বিভিন্ন সময়ের দো‘আ সমূহ
পিতামাতার জন্য দো‘আ :
‘রববীরহাম্হুমা কামা রববাইয়া-নী ছগীরা’ (হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাদের উপরে দয়া কর, যেমন তারা আমাকে ছোটকালে দয়ার সাথে প্রতিপালন করেছিলেন)’ (ইসরা ১৭/২৪)। কুরআনের আয়াত হওয়ার কারণে দো‘আটি সিজদায় পড়া যাবে না। তবে শেষ বৈঠকে দো‘আয়ে মাছূরাহর পরে পড়া যাবে।
রববানাগফিরলী ওয়ালিওয়া-লিদাইয়া ওয়া লিলমু’মিনীনা ইয়াউমা ইয়াক্বূমুল হিসা-ব’ (হে আমাদের প্রতিপালক! আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা কর, যেদিন হিসাব কায়েম হবে’ (ইবরাহীম ১৪/৪১)।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ জান্নাতে তার নেককার বান্দাদের মর্যাদার স্তর উন্নীত করবেন।
তখন বান্দা বলবে, হে আল্লাহ! কেন এটা আমার জন্য করা হচ্ছে? জবাবে আল্লাহ বলবেন, তোমার জন্য তোমার সন্তানের ক্ষমা প্রার্থনার কারণে’। [ আহমাদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৩৫৪ ‘ দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা’ অনুচ্ছেদ-৪; ছহীহাহ হা/১৫৯৮। ]
ঋণদাতা (বা যে কোন দাতার) জন্য দো‘আ :
‘বা-রাকাল্লা-হু তা‘আলা ফী আহলিকা ওয়া মা-লিকা’ (মহান আল্লাহ আপনার পরিবারে ও সম্পদে বরকত দান করুন)। [ নাসাঈ, মিশকাত হা/২৯২৬, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য’ অধ্যায়-১১, অনুচ্ছেদ-৯। ]
উল্লেখ্য যে, বহুল প্রচলিত দো‘আ ‘বা-রাকাল্লা-হু ফীকা বা ফীকুম’ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছটি ‘যঈফ’।
[ বায়হাক্বী-দালায়েলুন নবুওয়াত, মিশকাত হা/১৮৮০; সনদ যঈফ, ‘যাকাত’ অধ্যায়-১১, অনুচ্ছেদ-৫। ]
তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বরকতের দো‘আ করেছেন বলে ছহীহ হাদীছ সমূহে প্রমাণ রয়েছে। সে হিসাবে এটি বলা জায়েয।
উপকারী ব্যক্তির জন্য দো‘আ :
জাযা-কাল্লা-হু খায়রান (আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন)। [ তিরমিযী, মিশকাত হা/৩০২৪ ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়-১১, অনুচ্ছেদ-১৭; বুখারী হা/৩৩৬ ‘তায়াম্মুম’ অধ্যায়-৭, অনুচ্ছেদ-২।
]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের শুকরিয়া আদায় করে না, সে ব্যক্তি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে না’। [ আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩০২৫। ]
আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তাহ’লে অবশ্যই আমি তোমাদের বেশী বেশী দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহ’লে জেনো নিশ্চয়ই আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর’ (ইবরাহীম ১৪/৭)।
নিজের জন্য দো‘আ (সোলায়মান (আঃ)-এর দো‘আর ন্যায়) :
উচ্চারণ : ‘রবেব আওঝি‘নী আন আশকুরা নি‘মাতাকাল্লাতী আন‘আমতা ‘আলাইয়া, ওয়া ‘আলা ওয়ালেদাইয়া, ওয়া আন আ‘মালা ছ-লেহান তারযা-হু, ওয়া আদখিলনী বি রহমাতিকা ফী ‘ইবা-দিকাছ ছ-লেহীন।
