আল্লাহ ছাড়া আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই । হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল । স্ত্রী নিঃসন্দেহে স্বামীর শাসনাধীনে স্বামীর অধীনতা স্বীকার করে চলবে । তবে এমন শাসনাধীন নয় , যেমন দাস-দাসী ও চাকর-চাকরানী হয়ে থাকে । বরং স্বামীর সাথে স্ত্রীর সম্পর্ক হবে প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ক ।
আর যেখানে প্রেম ভালোবাসা থাকবে , সেখানে বিভিন্ন ধরনের মান অভিমান এবং আত্নত্যাগ থাকা স্বাভাবিক ।
অনেক পুরুষ স্ত্রীর উপর দাস-দাসীর ন্যায় আচরণ করে যা চরম নিবুদ্ধিতা এবং নির্দয়তা ছাড়া আর কিছু নয় । তাদের বুঝা উচিত যে স্ত্রী আল্লাহ পাকের এক অসীম নেয়ামত । আল্লাহ পাক দয়া করে তাকে এ নেয়ামত দান করেছেন । যারা আল্লাহর নেয়ামতের সঠিক ব্যবহার জানেনা বরং তার অবহেলা করে আল্লাহপাক তাদের থেকে নেয়ামত ছিনিয়ে নিতে পারেন এবং তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিতে পারেন ।
স্বামী যেমন স্ত্রীকে শরীরের অর্ধ অঙ্গ হিসেবে আদর সোহাগ এবং সম্মান করে চলবে তেমনি স্ত্রীও স্বামীকে অভিভাবক এবং কর্তা হিসেবে সম্মান এবং সকল বিষয়ে অগ্রাধিকার দিবে । স্ত্রীর যেমন উচিত হবেনা স্বামীর উপর অন্যায় দাবী করা বা তার অবাধ্য হওয়া তেমনি স্বামীর উচিত হবেনা স্ত্রীকে সব সময় সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে তার দাবী দাওয়ার প্রতি কোন মনোযোগ না দেওয়া ।
বস্তুত স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক এক নিবিড় ও পবিত্রতম সম্পর্ক । যে সম্পর্কের সুবাদে আমাদের আদর্শ মহানবী (সাঃ) এর সাথে তার মহীয়সী স্ত্রী গণ বিভিন্ন সময় মান-অভিমান করতেন আবার সমকক্ষ ও বন্ধুত্বসূলভ আচরণও করতেন । অথচ উনি হলেন সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ।
সম্রাটসূলভ ক্ষমতা ও প্রভাব তার মধ্যে পূর্ণমাত্রায় ছিলো । অথচ তিনি তার স্ত্রীদের উপর কোন ক্ষমতা ও প্রভাব খাটাতেন না ।
স্ত্রী স্বামীর সমকক্ষ নয়ঃ
নারী ও পুরুষের পার্থক্য সৃষ্টিগত । সুতরাং নারীদেরকে পুরুষদের সমতূল্য করা কিছুতেই সম্ভব নয় । সৃষ্টিগত গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যে পুরুষ নারীর চেয়ে শ্রেষ্ঠতর ।
জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা, সাহস-ধৈর্য্য, বীরত্ব, দৈহিক শক্তি, নেতৃত্ব ও কর্তত্ব এর প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরুষ নারী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ । তবে আবার নারী সন্তান জন্মদাত্রী এবং মমতাময়ী মা । যেদিক দিয়ে নারী পুরুষ অপেক্ষা এগিয়ে । কিন্তু আল্লাহ সুবহানাতায়ালা সৃষ্টির মধ্যে সামন্জস্য বিধানের জন্য পুরুষকে নারীর উপর কর্তৃত্ব দিয়েছেন । যাতে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় থাকে এবং দুজনেই কর্তৃত্ব দাবী করে সংসারকে অশান্তিময় করে না তোলে ।
এটা কখনো হতে পারে না যে একটি দলের মধ্যে সবাই নেতা । তাহলে কেউ কারো কথা শুনবেনা - বিশৃংখলা এবং অশান্তি হবে নিত্য দিনের সঙ্গী। সংসারও একটি একাধিক মানুষের মধ্যে সম্পর্কের একটি ক্ষেত্র যেখানে একজন নেতা থাকবে এবং তার অনুগত থেকে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হবে । এজন্য আল্লাহতায়ালা কুরআনে পুরুষদের কর্তৃত্ব দিয়ে বলেছেন,
"পুরুষদের মর্যাদা নারীদের উপরে । " (সূরা বাকারঃ ২২৮)
আবার নারীকে পুরুষের শাসনাধীন করার অর্থ এই নয় যে তাকে পুরুষের দুর্ব্যবহার ও দুঃশাসনের শিকার বানানো হয়েছে কিংবা তাকে পুরুষের কৃতদাসী বানানো হয়েছে ।
যে পুরুষ নারীর সাথে অন্যায় এবং অনৈতিক নিষ্ঠুর আচরণ করে সে পুরুষ নামের কলংক । তার যোগ্যতা নেই কোন নারীকে তার অধিকারে রাখা । ইসলামের ইতিহাসে কোথাও নাই কোন নবী-রাসূল এবং সাহাবী নারীর সাথে অন্যায় আচরণ করেছেন । আল্লাহতায়ালা নারীকে পুরুষের শাসনাধীনে রেখে তাদের নিরাপত্তা দান করেছেন । পুরুষকে দায়িত্ব দিয়েছেন তার জীবিকা, খোরপোষ এবং নিরাপত্তা প্রদান করা ।
প্রতিদানে নারী পুরুষের আনুগত্য মেনে নিবে এবং তাকে ভালোবাসবে ।
মহান আল্লাহ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে সম্পর্ক সৃষ্টি করে দিয়েছেন , তা শাসক-শাসিতেরই নয় বরং তা প্রেম ও ভালোবাসার সম্পর্ক । প্রয়োজনবশতঃ হয়তো স্বামী স্ত্রীকে শাসন করবে তবে অবশ্যই সীমারেখা লংঘন করবেনা । বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ভালো বোঝাপড়া থাকলে আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব । হয়তো কাউকে একটু ছাড় দিতে হবে ।
স্বামী যেমন স্ত্রীর মনের চাহিদা বুঝতে তেমনি স্ত্রীও স্বামীর ক্ষমতা ও অব্স্হাটা অনুধাবন করবে । প্রত্যেকে আপন আপন অধিকার ও কর্তব্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে আচরণ করলে সংসারে কোন অশান্তি হওয়ার কথা নয় ।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেনঃ
"স্ত্রীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন যাপন করো । অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ করো, তাহলে হয়তো তোমরা এমন এক বস্তুকে অপছন্দ করছো, যাতে আল্লাহ অনেক কল্যাণ রেখেছেন । " (সূরা নিসা/১৯)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত , রাসূলূল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হলো , সর্বোত্তম নারী কে ? উত্তরে তিনি বললেন, ঐ নারী যাকে দেখলে তার স্বামী আনন্দিত হয় , তাকে কোন আদেশ করলে তা পালন করে এবং নিজের ও নিজের সম্পদ সম্পর্কে এমন কিছু করে না যার কারণে তার স্বামী তার উপর অসন্তুষ্ট হয় ।
(নাসায়ী) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।