আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উচ্চ শিক্ষায় বৈশ্বিক পুঁজিবাদের আগ্রাসন ঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

যদি ঠাঁই দিলে তবে কেন আজ হৃদয়ে দিলে না প্রেমের নৈবদ্য শিক্ষাব্যবস্থার সাথে আধিপত্য ও ক্ষমতার বিস্তার, রাষ্ট্রীয় শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা এমনকি সাম্রাজ্যিক বাসনার সম্পর্ক অনেক পুরনো। যে কোন শাসকশ্রেণী শুধু রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বা বলপ্রয়োগের মাধ্যমেই তার শোষণ-নিপীড়ন টিকিয়ে রাখে না, এর জন্য তার প্রয়োজন হয় মতাদর্শগত আধিপত্যও যা বিদ্যমান সমস্ত আধিপত্যবাদী এবং বৈষম্যমূলক কাঠামোকে বুদ্ধিবৃত্তিক বৈধতা দান করে। শিক্ষাব্যবস্থা এই মতাদর্শিক আধিপত্য বিস্তারের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। ষাটের দশকে ফরাসি দার্শনিক আলথুসার শিক্ষাব্যবস্থাকে চারটি মতাদর্শিক রাষ্ট্রযন্ত্রের (Ideological State apparatus) অন্তর্ভুক্ত করেন এবং বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন কিভাবে শিক্ষা হয়ে উঠে পুঁজিবাদী সমাজের রাষ্ট্রীয় শাসন ও শোষণকে বৈধতা দান এবং রাষ্ট্রক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার এক হাতিয়ারে। আরেক খ্যাতনামা ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো শিক্ষাকেন্দ্র এবং বিদ্যালয়গুলোকে ক্ষমতাশালীদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার মাধ্যম হিসেবে তুলে ধরেন তাঁর বিখ্যাত ডিসকোর্স প্রত্যয়ের মাধ্যমে।

কোন নির্দিষ্ট জ্ঞানভাষ্য যখন একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে সমাজ ও রাষ্ট্রে ক্ষমতাবানদের নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম, বই পুস্তক, সভা-সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে প্রচলিত সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং যা একটা সাধারণ ধারনা তৈরি করে সেই জ্ঞানভাষ্যকেই ডিসকোর্স বলা হয়। এই ডিসকোর্সের মাধ্যমেই সমাজ, রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে ক্ষমতা এবং আধিপত্যবাদী শাসনের কায়কারবার গড়ে উঠে। অর্থাৎ শিক্ষা এবং জ্ঞানকে নিতান্তই গঠনমূলক ভাবা কিংবা নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখার কোন সুযোগ নেই। শিক্ষা এবং জ্ঞানের সাথে ক্ষমতার যে সম্পর্ক তা বুঝতে পারলে শিক্ষাব্যবস্থা কী করে সমাজ ও বিশ্বপরিসরে আধিপত্যবাদী এবং সাম্রাজ্যবাদী শাসন–শোষণকে টিকিয়ে রাখার কাজে ব্যবহৃত হয় তা সহজেই বোঝা যাবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে শিক্ষাব্যবস্থাকে কখনোই দ্বান্দ্বিকভাবে পর্যালোচনা করা হয়নি, এখানে শিক্ষাব্যবস্থা এবং জ্ঞানবিজ্ঞানকে কেবলই গঠনমূলক এবং ক্ষমতা-নিরপেক্ষ ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

শিক্ষার সাথে ক্ষমতার সম্পর্ক কি? শিক্ষার সাথে ঔপনিবেশিক শাসনের ঐতিহাসিক সম্পর্ক কি ছিল? শিক্ষার সাথে নয়াউপনিবেশিক আধিপত্যবাদী শাসনের সম্পর্ক কি? শিক্ষার সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদী লুণ্ঠন এবং আগ্রাসনের সম্পর্ক কি? শিক্ষার সাথে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের সম্পর্ক কি? এই বিষয়গুলোর পর্যালোচনা না করেই আমাদের শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। ফলত এই প্রচলিত শিক্ষাকাঠামো এবং শিক্ষাব্যবস্থা আদতে গণমুখী না হয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। “ উন্নয়নের আধুনিকীকরণ তত্ত্ব” আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় বহুল পঠিত একটি বিষয়। এই তত্ত্বের উৎপত্তি ও বিকাশ পুরোপুরিই পশ্চিমা উন্নয়ন তাত্ত্বিকদের হাত ধরেই।