অনুবাদ : ‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে যে নে‘মত তুমি দান করেছ, তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার শক্তি আমাকে দান কর এবং আমি যেন এমন সৎকর্ম করতে পারি, যা তুমি পসন্দ কর এবং আমাকে তোমার অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মশীল বান্দাগণের অন্তর্ভুক্ত কর’ (নমল ২৭/১৯)।
৪০ বছর বয়সে উপনীত হওয়ার পর নিজের ও সন্তানদের কল্যাণের জন্য দো‘আ :
উচ্চারণ : ‘রবেব আওঝি‘নী আন আশকুরা নি‘মাতাকাল্লাতি আন‘আমতা ‘আলাইয়া, ওয়া ‘আলা ওয়া-লেদাইয়া, ওয়া আন আ‘মালা ছ-লেহান তারযা-হু, ওয়া আছলিহ লী ফী যুররিইয়াতী, ইন্নী তুবতু ইলাইকা, ওয়া ইন্নী মিনাল মুসলিমীন’।
অনুবাদ : ‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে যে নে‘মত তুমি দান করেছ, তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার শক্তি আমাকে দান কর এবং আমি যেন এমন সৎকর্ম করতে পারি, যা তুমি পসন্দ কর এবং আমার জন্য আমার সন্তানদের মধ্যে তুমি কল্যাণ দান কর। আমি তোমার দিকে ফিরে গেলাম এবং আমি তোমার একান্ত আজ্ঞাবহদের অন্তর্ভুক্ত’ (আহক্বাফ ৪৬/১৫)।
আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, এই দো‘আ আবুবকর ছিদ্দীক (রাঃ) করেছিলেন, যখন তিনি ৪০ বছর বয়সে উপনীত হন।
ফলে তিনিই ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি, যার সকল সন্তান ও পিতা-মাতা (পরবর্তীতে) ইসলাম কবুল করেছিলেন’ (কুরতুবী)। উল্লেখ্য যে, হযরত আবুবকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর চাইতে বয়সে দু’বছরের ছোট ছিলেন।
বিবাহের পর নবদম্পতির জন্য দো‘আ :
বা-রাকাল্লা-হু লাকুমা ওয়া বা-রাকা ‘আলাইকুমা ওয়া জামা‘আ বায়নাকুমা ফী খায়রিন। (এই বিবাহে আল্লাহ তোমাদের জন্য বরকত দান করুন ও তোমাদের উপর বরকত দান করুন এবং তোমাদের উভয়কে কল্যাণের সাথে একত্রিত করুন)। [ ইবনু মাজাহ হা/১৯০৫; আহমাদ, তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/২৪৪৫, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘বিভিন্ন সময়ের দো‘আ সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৭ ।
]
অথবা বলবে, আল্লা-হুম্মা বা-রিক লাহুম (হে আল্লাহ! তুমি তাদেরকে বরকত দাও)। বিয়ের খবর শুনে বরকে বলবে, বা-রাকাল্লা-হু লাকা (আল্লাহ তোমাকে বরকত দান করুন!)। [ ইবনু মাজাহ হা/১৯০৬-০৭। ]
উল্লেখ্য যে, ব্যক্তিগত ভাবে প্রত্যেকে নবদম্পতির উদ্দেশ্যে উক্ত দো‘আ পড়বেন। এ সময় দু’হাত তুলে সম্মিলিত ভাবে মুনাজাত করার প্রথাটি ভিত্তিহীন এবং এসময় বরের দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করার প্রথাটিও প্রমাণহীন।
বিবাহের পর স্ত্রীর জন্য স্বামীর দো‘আ :
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা খায়রাহা ওয়া খায়রা মা জাবালতাহা ‘আলাইহি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রিহা ওয়া শার্রি মা জাবালতাহা ‘আলাইহি।
