আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস-৪

মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস-১ মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস-২ মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস-৩ সিংহাসনের লোভে বাবার বিরুদ্ধে ছেলের বিদ্রোহ সুলতানি ও মোঘল যুগের এক অতি সাধারন ঘটনা। কিন্তু বিদ্রোহ আর বিশ্বাস ঘাতকতার এক জঘন্য ইতিহাস রচনা করলেন শাহজাহানের তৃতীয় ছেলে আউরঙ্গজেব (১৬৫৮-১৭০৭)। তাঁর পুরো নাম ছিল আল-সুলতান আল-আজম ওয়াল খাকান আল-মুকাররম আবুল মুজাফফর মুহি উদ-দিন মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব বাহাদুর আলমগীর। তিনি তাঁর বড় ভাই দারা আর ছোট ভাই মুরাদ কে হত্যা করে ও বৃদ্ধ বাপকে আগ্রার কেল্লায় বন্দী করে দিল্লীর সিংহাসনে বসেন। তিনি ছিলেন গোঁড়া সুন্নি মুসলমান এবং অসম্ভব হিন্দু বিদ্বেষী।

এমনকি শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানদেরও পরিত্রান ছিলনা তাঁর হাত থেকে। ফলে উত্তর-পশ্চিম ভারতে শিখ, রাজপুত, জাঠ ও বুন্দেলা সম্প্রদায় এবং দক্ষিন ভারতে মারাঠারা এই ধর্মোন্মাদ সম্রাটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালো। সম্রাট কাউকেই বিশ্বাস করতেন না। সুতরাং, তিনি নিজেই সাম্রাজ্যের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত ছুটে বেরালেন বিদ্রোহ দমন করতে ও রাজ্য বাড়াতে। এ ভাবেই চিরটা কাল যুদ্ধ করে করে অবসন্ন আউরঙ্গজেব মারা গেলেন ১৭০৭ সালে।

এতসব বলেও এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে চারিত্রিক দৃঢ়তা আর কূটনীতিতে আউরঙ্গজেব এর তুলনা মেলা ভার তবে এ কথাও ঠিক যে আকবরের মত দূরদর্শিতা তাঁর ছিল না। আর সে জন্যই তাঁর মৃত্যুর পর মোঘল সাম্রাজ্যের পতন ছিল কেবল সময়ের অপেক্ষা। শিবাজি ও মারাঠা সাম্রাজ্যঃ আউরঙ্গজেব এর বিরুদ্ধে উত্তর-পশ্চিম ভারতে যখন গুরু গোবিন্দ সিংহের নেতৃত্বে শিখরা এবং রাজসিংহ ও দুর্গাদাসের নেতৃত্বে রাজপুতরা গর্জে উঠেছিল। সেই সময় দক্ষিন ভারতে এক তরুন মারাঠি সমস্ত ভারত জুড়ে হিন্দু রাজ্য গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এই তরুনই হলেন শিবাজি।

তিনি বুঝেছিলেন সম্মুখ যুদ্ধে আউরঙ্গজেব এর বিশাল বাহিনী কে হারিয়ে দেয়া স্বপ্নের মতই অবাস্তব, কিন্তু মোঘলদের ঘায়েল করা যাবে গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ করে। শত্রুকে প্রস্তুত হবার সুযোগ না দিয়ে হঠাৎ আক্রমন করার নাম ই গেরিলা যুদ্ধ। আউরঙ্গজেব শিবাজি কে শায়েস্তা করার কোন উপায় না দেখে ছলের আশ্রয় নিলেন। তিনি শিবাজি কে নিজের দরবারে আমন্ত্রন করে পরে বন্দী করলেন। কিন্তু বুদ্ধিমান শিবাজি ফলের টুকরিতে লুকিয়ে কারাগার থেকে পালিয়ে নিজ রাজ্যে ফিরে গেলেন।

এর পরেই শুরু হয় শিবাজির আপোষহীন সংগ্রাম। মোঘলরা যেমন হিন্দুদের কাছ থেকে জিজিয়া কর আদায় করত, মারাঠারাও তেমনি মুসলমান শাসনকর্তাদের কাছ থেকে চৌথ আর সরদেশ্মুখি আদায় করত। এ ভাবেই শিবাজি এক বিরাট সাম্রাজ্য গড়ে তলেন পশ্চিম ভারতে। ১৬৭৪ সালে তিনি ছত্রপতি উপাধি ধারন করেন। ১৬৮০ সালে এই বীরের মৃত্যু হয়।

শিবাজির বংশধররা কিন্তু শিবাজির মত প্রতিভাবান ছিলেন না। তা সত্তেও আউরঙ্গজেব কে তারা শক্ত বাঁধা দিয়েছিল। মারাঠা রাজ্যে ছত্রপতি ছিল সরবেসরবা। কিন্তু কালক্রমে ছত্রপতির ক্ষমতা কমতে থাকে এবং তাঁর প্রধানমন্ত্রী বা পেশোয়াই রাজ্যের প্রধান হয়ে ওঠেন। পেশোয়া বালাজি বিশ্বনাথের আমলে ছত্রপতি রইলেন নাম কা ওয়াস্তে রাজা , আর পেশোয়া দখল করলেন তাঁর সকল ক্ষমতা।

বালাজির ছেলে পেশোয়া বাজীরাও (১৭২০-১৭৪০) ছিলেন শিবাজির মতই বুদ্ধিমান ও দূরদর্শী। তিনিও হিন্দু সাম্রাজ্য গঠনের চিন্তা করেন। হায়দ্রাবাদের নিজাম ও মোঘল সম্রাটের মিলিত বাহিনীকে তিনি ভুপালের কাছে পরাজিত করেন(১৭৩৭)। পর্তুগীজদেরও পরাজিত করে তিনি সলসেট ও বেসিন দখল করেন। শিবাজির মৃত্যুর পর মারাঠা সাম্রাজ্য কয়েকটি ছোট ছোট সামন্ত রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পরেছিল।

যেমন- গোয়ালিয়রের সিন্ধিয়া, ইন্দরের হোলকার, বারোদার গাইকোয়ার, নাগপুরের ভোসলে। বাজীরাও এইসব রাজ্যগুলিকে সংঘবদ্ধ করে ‘মারাঠা যুক্তরাষ্ট্র’ গঠন করেন।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৭ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।