এ তত্ত্ব অনুসারে তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর উন্নয়নের জন্য আধুনিকীকরণ অপরিহার্য এবং এই আধুনিকীকরণ হতে হবে পশ্চিমা সমাজ-সভ্যতার অন্ধ অনুকরণের মধ্য দিয়েই। অর্থাৎ পশ্চিমা সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্রব্যবস্থা, আইনব্যবস্থা, পশ্চিমা ধ্যান- ধারণা, বিশ্বাস, জীবনপদ্ধতি এই সবকিছুকেই আত্মস্থ করে প্রাচ্যকে পশ্চিমের কাছে আত্মিক ভাবে নিজেকে সমর্পণ করতে হবে, তবেই সে আধুনিক হতে পারবে এবং প্রাচ্যের এই পশ্চিম হয়ে উঠার মাধ্যমেই তাদের উন্নয়ন সম্ভব। পশ্চিমা সভ্যতার যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং শিল্প বিপ্লব তার সাথে জড়িত বিশ্বব্যাপী তাদের ঔপনিবেশিক শোষণ- লুণ্ঠন ও আগ্রাসন। উন্নয়ন তাত্ত্বিক গুণ্ডার ফ্রাঙ্কের মতে পশ্চিমাদের উন্নয়নই প্রাচ্যের অনুন্নয়নের জন্য দায়ী। কিন্তু এই ঔপনিবেশিক লুণ্ঠনকে আড়াল করে পশ্চিমা তাত্ত্বিকরা বিশ্বব্যাপী উপনিবেশিত দেশগুলোতে শিক্ষাব্যবস্থার মাধমে এটাই তুলে ধরেন যে পশ্চিমের উন্নয়ন ও শিল্প বিপ্লব তাদের সংস্কৃতি,দর্শন, জীবনাচার ও জীবনপদ্ধতি উদ্ভূত।

প্রাচ্যকেও যদি উন্নয়নের পথে হাঁটতে হয় তবে তাকে পশ্চিমের দেখানো পথেই হাঁটতে হবে। ফলে উপনিবেশিত রাষ্ট্রগুলোতে শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে এ ধারণাই প্রতিষ্ঠিত করা হয় যে উন্নয়নের জন্য পশ্চিমা মডেলই অনুসরণ করতে এবং আধুনিকতার নামে নিজস্ব ধ্যানধারণা, বিশ্বাস, জাতীয় সংস্কৃতিকে প্রত্যাখ্যান করে সব কিছুকে পশ্চিমীকরণ করতে হবে। যেমন আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে ঔপনিবেশিক আমলে তথাকথিত বাংলার নবজাগরণ/ রেনেসাঁ শুরু হয় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের মাধ্যমে যার পথিকৃৎ ছিলেন হেনরি ডিরোজিও। এই কথিত বাংলার রেনেসাঁ ছিল এদেশের নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে প্রত্যাখ্যান করে মনে- মগজে, চিন্তা- চেতনায় কী করে ইউরোপীয় হওয়া যায় তার সাধনা করা, এই রেনেসাঁ ছিল ইউরোপীয় দর্শন ও সংস্কৃতির মাধ্যমে ভারতবাসীর ভাবাদর্শ গঠন করা। ইউরোপীয় ডিসকোর্সের এই অন্ধ অনুকরণ তখন তৈরি করেছিলো ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতি অনুগত একটা শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবী শ্রেণী যারা ইংরেজদের ঔপনিবেশিক শোষণকে মতাদর্শিক বৈধতা দান করতো।

