মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক যে কোন সমস্যায় মেইল করুন counselingbd@gmail.com ঠিকানায় শুরুতেই একটা প্রশ্ন। বাংলাদেশে কী এইচআইভি আক্রান্ত মানুষের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে ? ভাবতে থাকুন উত্তরটা। ততক্ষণে আপনদের একটা গল্প বলে নিই। একদিন আমার কাছে ৩৫ বছর বয়স্ক এক ছেলে আসে যে দেশের বাইরে পড়াশোনা করে এবং তার একজন বিদেশি সঙ্গী মেয়ের সাথে নিয়মিত শারীরিক সর্ম্পকের ঘটনা ছিল। কিন্তু মেয়েটি গত এক বছর হলো তাকে ছেড়ে চলে গেছে।
ছেলেটির বিয়ে ঠিক হওয়াতে সে দেশে চলে আসে এবং বিয়ের আগে জাস্ট নিশ্চিত হওয়ার জন্য টেস্ট করায়। যেখানে টেস্টে তার রিপোর্ট পজিটিভ আসে যখন তার বিয়ের আর ১ মাস বাকী। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্য়ের বিষয় সব জানার পরেও মেয়েটি তাকে বিয়ে করে, ছেলেটির শক্ত অমতের পরেও। দু:খের বিষয়, ছেলেটি বিয়ের তিনমাস পর মারা যায়। কারণ তার শারীরিক অবস্থা ছিল খুবই করুন।
(মডুদের বলছি। লেখাটায় কিঞ্চিত ১৮+ বিষয় থাকতে পারে। জানবেন, সেটা বিষয়ের প্রয়োজনে। পাঠক, আপনার বয়স যা'ই হোক লেখাটা পড়ুন। কারণ বিষয়টা সবার জন্যই জরূরী।
পড়তে শুরু করলেই বুঝবেন, এই বিষয়ে আপনি কিছুই জানেন না। যারা শুধুমাত্র মজা বা টিজ করতে চান তাদের জন্য এই পোস্টটি নিষিদ্ধ!! কেননা একেকজন একেক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিবেচনা করে আপনি যদি খারাপ দৃষ্টিতে বিবেচনা করেন তবে সেটা আমার ভালো লাগবেনা। যদি সম্ভব হয়, জনস্বার্থে লেখাটা শেয়ার করুন। তবে লেখার সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এইখানে ডাক্তারী বিষয় খুব বেশী আলাপ করা হয়নি, বরং এইচআইভি সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভংগী এবং বিশ্বাসের উপর জোর দিয়েছিআরেকটা কথা, এই লেখার সকল ঘটনা কিঞ্চিৎ অদল বদল করা হয়েছে গোপনীয়তার স্বার্থে ।
বাস্তবের কারো সথে মেলানো বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। )
হুম! বাংলাদেশে এইচআইভি-র চিকিৎসা আছে। আমি এই চিকিৎসাা নিয়ে কাজ করেছি। আমার অভিজ্ঞতা খুবই মজার . কারণ দেখা গেছে আমি যাকেই বলতাম আমি এইচআইভি আক্রান্ত মানুষকে নিয়ে কাজ করি বেশিরভাগ মানুষই আমার কাছ থেকে সরে বসত
কারণ সবাই জানে যে ছোয়াছুয়ির মাধ্যমে এইচআইভি ছড়ায় না কিন্তু মানুষের এটা একটা ট্যাবু বা বিশ্বাস যা তার আচরণকে প্রভাবিত করে। মজার বিষয় হচ্ছে অনক ডাক্তার বা র্নাস আছেন যারা এইচআইভি আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা করতে চাননা যা স্বাস্থ্য সেবার অবমাননাকর।
ডাক্তার, নার্স বা সমাজের মানুষের এই আচরণ একজন মানুষকে যেমন চিকিৎসা নিতে অনুৎসাহিত করে ঠিক তেমনি আমরা নিজেরাও জানিনা যে এর মাধ্যমে আমরা আমাদের নিজেদেরকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিই। কারণ সমাজের এসকল ট্যাবুর জন্য এইচআইভি আক্রান্ত মানুষরা নীরবে থাকেন আর নিজের সজ্ঞানে বা অজ্ঞাতে অন্যের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ করে থাকেন। যার শিকার কিন্তু অন্যরা নয় নিজেকে দিয়েই চিন্তা করুন। কারণ আমি যত রোগী দেথখছি তারা সবাই বৈষম্যের শিকার ও এই বৈষম্যে কথাটি আমি যত সহজে লিখছি তা কিন্তু অভিজ্ঞতার বিচারে সর্ম্পর্ণ ভিন্ন অভিজ্ঞতা। যারা মোটা স্বাস্থ্যের অধিকারী বা চিকন স্বাস্থ্য তারা শুধু নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা মনে করলেই দেখবেন যে কতটা অসহায় লাগে সেসময়টাতে আর সে জায়গায় এইচআইভি !!! সেতো আরো করুণ অধ্যায়।
