ও আচ্ছা এই বিষয়! খারাপ না কিন্তু আমার বন্ধু হামিন। একদিন এক বৃষ্টির সকালে হঠাৎই নতুন একটা ছাতি নিয়ে আমাদের বাড়ির সামনের গলির মোড় ঘুরে উদয় হলো। আমি তার জন্যই মোড়ের চা দোকানে অপেক্ষা করছিলাম। বাইরে মাঝারি রকমের বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টিতে ছাতা ছাড়া বের হওয়ার কথা না।
আমিও আমার পুরনো মরিচা পড়া আর একাংশের তোবড়ানো কাল ছাতা খানা নিয়ে ওর জন্য চায়ের দোকানে অপেক্ষা করছি। কিছুক্ষন আগে ওকে ফোন করতেই বলছিল - দোস্ত ছাতা ছাড়া তো বের হওয়া যাবেনা। বাসায় যে ছাতাটা ছিল সেটা মনে হয় ভাগ্নে নিয়ে স্কুলে গেছে।
আমি বললাম-তাহলে দেখ রেইনকোট পাস কিনা! এই বলে লাইন কেটে দিয়ে অপেক্ষা করছি।
কিন্তু যখনি দেখলাম হামিন নতুন ছাতা নিয়ে দাত কেলাতে কেলাতে আমার দিকে আসছে।
তখন মেজাজটা একটু খারাপই হয়ে গেল। বুঝলাম শালা আমার সঙ্গে মজা করেছে। খামাখাই আমাকে বসিয়ে রেখেছে। তবে যাই হোক তেমন কাজ ছিল না,তাই বসে থেকে এমন কোন আহামরি ক্ষতি হয়নি।
আমার কাছে আসতেই বললাম - কিরে তোর নাকি ছাতা নেই,এত ভক্কর চক্কর কবে থেকে শিখলি?
ও বলল- দোস্ত একটা সারপ্রাইজ দিলাম আরকি।
( দোকানির উদ্দেশ্যে চায়ের অর্ডার দিয়ে আমাকে বলল- দোস্ত দেখতো ছাতাটা কেমন?
আমি বললাম-(হাতে নিয়ে)-হু ভালই। (মুখে নিরামিষ ভঙ্গি-এক কথায় নিরামিঙ্গি)
হামিন কে দেখে মনে হল ও খুশি হলনা। বলল- না দোস্ত ভাল করে দেখ।
আরে কি মুশকিল ,ছাতা আবার ভাল করে দেখার কি আছে। তারপরও দেখলাম।
এইবার বাড়তি কিছু প্রশংসা দিলাম-নারে কোয়ালিটি তো সেরকম। (কচুর কোয়ালিটি মনে মনে),ছাতার রড গুলা তো মনে হয় দালান কোঠা বানানর রড,আর কাপড় তো মনে হয় মসলিনের। ছাতার হেন্ডেলটা তো মনে হয় আমাদের দেশী ঘড়িয়ালের।
ওদিকে হামিন তো প্রশংসা শূনে কর্ণবিস্তিৃত হাসি দিচ্ছে। বলে-নারে তুই বাড়িয়ে বলছিস।
হু বাড়িয়ে তো বলবই,তুই যেই ভাব ভঙ্গি নিলি এতে তো মনে হয় দুনিয়ার একটাই ছাতি।
হামিন বলল-দাম কতো হবে বলতো?
ঘ্যাচর ঘ্যাচর না করে বলে ফেল কোথায় পেলি।
হামির তো ছ্যাত করে উঠে বলল- কোথায় পাইছি মানে? তুই কি আমাকে টোকাই মনে করলি নাকি? কিন্তু তুই ঠিকই বলছস,পাইছি গিফট পাইছি।
কে দিল?
