আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহানায়কের স্মৃতিচারণঃ সিএম শাহরিয়ার (ইমন); কিংবা একজন সালমান শাহ্‌

অপ্রিয় এবং অবাঞ্ছিত... আমার দৌড় তখন লেখা না বুঝেই দৈনিক ইত্তেফাকের ৩নং পৃষ্ঠায় ছাপানো টারজানের কমিক হাঁ করে গেলা পর্যন্ত। খুব ছোট ছিলাম, যখন সালমান শাহ্‌ মারা যান। স্কুলেও ভর্তি হইনি তখন। ঝিরঝির করা সাদাকালো টিভিতে ক্যাবল লাইন ছাড়াই কার্টুন নেটওয়ার্ক ধরত এবং ওটা নিয়েই পড়ে থাকতাম। তখন বাংলা সিনেমার অবস্থা ভাল ছিল বলে একমাত্র চ্যানেল বিটিভিতে সিনেমাও দেখা হত মাঝে মধ্যে, বলাই বাহুল্য তেমন কিছু বুঝতাম না।

তবে মুগ্ধ হতাম সালমান শাহ্‌ নামের এক মহানায়কের কোকের বোতলের মুখ খোলা দেখে। দাঁত দিয়ে কোকের কাঁচের বোতলের মুখ থেকে অ্যালুমিনিয়ামের শক্ত ক্রাউন খুলতেন এই সুদর্শন। 'বিচিত্রা' ম্যাগাজিন একদিন সদ্য প্রয়াত সালমান শাহ্‌কে নিয়ে তাদের সংখ্যা ছাপালো। আমিও লেখা না বুঝে পাতা উল্টালাম। পড়তে শেখার পর ম্যাগাজিনের পাতা উলটে বুঝলাম, যে ছবিগুলো তাতে দেখেছিলাম, তা সালমান শাহের বিভিন্ন বয়সের ছবি।

কিছু ছবি সেই সময়ের, যখন সালমান শাহ্‌ ছিলেন একজন সিএম শাহরিয়ার, ডাকনাম ইমন। সপরিবারে সালমান শাহ্‌। দেহত্যাগের আগে তাঁর সংসারের ছবি। রান্নাঘরের কড়াই। সিলিংফ্যানের সাথে ঝুলতে থাকা ফাঁসের ছবি।

সংগ্রহ করা হরেক রকম শৌখিন জিনিসের ছবি। তাঁর স্ত্রী সামিরার ছবি। শাহরুখ খানের সাথে তোলা ছবি। শিল্পীর রঙ পেন্সিল স্কেচ করা সালমান শাহ্‌'র বিড়ি ফুঁকতে থাকা বয়োবৃদ্ধকালের কাল্পনিক ছবি। আর আজিজ মোহাম্মদ ভাই।

সালমান শাহ'র সব ছবি দেখেছি তা জোর গলায় দাবি করতে পারি না। তবে আমার খুব প্রিয় একটা সিনেমা'র নাম, 'এই ঘর এই সংসার', মহানায়কেরই ছবি সেটা। সালমানের আরও কয়েকটা ছবির দৃশ্যের কথা মনে আছে, কিন্তু নামগুলো মনে নেই। কলেজের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে রসুন পকেটে নিয়ে মিথ্যামিথ্যি জ্বর আসানোর বর্ণনা করার দৃশ্যটা মনে আছে। 'মানুষ পোষা বেড়ালকেও না খাইয়ে রাখে না' এই ডায়লগটাও প্রায়ই মনে ভেতর খেলে যায়।

ভোলা অসম্ভব "তুমি মোর হৃদয়ের ভাবনা", "অনাহারী", "ভালোবাসিয়া গেলাম ফাঁসিয়া", "তুমি আমার এমনই একজন", "এখন তো সময় ভালোবাসার", "ও আমার বন্ধু গো" এবং আরও অনেক গান। সালমান শাহ্‌ নাটকে অভিনয় করেছিলেন। তাঁর চলে যাওয়ার পর বিটিভিতে সেই নাটক টেলিকাস্ট হয়েছিল কোনো এক বিকেলে। আমাদের খুলনা শহরের এলাকাটা তখন জনশূন্য। টিভির সামনে থেকে কেউ নড়ছিল না।

দোকানপাট সব বন্ধ হয়ে গেছিল। আমি নাটকটা দেখছিলাম, আর ভাবছিলামঃ আচ্ছা, শমি কায়সার কি আসলেই অন্ধ? আর সালমান শাহ্‌ যে চাকু নিয়ে হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে ইচিং বিচিং খেলছে, যদি বাইচান্স আঙ্গুলে ওটা গেঁথে যায়? কাঠপেনসিল দিয়ে আমিও এমনটা করতাম। বড় হয়ে যাবার পর ছুরি দিয়েও করেছি, কিন্তু মহানায়কের মত চোখ বন্ধ করে ওকাজ করার সাহস পাইনি। এই পোস্টটা লিখতে লিখতেই ইউটিউবে 'নয়ন' নাটকটার অংশবিশেষ দেখে ফেললাম। মহানায়ককে সচল দেখার সাথে সাথে বুকের ভেতর একটা মোচড় দিয়ে উঠল কী রত্ন হারিয়েছি ভেবে।

যাই হোক, সিলেটে ৮ বছর থেকেছি। দাড়িয়া পাড়ায় সালমান শাহ্‌র নানাবাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বন্ধুরা কত যে হা-হুতাশ করতাম! মহানায়কের কবরও ভালো করেই চিনি। হযরত শাহজালাল (রঃ) এর মাজারের পাশের কবরস্থানে তার চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন সালমান। সারা দেশের থেকে আনাচে কানাচে থেকে যারা হযরত শাহজালাল (রঃ) এর মাজার জিয়ারতে আসেন, তাদের একটা বিশাল অংশ সালমান শাহ্‌র কবর জিয়ারত করতে ভোলেন না। এদের অনেকেরই বোঝার বয়স হয়নি যখন সালমান শাহ্‌ তাঁর পারফরম্যান্সের তুঙ্গে ছিলেন।

এটাই প্রমাণ করে, সালমান শাহ্‌ ভক্তদের প্রজন্ম পরম্পরায় এখনো বেঁচে আছেন।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২০ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।