এম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন ॥ সারা বাংলাদেশ ব্যাপী জেএমবি ও হুজির সদস্যরা শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে বর্তমানে। এসব জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে কক্সবাজার জেলা ও পাশ্ববর্তী পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দবান জেলায়। তবে মুল দল থেকে ছেড়ে আসায় একের পর গ্রেফতার হচ্ছে জঙ্গিরা। কক্সবাজারে ৪ জঙ্গি গ্রেফতারের পর তাদেরকে ৫ দিনের রিমান্ডে আনে পুলিশ। রিমান্ডে থাকা এসব জঙ্গিদের ব্যাপক জিঙ্গাসাবাদে দেয়া তথ্য মতে ৫ সেপ্টেম্বর গভীর রাত পর্যন্ত বান্দরবানের আলীকদমের গভীর অরণ্যে সাড়াঁশী অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।
সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত চলমান অভিযানে নারীসহ ৩ ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ । অভিযানের শুরুতেই জঙ্গিদের কয়েকটি আস্তানার সন্ধান এবং বেশ কিছু আলামত পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছে সূত্রটি। তবে সূত্রটি দাবী করেছে অভিযানের আগেই আস্তানা গুলোতে থাকা একাধিক জঙ্গি দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে গেছে।
এদিকে, কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশের হাতে রিমান্ডে থাকা ৪ জঙ্গি,পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, হরকাতুল জিহাদ (হুজি) ও জামায়াত উল মুজাহেদিন (জেএমবি) থেকে বের হয়ে আসার কারনেই তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন। মূলত: তাদের মধ্যে আটক কাজী ফারুক ও আব্দুল্লাহ হেল কাফি জেএমবি ও হুজি�র দ্বিতীয় সারির নেতা ছিলেন।
পুলিশের হাতে জব্দ হওয়া গোপন ডায়েরীটিও তাদের। ওই ডায়েরীতে ২০০০ সাল থেকে তাদের যাবতীয় কর্মকান্ড লিপিবদ্ধ রয়েছে। ডায়েরীতে জঙ্গি নেতা সাইদুর রহমানের সাথে তাদের একাধিক বৈঠকের তথ্যও রয়েছে। আছে ১২ জঙ্গির মূল নাম ও সাংকেতিক নাম। সূত্র জানায়, জেএমবি ও হুজির বাংলাদেশে পরিচালিত কর্মকান্ডে সন্তুষ্ট হতে না পেরে জঙ্গি নেতা তারেক ওরফে সালমান ওরফে রুহুল আমিন এর নেতৃত্বে ওই দুটি জঙ্গি সংগঠনের অর্ধশত জঙ্গি মিয়ানমার সীমান্তের বান্দরবান জেলার আলীকদমের গহীন অরণ্যে আস্তানা গড়ে তোলেন।
সেখানে তারা খামারের অজুহাতে জমি লীজ নিয়ে তাতে জঙ্গি কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল। তাদের মধ্যেই সেখানে নতুন করে জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলার বিষয়ে মতানৈক্য দেখা দেয়। তাদের মধ্যে রফিক, কাফি,কাজী ফারুক, মতিনসহ ৬ সদস্য বাংলাদেশে কোন ধরনের জঙ্গি কর্মকান্ড না চালানোর পক্ষে মত দেন। তাদের দাবী ছিলো বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে মুসলিমদের উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
সুতারাং সেখানেই বিধর্মীদের উপর জঙ্গি হামলা চালানোর পক্ষে ছিলেন তারা। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা রোহিঙ্গাদের কয়েকটি সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে �জামায়াতে আরাকান� নামের জঙ্গি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে তাদের সাথে মতানৈক্য সৃষ্টি হলে রফিকের নেতৃত্বে তারা ৬ জঙ্গি সদস্য পরিবার-পরিজন নিয়ে কক্সবাজার শহরে চলে আসে।
সুত্র আরো জানায়, রিক্সা ও টমটম গাড়ী চালিয়ে তারা শুরু করে কক্সবাজার শহরও শহরতলিতে কর্মী সংগ্রহের কাজ। জঙ্গিরা কক্সবাজার এসেও তারা কর্মী সংগ্রহে তেমন কোন সফল হতে পারেননি।
শুধুমাত্র ধার্মিক হিসেবে কক্সবাজার শহরের বাহারছড়ার রুবেল নামের আটক কিশোরকে টার্গেট করে তাকে বইপত্র দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই সব বই ও দাওয়াতকে রুবেল তেমন একটা গুরুত্ব দেয়নি। এর পরও রুবেলকে টার্গেট করেই তারা তার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতো। এক সময় এসব কাজে সফল হতে না পেরে কাজী ফারুক ও আব্দুল্লাহ হেল কাফি জঙ্গি মতবাদে এতই বিশ্বাসী ছিল যে, তারা তাদের টমটম ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র বিক্রি করে ভারত হয়ে আফগানিস্তানে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। তবে এর আগেই এসব মত বিরোধ নিয়ে খুন হন জঙ্গি নেতা তারেক ওরফে সালমান ওরফে রুহুল আমিন।