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ পরিণত হয় বিদেশী শাসনের প্রতি অনুগত শিক্ষিত দাস গড়ার কারখানায়, যা ভারতীয়দের চিন্তা ও মননের স্বাধীনতাকে ধূলিসাৎ করে দেয়। ১৮৩৫ সালে ভারতে শিক্ষানীতি প্রণয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান লর্ড মেকলে তাঁর প্রস্তাবে উল্লেখ করেন, “বর্তমানে আমাদের এমন একটি শ্রেণী গড়ে তুলতে হবে যারা আমাদের ও যাদেরকে আমরা শাসন করি তাদের মধ্যে দোভাষী হিসেবে কাজ করবে : যারা রক্তে- বর্ণে হবে ভারতীয়, কিন্তু মননে, মতামতে, নীতিবোধ ও রুচিতে হবে খাঁটি ইংরেজ। আর সেই শ্রেণীর ওপর আমরা দেশটির স্থানীয় ভাষাসমূহকে পরিশুদ্ধ করা, পাশ্চাত্য পরিভাষা ধার করা বৈজ্ঞানিক পরিভাষা দ্বারা ঐ স্থানীয় ভাষাসমূহকে সমৃদ্ধ করা, এবং এই বিশাল জনগোষ্ঠীর নিকট জ্ঞান পৌঁছে দেয়ার জন্য পর্যায়ক্রমে যথাযোগ্য মাধ্যম সরবরাহ করার ভার ছেড়ে দিতে পারি। ” অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসকবর্গ কর্তৃক প্রবর্তিত শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় সমাজে এমন এক শ্রেণীর বিকাশ ঘটানো যাদের মাধ্যমে তারা ভারতবর্ষের বৃহতর জনগোষ্ঠীকে শাসন-শোষণ করতে পারবে। মেকলের প্রস্তাবের ছাঁচে বানানো ঔপনিবেশিক শিক্ষায় যে ভদ্রলোক সমাজ/বিদ্বানশ্রেণী তৈরি হয়েছিল, তারা উপনিবেশের প্রতি ছিল আস্থাশীল এবং ঔপনিবেশিক প্রশাসনে সহায়তা করার মধ্য দিয়েই তারা টিকিয়ে রেখেছিল দুশো বছরের ব্রিটিশ শাসন কাঠামো।

শেকড়চ্যুত এই শ্রেণীটি আজীবন ঔপনিবেশিক প্রভুর মুখাপেক্ষী থাকতে বাধ্য ছিল। ঔপনিবেশিক শিক্ষা তাদের মনন ও চেতনাকে এমনভাবে আচ্ছন্ন করেছিল যে ব্রিটিশরাজের দাসত্ব করাই ছিল তাদের একমাত্র ব্রত। ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে স্বদেশের মুক্তিসংগ্রামের বিপরীতে ছিল এদের অবস্থান। উদাহরণস্বরূপ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহে এরা ছিলেন ইংরেজদের অনুগত। অর্থাৎ ইংরেজ প্রবর্তিত এই শিক্ষাব্যবস্থা একটা শিক্ষিত অনুগত ভাবশিষ্য তৈরির উৎপাদন যন্ত্রে পরিণত হয় এবং উপনিবেশিত জ্ঞানকাঠামো (Colonial discourse) এই ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের মতাদর্শিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ব্রিটিশ প্রণীত শিক্ষাব্যবস্থা যে উপনিবেশী জ্ঞানভাষ্য বা ডিসকোর্স দিয়ে আমাদের মননের স্বাধীনতা হরণ করেছিল তা আজো আমাদের শিক্ষা কারিকুলামে রয়ে গেছে। মেকলের শিক্ষাপ্রস্তাব আজও আমাদের কারিকুলামে বহাল তবিয়তে আছে। উপনিবেশ নেই, কিন্তু রয়ে গেছে উপনিবেশিত জ্ঞান। আমাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছা –আকাঙ্খা, সমাজচিন্তা, রাষ্ট্রচিন্তা সবই এখনো উপনিবেশী জ্ঞান শাসিত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে “ উন্নয়নের আধুনিকীকরণ তত্ত্ব “ অনুসরণ করে আমাদের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন কি এসেছে? তার উত্তর না।

“উন্নয়নের আধুনিকীকরণ তত্ত্ব” আসলে পশ্চিমাদের শোষণমূলক ধনতন্ত্রের ভাবাদর্শ। আফ্রিকান উন্নয়ন তাত্ত্বিক গুণ্ডার ফ্রাঙ্কের মতে, “আধুনিকীকরণ তত্ত্ব ছিল কপট ভাবাদর্শ যা উন্নত ও অনুন্নত দেশের সঙ্গে যে অর্থনৈতিক শোষণ ও ক্ষমতার অসমতা ছিল তাকে লুকিয়ে রেখেছিল। পশ্চিমের শোষণের ফলেই তৃতীয় বিশ্ব যে অনুন্নত এবং সে প্রক্রিয়া যে এখনও বর্তমান তাকে উপেক্ষা করতে এর জন্ম। “ আধুনিকীকরণের নামে পশ্চিমাদের অন্ধ অনুকরণের কারণে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক উন্নয়নতো হয়ইনি বরং যে বিষয়টা প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে তা হল পশ্চিমের উপর মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরশীলতা। এই নির্ভরশীলতার ব্যাপকতা এতটাই বেশী যে আমরা অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে তাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি এবং ফলত নিজস্বতা হারিয়ে নিজেদের আত্মিক শক্তির বিকাশকে রুদ্ধ করে ফেলেছি।

