আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইন্টারনেট জগতে চাইনিজদের স্বনির্ভরতা

ভুল করেছি,প্রায়শ্চিত্য করবো না, তা তো হয় না ছোটবেলায় একটা গল্প পড়েছিলাম। এক চৈনিকের মাছের প্রয়োজন। তিনি এক জেলের দ্বারস্থ হলেন। জেলে তাকে কিছু মাছ দিতে চাইলে তিনি বললেন, তুমি আমাকে জাল দিয়ে কিভাবে মাছ ধরতে হয়, সেটা শিখিয়ে দাও। অন্যথায় প্রতিবারই তো মাছের জন্য তোমার কাছে আসতে হবে।

গল্পের মোরালটা পরিষ্কার-- চাইনিজদের মন মানসিকতাই হচ্ছে সর্বোতভাবে আত্ননির্ভরশীল থাকা। আর এজন্যই তারা বিশ্বজুড়ে একচেটিয়া আধিপত্য করা সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগল ব্যবহার না করে বাইদু (Baidu.com) নামে নিজেদের সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করেছে। আমি চাইনিজদের খুব কমই দেখেছি- কোনো কিছু গুগলে সার্চ দিতে। তারা সব সময় বাইদু ব্যবহার করে। এটা সত্য যে, চাইনিজরা কোনো কিছুর হুবহু কপি করতে ওস্তাদ।

তবে এরা যে শুধু কপি করেই ক্ষান্ত দেয় তা কিন্তু না, বরং ঐ কপি করা জিনিসকে আপডেট করে নতুন নতুন ফিচার যোগ করে। যেমন বাইদু গুগলের আদলে করা হলেও এতে গুগলের মত ইমেজ, ম্যাপ এসব ফিচারের পাশাপাশি Mp3 আছে, শুধু ঐ শব্দ সম্পর্কিত অডিও বিশেষ করে গান শোনার জন্য। বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলা ওয়েবসাইট ইউটিউবের মত তাদের আছে Youku.com ও Soku.com. এতে পাবলিক যেমন আপলোড করে তেমনি ইয়ৌ-খু কর্তৃপক্ষ নিজেরাও আপলোড করে। তারা একটি ইলেকট্রনিক মিডিয়া হিসেবে কাজ করে। চীন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে Youku তে যতটা ভিডিও পাওয়া যায় ইউটিউবে ততটা পাওয়া যায় না।

কারণ চাইনিজরা যা আপলোড করার তা Youku তেই করে। বিশ্বসমাজকে বদলে দিতে সক্ষম সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকের মত তাদের আছে renren. সারা দুনিয়া ফেসবুক ব্যবহার করলেও চীনের অভ্যন্তরে তারা করে না, অবশ্য চীনে ফেসবুক নিষিদ্ধও। তবে এদের রেনরেন যেটা আছে সেটা চাইনিজ ভাষায়। তাই আমরা ভিনদেশিরাসহ চাইনিজরাও বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য প্রক্সি সফটওয়ারের মাধ্যমে ফেসবুকে লগ-ইন করে থাকে। এছাড়াও বিদেশে অবস্হিত চাইনিজ দূতাবাসসমূহের ঐদেশের মানুষের কাছে নিজেদের কার্যক্রম তুলে ধরার জন্য ফেসবুক পেইজ আজে যেমন বাংলাদেশে Cultural Office of the Chinese Embassy in Bangladesh. টুইটারের মত টুইট করার জন্য আছে ওয়েবো [weibo] আর Skype, gtalk, yahoo messenger, msn’র মত আছে QQ. QQ একটা আজব জিনিস।

আমার মত ভিনদেশি যারা চীনে আছেন, সবাই এটা ব্যবহার করেন। Skype এর মত অডিও-ভিডিও কলের পাশাপাশি গ্রুপ ডিসকাশন ফিচার আছে, যা খুবই ইউজার ফ্রেন্ডলি। মজার বিষয় হচ্ছে যে এতে গান শোনা, অনলাইনে গেমও খেলা যায়। আর এতে ফেসবুকেরর মত স্ট্যাটাস দেয়া, ছবি আপলোড করা যায়; সেগুলো শেয়ারও করা যায়। QQ ইংলিশ এবং চাইনিজ ল্যাংগুয়েজ দুই ভার্সনেই আছে।

