সামনে মহা লড়াই পেছনে মৃত্যু!
১.
একুশের বইমেলা : আমাদের প্রাণের মেলা। অমর একুশের চেতনাকে ছড়িয়ে দেবার মেলা। বাংলা ভাষা , বাংলা সংস্কৃতি চর্চার মেলা। একুশের বই মেলা নিয়ে আমাদের কত আবেগ। কত কথা।
কত প্রচার-প্রচারণা। দৈনিক পত্রিকাগুলোতে নতুন বইয়ের বিজ্ঞাপণ। টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাগুলোর জন্য তো মেলায় হাঁটাচলা করাই দায়। সরাসরি সম্প্রচার , মোড়ক উন্মোচন, আলোচনা আরও কতকিছু।
২.
প্রতিটি চ্যানেলের খবরে বই মেলা নিয়ে বিশেষ রিপোর্ট থাকবেই।
সেই রিপোর্টগুলো দেখেছেন! ক্যামেরা যখন উপর থেকে ধরা হয় দুই সারি স্টলের মাঝপথে মানুষের ভয়াবহ ভিড়। যেন চকবাজারে ইফতারীর বাজার! ফার্মগেটের ফুটপাত , গাউছিয়া, গুলিস্তান বঙ্গবাজারেও এত ভিড় হয়না। আহা আমাদের বইপ্রেম কত ঈর্ষণীয়। বইমেলায় চকবাজারের ভিড়! খবরের শিরোনাম আজ ছুটির দিনে বই মেলায় মানুষের ঢল! সবাই ধন্য ধন্য করে । আহা বই মেলায় মানুষের ঢল! এই জাতির উন্নতি আর কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।
যারা যাব যাচ্ছি করছিলেনন শিরোণাম দেখে তাঁরাও পরদিন ছুটে যান মেলায়। ফলাফল পরদিন আবার ভিড় আবার শিরোণাম ‘বই মেলায় মানুষের লম্বা লাইন’ , ‘বই মেলায় প্রবেশের লাইন শহীদ মিনার ছাড়িয়ে গেছে’। আবার চমক। আবার সবার ধন্য ধন্য রব। এই চেইন রিঅ্যাকশন চলছে ; চলবে মেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত।
শুধু এবার নয় গত দশ বছর ধরেই এটা চলছে (আমার দেখা মতে)।
৩.
প্রতিটি চ্যানেলে মেলা নিয়ে এই যে এত রিপোর্ট এত রিপোর্টার কী বলেন তাঁরা এসব রিপোর্টে। দর্শক, ক্রেতা, লেখক, প্রকাশকদের কথা না হয় বাদই দিলাম বাংলা একাডেমী; যাদের হাতে মেলা পরিচালনার ভার তাঁরাও প্রতিবার বলেন মেলায় মানুষের জায়গা সংকুলান হচ্ছেনা । মেলার পরিসর আরো বাড়ানো দরকার। তাঁরা আরও বলেন বই কিনতে হয় ধীরে সুস্থে, দেখেশুনে।
বই কিনতে হয় নেড়েচেড়ে, সময় নিয়ে। বই অন্য আট দশটা পণ্যের মত নয়। আহা কী মধুর কথা! কে আছে এমন মূর্খ যে এর সাথে ভিন্নমত পোষণ করবে?
দেখাই মুরগী খাওয়াই ডাইল, বাড়ি আমার টাঙ্গাইল! আসেন দেখি বাংলা একাডেমীর কর্তারা আমাদের কী খাওয়াচ্ছেন। অন্যপ্রকাশের স্টল থেকে একটা বই কিনে আনুন তো দেখি। আমি টেবিলের তিন হাতের মধ্যে যেতে পারি নাই! অন্যান্য স্টলেও যে গুতাগুতি দাঁড়িয়ে বই দেখার কোন উপায় নাই।
তো উনারা মুখে বললেন কী আর আমদের জন্য ব্যবস্থা করলেন কী! উনারা যে কথাগুলো মুখে বললেন তা কি উনারা অন্তরে বিশ্বাস করেন না? আমার তো মনে হয় করেন ; না করার কোন কারণ তো নাই । কথাগুলো যে সত্যি! তাহলে বিশ্বাস করার পরও তারা আমাদের জন্য সুস্থ পরিবেশের মেলা আয়োজন করছেন না কেন?
জায়গা না বাড়ানোর কারণ হিসেবে অনেকেই বলেন জায়গা কই যে বাড়াবো? ভাল যুক্তি সন্দেহ নেই। কিন্তু আমার মনে হয় জায়গা না থাকা, জায়গা না বাড়ানোর কারণ নয়। কারণ অন্য কিছু।
৪.
ট্রেনে করে যাচ্ছি।
পাশের সিটে বসা এক বৃদ্ধ চাচা চানাচুরওয়ালার কাছ থেকে ২ টাকার চানাচুর কিনলেন। চানাচুরওয়ালা সেই সামান্য চানাচুর এত ছোট কাগজে করে দিল যে কাগজ উপচে চানাচুর পড়ে যায় যায় অবস্থা। বৃদ্ধ চাচা বিরক্ত হয়ে বললেন তোর কাগজের দাম কি এতই বেশি! আর একটু বড় কাগজে দিতে পারস না?
চানাচুর ওয়ালা বলল বড় কাগজে দিলে আপনেই কইবাইন কম দিছি!
ওহ মাই গড! আপেক্ষিক তত্ত্ব কে বেশি বুঝে? আইনস্টাইন না এই চানাচুরওয়ালা!
৫.
আমার ধারণা মেলা আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ এই চানাচুর ওয়ালার কাছ থেকে আপেক্ষিক তত্ত্ব শিখেছেন; আইনস্টাইনের কাছ থেকে না! তাঁদের চাই চমক। চাই শিরোণাম। ‘মানুষের ঢল’ , ‘উপচেপড়া ভিড়’, ‘লম্বা লাইন’।
জায়গা বাড়লেও আমরা ‘উপচাবো’ কি- না? এই প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে নিশ্চিত নন বলেই মেলার জায়গা বাড়ছে না বলে আমার ধারণা।
শেষ কথা: আমার ধারণা মিথ্যে হলে আমিই সবচেয়ে বেশি খুশি হব!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।