নিজস্ব সংস্কৃতি, দর্শন, নিজস্ব সমাজ কাঠামো যখন ভেঙ্গে পড়ে তখন একটা জাতির মাঝে জন্ম নেয় হীনমন্যতা। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রাচ্যের একজন শিক্ষানবিশের মনে মগজে এটাই বদ্ধমূল করে দেয় যে, প্রাচ্য হচ্ছে গতিহীন, প্রগতিহীন, স্থবির, বর্বর সমাজের প্রতিভূ; আর পাশ্চাত্যই প্রগতিশীলতা, সভ্যতা, উন্নয়নের প্রতিভূ। প্রাচ্য সম্পর্কে ইউরোপের তৈরি এই বাচন বা ডিসকোর্সকে প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবী এডওয়ার্ড সাইদ নাম দিয়েছেন প্রাচ্যবাদ ( Orientalism) এবং সাইদ তার বিভিন্ন লেখনির মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছেন এই প্রাচ্যবাদ হচ্ছে মিথ্যার বুনোনি বা উপকথা। সাইদের মতে উত্তর রেনেসাঁ যুগে এই প্রাচ্যবাদকে আধুনিক শিক্ষা ও জ্ঞানকেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত করেই ইউরোপীয় সংস্কৃতি প্রাচ্যকে বিনির্মাণ করেছে রাজনৈতিক, সামাজিক, সামরিক, মতাদর্শিক, বৈজ্ঞানিক এবং চিন্তাগতভাবে। সাইদের মতে এটি হচ্ছে পশ্চিমের প্রাচ্যকে পদানত করার এক আধিপত্যবাদী স্পৃহা।

ঔপনিবেশিক যুগ শেষ হয়ে গেলেও তৃতীয় বিশ্বের জনগণের মাঝে বিশেষ করে বহাল শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত শ্রেণীর মাঝে বিরাজ করতে থাকে এক মানসিক উপনিবেশ অর্থাৎ ঔপনিবেশিক ধ্যান-ধারণা, পরাশক্তির দাসত্ব করার বাসনা, পশ্চিমা সভ্যতার অন্ধ অনুকরণ এখনও মানসিকভাবে এবং আত্মিকভাবে আমাদের মাঝে ক্রিয়া করে। আর এই মানসিক উপনিবেশের উপর দাঁড়িয়েই গড়ে উঠে নয়া উপনিবেশিক শাসন-শোষণ যার একটা বড় অস্ত্র আজকের যুগের বিশ্বায়ন সম্পর্কিত ধারণা। উপনিবেশায়িত এবং নয়াউপনিবেশিক ধ্যান-ধারণার প্রভাবে আমরা এখনো অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তিবর্গ ও তাদের অনুগত আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক, আই,এম, এফ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আধিপত্যমূলক পরামর্শ ও অন্যায্য হস্তক্ষেপের মুখাপেক্ষী যা আমাদের জাতীয় উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছে না। আজকের এই নয়াউপনিবেশিক যুগেও শিক্ষাব্যবস্থা বৈশ্বিক আধিপত্যবাদীদের নিরঙ্কুশ প্রভাব, ক্ষমতা ও আধিপত্য বিস্তারের বুদ্ধিবৃত্তিক মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। ফলে বৈশ্বিক আধিপত্যের বিপরীতে গণমুখী চেতনার বিকাশ না হয়ে শিক্ষিত শ্রেণীর মাঝে আধিপত্যকে মেনে নেয়ার প্রবণতা তৈরি হচ্ছে যা আমাদের স্বাধীনচেতা মনোভাবকে অবদমন করে পরাশক্তির কাছে নতজানু করে রাখছে ।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় যেসব ইউরোপীয় ডিসকোর্সের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায় তার মধ্যে রয়েছেঃ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণবাদ, উদারনৈতিকতাবাদ ইত্যাদি। অতিরিক্ত ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ সমাজের মানুষের সামাজিক পরিচয়ের চেয়ে ব্যক্তিগত পরিচয়কে মুখ্য করে তোলে, ফলে ব্যক্তি তার সামাজিক দায়বদ্ধতা ভুলে গিয়ে স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। সামষ্টিক কল্যাণ-চেতনার বিপরীতে ব্যক্তির মাঝে জন্ম নেয় শুধুই ব্যক্তিগত আশা-আকাঙ্খা, লোভ-লালসা চরিতার্থ করার বাসনা; সামাজিক চেতনা বর্জিত এই মানুষ তাই সমাজের নিপীড়িত গণমানুষের অধিকার আদায়ে উচ্চকিত হওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণবাদ অনুসারে অর্থনীতিই মানব সমাজের মূল ভিত্তিমূল আর অন্য সব কিছু যেমন সংস্কৃতি, দর্শন, আত্মিক শক্তি, নৈতিকতা, আইন এই ভিত্তির উপর নির্ভরশীল উপরিকাঠামো। অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণবাদ মানুষকে একটা অর্থকরী প্রাণী ছাড়া আর কিছুই মনে করে না, যার প্রধান কাজই হচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে কিভাবে উন্নতি করা যায় তার বন্দোবস্ত করা।

