সিন্ধু সভ্যতা ছিল একটি ব্রোঞ্জ যুগীয় সভ্যতা (৩৩০০ – ১৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ । ) এই সভ্যতার কেন্দ্র ছিল মূলত ভারতীয় উপমহাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত সিন্ধু নদ অববাহিকা । এই সভ্যতা হরপ্পা সভ্যতা নামে পরিচিত । ১৯২০-এর দশকে তদনীন্তন ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে এই শহরটি আবিষ্কৃত হয় । ১৯৯৯ সালেও এই সভ্যতার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নসামগ্রী ও আবিষ্কৃত হয়েছে ।
১৮৭২-৭৫ সালে আলেকজান্ডার কানিংহাম প্রথম হরপ্পা সিলমোহর প্রকাশ করেন । ভৌগোলিক বিস্তারের দিক থেকে বিচার করলে সিন্ধু সভ্যতা ছিল প্রাচীন পৃথিবীর বৃহত্তম সভ্যতা । সিন্ধুবাসীদের প্রধান কৃষিজ ফসল ছিল গম, যব, মটর, খেজুর, তিল ও সরষে । সভ্যতার অনেক আগেই কৃষির উন্মেষ ও বিকাশ ঘটেছিল ।
অভিধান মতে, সভ্যতার অর্থ হচ্ছে, "সভ্য জাতির জীবনযাত্রা নির্বাহের পদ্ধতি- সাহিত্য, শিল্প, বিজ্ঞান, দর্শন, ধর্ম ও বিবিধ বিদ্যার অনুশীলনহেতু মন মগজের উৎকর্ষ সাধন"।
মানবতার কথা এখানে উল্লেখ নাই । পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সভ্যতার উদ্ভব মানুষের সবচেয়ে বড় অর্জন । সভ্যতার ক্রমান্বয়ে উন্নতির ফলেই মানুষের জীবনযাত্রা সহজ থেকে সহজতর হয়েছে । আজকের আধুনিক যুগও সভ্যতার কল্যাণেই সম্ভব হয়েছে । বন্যতা থেকে বর্বরতা এবং বর্বরতা থেকে মানুষ ধীরে ধীরে সুশৃংঙ্খল জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে ।
পৃথিবীর ইতিহাসে প্রাচীন সভ্যতাগুলোর অন্যতম হচ্ছে মিশরীয় সভ্যতা । মেসোপটেমিয়ার উত্তরাংশে আক্কাদ ও দক্ষিণাংশে সুমের । এ সুমেরকে কেন্দ্র করেই আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দ নাগাদ মেসোপটেমিয়ায় এক উন্নত সভ্যতার উন্মেষ ঘটে । প্রাচীন কালে মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে যে সকল সভ্যতা গড়ে ওঠেছিল সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হল ব্যাবিলনীয় সভ্যতা । খ্রিস্টপূর্ব ২৪০০ অব্দে সুমের আক্কাদ বা প্রাচীন ব্যাবিলন সাম্রাজ্য স্থাপিত হয় ।
মেসোপটেমিয়ার উত্তরাংশে অ্যাসেরীয়রা প্রাধান্য বিস্তার করে । ক্যাসাইটদের আক্রমণে প্রাচীন ব্যাবিলন সাম্রাজ্যের পতন ঘটলে তারা এই সভ্যতার উত্তরাধিকার লাভ করে । খ্রিস্টপূর্ব ১৩০০ অব্দের মধ্যেই অ্যাসেরীয়রা সমগ্র উত্তর মেসোপটেমিয়া দখল করে নেয় । চীনা সভ্যতা বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও নদীকেন্দ্রিক সমৃদ্ধ সভ্যতা । অনেকের মতে, এর উদ্ভব চীনের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তের তারিম উপত্যকায় ।
কুয়েন্ডলুং পর্বত অতিক্রম করে হোয়াংহো নদীর তীর বরাবর গড়ে উঠেছিল এই সভ্যতা । সিন্ধু সভ্যতা বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম । খ্রিস্টের জন্মের আনুমানিক চার থেকে পাঁচ হাজার অব্দে এর গোড়াপত্তন হয় । হিব্রু সভ্যতার উৎস ভূমি মধ্যপ্রাচ্যে। এ সভ্যতা আজকের ফিলিস্তিন ও ইসরাইল অঞ্চল কেন্দ্রিক গড়ে ওঠেছিল ।
