আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বাঙালি বিপ্লবী নেতা যতীন্দ্রনাথ মুখোপধ্যায়ের (বাঘা যতীন) মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

আমি সত্য জানতে চাই যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ছিলেন একজন বাঙালি ব্রিটিশ-বিরোধী বিপ্লবী নেতা। তিনি বাঘা যতীন নামেই সকলের কাছে সমধিক পরিচিত। বাঘা যতীনের জন্ম হয় কুষ্টিয়া জেলার কয়া গ্রামে। (অধুনা কুষ্টিয়া জেলা, বাংলাদেশ) তাঁর পিতার নাম উমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং মাতার নাম শরৎশশী। ঝিনাইদহ জেলায় পৈত্রিক বাড়িতে তাঁর ছেলেবেলা কাটে।

৫ বছর বয়সে তাঁর পিতার মৃত্যু হয়। মা এবং বড় বোন বিনোদবালার সাথে তিনি মাতামহের বাড়ি কয়াগ্রামে চলে যান। ১৮৯৫ সালে এন্ট্রান্স পাস করে তিনি কলকাতা সেন্ট্রাল কলেজে (বর্তমানের ক্ষুদিরাম বোস সেন্ট্রাল কলেজ) ভর্তি হন। কলেজের পাশেই স্বামী বিবেকানন্দ বাস করতেন। বিবেকানন্দের সংস্পর্শে এসে যতীন দেশের স্বাধীনতার জন্য আধ্যাত্মিক বিকাশের কথা ভাবতে শুরু করেন।

এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাস করার পর তিনি সাঁটলিপি ও টাইপ শেখেন এবং পরবর্তী সময়ে বেঙ্গল গভর্নমেন্টের স্ট্যানোগ্রাফার হিসেবে নিযুক্ত হন। যতীন ছিলেন শক্ত-সমর্থ ও নির্ভীক চিত্তধারী এক যুবক। অচিরেই তিনি একজন আন্তরিক, সৎ, অনুগত এবং পরিশ্রমী কর্মচারী হিসেবে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেন। একই সঙ্গে তাঁর মধ্যে দৃঢ আত্মমর্যাদা ও জাতীয়তাবোধ জন্মেছিল। পরোপকার, সত্যনিষ্ঠা, নির্ভীক চিন্তায় ও কর্মে অভ্যস্ত যতীন পড়াশোনা ও খেলাধুলার পাশাপাশি কৌতুকপ্রিয়তার জন্যও সমাদৃত ছিলেন।

১৯০০ সালে যতীন ইন্দুবালাকে বিয়ে করেন। তাঁদের ৪টি সন্তান হয় - অতীন্দ্র (১৯০৩-০৬), আশালতা (১৯০৭-৭৬), তেজেন্দ্র (১৯০৯-৮৯) এবং বীরেন্দ্র (১৯১৩-৯১)। যতীন শৈশব থেকেই শারীরিক শক্তির জন্য বিখ্যাত ছিলেন। শুধুমাত্র একটি ছোরা নিয়ে তিনি একাই একটি বাঘকে হত্যা করতে সক্ষম হন বলে তাঁর নাম রটে যায় বাঘা যতীন। ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।

১৯০৩ সালে যোগেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণের বাড়িতে শ্রী অরবিন্দের সাথে পরিচিত হয়ে যতীন বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে জড়িত হন। সরকারী নথিপত্রে যতীন পরিচিত হন শ্রী অরবিন্দের দক্ষিণহস্ত হিসাবে। অরবিন্দ ঘোষের সংস্পর্শে এসে যতীন শরীর গঠন আখড়ায় গাছে চড়া, সাঁতার কাটা ও বন্দুক ছোঁড়ার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। যুগান্তর দলে কাজ করার সময় নরেনের (এম.এন রায়) সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় এবং অচিরেই একে-অপরের আস্থাভাজন হন। বাঘা যতীন ছিলেন বাংলার প্রধান বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তর দলের প্রধান নেতা।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পূর্বে কলকাতায় জার্মান যুবরাজের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে তিনি জার্মানি থেকে অস্ত্র ও রসদের প্রতিশ্রুতি অর্জন করেছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জার্মান প্লট তাঁরই মস্তিস্কপ্রসূত। সশস্ত্র সংগ্রামের এক পর্যায়ে সম্মুখ যুদ্ধে উড়িষ্যার বালাসোরে তিনি গুরুতর আহত হন এবং ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯১৫ মাত্র ৩৫ বছর বয়সে বালাসোর হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। আজ এই মহান বিপ্লবী নেতার মৃত্যুদিবস। মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর জন্য শ্রদ্ধাঞ্জলি  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.