এই ধরনের হেজিমনিক বয়ান মানুষের জীবনের সবকিছুই অর্থনীতি নিয়ন্ত্রিত বলে দাবি করে এবং অর্থনৈতিকভাবেই সব সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করে থাকে। অর্থনৈতিকভাবে উন্নত ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে সফল ও সুখী বলে দাবি করে এই বয়ান মানুষের জীবনের অন্য সব দিক যেমন সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, আত্মিক শক্তির বিকাশ, বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষ, দার্শনিক চেতনার গুরুত্বকে অনেকটাই উপেক্ষা করে ফলে সমাজে মানুষের মূল্যবোধ গড়ে উঠে ধন-সম্পদের প্রাচুর্যের উপর ভিত্তি করে। অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণবাদ মানুষের উন্নয়ন ধারণাকেও পরিবর্তিত করে দেয়; উন্নয়ন বলতে মানুষ ভাবতে শিখে শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন, এই বয়ান বা ভাবনা থেকেই মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয় পণ্যপূজার বা পণ্যরতির ধারণা (Commodity fetishism), মাত্রাতিরিক্ত পণ্য ভোগের ধারণা (Super consumerism) এবং সব কিছুকেই এবং সব সম্পর্ককেই টাকার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করার ধারনা (Reification)। এখানে পুরো সমাজকেই বিবেচনা করা হয় একটা বাজার হিসেবে এবং মানুষকে মূল্যায়ন করা হয় ভোক্তা হিসেবে। “পণ্য ভোগেই জীবনের সার্থকতা” এই ঠুনকো জীবনচেতনা সমাজে তৈরি করে এক ভোগের সংস্কৃতির (Consumer culture) যা সমাজের প্রতিটি মানুষকে চরম ভোগবাদী করে গড়ে তুলে তার মানবিক, সামাজিক এবং আত্মিক দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে অসচেতন করে রাখে।

এই ভোগবাদী সংস্কৃতির বিশ্বায়নই সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদের ভিত্তিমূল যা আজকের যুগের মানুষের মাঝে পুঁজিবাদী মানসিকতার উন্মেষ ঘটায় ফলে বৈশ্বিক পুঁজির আগ্রাসনকে মেনে নেয়ার প্রবণতা তৈরি হয় নাগরিকদের মাঝে। উদারনৈতিকতাবাদ ঐতিহাসিকভাবেই ব্যক্তিখাতে অবাধ অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করে পুঁজিবাদী চেতনার বিকাশের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে এবং অর্থনীতিতে রাষ্ট্র ও সমাজের নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করে ব্যক্তির নিরঙ্কুশ মুনাফাকেন্দ্রিক চেতনার বিকাশ সাধন করে যা ব্যক্তিমানুষকে বৈশ্বিক পুঁজিবাদের এবং বাজার অর্থনীতির সেবাদাসে পরিণত করে। অন্যদিকে পশ্চিমা দর্শনের অন্ধ অনুকরণ করে মানুষের আত্মিক শক্তির বিকাশের কোন সুযোগ না রেখে শুধুমাত্র তার বস্তুগত চিন্তা-চেতনার বিকাশ এবং বস্তুগত চাহিদা পূরণকেই আমাদের শিক্ষাব্যাবস্থায় প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এবং তার ভিত্তিতেই পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত বস্তুবাদী চেতনার বিকাশের কারণে এই শিক্ষা বিমানবিকীকরণকে (Dehumanization) উৎসাহিত করে এবং ধীরে ধীরে শিক্ষাক্ষেত্রে সামাজিক ও মানবিক জ্ঞানের (Societal based Knowledge) পরিবর্তে বাজার-অর্থনীতি কেন্দ্রিক জ্ঞান (Market-based Knowledge) চর্চাই মুখ্য হয়ে উঠে। “অর্থনীতির বিকাশের জন্যই জ্ঞান” এটাই হয়ে উঠেছে এ শিক্ষার মূল দর্শন।

