জীবনও যখনও শুকায়ে যায় করুণা ধারায় এসো.. জোহরা খাতুনের জন্য আজ উভয় সংকট। শেষ পর্যন্ত তার দুই সন্তানের নামে থানায় মামলা করতে হয়েছে। অথচ এই দুই সন্তান জন্ম নেবার পর আহ্লাদিত হয়ে গ্রাম থেকে হিজড়া ডেকে তাদের নাচিয়েছে। শখ করে খাইয়েছে গ্রামের অন্যান্যদের। প্রাণের ধন সেই সন্তানদের শাস্তি প্রার্থনা করে জোহরা খাতুন ২৯ আগস্ট বুধবার মাগুরা থানায় স্বামী হত্যার মামলা করেছে।
জোহরা খাতুনের স্বামী দবির হোসেন। সদর উপজেলার জগদল-রূপাটি গ্রামের অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের ছেলে। ওয়ারিশ সূত্রে তিনি প্রায় ১ একর সম্পত্তি পেয়েছেন। মা সখিনা খাতুন সাকু বিবির নামেও রয়েছে আরো ১ একর সম্পত্তি। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান হিসেবে দবির হোসেনের প্রাপ্তিটুকু কম নয়।
৫ ছেলে। সবাই কর্মক্ষম। আর ৫ মেয়ের মধ্যে ৩ জনকে বিয়ে দিয়েছেন। বাকি ২টি ছোট। ছেলেদের সঙ্গে দবির হোসেনের প্রায় ঝগড়া বাধে জমির ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে।
ছেলেরা জমি ভাগ করে দিতে বললেও সে কখনো রাজি নয়। উপরোন্তু বড় ছেলে আইয়ুব হোসেন এবং মেঝে ছেলে সাহেব আলিকে বাড়ি থেকে দেড় মাস আগে তাড়িয়ে দিয়েছে। ছেলেদের বসবাসের জায়গা থেকে ঘর ভেঙ্গে সেখানে তিনি দেড়শটি বেগুনের গাছ লাগিয়ে দিয়েছে। দবির হোসেনের ওই দুই ছেলে নিরুপায় হয়ে বাড়ির সামনে সরকারি খাস জমিতে এখন ঘর তুলে বসবাস করে। এখানেই শেষ নয়।
মা সাকু বিবির কাছে দবির হোসেন প্রায় তার জমিটুকু লিখে দেবার জন্য পিড়াপিড়ি করে। কিন্তু সাকু বিবিও দিতে রাজি নয়। বিধায় দবির হোসেন রোজার মাসে মাকে বাড়ির সামনে মাদরাসার পুকুরের মধ্যে চুবিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। তাতেও মায়ের কাছ থেকে জমি নিতে পারে নি। এ অবস্থায় দবির হোসেন মাকে পিটিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
বাধ্য হয়ে সাকু বিবিও বাড়ি ছাড়া। রাতের বেলা ওই দুই নাতির কাছেই থাকে। সকাল হলেই আবার বেরিয়ে পড়ে বাজারের দোকানে দোকানে ভিক্ষা করতে। দুই সপ্তাহ আগে সাকু বিবি সদয় হয়ে নিজের নামের প্রায় ১ একর সম্পত্তি শেষ পর্যন্ত ওই দুই নাতি আইয়ুব ও সাহেব আলির নামে লিখে দিয়েছে। এ খবরটি দবির হোসেন পেয়েছেন ২৪ আগস্ট শুক্রবার সন্ধায়।
ক্ষুব্দ হয়ে জগদল বাজারের কালিতলায় ওই দুই সন্তানকে পেয়ে তাদের উপর আক্রমন চালায়। এ অবস্থায় আইয়ুব ও সাহেব আলি কাঠের চেলা নিয়ে দবির হোসেনকে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে। গুরুতর আহত দবির হোসেনকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি দেখে ঢাকায় পাঠানো হলে বুধবার সকালে সে মারা যায়। এই হচ্ছে দবির হোসেনের পরিবারের গল্প।
আর এভাবেই বর্ণনা করছিলেন তার স্ত্রী জোহরা খাতুন। তার সামনে এখনো মহা সমুদ্র। অবিবাহিত দুটি কন্যা সন্তান বড় হচ্ছে তারই ঘরে।
বুধবার দুপুরে জগদল-রূপাটি গ্রামে দবির হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ঠিকই বাড়ির দক্ষিনের পোতা যেখানে আইয়ুব হোসেন এবং সাহেব আলি বসবাস করতো সেখানে এখন বেগুনের ক্ষেত। তার সামনে দাড়িয়ে কথা হয় ওই গ্রামের বাসিন্দা গোলাম হোসেনের সঙ্গে।
তিনি বলেন, দবির হোসেন সম্পত্তির জন্য ছেলেদের হাতে নির্দয় ভাবে খুন হয়েছে। কিন্তু এটাও সত্যি যে সম্পত্তির জন্যে দবির মিয়া নিজের বৃদ্ধ মায়ের উপর নির্যাতন চালাতে ভয় পায়নি। সাকু বিবিকে সে খেতেও দিতো না। বাধ্য হয়ে সে ভিক্ষা করে বেড়ায়।
দুপুরে খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ লাশটি ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।
সদর থানার এসআই সুভাষ কুমার বিশ্বাস পুরো ঘটনাটিকে নজির বিহিন আখ্যা দিয়ে ঘাতক সন্তানদের আটকের চেষ্টা চলছে বলে জানান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।