ধরুন আপনি এক জোড়া জুতা বানাতে চাইছেন। এমতাবস্থায় আপনি কি করবেন? নিশ্চই কারিগরকে আপনার পায়ের মাপ দিবেন যেন সে এই মাপে জুতো বানায়। কিন্তু কারিগর যদি বলে, "আমি জুতো বানিয়ে দিচ্ছি আপনার পা এ মাপে ঠিক করে নিন" এতে নিশ্চই রেগে যাবেন। রেগে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। দু'এক ঘা হয়তো তার ভাগ্যে জুটতেও পারে।
কখনো কি ভেবে দেখেছেন যে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা জুতার মাপে পা বানানোর থিওরিতেই চলছে? আমাদের নীতিনির্ধারকরাই ঠিক করে দিচ্ছেন কত জন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবে আর কত জন শিক্ষার্থী বঞ্চিত হবে। আপনি কি জানেন, দেশে প্রতি বছর কত লক্ষ শিক্ষার্থী এইস.এস.সি পাশ করে? কত সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় আছে? আর কত সংখ্যক আসন বরাদ্দ আছে? আপনি যদি হিসাব করেন তাহলে দেখা যায় শুধুমাত্র যে পরিমাণ শিক্ষার্থী জি.পি.এ 5 পায় তত সংখ্যক আসনও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে নেই। তাহলে এই সদ্য পাশ করা শিক্ষার্থীদের গন্তব্য কোথায়? বিগত বছরের ভর্তি না হওয়া শিক্ষার্থীরাতো আছেই। সর্বশেষ গন্তব্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরিক্ষার্থী ও আসন সংখ্যার অনুপাত কত? কম করে হলেও দশঃএক হবে। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ক্ষেত্রে এই সংখ্যা অন্তত ২০-১০০ জন পর্যন্ত হয়।
তাহলে এখানেই দেখাযাচ্ছে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী কোন বিশ্ববিদ্যালয় এ ভর্তি হতে পারবে না। যেখানে এ+ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না সেখানে তুলনামুলক কম জি পি এ প্রাপ্তরা কি করবে। ঝড়ে পরা ছাড়া তাদের আর উপাই কি? সবচেেয় দুঃখের বিষয় হল বর্তমানে কলেজ গুলোতেও ডিগ্রীর ক্ষেত্রে জি পি এ এর ভিত্তিতে ভর্তি করা হয়, কারন আসন সীমিত। ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে প্রতি ইউনিটে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি পরিক্ষা দিচ্ছে অথচ আসন সংখ্যা সর্বোচ্চ্য তিন হাজার। তাহলে এই বাকি শিক্ষার্থীরা কি করবে? হ্যাঁ, হয়তো কিছু সংখ্যক ধনী বাবা-মায়ের ছেলেমেয়েরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে।
কিন্তু মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের উপায় কি? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি যুদ্ধে কোচিং ফি, ভর্তি ফরম, শহরে থাকা খাওয়া আর গাড়ি ভাড়া দিতে দিতেই যেখানে তাদের হিমসিম খেতে হয় সেখানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কি অতি মাত্রায় বিলাসিতা নয়?
কোটা পদ্ধতিতে চলে জাচ্ছে অনেক আসন। ভাল পরীক্ষা দিয়ে যেখানে ভর্তি হওয়া যাচ্ছেনা সেখানে ন্যূনতম স্কোর নিয়েই অনেকে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়ার। শুধু কি তাই? কোটাতে চলে যত দুর্নীতি আর বাণিজ্য।
এক কথায় আমাদের সরকার যতজনকে চাইবে তার চেয়ে একজনও বেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারবে না।
এই নীতিতে মনে হচ্ছে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন হিসেব করে সন্তান জন্ম দিতে হবে, নাহলে হয় অশিক্ষিত হবে, নাহয় শিক্ষিত বেকার হিসেবে জাতির বোঝায় পরিণত হবে।
আর এর সুবাদে সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা না করে অনেকগুলো
পদ্মা সেতু করা যাবে এবং হলমারকের মত ক্ষুদ্র অংকের টাকা গুলো তেমন প্রভাব ফেলবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।