বিশ্বব্যাংকের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক প্রণীত “বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষার জন্য কৌশলপত্র (২০০৬-২০২৬) এ কর্পোরেট পুঁজির চাহিদা পূরণকেই উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য হিসেবে তুলে ধরে বলা হয়েছে, “যদি উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে দেশীয় এবং বিদেশী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানার চাহিদা অনুযায়ী গ্র্যাজুয়েট তৈরি করা না যায় তাহলে উচ্চশিক্ষার মূল লক্ষ্যই পূরণ হবে না”। সাম্রাজ্যবাদী বাজার অর্থনীতির ধারণা শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে মৌলিক বিজ্ঞান এবং মানবিক বিষয়গুলোর ভবিষ্যৎ নেই বলে সুপারিশ করে কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, “সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিক ও বিজ্ঞান শাখা থেকে বের হওয়া স্নাতকের বর্তমান চাকরির বাজারে ও বাস্তব জীবনে তেমন কোনো মূল্য নেই; তথ্য ও প্রযুক্তিবিদ্যা, ব্যবসা ও শিল্প বিষয়ে উচ্চশিক্ষার দ্বার খুলে গেছে। কিন্তু এই নতুন শিক্ষা খাতের তুলনায় মানবিক শাখার কোনো ভবিষ্যতই নেই। “ কৌশলপত্রের সুপারিশ অনুযায়ী উচ্চশিক্ষা কেন্দ্রে মৌলিক বিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, ভাষাতত্ত্বের মতো বিষয়গুলো উপেক্ষিত হবে। কিন্তু সুকুমার বৃত্তির চর্চার মধ্য দিয়ে একটা দেশের জনগণের মাঝে মানবিক ও সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টি ছাড়া জাতীয় চেতনার বিকাশ সম্ভব নয়, আর জাতীয় বিকাশ ছাড়া জাতীয় অগ্রগতি অসম্ভব।

এই জাতীয় বিকাশের জন্য প্রয়োজন ইতিহাস, দর্শন, সাহিত্য-শিল্পকলা এবং মৌলিক বিজ্ঞান। বাজারমুখী উচ্চশিক্ষার বিষয়গুলোর ওপর জোর দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় হবে সাম্রাজ্যবাদী লগ্নী পুঁজি ও পণ্যের পাহারাদার, কর্মচারী ও সেবাদাস তৈরির কারখানা। দেশের আপামর গণমানুষের সামগ্রিক মুক্তির জন্য সচেতন নাগরিক গঠন না করে আমাদের উচ্চ শিক্ষা আজ তাই পরিণত হয়েছে বৈশ্বিক এবং দেশীয় পূঁজির বিকাশে অনুগত মানবসম্পদ তৈরির কেন্দ্রে। বাজার অর্থনীতি কেন্দ্রিক জ্ঞানের আধিপত্যের কারণে মৌলিক জ্ঞান চর্চা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সামাজিক এবং মানবিক জ্ঞান চর্চাও। ফলে দেশের সমাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি এবং অর্থনীতি কেমন হওয়া উচিৎ, কী করে এসব ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদীদের প্রভাবকে নাকচ করে গণমুখী নীতি প্রণয়ন করা যায় তা নিয়ে উচ্চশিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে গবেষণা হচ্ছে না বললেই চলে।

