আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নানী ছিলেন যৌনকর্মী। মা এখনো। শিল্পীর খোলামেলা কথা আমি আর যাবো কোথায় মা এবংনানীর পথেই আছি।১৮+ চুরান্ত ভাবে।

বাঙ্গালি একাই একশ হতে পারে। কিন্তু একশ বাঙালি কখনও এক হতে পারে না...... মাহাবুব আলম প্রিয় পাঠক প্রখ্যাত অনুসন্ধানী সাংবাদিক লায়েকুজ্জামান অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন স্টেটনিউজ পরিবারের সঙ্গে । আপনাদের জন্য এবার তিনি লিখবেন নিয়মিত। যৌন পল্লীর অন্ধকার জগতের জীবন নিয়ে তার লেখা ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো। নানী ছিলেন যৌনকর্মী।

মা এখনো। শিল্পীর খোলামেলা কথা আমি আর যাবো কোথায় মা এবং নানীর পথেই আছি। বলুন তো কে আমাকে ঘরে নেবে, কে আমাকে একটা সংসার দেবে ? না কেউ দেবে না। আসে, অনেকেই। আসে,প্রেমের কথা শোনায় ভালোবাসার কথা শোনায় টাকা পয়সা নেয়, বিয়ে করে ঘরে নেয়ার কথা বললে কেটে পড়ে, আর আসে না।

শিল্পীর জন্ম যৌনপল্লীতে। সে জানে তার মায়ের বাবু লোকটিই তার পিতা। শহরের এক নামকরা লোক তিনি। জ্ঞানবুদ্ধি হবার পর থেকে শিল্পী দেখেছে বাবু লোকটি তার মায়ের কাছে আসতো বেশীর ভাগ রাতের বেলায়। শিল্পী তাকে বাবা বলে ডাকতো।

শিল্পীর মনে পড়ে লোকটি তাকে আদর করতো। ওর খুব ইচ্ছে করতো বাবাকে দেখতে,বাবার কাছে যেতে কিন্ত মা কখনো সায় দেয়নি। একদিন মায়ের অজান্তে শিল্পী একা চলে যায় তার বাবার কাছে শহরে তার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে। সে দিনের বেদনার কথা আজো ভুলতে পারেনি সে। বাবা তাকে চিনেও না চেনার ভান করে,বকাবাজি করে তাড়িয়ে দেয়।

একটি থাপ্পড় মারে। আমি কেন গেয়েছিলাম সে অপরাধে লোকটি রাতে এসে আমার মাকে বেদম মারপিঠ করে। মায়ের হাতটা ভেঙ্গে যায়। সে থেকে বাবা নামটি আমি অন্তর থেকে মুছে ফেলেছি। এখন আমি শুধু জানি এক যৌনকর্মীর মেয়ে আমি, আমার নানী ও ছিলো যৌনকর্মী।

আমাকে ও সেটা করে বাচঁতে হবে। এর চেয়ে বেশী কিছু মনে করতে চাই না। ু নিজের মেয়েকে কেন যৌনকর্মীর পেশায় আনলেন সে প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বর্তমানে দৌলতদিয়া ঘাট যৌনপল্লীতে বসবাসকারী বয়স্ক যৌনকর্মী হাজেরা বেগম বলছিলেন তার জীবনের অভিজ্ঞতার কথা। বাবার বাড়ি ছিলো ঝিনাইদহ জেলায়। ছোট ছোট তিনটি ভাই রেখে মারা যান তার দিনমজুর পিতা।

পরের বাড়িতে কাজ করে তাদের খাওয়াতেন তার মা। হঠাৎ করে তার মা ও মরা যান। হাজেরার বয়েস তের কি চৌদ্দ তখন। পাশের গ্রামের এক লোক হাজেরাকে শহরে ভালো কাজ দেয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে আসে। একটি বাড়িতে কাজও দেয়।

এককদি বাড়ির মালিকের ছেলে ধর্ষন করে তাকে ঘটনা দেখে ফেলে বাড়ির গৃহকর্তী। বেদম মারপিঠ করে তাড়িয়ে দেয়া হয় তাকে। বাড়ি যাবার পথ না চেনা হাজেরাকে আশ্রয় দেয় এক মহিলা। ওই মহিলা তাকে বিক্রে করে ফরিদপুর শহরের যৌনপল্লীতে। এক সময়ে সব হারিয়ে হাজেরা মানিয়ে নেয় যৌনপল্লীতে।

হাজেরা বললেন, এখানে এসে আমার অভাবের দরজা খুলে যায় আয়ের সে টাকা পয়সা ভাইদের দিয়েছি সে টাকায় বোনদের বিয়ে দিয়েছি। তারা এখন ভালো আছে অনেক ভালো। দুঃখ করে বললেন আমার মেয়েটা জন্ম নেয়ার পর ভাইদের কাছে গিয়েছিলাম মেয়েটাকে রাখতে, তারা রাখেনি,মুখের উপর বলে দিলো গ্রামের মানুষ জানলে আমাদের মানইজ্জত থাকবে না। যে ভাইদেরকে নিজের আয়ের টাকায় বড়লোক করেছি তাদের কাছে আশ্রয় না পেয়ে মেয়েকে যৌনপল্লীর পরিবেশেই বড় করতে হয়েছে। তাছাড়া নিজের আয়ের অর্থকড়ি তো আগেই ভাইদের দিয়ে শেষ করেছি।

