জীবনের নতুন বাঁক। প্রযুক্তি ব্যবহারে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ইদানীং সবকিছুর গায়ে কীভাবে যেন মুহূর্তেই সেঁটে যাচ্ছে ‘ডিজিটাল’ তকমা! সাম্প্রতিক সময়ে প্রযুক্তি ব্যবহারে এ উন্নয়ন দেখে আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তোলাটা নিশ্চয় অমূলক নয়। কিন্তু সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ফাউন্ডেশন এক জরিপে জানান দিচ্ছে, আমাদের আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তোলাটা অমূলকই বটে! দেশে যখন থ্রিজি-ফোরজি বিষয়ে আলোচনা তুঙ্গে, ঠিক তখনই ওয়ার্ল্ডওয়াইড ফাউন্ডেশনের এ জরিপ আমাদের জন্য বড় এক ধাক্কা বৈকি।
ওয়ার্ল্ডওয়াইড ওয়েবের উদ্ভাবক স্যার টিম বার্নসলির গড়া ফাউন্ডেশনের ওয়েব ইন্ডেক্সে ৬১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৫তম অর্থাৎ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা একটি দেশ।
প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারত ৩৩তম, পাকিস্তান ৪৪তম ও নেপাল ৫২তম অবস্থানে রয়েছে। ওই ফাউন্ডেশন ৬১টি দেশের মানুষের মধ্যে ইন্টারনেটের ব্যবহার এবং সমাজ ও রাজনীতিতে এর প্রভাব বিবেচনায় রেখে চালায় জরিপটি। বিভিন্ন সূচকের মাধ্যমে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিবেচনায় এ মাপকাঠি নির্ধারণ করা হয়। একই সঙ্গে ইন্টারনেটের সংযোগ ও পরিকাঠামোও রাখা হয়েছে সূচক নির্ধারণের ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণের মধ্যে বেশি দামে কম সুবিধা পাওয়া, অদক্ষ মানুষের ইন্টারনেট সুবিধা দেয়া এবং সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব তো রয়েছেই।
এখানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা যথেষ্ট ভালো সুবিধা পান না, ইন্টারনেটের গতি একেবারেই কম; সে সঙ্গে ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া আধিপত্যের কারণে বেশি দামে কম সুবিধা নিতে হচ্ছে ব্যবহারকারীদের।
২০০০ সালে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র এক লাখ, যা মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। ২০০৭ সালে এটি দাঁড়ায় সাড়ে চার লাখে, যা মোট জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। আর ২০১১ সালে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল ৫৫ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে, তবে তা শ্লথগতিতে।
অথচ যুক্তরাষ্ট্রে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৮ দশমিক ৩ শতাংশ, জাপানে এ সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ। প্রতিবেশী দেশ ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১০ দশমিক ২ শতাংশ। এসব পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট আমরা ইন্টারনেট ব্যবহারে ঢের পিছিয়ে।
বলাই বাহুল্য, একবিংশ শতাব্দীর এ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ইন্টারনেট এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ। বিভিন্ন কাজের প্রধান মাধ্যম এটি।
এ প্রেক্ষাপটে ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক দিয়ে বাংলাদেশের যোজন যোজন পিছিয়ে থাকাটা সরকারের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে অবহেলা, অনীহা আর দৈন্যতাই প্রকাশ পায়। অথচ ক্ষমতাসীন সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারের মধ্যে দেশকে ‘ডিজিটাল’ করার প্রতিশ্রুতি। সরকার গত চার বছরে তার কতভাগ পূরণ করতে পেরেছে? বাকি সময়ে কতভাগই বা করতে পারবে? প্রশ্নগুলোর উত্তর অজানাই থাকছে। তবে এ কথা অস্বীকার করা উপায় নেই, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহার না করলেও অন্তত শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নয়, এমন মানুষ কমই আছে।
এটি মূলত হয়েছে মুঠোফোনের কল্যাণেই। এতে দেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সামগ্রিক চিত্র ফুটে ওঠে না। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন তথা ইন্টারনেট সুবিধা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। শুধু মুখে বললেই হবে না, সরকারকে এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে। তবেই হয়তো দেশ একসময় ‘ডিজিটাল’ হতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।