[ কর্মই জীবন; কর্ম-কোলাহল বিবর্জিত নির্জনবাস পুরাপুরি গৌরবজনক নয়। পার্থিব কর্মবিমুখতায় শুধু মসজিদের এবাদতই পূর্ণাঙ্গ পুন্যময় জীবন নয়। আধ্যাত্নিক কর্মকাণ্ডের জ্যোতিতে সুষ্ঠু মন মানসিকতা গডে তুলতে পারলে সকল কাের্যারই ইসলাম সম্মত সম্পাদন সম্ভব। যেহেতু জীবন গতিময় এবং গতির জন্য প্রয়োজন কোন এক ধারাবাহিক উৎসের সংযোজন, সেহেতু এমন এক ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পক্ত হওয়া প্রয়োজন। যার মধ্যে পার্থিব কার্যাদির সমান্তরালে মানবের আভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রতঙ্গের এবাদত তথা আল্লাহর জিকির অব্যাহত থাকে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়,-সর্বত্র-সর্বক্ষন; এ নিয়মের অধীনে শয়নে স্বপনে-জাগরণে জিকির-বিহীন অবস্থা অতিবাহিত হয়না কোনক্ষণ।
ফলে পার্থিব প্রতিটি কাজই তখন আল্লাহ তায়ালার এবাদতের শামিল হয়ে যায়। জীবন ব্যবস্থার এ স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তিগত পদ্দতিই হল আধ্যাত্নিক ব্যবস্থাপনা বা তরিকত।
যার বিশাল পাঠ্যক্রমে বিন্যাসগত ভাবে রয়েছে কলব,রুহ,সির,খফী,আখফা,নফস,বাদ,মা,খাক,নার নামক আভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উম্মীলন। যাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে একাধিক বিকাশনের ভিন্ন ভিন্ন অনুধাবন।
তরিকতের পথ নির্দেশক তথা মোর্শেদ বা পীরের সিনা হতে সরাসরি তাওয়াজ্জুহ বা সুক্ষনাতি সুক্ষ রূহানী প্রেরণা গ্রহণের মাধ্যমে আভ্যন্তরীন বিভিন্ন লতিফা সমূহেকে আল্লাহর জিকিরে সার্বক্ষনিক ভাবে চালু রাখার প্রক্রিয়ায় লোভ,কাম,ক্রোধ,মোহ,ইত্যাদি রিপু সমূহ নিয়ন্ত্রিত হওয়ার ধারাবাহিকতায় তওবা,সবর,শোকর,রযা,খাউফে এলাহী,যোহদ,তাওহিদ, তাওয়াজ্জু্,মহব্বত,শউক,উনছ,এখলাস,সিদক,কানায়াত,এহসান ইত্যাদি গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমে স্রষ্টার সাথে একটি সার্বক্ষনিক যোগসুত্র স্থাপিত হয় এবং আল্লাহর গুণে গুণাবনিত আদর্শ চরিত্র গঠিত হয়।
ফলশ্রুতিতে, শয়তানের কুমন্ত্রণার উৎস রুদ্দ হয়ে পড়ে, রব্বানী জ্যোতিতে আত্না ও দেহ আলোকিত হয়, এবাদতে একাগ্রতা বা হুজুরি কলব অর্জিত হয়। অন্তরে আল্লাহ তায়ালার ও রাসুলুল্লাহ(সঃ) এর মহব্বত প্রতিষ্ঠিত হয়। অন্তচক্ষু উম্মীলিত হয়,আশরাফুল মাখলুখাত হিসাবে মানবের পরিচিতি স্বীয় জীবনে প্রতিফলিত হ্য, সস্টির সাথে সুসম্পর্ক গডে তোলা সহজলব্ব্য হয়, আদর্শ ও নৈতিক লক্ষ্যাঅর্জন এবং আত্নিক বিকাশের মাধ্যমে নিজের ভিতর বাহির সুশুভিত হয়। এহেন ত্বরিকতপন্তীই গায়রুল্লাহর তাশবীহ-কাইফিইয়াতের উরধে উঠে খালেস নিয়তের সুফ্ল অর্জনে ধন্য হন, সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা করা থেকে স্বীয় জিহ্বাকে সংযত রাখতে পারেন, অনুরূপভাবে ত্বরিকতের সিডি বেয়েই সাধক আহলে বাইতের সাথে মহব্বতের সম্প্রক গড়ে তুলতে সক্ষম হন, সাদেকীনের সংসর্গ লাভে মনে প্রাণে উদবুদ্দ হন, আহলে জিকির থেকে জ্ঞান অর্জনে নিবিষ্ট হতে পারেন, আল্লাহপাককেই একমাত্র সাহায্যকারী ও অভিভাবক রূপে পেতে সক্ষম হন, ব্যবসা-বানিজ্যে লিপ্ত হয়েও আল্লাহ্র স্মরণ থেকে বিচ্যুত হওয়া থেকে হেফাজত থাকতে পারেন, সর্বদা ভয় ও ভরসার মাঝে বিদ্যমান থাকতে সক্ষম হন। সর্বোপরি অন্তিম মূহর্তে ঈমানের সাথে প্রফুল্ল বদনে “কলবে ছলিম সহকারে” রফিকে আলার সাথে মিলনটুকু সুমধুরভাবে সুসম্পন্ন হতে পারে।
এমন কি কবর থেকে উত্থিত হবার সময় আলেম ও আরেফ হয়ে উঠার পথও সুগম হতে পারে। অনুরূপভাবে, আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার কথা যতই বলা হউক না কেন, সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় আভ্যন্তরীণ লতিফাসমূহে স্তর ভিত্তিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আত্নশুদ্দি থেকে শুরু করে সমাজশুদ্দি ও রাষ্ট্রশুদ্দির পথ অবলম্বিত না হলে তা’ কোনদিন হবে না সাফল্যমণ্ডিত। দুধ,ঘি,মাখন,ফল-মুলের উপাদেয় গুণাবলীর ব্যাখ্যা যতই বিস্তত হোক না কেন,ভক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত তা’ যেমন দেহের পুষ্টি সাধনে অক্ষম, তেমনি বিভিন্ন গুণাবলীর সমন্নয়ে আদর্শ চরিত্র গঠনেরমাধ্যমে নৈতিকতা প্রতিস্টায় এ পিরিথীবিতে শান্তির নীড রচনার কথা যতই বলা হোকনা কেন আভ্যন্তরীণ দশ লতিফাসমূহে পীর প্রদত্ত ফয়েজে জারীকিরিত তথা নুরান্নিত না হওয়া পর্যন্ত দশটি মাকামাত অর্জিত হবেনা। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।