'আপনার একাউন্ট এই পুরষ্কার জিতেছে, পুরষ্কার মূল্য এক কোটি ডলার বা পাউন্ড। পুরষ্কার নিতে যোগাযোগ করুন, বিস্তারিত ব্যাংক একাউন্ট পাঠান'- এ রকম ই-মেইল সম্ভবত সবাই নিয়মিত পেয়ে থাকেন।
তাছাড়া বিভিন্ন লটারিতে জেতার খবরও ই-মেইলে পেয়ে থাকি। আবার বিভিন্ন দেশের এতীম রাজকুমার, রাজকুমারিরা বা বিধবা রাণীমাতারা বা বিশাল কোন বড় লোকেরা বিভিন্ন অসুবিধার কারণে লক্ষ কোটি ডলার রাখার জন্য ব্যাংক একাউন্ট না পেয়ে আমার একাউন্টে রাখার প্রস্তাব পাঠান। বড় বড় ব্যবসার প্রস্তাবও প্রায়ই পাওয়া যায়।
যাহোক, কখনও এসবের প্রতি কোন আগ্রহ দেখাইনি বা এসব বড় বড় সুযোগ গ্রহণের ক্ষমতা আমার নেই। তবে আসল কথা হল, এসব বিষয় বিশ্বাস করার কোন কারণ খুঁজে পাইনি। যখন নরওয়েতে পড়তে গিয়েছি, তখন ইউনিভার্সিটি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এসবের উপর একদিন লেকচার দেওয়া হয়েছিল; যাতে কেউ এ রকম মেইল বিশ্বাস না করে কিংবা ব্যাংক একাউন্ট বা পার্সোনাল ডিটেইলস না দিয়ে দেয়। শুনেছি, ব্যাংক একাউন্ট এবং পার্সোনাল ডিটেইলস থেকে তারা নাকি ব্যাংক একাউন্ট হ্যাক করতে পারে।
যাহোক, বলছিলাম যে, আমি এসব মেইলের প্রতি কখনও আগ্রহ দেখাইনি।
তবে আমাদের দবির ভাইয়ের কথা আলাদা; তিনি আগ্রহ দেখিয়েছিলেন।
দবির ভাই আমার প্রথম চাকুরি জীবনের সহকর্মী। খুব সজ্জন মানুষ। খোলা গলায় চমৎকার লোকগান গাইতেন। একদিন তিনি এ রকম একটি মেইল পেলেন।
মেইলে লেখা, ওনার ই-মেইল একাউন্ট ১ কোটি ডলার জিতেছে। মেইলে ওনাকে অভিবাদন জানানো হয়েছে। মেইল পেয়ে উনি অত্যন্ত খুশি হলেন। মেইলটা ফটো পেপারে কালার প্রিন্ট করে, লেমিনেটিং ও বাঁধাই করে তিনি নিজের ডেস্কে ঝুলায়ে রাখলেন। আমি একদিন সেই সার্টিফিকেটটা তার ডেস্কে ঝোলানো দেখলাম।
আমি সেই সার্টিফিকেটের দিকে তাকিয়ে আছি বুঝতে পেরে তিনি বললেন, ভাই এত টাকাতো জীবনে কামাই করতে পারব না, কিন্তু তারা যে আমাকে নির্বাচন করেছে, আমার নামে সার্টিফিকেট ইস্যু করেছে, এটাওতো কম কিছু না। তবে এই টাকা আদায় করাও বিরাট সমস্যা। হাসতে গিয়েও থেমে গেলাম। ঠাট্টা জাতীয় কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না। কেমন যেন মায়া হল ওনার জন্য।
পরে আমাদের আর এক কলিগ নাকি এটা নিয়ে ওনাকে অনেক ঠাট্টা করেছিলেন। উনি কষ্ট পেয়েছিলেন। আমি অন্যদিন ওনার ডেস্কে গিয়ে সার্টিফিকেট ঝোলানো না দেখে ওনাকে সার্টিফিকেটের কথা জিজ্ঞেস করলাম। তখন উনি অন্য কলিগের ব্যাপারটা আমাকে বললেন। আমি বললাম, সার্টিফিকেটটা কি ফেলে দিয়েছেন? উনি একটু চুপ থেকে বললেন, না ড্রয়ারে রেখেছি।
উনি আমাকে ড্রয়ার খুলে সার্টিফিকেটটা দেখালেন। খুব যত্ন করে রাখা সার্টিফিকেট। হঠাৎ নষ্ট হওয়ার কোন সুযোগ নেই। মনটা খুব ভারি হয়ে গেল। সার্টিফিকেটটা নিশ্চয়ই দবির ভাইকে কল্পনায় অনেক আনন্দ দিয়েছে; স্বপ্ন দেখিয়েছে।
কতকাল দবির ভাইযের সাথে যোগাযোগ নেই, কোন খবর জানি না। দবির ভাই, আপনি ভাল থাকবেন।
আজও সে রকম একটা ই-মেইল পেলাম, যাতে লেখা আমি একটা লটারিতে এক কোটি পাউন্ড জিতেছি। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য হল, এই মেইলটা আমাকে বিন্দুমাত্র খুশি করেনি, এক ক্লিকে মেইলটা স্পাম করে দিলাম। স্বীকার করতেই হয় যে, দবির ভাই আধুনিক যুগের অনেক কিছু কম বুঝতেন, কিন্তু দবির ভাই যে রকম একটা মেইল পেয়ে খুব সহজে সীমাহীন আনন্দ পেয়েছিলেন, তা পাওয়ার মত ক্ষমতা আমার নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।