আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রাচীন বিশ্বের সপ্তাশ্চর্য

চূপ , প্রকৃতি বিরক্ত হচ্ছে। ঐতিহাসিক হিরোডোটাস (৪৮৪ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ–সি এ. ৪২৫ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ), এবং সাইরিনের শিক্ষাবিদ ক্যালম্যকাস (সি এ. ৩০৫-২৪০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দ) আলেক্সান্ড্রীয়ার প্রদর্শণশালায় বিশ্বের সাতটি আশ্চর্যের একটি তালিকা প্রস্তুত করেন কিন্তু সেটির উল্লেখ ব্যতিত তাঁদের প্রকৃত লিপিটির সংরক্ষণ সম্ভব হয়নি। ১.পিরামিড : খুফু'র পিরামিড পিরামিড পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি। প্রাচীন মিশর শাসন করতেন ফারাও রাজারা। তাদের কবরের উপর নির্মিত সমাধি মন্দিরগুলোই পিরামিড হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

মিসরে ছোটবড় ৭৫টি পিরামিড আছে। সবচেয়ে বড় এবং আকর্ষনীয় হচ্ছে গিজা'র পিরামিড যা খুফু'র পিরামিড হিসেবেও পরিচিত। এটি তৈরি হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫০০০ বছর আগে। এর উচ্চতা প্রায় ৪৮১ ফুট। এটি ৭৫৫ বর্গফুট জমির উপর স্থাপিত।

এটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল ২০ বছর এবং শ্রমিক খেটেছিল ১ লাখ। পিরামিডটি তৈরি করা হয়েছিল বিশাল বিশাল পাথর খন্ড দিয়ে। পাথর খন্ডের এক একটির ওজন ছিল প্রায় ৬০ টন, আর দৈর্ঘ্য ছিল ৩০ থেকে ৪০ ফুটের মত। এগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল দূর দুরান্তের পাহাড় থেকে। পাথরের সাথে পাথর জোড়া দিয়ে এমনভাবে পিরামিড তৈরি করা হত যে, একটি পাথর থেকে আরেকটি পাথরের মাঝের অংশে একচুলও ফাঁক থাকত না।

২.ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান বা ঝুলন্ত বাগান ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান, বিংশ শতাব্দীর চোখে ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান বা ঝুলন্ত বাগান (ইংরেজি: Hanging Gardens of Babylon) ইরাকের ইউফ্রেটিস নদীর তীরে খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে নির্মিত হয়। সম্রাট নেবুচাদনেজার সম্রাজ্ঞীর প্রেরণায় এটি নির্মাণ করেন। প্রথমে নির্মাণ করা হয় বিশাল এক ভিত, যার আয়তন ছিল ৮০০ বর্গফুট। ভিতটিকে স্থাপন করা হয় তৎকালীন সম্রাটের খাস উপাসনালয়ের সুবিস্তৃত ছাদে। ভিত্তি স্থাপন করার পর মাটি থেকে এর উচ্চতা দাড়িয়েছিল ৮০ ফুট।

এই ভিত্তির উপরেই নির্মিত হয়েছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ এবং বিস্ময়কর পুস্পবাগ। ৪০০০ শ্রমিক রাতদিন পরিশ্রম করে তৈরি করেছিল এই বাগান। বাগান পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত ছিল ১০৫০ জন মালী। ৫ থেকে ৬ হাজার প্রকার যুলের চারা রোপণ করা হয়েছিল এই ঝুলন্ত বাগানে। ৮০ ফুট উচুতে অবস্থিত বাগানের সুউচ্চ ধাপগুলোতে নদী থেকে পানি উঠানো হত মোটা পেচানো নলে সাহায্যে।

৫১৪ খ্রিস্টাব্দে পার্শ্ববর্তী পারস্য রাজ্যের সাথে এক ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে এই সুন্দর উদ্যানটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। ৩.অলিম্পিয়ার জিউসের মূর্তি ১৫৭২ সালে চিত্রিত জিউসের মূর্তির নির্মান জিউসের মূর্তি পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে একটি। ফিডিয়াস খ্রিস্টপূর্ব ৪৩৫ অব্দে মূর্তির নক্সা করেন। যে দ্বীপের উপর মূর্তিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার পুরোটা জুড়ে এর ভিত্তি তৈরি করা হয়েছিল। এটি ছিল ৪০ ফুট উচু ও ৬ ফুট ব্যাসার্ধের।

