রক্ত আর্টারি বা ধমনির ভেতর দিয়ে প্রবাহের সময় আর্টারির দেয়ালে দেয়া চাপকে রক্তচাপ বা ব্লাডপ্রেশার বলা হয়। মনে রাখবেন, রক্তচাপ সবারই থাকে, যদি স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি থাকে, তখন তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলা হয়। সাধারণত রক্তচাপ সকাল বেলা বেশি থাকে। বিকেলের দিকে কম থাকে। দুশ্চিন্তা, দুঃখ ও উত্তেজনা এবং শারীরিক পরিশ্রম রক্তচাপ বৃদ্ধি করে।
উচ্চ রক্তচাপে সাধারণত সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক দুটোই বাড়ে। কারো কারো আবার যে কোনো একটিই বাড়তে পারে।
যখন রক্তচাপ মাপার সময় স্টেথেস্কোপের মাধ্যমে কানে আসে না, তখন তাকে বলা হয় ডায়াস্টোলিক ব্লাডপ্রেশার। সিস্টোলিক ব্লাডপ্রেশার যখন ১৪০/১৫০ mm.Hg এর বেশি থাকে, তখন তাকে বলা হয় সিস্টোলিক হাইপারটেনশন। ডায়াস্টোলিক ব্লাডপ্রেশার যখন ৯০/৯৫ mm.Hg চাপ-এর বেশি হয় তখন তাকে বলা হয় ডায়াস্টোলিক হাইপারটেনশন।
উচ্চ রক্তচাপে যেমন ঝুঁকি আছে, তেমনি নিম্ন রক্তচাপেও ঝুঁকি আছে। তাই সিস্টোলিক ব্লাডপ্রেশার ৯০ mm.Hg-এর ও ডায়াস্টোলিক ৬০ mm.Hg-এর নিচে এলে নিম্ন রক্তচাপ বলা হয়। ব্লাডপ্রেশার মাপার আধা ঘণ্টা পূর্ব থেকে চা-কফি খাওয়া বন্ধ না করলে রক্তচাপের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপের কারণ
১. বংশগতঃ বাবা-মায়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকলে ছেলেমেয়ের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
২. যারা উচ্চাকাঙ্ক্ষী, মানসিক উত্তেজনা ও দুশ্চিন্তায় ভোগেন তাদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩. যারা অতিরিক্ত ওজন ও কম পরিশ্রম করেন তাদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৪. এছাড়া যারা কিডনি এবং অ্যান্ডোক্রাইন রোগে ভোগেন এবং পাঁচ বছরের বেশি জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন করেন তাদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
উচ্চ রক্তচাপের উপসর্গ
অনেকের উচ্চ রক্তচাপে কোনো উপসর্গ থাকে না, রুটিন চেকআপে বা অন্য কোনো কারণে ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, সে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে কিছু কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে যেমন-
১. মাথাব্যথা- মাথার পেছন দিকে ব্যথা হতে পারে, সকালবেলা এবং হাঁটার সময় ব্যথার তীব্রতা বাড়ে, কারো কারো ক্ষেত্রে মাথা গরম অনুভূত হতে পারে।
২. ঘুমের ব্যাঘাত হওয়া।
৩. বুকে চাপ লাগা।
৪. বুক ধড়ফড় করা।
৫. চোখের দৃষ্টিতে অসুবিধা বা ঝাপসা লাগা।
যারা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন তাদের নিচের জটিলতাগুলো দেখা দিতে পারে
১. করোনারি হৃদরোগ, হৃৎপিণ্ড বড় হয়ে যাওয়া, হার্ট ফেইলিওর হতে পারে।
২. মস্তিষেক স্ট্রোক এবং প্যারালাইসিস হতে পারে।
৩. কিডনির জটিলতা দেখা দিতে পারে।
৪. চোখের জটিলতা দেখা দিতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ
১. ধূমপান থেকে বিরত থাকুন।
২. কম লবণ, কম চর্বি, কম ক্যালরিযুক্ত খাবার খাবেন।
৩. দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করুন।
৪. নিয়মিত ও পরিমিত ব্যায়াম করুন।
৫. পর্যাপ্ত পরিমাণ শাক-সবজি, ফলমূল, আঁশযুক্ত খাবার, রসুন ও পরিমিত মাছ খান।
উচ্চ রক্তচাপ হলে কী করবেন
১. দুই সপ্তাহ পরপর ব্লাডপ্রেশার চেক করবেন।
২. রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে গেলেও ডাক্তারকে না বলে কখনো ওষুধ বন্ধ করবেন না।
৩. নিজের ইচ্ছামতো কখনো ওষুধ বদল করবেন না।
৪. অনিয়মিত ওষুধ খাওয়া, একদম ওষুধ না খাওয়ার চেয়েও মারাত্মক। যারা অনিয়মিত ওষুধ খান তাদের মস্তিষেক রক্তক্ষরণ বেশি হয়।
ডা. হাবিবুর রহমান ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।