তারেক খুন হওয়ার পর থেকে এসব জঙ্গিদের কোন ধরনের দলনেতা ছিলনা। যে কয়জন জঙ্গি ছিল তারা ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছে।
সূত্রটি দাবী করেন, বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি স্থানে এখনও পর্যন্ত জেএমবি ও হুজির শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। তারা ছন্দবেশে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তারা কোথাও এক জায়গায় বেশি দিন অবস্থান করেন না।
এমনকি জঙ্গিদের ওই মূল দল ছেড়ে আসার কারনে গ্রেফতারকৃত কাজী ফারুক ও আব্দুল্লাহ হেল কাফি ও মতিনের উপর ক্ষুব্দ ছিল জেএমবি ও হুজির শীর্ষ নেতারা। দল ছেড়ে আসা এ তিন জনের মতবাদ প্রতিফলিত না হওয়া, মূল দলের সাথে দ্বন্ধের কারনে জীবনের হুমকিসহ নানা কারনে তারা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। সর্বশেষ দেশ ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতির সময় তারা গত ৪ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার মডেল থানা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। তবে ওই অভিযানে গ্রেফতারকৃতদের স্ত্রীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা কক্সবাজার-বান্দরবান কেন্দ্রিক �জামায়াতে আরাকান� নামের একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের মাধ্যমে নতুন করে জঙ্গিরা সংগঠিত হওয়ার খবর ছিল কক্সবাজার পুলিশের হাতে।
ওই সূত্রের পরিপ্রেক্ষিতে �জামায়াতে আরাকান� নামের ওই সংগঠনের ৪ জঙ্গিকে গত ২ সেপ্টেম্বর ও ৩ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন সময়ে জিহাদী বই, নগদ টাকা, মোবাইল ফোন,বোমা তৈরীর সরঞ্জাম ও গুরুত্বপূর্ণ একটি ডায়েরীসহ কক্সবাজার শহর থেকে আটক করে পুলিশ। আটককৃত জঙ্গিরা হলো যথাক্রমে কক্সবাজার শহরের দক্ষিন বাহারছড়া এলাকার মৃত মোহাম্মদ আলীর পুত্র রুবেল (১৮), ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়ার কুশমাইল এলাকার মৃত হযরত আলীর পুত্র আব্দুল মতিন (৩৭),দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরের পুরাতন বাজার এলাকার মৃত ইব্রাহিমের পুত্র ওমর ফারুক ওরফে কাজী ফারুক (৩৩) ও চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোলের মুরগিডাঙ্গা এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের পুত্র আব্দুল্লাহ ওরফে আব্দুল্লাহ হেল কাফি (২৬)।
ওই ৪ জনকে কঠোর নিরাপত্তায় গত ৪ সেপ্টেম্বর ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সমরেশ শীল এর আদালতে হাজির করা হলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। বর্তমানে গ্রেফতারকৃত ৪ জঙ্গি পুলিশের হাতে রিমান্ডে রয়েছে। ওই জঙ্গিদের জিঙ্গাসাবাদের সূত্র ধরে কক্সবাজার মডেল থানা পুলিশ বান্দরবান জেলার আলী কদমে অভিযান চালিয়ে পুলিশর অভিযান অব্যাহত রয়েছেএ আলীকদম থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে জামায়াতে আরাকানের সহযোগি সন্দেহে স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও তার স্ত্রীসহ ৩ জনকে আটক করেছে।
এসময় তাদের নিকট থেকে জেহাদী বই ও একটি অকেজো ডিভিডি প্লেয়ার উদ্ধার করা হয়। কক্সবাজারে গ্রেফতার হওয়া ৪ জঙ্গির মধ্যে আবদুল�াহ ওরফে আবদুল�াহ্ হেল কাফি লামা স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আবদুল কাদেরের আলীকদমস্থ বাসায় ন্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকতেন। পরে সেখান থেকে কাফি কক্সবাজার শহরে চলে যান। ৪ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হওয়ার পর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ আলীকদমের মোস্তাক পাড়ায় অভিযান চালিয়ে আব্দুল কাদের এবং তার স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে আটক করে। এসময় তার বাসা থেকে ৬০ টি জিহাদি বই উদ্ধার করা।
একই সময়ে একটি রাইস মিলে অভিযান চালিয়ে মোঃ হোসেন নামের অপর এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
সূত্র: coxstime24.com ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।