আমার ডার্লিং দিল-বলেই মজা করে চায়ে চুমুক দিতে লাগল।
মনে পড়ল ওর ডার্লিং তো হেব্বি ধণী( পিপড়া খাইল বড়লোকের ধন,গানটাও মনে পড়ল),মাঝে মধ্যেই এইটা ওইটা গিফট দেয়।
আমি কিছু জিজ্ঞেস না করতেও বলল- আমার ডার্লিং এর বড় ভাই আমেরিকা থেকে কালকেই পাঠাইছে,বুঝোস না দেশে তো বর্ষাকাল আইসা পড়ল।
আমি নীরবে চুমুক দিচ্ছি। ওদিকে হামিন অটো পাইলট মুডে আছে মনে হয়।
বুঝোস না এতো বড় ছাতি কি এই দেশে আছে নাকি? আর কাপড় টা দেখ কি সফট। আবার এই যে দেখ টিপ দিলে খুলে আবার টিপ দিলেই বন্ধ।
আর ওজন দেখছস ? নরমাল ছাতির দশগুণ হইবো্। তোর ছাতিটা কই দেখি?
আমার দুই পায়ের মাঝখানে লম্বা করে রাখা ( ) ছাতিটা ও এক টানে নিয়ে গুণকীর্তন করতে লাগল।
ওই দিনের ঘটনা শেষ। একদিন পর।
এই মাঝের একদিনে আমি চলে যাই ছাতা কিনার জন্য।
ভাল ভাল দোকান ঘূরে ছাতা দেখতে থাকি। শালার ছাতার দাম বাড়ে না কেন,সবি ৩০০,৪০০,৬০০। দুই তিন হাজারের ছাতা নাই?
তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো আমি ৩০০ টাকায় ঠিক আমার বন্ধুর গিফট পাওয়া ছাতার মতো একটা ছাতা পেলাম এবং সেটা কিনেও আনলাম। খালি রংটাই ভিন্ন। মনে মনে অনেক হাসলাম।
আর অপেক্ষা করলাম পরের দিন আর বৃষ্টির জন্য। পরের দিন। এবং যথাসময়ে বৃষ্টি ।
আমি দোকানে অপেক্ষা করছি হামিনের জন্য। ও ঠিকই আগের দিনের মতো দেরি করে বের হল।
তাও কানে মোবাইল ফোন ঠেকিয়ে হেলে দুলে কথা বলতে বলতে এল,যেন ওর জন্য আমি যে এখানে বসে আছি এটা সে জানেই না। যাহোক ,চা খেলাম ,ও সুখটান (ধুমপান-যা হানিকর অবশ্যই স্বাস্থ্যের জন্য ) দিতে দিতে বলল-চল। ও যাবি কেমনে তোর তো আবার চান্দের দেশের ছাতি। খুলেও না খুললে বন্ধও হয়না।
আমি চুপ।
হামিন- আইচ্ছা আয়,আমার ছাতি তো মাশাল্লা,বিদেশি ব্র্যান্ড তো বুঝসই তো,ক্যাফেটেরিয়ার মতো বড় ছাতি,একদম ফ্যামিলি প্যাক ছাতি,আইসা পড় আমার ছাতির নিচে। ইস কেন যে ডার্লিং রে বললাম না তাইলে আরো ভাল ছাতি আনতে বলতাম। মনে কর যদি ছাতির নলে হুক্কার মতো সিস্টেম থাকতো তাইলে হুক্কাও খাইতে পারতাম,আর উপর দিয়ে স্টিমারের মতো ধোয়া যাইতো ,কি কস?
আমি চুপ।
একটু পর
কিরে যাবিনা? বোবা পেত্নী ধরলো নাকি?
আমি কোন কথা না বলে আমার নয়া কেনা ছাতা খানা মেলে ওর আগে আগে হাটতে লাগলাম।
দেখলাম হামিন ওর ছাতিখানা বন্ধ করে আমার ছাতির নিচে এসে ভিতরে উকি মেরে দেখতে লাগল।
কিরে দোস্ত তুই এই ছাতা পাইলি কই?
আমি বললাম-কে পাঠাইছে তোর দরকার কি? কোত্থেকে পাঠাইছে সেটা শোন?
কোত্থেকে পাঠাইছে-বেকুবের মতো বলল হামিন।
আমি বললাম-আমেরিকা । কোত্থেকে?
উত্তরে হামিন রিপ্লাই করল-আমেরিকা।
কিছুক্ষন পর।
হামিন চুপ।
শোন ছাতা গতকাল স্টেডিয়াম থেকে কিনলাম। ৩০০টাকা নিল। নিজের টাকায় কিনলাম।
হামিন চুপ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।