জাতিগত ভাবে হিব্রুরা ছিল একটি মিশ্রিত জাতি । কুটনীতি, স্থাপত্য এবং চিত্রকলার দিক থেকে হিব্রুরা সভ্যতার ইতিহাসে খুব অল্পই ভূমিকা রেখেছিল। মানব সভ্যতার ইতিহাসে যে ক’টি দেশের মানুষ তাদের উজ্জ্বল অতীতের জন্য ঈর্ষণীয় গৌরবের অধীকারী গ্রিকরা তাদের অন্যতম । গ্রিক নামটি রোমানদের দেয়া। গ্রিসে জন্ম নিয়েছেন তাদের মধ্যে মহাকবি হোমার, জ্ঞানতাপস সক্রেটিস, স্থাপত্য-ভাস্কর্যের অবিস্মরণীয় দিকপাল ইকটিনাস ও ফিডিয়াস, রাজনীতি মঞ্চের অপ্রতিদ্বন্ধী কৌশলী থেমিস, টকলস, এরিস্টাইডিস ও পেরিক্লিস, সাহিত্যের অনির্বাণ জ্যোতিষ্ক সফোক্লিস, এরিস্টোফেলেস, ইউরিপাইডিস, দর্শনের শিখাগ্নী প্লেটো ও এরিস্টটল, ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস, থুকিডিডিস প্রমুখ মনীষীর আবির্ভাব এই গ্রিক সভ্যতায় ।
রোমান সভ্যতা বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ সভ্যতা । রোম, গ্রীস, কার্থেক ও প্যালেস্টাইন সহ ভূমধ্যসাগর অঞ্চল জুড়ে বিদ্যমান সকল রাষ্ট্রকে এটি যেমন অধিকার করে, তেমনি অধিকৃত রাষ্ট্রসমূহের শিল্প সংস্কৃতি ও ধ্যান-ধারণা আত্মস্থ করে নিজস্ব অবদানে তা সমৃদ্ধও করে । মেসো শব্দটা গ্রিক। অর্থ, ‘মধ্য’। যেমন, মেসোপটেমিয়া।
এর মানে: দুই নদীর মধ্যেখানের অঞ্চল। তেমনি, মেসোআমিরিকায় বলতে বোঝায় মধ্যআমেরিকাকে, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যবর্তী অঞ্চলটিকে (প্রধানত মেক্সিকো) । তো, মেসোআমেরিকায় কতগুলি সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছিল । যেমন, ওলমেক, অ্যাজটেক, মায়া । এর মধ্যে মায়া সভ্যতার উদ্ভ ও বিকাশ ছিল অভূতপূর্ব ।
বর্তমান মেক্সিকো, গুয়েতেমালা, বেলিজ ও হন্ডুরাসজুড়ে ছড়িয়ে ছিল মায়া সভ্যতা । লিখিত ভাষাসহ মেসোআমিরিকার সবচে উন্নত সভ্যতা ছিল মায়া সভ্যতা । পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর । এরপর আন্দেজ পর্বতমালার পুবমুখি বিস্তার । পেরু নামে একটি দেশ ।
এই পেরুর পুবেই কুজকো নগর । এসবই আন্দেজ পর্বতমালার মধ্যে । যে আন্দেজ পর্বতমালাটির বিস্তার উত্তর-দক্ষিণে ২,৫০০ মাইল !
বিশ্বের সমৃদ্ধতম সভ্যতাগুলোর একটি হচ্ছে মুসলিম সভ্যতা । ইসলাম ধর্মের আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে এই সভ্যতার উৎপত্তি হয়েছে । ইতিহাসের দীর্ঘ পরিক্রমায় বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাস সমৃদ্ধি অর্জন করেছে ।
মুসলিম সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এই সভ্যতা গড়ে উঠেছে যুক্তির উপর ভিত্তি করে । মার্কিন ইতিহাসবিদ উইল ডোরান্ট সভ্যতা ও সভ্য সমাজের সংজ্ঞা তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন," সভ্যতা হলো সাংস্কৃতিক সৃজনশীলতা, যা সামাজিক শৃঙ্খলা, আইনী শাসন ও তুলনামূলক জনকল্যাণের মধ্য দিয়ে অস্তিত্ব লাভ করে । সভ্যতা হচ্ছে জ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সমুন্নিতর ফসল । আর যে সমাজ, সামাজিক শৃঙ্খলা সাধন করে এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন, অগ্রগতি ও মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধির কথা ভাবে, সেই সমাজই সভ্য সমাজ । " মুসলিম সভ্যতার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, কুসংস্কার ও গোঁড়ামি থেকে দূরে থাকা ।
আরব বিশ্বে ইসলামের দাওয়াতী কাজ যখন শুরু হয় তখন সেখানকার মানুষ অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল । ইসলাম ধর্ম; জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ভিত্তিক যে শিক্ষা মানুষকে দিয়েছে,তা অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের শিকল ভেঙ্গে ফেলতে সাহায্য করেছে । ইসলামী শিক্ষা, মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্ব ও সহযোগিতার মনোভাব জাগ্রত করার পাশাপাশি প্রাথমিক যুগেই সমুজ্জল মুসলিম সভ্যতা গড়ে উঠার ও তা বিকশিত হবার ক্ষেত্র তৈরী করেছিল । উইল ডোরান্ট তার সভ্যতার ইতিহাস শীর্ষক বইয়ে লিখেছেন, মুসলিম সভ্যতার মতো এত বিস্ময়কর সভ্যতা আর দ্বিতীয়টি নেই । ইসলাম যদি গতিময় না হতো এবং অন্যান্য সংস্কৃতিকে বিলীন করার চেষ্টা চালাতো তাহলে মুসলিম সভ্যতা আরব ভূখন্ডের গন্ডি পেরোতে সক্ষম হতোনা ।