আমার ভাই ও বোনরা ভাবতে পারেন আমি এখন এইচআইভি আক্রান্ত মানুষের জন্য সিমপ্যাথি আনার চেষ্টা করছি। কিন্ত আমার অভিজ্ঞতারয় বলে আমি আমার এই ধরণের কাউন্সেলিং এ যতজন ক্লায়েন্ট দেখেছি তার মধ্যে ৯৫% মানুষেরই (যার মধ্যে ছেলে ও মেয়ে উভয়েই অন্তর্ভূক্ত) জীবনে একবার হলেও বৈধ বা অবৈধ যোৗন সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু সবাই কি এইচআইভি আক্রান্ত ছিল?? অবশ্যই না তার মধ্যে ১০ - ১৫% এর এইচআইভি ভাইরাস পাওয়া গেছে। তাই বলে যার এইচআইভি পাওয়া যাবে তাকে আপনি পাপী বা ঘৃণা করবেন আর যাদের একই ধরণের অভিজ্ঞতা আছে কিন্তু এইচআইভি আক্রান্ত নন বলে তারা মহান হয়ে যাবেন। তাই আসলে কিসের থেকে এইচআইভি আক্রান্ত হলো তার চেয়ে বড় বিষয় হলো কিভাবে এর প্রতিরোধ করা যায় বা হলে কি করতে হবে।
বাংলােেশে বিভিন্ন এনজিও আছে যারা এইচআইভি আক্রান্ত মানুষদের নিয়ে কাজ করে থাকে। যেমন আশার আলো, মুক্ত আকাশ বাংলাদেশ, ক্যাপ এবং এগুলো শুধু ঢাকা নয় চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা এসকল বিভাগীয় শহরগুরলাতেও এর চিকিৎসা দিয়ে থাকে।
মজার বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশে যেখানে স্বাস্থ্যসেবার নিম্নমান সেখানে এইচআইভি আক্রান্ত মানুষের জন্য বিশ্ব মানের স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র রয়েছে। এবং সকল সেবাই সর্ম্পূর্ণ ফ্রি
আইসিডিডিআরবি, মহাখালী, ঢাকায় এইচআইভি আক্রান্ত মানুষের জন্য ১০ শয্যা সম্পন্ন ছোট একটি ইউনিট আছে জাগরী' নামে, যেখানে একজন মানুষ সর্ম্পর্ণ গোপনীয়তা রক্ষা করে নিজের শরীরে এইচআইভি আছে কিনা তা পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন ও না থাকলে কিভাবে মুক্ত থাকবেন ও এইচআইভি আক্রান্ত হলে কি করবেন সে বিষয়ে সর্ম্পূর্ণ পরামর্শ পাবেন। ফেইসবুকে জাগরী নামে একটি পেইজ আছে যেখানেও আপনি যোগাযোগ করতে পারেন।
ব্লগে একজন প্রশ্ন করেছিলেন যে ছেলেদের কাছ ধথকে মেয়েদের মধ্যে এইচআইভি আক্রান্ত হয় কিন্তু মেয়েদের কাছ থেকে কিভাবে ছড়ায়?? মেয়েদের মূলত ভ্যাজাইনাল ফ্লুইড খথকে ছেলেদের মধ্যে যায়। কোন মেয়ের বা ছেলের মধ্যে যদি যৌন রো থাকে তবে এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেষি থাকে। কারণ ভাইরাস এসকল রোগের মাধ্যমে সুষ্ট ক্ষতের মাধ্যমে অন্যের শরীরে ছড়িয়ে যায়।
অনেকের একটা ভ্রান্ত ধারণা থাকে যে যৌনকর্মীদের মধ্যে থেকেই বুঝি শুধু এইচআইভি আক্রান্ত হয়, যা পুরোপুরি সত্য নয়। বাংলাদেশে এইচআইভি আক্রান্ত মানুষের মধ্যে ৮০ % (আপেক্ষিক রেশিও) ই অবিবাসন কর্মী।
অবিশ্বাস্য ব্যপার হচ্ছে অভিবাসীরা বেশীরভাগই মধ্যপ্রাচ্যের আরব্য দেশের। বাকীদের মধ্যে ড্রাগ অ্যাডিক্ট, যৌনকর্মী ও অ্ন্যান্য বিষয়গুলো অর্ন্তভূক্ত। এই অভিবাসন কর্মীরা হয়তো রক্ত নিয়েছিল বিদেশে কোন অ্যাক্সিডেন্টেটের কারণে, বেশিরভাগই বাইরে অনিরাপদ যৌন মিলনের ঘটনা ছিল এবং ওরা যখন দেশে আসে তখন তারা তাদের স্ত্রীকে সংক্রমিত করে নিজের অজান্তে। তাই এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি কোন অচীন দেশের মানুষ নন ওরা হয়তোবা আপনারই বাবা-মা, চাচা বা চাচী যারা প্রতিনিয়ত আপনার পাশেই ভালোবাসার পরশ হয়ে আছেন। কিন্তু যখন জানতে পারেন তখন আপনি কি করেন?? একবার ভেবে দেখেছেন কি?? তাই শুধু অন্ধ বিশ্বাসের চেয়ে সঠিক তথ্যটাই জানা জরুরী, কারণ এটাই পারে আপনাকে এই ভয়ংকর সরল এই ভাইরাস থেকে বাঁচাতে।
পর্ব -১ Click This Link
পর্ব- ২: Click This Link
পর্ব- ৩ Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।