QQ এর একটা ইউনিক সাউন্ড আছে, চাইনিজদের মোবাইল, আইপ্যাড সবকিছুতেই আছে। বাসে, ট্রেনে, রাস্তাঘাটে সব জায়গাতে টিট..টিট... একটা শব্দ শোনা যায়, QQ -তে মেসেজ আসলে এই টিট...টিট... শব্দ হয়। qq ব্যাবহারের কারনে চাইনিজদের মোবাইল খরচ কম হয়। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানের qq এ নিজস্ব গ্রুপ আছে, যেমন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসমেটদের, ল্যাবমেটদের, অফিসের কলিগদের, এমনকি প্রাইমারী স্কুলের বাচ্চাদেরও qq এ ক্লাসমেট গ্রুপ আছে যার মাধ্যমে একজন আর একজনের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখে। সাথে সময়ও বাঁচে, টাকাও বাঁচে।

যারা গরিব, কম্পিউটার কিনতে পারে না, তারাও মোবাইল qq ব্যবহার করে। ebay, alibaba এসব অনলাইন বাজারের মত এদের আছে taobao. এটা অনলাইনে কেনাকাটার জন্য খুবই নির্ভরযোগ্য, চাইনিজরা সবাই কমবেশি taobao থেকে কেনাকাটা করে থাকে। এরা অনলাইনে কেনাকাটায় এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে যে সামান্য পাঁচ-দশ ইউয়ানের জিনিসও কিনে থাকে এ মাধ্যমে। অবশ্য এতে করে তাদের অনেক সময় বাঁচে। বাংলাদেশে ফেসবুকে বাংলাদেশিদের হোমপেজে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো বিজ্ঞাপন দিচ্ছে আর টাকা চলে যাচ্ছে আমেরিকাতে মার্ক জাকারবাগের কাছে।

কিন্তু চায়নাতে চাইনিজ ওয়েবসাইটগুলোতে বিদেশি কোম্পানিগুলো এসে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, বাইরের টাকা চীনে আসছে। চাইনিজরা gmail, yahoo, hotmail, msn -এ আমাদের মত ই-মেইল অ্যাড্রেস খুলে না, তারা তাদের নিজস্ব চাইনিজ ওয়েবসাইটগুলোতে খুলে। চাইনিজ ওয়েবসাইটগুলোর নাম বেশ মজার, কারণ চাইনিজ অক্ষর [symbol] দিয়ে তো আর http address করা যায় না। তবে বলা যায় না, ভবিষ্যতে ওরা কোনোদিন সম্ভব করেও ফেলতে পারে এটা। তখন ওদের ওয়েবসাইটের নাম http://www.renren.com --না হয়ে পুরোটাই হয়তো চইনিজ শব্দে হবে।

সাধারনত ওদের ওয়েবসাইট গুলোর নাম ইংরেজী অক্ষর a,b,c…. এবং 1,2,3… দিয়ে হয়, যেমন-hao123.com, haoqq.com yyy, zxy, 888 এ ধরনের। ই-মেইল অ্যাড্রেস এর ক্ষেত্রে হয় ……@163.com. অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কেনার ওয়েবসাইটের নাম http://www.12306.cn ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার, মোজিলা ফায়ার ফক্স, গুগল ক্রোম এসব ব্রাউজারের মত এদের আছে soso, qq ব্রাউজিং সফটওয়ার। মজার ব্যাপার হল মোজিলা ফায়ার ফক্স কিংবা গুগল ক্রোমে ওপেনিং পেইজে মাত্র ৮টা ওয়েবসাইট সেফ করে রাখা গেলেও এদেরগুলোতে দৈনন্দিন জীবনে খুব বেশি ইউজ করা হয় এরকম ৩০ টার মতো ওয়েবসাইটের লিংক থাকে। এদের সরকার আর্থিক সহায়তা দিয়ে প্রয়োজনীয় সবকিছুরই নিজস্ব ওয়েবসাইট করায় আইটি সেক্টরে বিপুল সংখ্যক চাইনিজের চাকরি হয়েছে। অর্থাৎ সবক্ষেত্রেই সাবলম্বী হওয়ার দৌড়ে চৈনিক জাতি খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে অন্যদের চেয়ে।

http://www.banglanews24.com আজ আমরা লাখ লাখ বাংলাদেশী ফেসবুক, ইউটিউব ইউজ করি কিন্তু এরা কয়জন বাংলাদেশীকে চাকরি দিয়েছে? এরা মুখে গ্লোবালাইজেশনের কথা বলে মুখে ফেনা তুললেও আদতে কেবল নিজেদের পকেট ভড়ছে। যদিও আমি এই বিষয়ে আগে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম তারপরও একটি অনলাইন পত্রিকার জন্য নতুন করে লেখা এই কলামটা শেয়ার করলাম যাতে ঐ সময় যারা মিস করেছেন তারা পড়তে পারেন। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.