www.theeconomist2011@yahoo.com
মাশরাফির সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। তখন মাশরাফি ২য় বর্ষের ছাত্র। সে ছিলো খেলোয়ার কোটার টেস্ট পরীক্ষার একজন বিচারক। পরিচয়ের শুরুতেই সালাম পেয়েছিলাম সিনিয়র ভাই হিসাবে। তারপর আমি তাকে বললাম আমার ভাই ক্রিকেট খেলে, এখানে টেস্ট দিতে এসেছে, খেলোয়ার কোটার ভর্তিচ্ছু হিসাবে।
সাথে সাথে সে আমার ভাইকে কাছে ডেকে নিয়ে বললো, তুমি কি এখনি টেস্ট দিবে, নাকি একটু সময় নিবে? সিদ্ধান্ত হলো প্রথম লাইনেই দাড়াবে এবং শুরুতেই টেস্ট দিবে। ছয়টি বল করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। স্যাররা সুযোগ না দিতে চাইলেও মাশরাফি ২য় বার আবার সুযোগ দিয়েছিল ২ টি বল করার। এই ২য় টেস্টেই আমার ভাই টিকে যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে । খেলতে থাকে, পড়াশুনাও করতে থাকে।
এই স্মৃতি আমার চোখের সামনে এখনো ভাসে। কতটা অমায়িক একজন খেলোয়ার মাশরাফি।
আজ টিভিতে মাশরাফির কা্ন্না দেখে নিজেকে খুব অসহায় লাগছিলো, আমার যদি কোন সুযোগ থাকতো আমি তাই করতাম। কিন্তু বিভেদে সিদ্ধহস্ত আমরা মাশরাফিকে জবাই করে দিলাম।
মাশরাফিকে বলছি-
তুমি কাদঁছো? তোমার দেশপ্রেম আছে বলেই তোমার চোখে পানি এসেছে।
তুমি অনেকের মতোই পেশাদারী হতে পারোনি, স্বার্থের হিসাব করতে পারোনি। কেবল চেয়েছো নিজদেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে খেলবে, দেশের জন্য কিছু করবে। আমি বিশ্বাস করি, পৃথিবীর যেকোন দলে খেলার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তুমি যদি বাদ পড়তে, তোমার চোখে পানি আসতোনা। কিন্তু গরীব দেশের মানুষের টাকায় গড়া দলের জন্য খেলতে তোমার চোখে পানি এসেছে, আমারও এসেছে। কিন্তু গর্বও হচ্ছে, এই ভেবে যে, তুমি এখনো একজন দেশপ্রেমিক খেলোয়ার, কেবল পেশাদারী খেলোয়ার নও।
তোমার হয়ে এখানের কতজন ব্লগার তাদের মূল্যবান মতামত দিয়েছে, তোমার জন্য কষ্ট পেয়েছে, দুঃখ পেয়েছে। যে ব্লগারদের তুমি চিনোনা, জানোনা। তারা তোমার জন্য প্রতিবাদী হয়েছে। তুমি ইনজুরড, এটা দুর্ভাগ্য, কিন্তু তুমি বড়ই গাছে চড়তে গিয়ে আহত হওনি, তা আমরা জানি। খেলারই অংশ ইনজুরি।
তোমার জন্য আপসোস করছে পুরো বাংলাদেশ, তোমার কান্না আমাদের আহত করেছে, ব্যথিত করেছে। তোমার জন্য তোমার নিজ জেলাবাসী নড়াইলে হরতাল দিয়েছে। তোমাকে মাঠে দেখতে তারা অনেকেই হয়ত ধার করে টিভিও কিনেছিলো-এখন আশাহত হয়েছে। হরতাল যৌক্তিক কিনা-বিবেচ্য বিষয়। কিন্তু নিজের সন্তান যখন বিভেদের শিকার হয়, ন্যায্য পাওনা সম্মান থেকে বঞ্চিত হয়, পিতামাতা যখন নিজ সন্তানকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তে দেখে, তখন অভিভাবকদের মাথা ঠিক থাকে কিনা জানিনা।
তোমার কান্না কিন্তু বিসিবি’র কর্তাদেরকে করেছে আনন্দিত, পুলকিত। কারনটা সবাই জানে। আমরা কার কাছে বিচার চাইবো, কাকে জানাবো?
তবুও চাইবো, তুমি দ্রুত ফিরে আসবে, তোমার যোগ্যতাকে প্রমান করতে, তোমার অসুস্থ্যতাকে যারা পুজিঁ করে উপহাস করছে, তাদের জবাব দিতে। বাংলাদেশ থাকবে তোমার সাথে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।