বিশ্বের নিপীরিত মানুষের শত্রু একটাই এবং তদের ধরন একই, এরা রয়েছে অনেক দূরে। এই শত্রুরা রয়েছে যেখানে থেকে পুঁজিবাদী এলিটদের জন্ম, যেখান থেকে এরা সরকার প্রধানদের ব্যাবহার করে তাদের শক্তি প্রেরণ করে, আর ঐ সরকাররা তাদের তাঁবেদারি করে লাভবান হয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পুরস্কার প্রবর্তিত হয়েছে মানব কল্যানের স্বীকৃতি দানের উদ্দেশ্যে। পুলিতজার পুরস্কার, লেলিন শান্তি পুরস্কার, নেহেরু পুরুস্কার, জুলিও কুরি শান্তি পদক, আগা খান পুরস্কার, হিজরী পুরস্কার, ম্যাহসেস পুরস্কার ইত্যাদি।
সত্যি বলতে কি ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে এ রকম আরও অনেক পুরস্কার প্রবর্তিত হবার কথা আমরা জানতে পারবো।
তবে মান-মর্যাদার দিক থেকে এক কথায় সব দিক থেকেই যে পুরস্কারটি বিশ্বশ্রেষ্ঠ হিসাবে এক বাক্যে স্বীকৃত তা হচ্ছে আলফ্রেড নোবেল প্রবর্তিত ‘নোবেল পুরস্কার’। বিশ্বের সবচেয়ে সন্মান জনক পুরস্কার বলেই আখ্যা দেয়া যায়। সচেতন লোক মাত্র অধীর আগ্রহে থাকেন এ বছর নোবেল পুরস্কার কে কে পাবেন।
আমরা আলফ্রেড নোবেলের কর্মের দিকে যাবো না। কারন তার কর্ম সম্পর্কে আমরা সবাই কম বেশী জানি।
নোবেল পুরস্কারের নিয়ম নীতি
নোবেল পুরস্কার গঠনততন্ত্রের স্পষ্ট লেখা রয়েছেঃ To those who during the preceding year shall have conferred the greatest benefit on mankind। কোন প্রতিষ্ঠান কোন বিষয়ে পুরস্কার দেবে সে বিষয়টি ও নির্দিষ্ট রয়েছে নীতিমালায়ঃ the Royal Swedish Academy of Science-Physics, Chemistry; The Royal Caroline Institute-Physiology or Medicine; The Swedish Academy-Literature; The Norwegian Nobel Committee appointed by the Norwegian Starting (Parliament)-Peace।
নোবেল উইল অনুসারে পদার্থবিদ্যা, চিকিৎসা, রসায়ন, শান্তি, সাহিত্যে- এই পাঁচটি বিষয়ে পুরস্কার দেয়ার কথা থাকলেও পরবর্তিতে Bank of Sweden-এর আর্থিক সহযোগীতায় অর্থনীতি বিষয়েও নোবেল পুরস্কার দেয়ার কথা ঘোষনা করা হয়। ১৬৬৯ সন থেকে অর্থনীতি সহ মোট ৬টি বিষয়ে নোবেল দেয়া শুরু হয়। প্রতিটি পুরস্কারে রয়েছে একটি সোনার পদক, একটি সার্টিফিকেট ও মোটা অঙ্কের অর্থের চেক।
প্রতি বপছর ১ ফেব্রুয়ারী থেকে প্রত্যেক বিষয়ের জন্য নির্ধারিত কমিটি নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়পত্র গ্রহন করে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে কমিটি তাদের সুপারিশমালা চুড়ান্ত করে। পুরস্কারের জন্য চুরান্ত নীতিমালা অবশ্যই ১৫ নভেম্বরের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। পুরস্কার সংক্রানত যাবতীয় কর্মকান্ডের প্রতিটি স্তরেই সার্বিক গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়। একটি বিষয়ে সর্বাধিক তিনজনকে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার দেওয়া যাবে।