অনুবাদ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট তার মঙ্গল চাই এবং তার সেই কল্যাণময় স্বভাব প্রার্থনা করি, যার উপর তুমি তাকে সৃষ্টি করেছ। আর আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই তার অনিষ্ট হ’তে এবং সেই মন্দ স্বভাবের অনিষ্ট হ’তে, যা দিয়ে তুমি তাকে সৃষ্টি করেছ’। এই সময় স্ত্রীর কপালের চুল ধরে স্বামী উক্ত বরকতের দো‘আটি করবে। [ আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৪৪৬, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, অনুচ্ছেদ-৭; মিরক্বাত ৫/২১৬।
]
এর মধ্যে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি ক্ষমাশীল ও দয়াশীল হয়ে দাম্পত্য জীবন যাপন করার ইঙ্গিত রয়েছে।
রোগী পরিচর্যার দো‘আ :
রোগীর মাথায় ডান হাত রেখে বা দেহে ডান হাত বুলিয়ে দো‘আ পড়বে-
(১) উচ্চারণ : আয্হিবিল বা’স, রববান না-স! ওয়াশ্ফি, আনতাশ শা-ফী, লা শিফা-আ ইল্লা শিফা-উকা, শিফা-আল লা ইউগা-দিরু সাক্বামা।
অনুবাদ : ‘কষ্ট দূর কর হে মানুষের প্রতিপালক! আরোগ্য দান কর। তুমিই আরোগ্য দানকারী। কোন আরোগ্য নেই তোমার দেওয়া আরোগ্য ব্যতীত; যা কোন রোগীকে ধোঁকা দেয় না’।
[ মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৫৩০; আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৫৫২, ‘চিকিৎসা ও ঝাড়ফুঁক’ অধ্যায়-২৩। ]
(২) অথবা ‘লা বা’সা ত্বহূরুন ইনশা-আল্লাহ’। ‘কষ্ট থাকবে না। আল্লাহ চাহে তো দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন’। [ বুখারী, মিশকাত হা/১৫২৯, ‘জানায়েয’ অধ্যায়-৫, ‘রোগী পরিচর্যা ও তার ছওয়াব’ অনুচ্ছেদ-১।
]
(৩) অথবা দেহের ব্যথাতুর স্থানে (ডান) হাত রেখে রোগী তিনবার ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে। অতঃপর সাতবার নিম্নের দো‘আটি পাঠ করবে,
আ‘ঊযু বি‘ইযযাতিল্লা-হি ওয়া ক্বুদরাতিহি মিন শার্রি মা আজিদু ওয়া উহা-যিরু’ (আমি যে ব্যথা ভোগ করছি ও যে ভয়ের আশংকা করছি, তার অনিষ্ট হ’তে আমি আল্লাহর সম্মান ও শক্তির আশ্রয় প্রার্থনা করছি)’।
রাবী ওছমান বিন আবুল ‘আছ (রাঃ) বলেন, আমি এটা করি এবং আল্লাহ আমার দেহের বেদনা দূর করে দেন। [ মুসলিম, মিশকাত হা/১৫৩৩। ]
(৪) অথবা সূরা ফালাক্ব ও নাস পড়ে দু’হাতে ফুঁক দিয়ে রোগী নিজে অথবা তার হাত ধরে অন্য কেউ যতদূর সম্ভব সারা দেহে বুলাবে।
[ মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৫৩২, ‘জানাযেয়’ অধ্যায়-৫, অনুচ্ছেদ-১। ]
হে আল্লাহ! আমার ত্রুটিগুলি তুমি ক্ষমা কর এবং তোমার পথে এই ক্ষুদ্র খিদমতটুকু কবুল কর। হে আল্লাহ! এ দোআ গুলো পড়ে যত মুমিন নর-নারী আমল করবেন, তাদের আমলনামায় তার ছওয়াব পূর্ণরূপে যুক্ত কর এবং তাদের পিতামাতাকে ও তাদের পরিবারবর্গকে এবং তার সকল শুভাকাংখীকে কবরে ও হাশরে মুক্তি দান কর- আমীন!! সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বেহামদিহী, সুবহা-নাল্লা-হিল ‘আযীম!
চলবে ......।
জরুরী দো‘আ সমূহ #৮
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।