এই পটভূমিতে সমাজ, রাষ্ট্র ও ব্যক্তিসত্তার মুক্তির পথ নিয়ে ছাত্রদের গভীরভাবে চিন্তা বিশ্লেষণের ক্ষমতার বিকাশ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে একটি পরনির্ভরশীল ও জনগণের স্বার্থ বিরোধী উচ্চশিক্ষার কাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। অর্থাৎ ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণবাদ, বস্তুবাদ, উদারনৈতিকতাবাদ এসব জ্ঞানভাষ্য বা ডিসকোর্সের মাধ্যমেই আমাদের উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠে বুর্জোয়া মতাদর্শ প্রচারের তীর্থকেন্দ্রে যেখানে পশ্চিমা উদারনৈতিকতাবাদ এবং পুঁজিবাদী মূল্যবোধকেই উন্নয়ন ও জ্ঞানের প্রভাবশালী মডেল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, যেখানে কর্পোরেট সংস্কৃতিকেই ব্যক্তিগত সফলতা এবং সার্থক জীবনের মডেল রূপে গণ্য করা হয়। আজ তাই ভোক্তা সংস্কৃতি ছাত্রদের বিবেকবোধকে পুঁজিবাদী মানসিকতার অধীনস্ত করে রাখছে। সামাজিক প্রথা ও মূল্যবোধের জায়গা দখল করে নিচ্ছে কর্পোরেট মূল্যবোধ।

কে বাজারের কত পণ্য ভোগ করতে পারল, কে কোন কর্পোরেট ব্যান্ডের পণ্য ক্রয় করতে পারল এর উপরই নির্ভর করে তাদের উন্নত জীবনযাপনের স্ট্যাটাস। উচ্চ শিক্ষার মধ্য দিয়ে ছাত্ররা গড়ে উঠছে সমাজ ও দেশের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা ছাড়াই। ছাত্ররা সমাজ ও দেশের উন্নতির কথা চিন্তা না করে কেবল নিজের ভোগ এবং সুখের সন্ধান করে। কর্পোরেট মূল্যবোধ এবং বাজার অর্থনীতির ভাবাদর্শে মোহাচ্ছন্ন থাকে বলে ছাত্ররা সূক্ষ্মচিন্তা এবং বিচার- বিশ্লেষণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এই বস্তুবাদী এবং ভোগবাদী শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত মানুষের অধিকাংশই স্বাধীন চিন্তা-ভাবনায় অক্ষম, স্বার্থ-চিন্তায় মগ্ন এবং জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন।

এই ভোগবাদী মানুষের পক্ষে তাই সাম্রাজ্যবাদীদের এবং পুঁজিবাদীদের একান্ত দাস হয়ে কাজ করা ছাড়া আর কিছুই সম্ভবপর হয় না। মেধাও আজ তাই সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির অধীনস্ত হয়ে পড়েছে। দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি এবং রাষ্ট্রনীতিতে সাম্রাজ্যবাদী এবং আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী শক্তিগুলোর নয়া-উপনিবেশবাদী শোষণ-নিপীড়ন, বৈশ্বিক পুঁজির কর্পোরেট আগ্রাসন এবং দেশের তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদে বহুজাতিক কোম্পানির অবাধ লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে শিক্ষিত শ্রেণীর যে নিষ্ক্রিয়তা ও প্রতিবাদহীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে তার জন্য মূলত দায়ী হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী ভোগবাদী শিক্ষা কেননা এই শিক্ষা মানুষকে স্বাধীন ও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন এবং সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ নাগরিক হিসেবে প্রস্তুত না করে তাকে অনুগত বস্তুবাদী আত্মকেন্দ্রিক হিসেবে গড়ে তোলে। উচ্চশিক্ষায় সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন প্রতিহত না করে জাতীয় মুক্তির সপ্ন দেখা তাই অর্থহীন। দেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হলে এবং সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদী বিশ্বশক্তির আগ্রাসন থেকে দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতিকে মুক্ত করতে হলে প্রথমেই দরকার বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন।

এজন্য বর্তমান পাঠ্যক্রমে বহাল সমস্ত ঔপনিবেশিক ধ্যান–ধারণা এবং আশির দশক থেকে দেশের উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে যে নিওলিবারেল হেজেমনিক মতাদর্শ প্রথিত হয়েছিল তার অপসারণ প্রয়োজন। বিশ্বব্যাংকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে উচ্চশিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ও মতাদর্শ নিয়ন্ত্রণের লক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক প্রণীত “বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ বছর মেয়াদী কৌশলপত্র” অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ইউরোপীয় ডিসকোর্সের বিপরীতে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আধিপত্যবাদ বিরোধী গণমুখী কাউন্টার-ডিসকোর্সের প্রবর্তন করতে হবে যা আমাদের জাতীয় চেতনার বিকাশ এবং সত্যিকারের জাতীয় উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.