দবির এবং ছবির বন্ধুই ছিল । জরিনা বেগমের বাসার সামনে টাংকি মারতে যায়া দুইজন দুইজনের কাছে ধরা খাইলো, দবির বলে- জরিনা আমার ... ছবির বলে- না জরিনারে ছাড়া আমি বাচুমনা । ব্যস্ লাগল ঝগড়া, মুখ দেখাদেখি বন্ধ । চামে নুর আলী জরিনারে বিয়া কইরা সৌদি । দবির ছবিরের দুঃখ রাখার জায়গা নাই, এ দোষে ওরে, ও দোষে এরে- তর্ লাইগা আমি জরিনারে হারাইলাম ।
সেই ঊনিশশো কুয়াত্তর সালের কাহিনি । এরপর বহু কাহিনি ঘইটা গেছে । দবিরের বিশাল পলিটিকাল পাট্টি । লাখের উপর ম্যামবার । পাওয়ারে গেছিল একবার ।
ওর পাট্টি দুই-তীতিয় ভোট পায় । ঠ্যালা আছে ।
আবার এইদিকে ছবিরের খবর’ও মাশাল্লা ... বিশাল বুদ্ধিজীবি সে ... টিভিতে তার খোমা রেগুলার দ্যাহায় । সুশীল সমাজের দেবতা ... বিশাল তার চ্যালা বাহিনি ... সমালচনা কইরা যে কাউরে ল্যাংটা বানায় ফালায় ।
অতঃপর অনেকদিন বাদে ... নুর আলী’এর মঞ্চে আগমন ঘটিল, আইসাই তেলেস্মাতি আরাম্ভ, সোউদি দুম্বার গোস্তো খায়া মাশাল্লাহ একখান নুরানী ভুড়ি বানাইছে, বেহেস্তী জেল্লা বাইরায় ! আতরের ভকভকি গন্ধে ... দূর দুরান্ত থাইকা, চিপায়চুপায় লুকায়া থাকা টুপিয়াল মৌমাছিরা সব তার আশেপাশে ভন্ভন্ কর্তে লাগে ।
নুর আলী শুনিতে পায় গায়েবি আওয়াজ, হাক্মাওলা বইলা হাক দিয়া ওঠে, ভীমরি খায় ... মৌমাছির দল ... তাড়াতাড়ি লুঙ্গি গিট মাইরা লাইনে খারায় । নুর আলী পয়গম পাইয়াছে, তেলেস্মাতি করিবে, বয়ান হইল মুর্তি সব ভাংগিয়া মিনার বানাইতে হবে । মৌমাছির দল ভন্ভনানী বাদ দিয়া গমগম করিতে করিতে রওনা হইল । মুর্তি ভাংগিল ... মিছিল করিয়া মিনার দাবি করিল ...
ইত্যবসরে দবিরের ঘুম ভাংগিল এবং ছবিরের’ও ঘুম ভাংগিল । নুরালীর কাহিনি দেখিয়া টাস্কি খায়া দুইজন’ই দুইতিন দিন অজ্ঞান পড়িয়া রহিলো ।
জ্ঞান ফিরিলে মাতম শুরু করিলো ... দবির রাজনৈতিক পান্ডাদের নিয়া ভীষন সব বক্তিমা দিয়া বেরাইল ... নুরালীকে ধরিতে যাইবে । এদিকে ছবির’ও কম যায় না ... টিভি পাড়া গরম করিয়া সেও ঘোষনা দিল নুরালীর মায়রে বাপ ... অরে খাইছি ! নুরালীকে ধরতে সেও যায় চ্যালাব্যালা নিয়া ।
খোজ, খোজ, খোজ ... নুরালীর খোজে দবির এবং ছবির সারাদেশ তন্ন খুজিয়া ব্যাড়ায় ... কোথাও নুরালী নাই ।
দবির ভাবে কই গ্যালো শালায় ... ছবির’ও ভাবে কই গ্যালো শালায় ...
দবির ভাবে শশুরের বাসায় আবার লুকাইলো নাকী দুম্বাটায় ?
ছবির’ও ভাবে শশুরের বাসায় আবার লুকাইলো নাকী শুয়ারটা ?
ডানের রাস্তা দিয়া দবির আর বামের রাস্তা দিয়া ছবির ... সদলবলে হাজির হয় নুরালীর শশুরের বাসার সামনে ।
জরিনা বেগমের বাসার সামনে ।
সে এক ম্যালা দিন পর দবির এবং ছবিরের দ্যাখা ... মুখামুখি দুইজন ... অনেক কিছুই মনে পইরা গ্যালো তাদের ... সেই কবে কোন কৈশোরের এক খিস্তিমুখর বিকালের কথা ... জরিনার মুখ ... আহ সেকি আর ভোলা যায় । সেকি আর ভোলা উচিত্ ...
বহুদিন পর পুরান একটা কাটা দবির এবং ছবিরের বুকের ভীতর কোন্ একটা জায়গায় খোচায়া ঊঠে । দবির ক্ষমা করতে পারেনাই ছবিরকে, ছবির’ও পারেনাই দবিরকে ক্ষমা করতে । হঠাত্ দুর্বল বোধ করে দুজনেই ... পরস্পর থেকে দূরে সইরা যাইতে থাকে ... মাথা নিচু কইরা দবির ডানের রাস্তা দিয়া ফিরতে আরাম্ভ করে ... সংগে বিশাল চ্যালা বাহিনি । মাথা নিচু কইরা ছবির’ও বামের রাস্তা দিয়া ফিরতে আরাম্ভ করে ... সংগে তার’ও বিশাল চ্যালা বাহিনি ।
আর মনে মনে ভাবে হয়ত সেই পুরান বিকালের কথাটা ... ‘না জরিনারে ছাড়া আমি বাচুমনা’।
শাশুরি আম্মার খাটের তলা থেকে বাইর হয় নুর আলী ... বাধ্য জরিনা পান নিয়া পাশে বসে ... নুর আলী একটা পান মুখে দিয়া বলে, ‘থ্যাংক্যু জরিনা বেগম’ ...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।