এজন্য পুরস্কারের জন্য নির্ধারিত অর্থ সবার মাঝে সম ভাবে বন্টিত হবে। কেউ যদি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন তবে পুরস্কারের অর্থ মূল তহবিলে জমা হবে। আবার কোন দেশের সরকার সে দেশের নির্বাচিত নোবেলজয়ীদের পুরস্কার গ্রহনের উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন তবে সে ক্ষেত্রে নোবেলজয়ী ব্যাক্তি পরবর্তিতে সুবিধাজনক সময়ে পুরস্কার গ্রহন করতে পারবেন। উল্লেখ করা যেতে পারে ১৯৩৭ সনে হিটলার জার্মানদের নোবেল পুরস্কার গ্রহনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। নোবেল পুরস্কার দেয়ার সময় নির্বাচিত ব্যাক্তি কোন দেশের নগরিক তা জাতীয়তার হিসেবে বিচার করা হবে।
যেমন, আইনস্টাইন জার্মানীতে জন্মগ্রহন করলেও ২৯২১ সনে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পান তখন তিনি ছিলেন সুইজারল্যান্ডের নাগরিক। কোন মৃত ব্যাক্তি পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হবেন না, অবশ্য কেউ যদি নির্বাচিত হবার পর মারা যান তবে তা শিথিলযোগ্য। জাতি সঙ্ঘের পাক্তন মহাসচিব সুইডেনের দ্যাগ হ্যামারশেল্ড ১৯৬১ সালে সাহ্নতির জন্য নোবেল পান এবং দুর্ভাগ্যবশত এ বছরই কঙ্গোতে এক শান্তি মিশনে যাত্রা কালে উত্তর রোদেশিয়ার নিকট বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান।
প্রথমবারের বিজয়ী
যে কোন কাজের সুত্রপাতের পর্বটি আলাদা বোইশিষ্ঠসম্পন্ন হয়ে থাকে। এভারেস্ট বিজয় অনেকেই করেছেন।
কিন্তু তাদের কজনকে আমরা মনে রেখেছি। চাঁদে অনেকেই গিয়েছেন আর্মস্ট্রং, অলড্রিন, কলিন্স ছারা কারো নাম মনে করতে পারেন কিনা দেখুন তো। নোবেল পুরস্কারের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়।
এপর্যন্ত ছয় শতাধিক ব্যাক্তিদের ভেতরে প্রথম নোবেলজয়ী ফ্রান্সের সুলি প্রুধোম সাহিত্যে, রসায়নে নেদাল্যান্ডের জ্যাকোবাস ভ্যান্ট হফ, পদার্থবিদ্যায় জার্মানির উইলহেম কনরেড রন্টজেন, চিকিৎসায় জার্মানির এমিল ফন, শান্তিতে সুইজারল্যান্ডের জ্যা হেনরি ডুনান্ট (রেড ক্রসের প্রতিষ্ঠাতা) ও ফ্রান্সের ফ্রেড্রারিক প্যাসী এবং অর্থনীতিতে নেদাল্যান্ডের জান টিন বার্জেন ও নরওয়ের রাগনার ফ্রিশ।
একাধিকবার পুরস্কার বিজয়ী
একবার নোবেল পাওয়াও যেখানে দুঃসাধ্য সেখানে দুবার পাওয়াটাকে কি বলবেন আপনি।
শোনা যায় ১৯৯০ সালের সাহিত্যে নোবেল জয়ী মেক্সিকান লেখক অক্টাভিও পাজ প্রায় ১০ বছর যাবত শুনে আসছিলেন তিনি নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন। বার বার আশা ভঙ্গের বেদনায় তিনি নোবেল পাওয়ার আশা ছেরে দিয়েছেন।
এ ক্ষেত্রে যার নামটি সবার প্রথমে আসবে তিনি হলেন মাদাম কুরি। ১৯০৩ সালে পদার্থে অ্যান্টনি হেনরী নেকরেল ও স্বামী পিয়রে কুরির সঙ্গে যৌথভাবে এবং দ্বিতীয়বার রসায়নে ১৯১১ সালে একক ভাবে পুরস্কার পান তিনি। এই তালিকায় আছেন আমেরিকার লিনাস পলিং তিনি ১৯৫৪ সালে রসায়নে ও ১৯৬২ সালে শান্তিতে মোবেল লাভ করেন।
ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যাক্তি যিনি দু’বারই এককভাবে পুরস্কার পান। যৌথভাবে দুবার পুরস্কার পেয়েছেন আমেরিকার জন বার্ডিন। ১৯৫৬ ও ১৯৭২ সালে। তবে সর্বাধিক নোবেল পেয়েছে তিনবার। এটি একটি সংস্থা।
নাম ইন্টারন্যাশন্যাল রেড ক্রস কমিটি। ১৯১৭,১৯৪৪,১৯৬৩ সাল।
এ ছারাও বৃটেনের বিজ্ঞানী ফ্রেড্রারিক স্যাংগার ১৯৫৮ ও ১৯৮০ সালে রসায়নে নোবেল জেতেন।
স্থগিত পুরস্কার
বিভিন্ন বছরে বিভিন্ন কারনে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয় নি। এসব কারনের মধ্যে রয়েছে বিশ্বযুদ্ধ, যোগ্য লোক না পাওয়া।