সাতজন মিস্ত্রী আড়াই বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে মুর্তিটি তৈরি করেন। খ্রিস্ট ধর্মের প্রসারের সাথে সাথে ধ্বংস করে ফেলা হয় মুর্তিটি। ৪.আর্টেমিসের মন্দির তুরস্কে অবস্থিত আর্টেমিসের মন্দিরের ধ্বংসস্তুপ আর্টেমিসের মন্দির , যা ডায়নার মন্দির নামেও পরিচিত, একটি গ্রিক মন্দির যা নির্মান করা হয়েছিল খ্রীস্টপূর্ব ৫৫০ অব্দে এফিয়াস (বর্তমান তুরস্ক) অঞ্চলে। ৩৫৬ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দে এক ভয়াবহ অগিকান্ডে এই মন্দিরটি ধ্বংস হয়ে যায়। ৫.হ্যালিকারনেসাসের সমাধি মন্দির হ্যালিকারনেসাসের সমাধি মন্দিরের কাল্পনিক চিত্র ৬.রোডস এর মূর্তি গ্রোলিয়ের সমাজের ১৯১১ সালে প্রকাশিত বুক অব নলেজ থেকে নেয়া রোডসের মূর্তি ঈজিয়ান সাগরে অবস্থিত সর্ববৃহৎ দ্বীপটির নাম রোডস।

খ্রিস্টপূর্ব ২৮০ অব্দে এই দ্বীপে নির্মিত হয় এক বিশাল মূর্তি। এতে সময় লাগে ১২ বছর। এই মূর্তি দুই স্তরে বিভক্ত। প্রথম স্তরটি ছিল ৪০ মেট্রিক টন ওজন বিশিষ্ট পাথরের ভিত্তি। এই ভিত্তির অপ্রে তৈরি হয়েছে মূর্তির মূল কাঠামো।

মূর্তিটি তৈরি করা হয়েছিল তামা দিয়ে, প্রয়োজন সাপেক্ষে কিছু লোহাও ব্যবহার করা হয়েছিল। ব্যবহৃত তামার ওজন ছিল ২৫০ মেট্রিক টন। এর উচ্চতা ছিল ১২০ ফুট। খ্রিস্টপূর্ব ২২৮ অব্দে এক প্রলংকরী ভূমিকম্পে মূর্তিটির এক পা ভেঙ্গে যায়। ষষ্ঠ শতাব্দীর মাঝামাঝি সারাসিন জাতি রোডস দ্বীপ দখল করে মূর্তিটি ধ্বংস করে দেয়।

৭.আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘর আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘরের কাল্পনিক বর্ননা আলেকজান্দ্রিয়ার বাতিঘর (ইংরেজি: Lighthouse of Alexandria) খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় তৈরি করা হয়। প্রথমে বন্দরের পরিচিতি চিহ্ন হিসেবে তৈরি করা হলেও পরবর্তীতে এটী বাতিঘর হিসেবে কাজ করে। বাতিঘরের মূল ভিত্তিভূমির আয়তন ছিল ১১০ বর্গফুট। উচ্চতা ছিল ৪৫০ ফূট। মূল দেহের গোটা শরীরে একটা প্যাচানো সিড়ি ছিল।

এই সিড়ি বেয়েই উঠতে হত। বাতিঘর তৈরির সময় ৪৫০ ফুট উচুতে যে বিশাল অগ্নিকুন্ড জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল, ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পূর্বে সেটি আর কেউ নিভতে দেখেনি। ৫০ মাইল দূর থেকেও বাতিঘরটি দেখা যেত। দ্বাদশ শতকে এক প্রবল ভূমিকম্পে বাতিঘরটি ভেঙ্গে পড়ে। --- ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।