এখন তো আমাকে মেয়ের আয়ে বাচঁতে হবে,এখন আর মেয়েকে নিজের পেশায় নামানো ছাড়া উপায় কি ? আমি তো চাইনি মেয়ে আমার ব্যবসায় নামুক কিন্ত পারলাম না। এখন দেখছি আমার মতো ওর জীবনটা ও এই নরকে বাধা পড়ে গেল। রহিমা বেগম কি ভাবে যৌনপল্লীতে এসেছিলেন সে স্মৃতি আর মনে নেই তার, শুধু বলতে পারেন খুব অভাব ছিলো সংসারে সে ছোট বেলার কথা। কোথায় বাড়ি ঘর ছিলো কিছুই মনে নেই তার। যৌন পল্লীতে জন্ম তার ২ মেয়ে এবং এক ছেলের।

ছেলেটি এখন যৌনপল্লীতে বিশাল বাড়ির মালিক। প্রতিদিন তার অনেক টাকা রোজগার। মেয়ে দুটি এখনো আছে পল্লীতে। তাদের মেয়েরা ও এখন যৌন কমী। রহিমা বেগমের নাতনী যৌনকর্মী শাহানার সঙ্গে দীর্ঘ কথা হয় প্রতিবেদকের।

শাহানা জানায় এ কাজ ভালো লাগে না। কিন্ত যাবো কোথায় ? নানী এখনো আছেন এখানে মা ও আছেন তারা ছিলেন যৌনকর্মী আমি ও তাই হয়তো আমার কোন সন্তান হলে তার ও ঠাই হবে এই অন্ধকারে। ফরিদপুর শহরের রথখোলা যৌনপল্লীর এক বয়স্ক যৌন কর্মী এ পেশায় নাম লেখানোর কাহিনী বলছিলেন আচঁলে চোখ মুছতে মুছতে, তার মা ও ছিলেন যৌনকর্মী। তার বয়েস তখোন এগারো কি বারো। একটি রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে যায় তার মা।

সে সময় মা সহ ছোট আরেকটি বোনের মুখে আহার তুলে দিতে তাকে নামতে হয় যৌন পেশায়। কিন্ত আইন অনুসারে ১৮ বছর না হলে এ পেশায় নাম লেখানোর বিধান নেই বলে পুলিশ এবং যৌনপল্লীর মাস্তানরা তাকে পেশায় নামতে বাধা দেয়। বিনিময়ে টাকা চায় দশ হাজার। পুলিশের সাত হাজার মাস্তানের তিন হাজার। টাকা দেয়ার ক্ষমতা নেই তাদের।

শেষ অবধি কথা হয় সে এই পেশায় আসতে সক্ষম কি না সেটা আগে পরীক্ষা করবে যৌনপল্লীর এক মাস্তান এবং এক পুলিশ। আগে তাদের সাথে শয্যায় গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে এ পেশায় আসতে হয়েছে তাকে। ওই যৌন কর্মী জানালেন ওই পরীক্ষা দিতে গিয়ে চিরজীবনের জন্য সন্তান ধারনের ক্ষমতা হারাতে হয়েছে তাকে। দৌলত দিয়া যৌনপল্লীর শান্ত বয়েস ষোল কি সতের। জন্ম তার যৌনপল্লীতে।

তার মা এখনো যৌনকর্মী। শান্ত জানায় তার মোটেও ভালো লাগে না যৌনপল্লীর পরিবেশ। কিন্ত কি করবো তবু এখানেই থাকতে হচ্ছে,বললেন একটি ছেলেকে ভালো বেসেছিলাম সে কথা দিয়েছিলো বিয়ে করবে,সংসার করবে। আশায় বুক বেধে তার সঙ্গে চলে গিয়েছিলাম পল্লী ছেড়ে,লাভ হয়নি আমার আয়ের টাকা শেষ হবার পর তাড়িয়ে দিয়েছে। আবার এসে এখানেই ঠাই নিতে হয়েছে।

ফরিদপুর শহরের রথখোলা,সিএন্ডবি ঘাট এবং দৌলতদিয়া যৌন পল্লীতে অনুসন্ধান করে পাওয়া গেছে ৩৭ জন যৌনকর্মী আছেন তাদের জন্ম যৌনপল্লীতে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন যাদের মায়েদের ও জন্ম এখানে আবার কেউ কেউ আছেন তাদের মায়েরা বাইরে থেকে এসেছেন। খোজঁ নিয়ে জানা গেছে যৌনপল্লীতে জন্ম এমন মাত্র দুই জন মেয়ে এখন পল্লীর বাইরে সংসার করছে। তারা লালিত পালিত হয়েছে পল্লীর বাইরে যদি ও তাদের মায়েরা এখনো আছে পল্লীতে। বয়স্ক কয়েকজন যৌনকর্মীর সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায় এখানে জন্ম নেয়া মেয়েদের ভাগ্যে সাধারনত বাইরে যাওয়া হয় না কারন তারেদ মায়েরা ও মেয়েদেরকে মনে করে তাদের শেষ জীবনের আয়ের ভরসা।

ওদরে জীবন বন্দি হয়ে যায় ওই যৌনপল্লীর বৃত্তে। সূত্র: সত্যের সহযাত্রী ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.