এসব গুণাবলীর কারণেই ইসলাম এক শতাব্দীরও কম সময়ের মধ্যে অন্যান্য সভ্যতাকে আকৃষ্ট করে বিশাল এক সভ্যতায় পরিণত হতে সক্ষম হয়েছিল ।
যা অসভ্য নয় তাই সভ্য । আর যে সমাজ ও পরিবেশ সভ্য ও অসভ্য এর ভেদাভেদ করতে শিখায় তাই সভ্যতা । প্রাগৈতিহাসিককাল থেকে মানবসভ্যতার অগ্রগতির বর্তমানকাল পর্যন্ত ধারাবাহিক উন্নতিই হচ্ছে সভ্যতা । সভ্যতার সঠিক কোন সংজ্ঞা নেই ।
সাধারন অর্থে, সভ্যতা বলতে বুঝায় মানবজাতির বিকাশিত অবস্থা । বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সভ্যতা গড়ে উঠেছে । যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন সভ্যতার চিন্তাবিদ, বিজ্ঞানী, ধর্মীয়নেতাগণ মানবজীবনেক সুখী ও সমৃদ্ধশীল করার জন্য মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় জীবনধারায় উন্নয়ন ঘটাতে গিয়ে সভ্যতা সৃষ্টি করেছেন । ১৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ সিন্ধু সভ্যতার প্রধান প্রধান শহরগুলি একে একে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে । শেষপর্যন্ত শহরগুলি জনশূন্য হতে থাকে ।
ঠিক কি কারণে এমনটি ঘটেছিল তা সঠিক জানা যায় না । সমাজ বির্ব্তনের এমন এক পর্যায়ে এসে বিদ্যুৎ আবিষ্কৃত হল যখন তার অপেক্ষায় সভ্যতার গতি থমকে ছিল । বিদ্যুতই এসে সভ্যতার চাকাকে সচল করে। শুরু হয়ে গেলো সভ্যতার বিকাশ । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিন্ধু সভ্যতার প্রতি মানুষের আগ্রহ হঠাৎ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে ।
পৃথিবীর সকল মানব জাতির পূর্বপুরুষ আফ্রিকা থেকে এসেছে । পূর্ব আফ্রিকায় সবচেয়ে পুরাতন মানব-পূর্বপুরুষের চিহ্ন আবিষ্কৃত হয়েছে । জেনেটিক্যালি আমরা দেখেছি নারী পুরুষের চেয়ে আগে সভ্য হয়েছে । সামাজিক জীবনেও কিন্তু তারা পুরুষের আগেই আধুনিক সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করেছে । কিভাবে ? সভ্যতার মূল ভিত্তি হল কৃষি ।
আর তার পত্তন নারীর হাতেই। পুরুষরা তখনও বন্য-শিকারী । অস্ত্র হাতে দল বেঁধে শিকার করত । নারীরা শিকারে যেত না, তারা ফলমূল, লতাপাতা সংগ্রহের কাজে থাকত । আজকের পৃথিবীকে আমরা সভ্য পৃথিবী বলি ।
এই সভ্য পৃথিবীর শুরুটা হয়েছিলো ইউরোপ আর এশিয়া মহাদেশ থেকে । এশিয়ার আরব, পারস্য, ভারত, চীন ছিলো সমৃদ্ধশালী দেশ । আর ইউরোপে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, পর্তুগাল, স্পেন, ইতালি, গ্রিস ছিলো উন্নত দেশ । আফ্রিকার মিশরও কিন্তু এক সময় অনেক উন্নত ছিলো । জলপথ আবিষ্কারের মাধ্যমেই কিন্তু শুরু হয়েছিলো ইউরোপ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য ।
এই জলপথ ব্যবহার করেই ইউরোপীয় বণিকেরা আসা শুরু করে ভারতে। শুরু করে তাদের বসতি স্থাপন । একে একে আসে স্পেন, ফ্রান্স, হল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের বণিকেরা । এই জলপথ আবিষ্কার এর সঙ্গে সুচনা হয় এই অঞ্চলের নতুন ইতিহাসের । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।