সন গুলো হলো সাহিত্যে- ১৯১৪,১৯১৮,১৯৩৫,১৯৪০,১৯৪১,১৯৪২; রসায়নে- ১৯১৬,১৯১৭,১৯১৯,১৯২৪,১৯৩৩,১৯৪০,১৯৪১,১৯৪২;পদার্থে- ১৯১৬,১৯৩১,১৯৩৪,১৯৪০,১৯৪১,১৯৪২ এবং শান্তিতে- ১৯১৪,১৯১৫,১৯১৬,১৯১৮,১৯২৩,১৯২৪,১৯২৮,১৯৩২,১৯৩৯,১৯৪০,১৯৪১,১৯৪২,১৯৪৩,১৯৪৮,১৯৫৫,১৯৫৬,১৯৬৬,১৯৬৭,১৯৭২। অর্থাৎ সাহিত্যে ৭ বার, পদার্থে ৬ বার, চিকিৎসায় ৬ বার ও শান্তিতে ১৯ বার।
উপমহাদেশের বিজয়ীরা
প্রথমেই আসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম, চন্দ্রশেখর ভেংকট রমন (১৯৩০, পদার্থ), হরগোবিন্দ খোরানা (১৯৬৮, চিকিৎসা), মাদার তেরেসা (১৯৭৯, শান্তি), আব্দুস সালাম (১৯১০, পদার্থ), অমর্ত্য সেন (১৯৯৮, অর্থনীতি), ড. ইউনুস ও গ্রামীন ব্যাঙ্ক (২০০৬, শান্তি)। এদের ভেতরে মাদার তেরেসা বিদেশীনি, হরগোবিন্দ খোরানা মার্কিন মুল্লুক থেকে।
মার্কিন দাপট
নোবেল পুরস্কারের তালিকায় চোখ বোলালে দেখা যাবে এখানে মার্কিনদেরই দাপট বেশী।
১৯৭৬ সালে ৫টি বিষয়ে (শান্তি বাদে) ৭ জন আমেরিকান নোবেল পান-নোবেলের ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল। এর আগে একই বছরে একই দেশ এত অধিক সংখ্যক ব্যাক্তি কখনও নোবেল পাননি। বিভিন্ন বিভাগে এখন পর্যন্ত ৩১৮ বার আমেরিকা নোবেল জয় করেছে
কুরি পরিবারের পুরস্কার
কুরি পরিবারের চারজন সদস্য নোবেল পেয়েছেন। প্রথমেই আসে মাদাম কুরির নাম। তার সম্পর্কে আমরা আগেই আলোচনা করেছি।
এর পরে পেয়েরে কুরি।
এবং তাদের যোগ্য সন্তান জুলিয়েট কুরি তার স্বামী ফ্রেড্রারিকের সাথে যৌথ পুরস্কার পান ১৯৩৫ সালে রসায়নে।
প্রত্যাখ্যান
নোবেল পাওয়াটা যেখানে সৌভাগ্যের ব্যাপার, সেখানে কেউ কি নোবেল প্রত্যাখ্যান করতে পারে? হ্যাঁ পারে। ১৯৭৩ সালে ভিয়েতনামের লি ডাক থো শান্তিতে হেনেরি কিসিঞ্জারের সাথে যৌথ ভাবে পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। এই কিসিঞ্জারই বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময়ে বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিলেন এবং বলেছিলেন এই দেশটি একটি তলা ছাড়া থালা।
থো বলেন ‘তাকে যে চুক্তির কারনে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে সে চুক্তি তো বাস্তবে কোন কাজেই আসে না তবে তিনি কেন পুরস্কারের অর্থ কাজে লাগাবে?’ আবার হিটলার নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে ১৯৩৭ সালে নোবেল বর্জন করেন। এই তালিকায় আছেন রিচার্ড কুহন (১৯৩৮), এডলফ বুন্টেন্ট (১৯৩৯), গারহার্ড ডুমেক (১৯৩৯)। সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রত্যাখ্যানকারী রাশিয়ার বরিস পাস্তারনাক (১৯৬৪)। শান্তিতে ভিয়েতনামের লি ডাক থো।
পিতা পুত্র
নোবেলের ১১০ বছরের ইতিহাসে এ পর্যন্ত মাত্র ১০ জন পিতা-পুত্র নোবেল পেয়ে স্বতন্ত্র স্থান দখল করে রেখেছে।
এদের মধ্যে পদার্থে ৮ জন। রসায়নে ১ জন ও চিকিৎসায় ১ জন। পিতা পুত্র হিসাবে হচ্ছেন-উইলিয়াম ব্রাগ ও লরেঞ্জ ব্রাগ, জোসেফ থমসন ও জর্জ থমসন, নীলস বোহর ও এগে বোহর, উলার কেলপিন ও উলফ কেলপিন, অকাই সিগবাহন ও কার্ল সিগবাহন।
পরিশেষ
এ পর্যন্ত ২০টি সংস্থা ও ৮১৩ জন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।