক আর অযৌক্তিক। সোজা কথা আরেকটা মানুষ। দশ জনের ভীরে ডুবে থাকার প্রানান্ত চেষ্টায় থাকা মানুষ। পরিবারে কিছু কিছু সদস্য থাকে একটা অন্যরকম জায়গা নিয়ে। যখন, আমাদের জীবন বুঝে ওঠা শুরু, তার অনেক আগে থেকেই তাদের অবদান থাকে জীবনে।
মানুষ আমরা চোখের দেখায় বিশ্বাসী, প্রত্যক্ষ না করে আবেগ- অনুরাগে ঢিল দেই না সহজে; তাই কিছু কিছু মানুষ কে ভুলে যাই দ্রুতই।
আমার শোবার ঘর টা দখিন মুখী। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে বারান্দা পেরিয়ে আর লোকালয় দেখিনা। স্বভাবে নেই, তাই রাত জাগা হয়না। ভোরের হালকা আলোয় নৈঃশব্দ্যে ডুবে থাকা প্রকৃতিতে তাকালে তাই বার বার অতীত ঘাটি।
একে একে চলে যাওয়া স্বজন খুজি।
বিছানা লাগোয়া জানালা দিয়ে চোখ যায় শুধু দূরে- সামনে থাকা কবরে। নানার কবর। চোখে লেগে থাকা নানীর কবর।
জ্ঞান-বুদ্ধি প্রকট হবার পর থেকেই দেখি সাদা শাড়ি পড়া নানী।
বুড়ো বয়েসেও সবুজাভ- শুভ্র নানী আমার ছিলেন মমতার আরেক ফোয়ারা। নানীর ভালোবাসার প্রকাশ ছিল অত্যন্ত জোরালো। খুব বেশী। এত বেশী যে তার রাশ টেনে তোলা সম্ভব হতো না। সাধারণত, একসাথে থাকা, ২৪ ঘণ্টা পাশাপাশি থাকা, দেখা মানুষের প্রতি প্রতি মুহূর্তে ভালোবাসা জানানো সম্ভব না, প্রকাশ সম্ভব না।
অথচ; আমার নানী তা পারতেন। তারপরেও ভালবাসাটুকু প্রাপ্য ধরে নিয়ে, তার কর্তব্য ধরে নিয়ে কখনো বলা হয়না, জানান দেয়া হয়না ভালোবাসার।
বুড়ো মানুষের সাথে আবার আদিখ্যাতা। সব আদিখ্যাতা তারাই করুক।
পারলে সারাদিন বুকে জড়িয়ে রেখে, মাথায় বিলি করে দেয়া নানী আমার।
ক্রিকেট খেলতে গিয়ে বল হারালে পঞ্চাশ পয়সা, এক টাকা- দু টাকা হালকা, শীর্ণ হাতে একটা একটা করে গুনে গুনে নতুন বল কিনে দেয়া; জানালার কোণে মাথা লেগে আমার রক্ত বের হলে যে আবেগে চিৎকার করা সেই একই আবেগে কড়ে আঙ্গুলের চামড়া উঠে গেলেও চিৎকার করা নানী আমার; বছরের প্রথম আমটা, কাঁঠালের কোয়াটা, এটা- ওটা, তার জন্যে বরাদ্দ সব কিছুতে আমাদের জন্যে ভালোবাসা তুলে রাখা নানী আমার- ঘুমোচ্ছেন পরম শান্তিতে।
এইসব সুন্দর, মিষ্টি সকালে তাই দখিন চোখটা রাখি নানীর কবরে। কেউ না শুনুক; আমি শুনি-
"... আর বাবুনু আইস্যে না... তানভীর আইচ্ছস না...!!!!..."
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।